তালিকাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমার মনে হয় এটা এই লিস্টেরই কেউ বানিয়েছে উন্নত দেশে এজাইলাম পাওয়ার আশায়। যার প্রোফাইলে প্রথম এটি পাওয়া গেছে, তিনিই এটা বানিয়েছেন বলে সন্দেহ করা যেতে পারে। তাছাড়া টাইপ দেখে মনে হচ্ছে না এটা বাংলাদেশে টাইপ করা। আমার মনে হয় এটা দক্ষিণ ভারতের কোনো দোকান থেকে টাইপ করা। কেননা চেন্নাইয়ের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় এমন হরফে বাংলা লেখা দেখেছি। আমি একজনকে সন্দেহও করছি, কিন্তু নাম বলছি না। তবে এই লিস্টের প্রায় সবাইকেই আমি চিনি।
যারা মারে, তারা তালিকা প্রকাশ করে মারে না। মার্কামারা কিছু নাস্তিক, ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্টের নাম দিয়ে আর কিছু অল্প পরিচিত ছোটোমোটো অ্যাক্টিভিস্টের নামের মাঝে কেউ সচেতনভাবে সুচতুরভাবে নিজের নামটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। সে নিজের ও অনেকের উপকার যেমন করেছে, আবার ক্ষতিও করেছে। কেননা, এখন এদের কাউকে সে নিজেও মেরে ফেলতে পারে বা লোক ভাড়া করে মারাতে পারে লিস্টের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে। অ্যাজাইলাম পাওয়ার আশায় সে এটা করতেই পারে। তাই যারা স্বেচ্ছায় এই তালিকাভুক্ত হননি, তারা সাবধানে থাকুন লিস্টের বাকিদের থেকেও। জ*ঙ্গী সংগঠনের থেকে তো সতর্ক থাকতে হবেই! কেননা আপনাদের নাম যারাই হোক তুলে দিয়েছে খাতায়, আপনাদের কার্যক্রম এখন থেকে তাদের দ্বারা মনিটরিং হবে। হামলার জন্যও প্রস্তুত থাকুন।
নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় ভিক্ষা করাটা আমার কাছে লজ্জার সামিল। হয়তো সেখানে গিয়ে রাষ্ট্রের আশ্রয়ে রাষ্ট্রের ভাতায় উন্নত জীবনযাপন করা যায়, কিন্তু দেশের ঘ্রাণ কি পাওয়া যায়? মাথা উঁচু করে কি বাঁচা যায়? বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্য কি পাওয়া যায়? আমি সুপরিচিত ব্লগার ছিলাম, প্রমিনেন্ট সাংবাদিক ছিলাম। গত ৮ বছর ধরে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে আছি। নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছি বারবার, নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছি ও করছি। খোদ পিএমের বেয়াইর দ্বারাই আমি নির্যাতিত। আমি চাইলে খুব সহজেই এসব নির্যাতনের প্রমাণ দেখিয়ে উন্নত দেশ আমেরিকা-কানাডা-অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপে আশ্রয় নিতে পারতাম। নিদেনপক্ষে হিন্দু হিসেবে ভারতে তো যেতেই পারতাম! কিন্তু আমি যাওয়ার চেষ্টাও করিনি। দেশের মায়া, বাপের ভিটার টান আমাকে যেতে দেয়নি। সব অন্যায় সয়েও মাটি কামড়ে পড়ে আছি। চোখের সামনে পরিচিত সমমনা ভাইদেরকে যেতে দেখেছি। তাঁদের অনেকের জীবনের আসলেই হুমকি ছিলো যদিও। কিন্তু আমি যাইনি।
কিন্তু গত সপ্তাহের ঐ হামলার শিকার হওয়ার পর মনে হচ্ছে, কেন পড়ে আছি এই দেশে? কাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছি? যারা আমাকেই ভুল বুঝে ডিম ছুঁড়ে মারলো, সেই বেয়াদবদেরকে? কাদের জন্য কথা বলি, যে সংখ্যালঘুরাই আমাকে গত ১৬ বছর হিন্দুপল্লীতে মাসহ বিনা দোষের শুধু জমির লোভে একঘরে করে নির্যাতন করছ, তাদের জন্য? এই যে এত মানুষের জন্য কাজ করলাম, কত মানুষের কত উপকার করলাম আমি, আমার বাবা কবি বাবু ফরিদী ও আমার মা Krishna Guho, কই, কেউ তো বিপদে পাশে দাঁড়ালো না! প্রথম আলোতে কত মানুষকে নিয়ে লিখে তাদেরকে হিরো বানালাম, অথচ বিনিময়ে এক কাপ চাও খাইনি! অফিস থেকেও যোগ্য মূল্যায়ন পাইনি। কই, তাদের কেউ তো আমার খোঁজ নেয়নি!
এখন এই শেষ রাতে বসে বসে ভাবছি, আমার কি তবে দেশের বাইরেই চলে যাওয়া উচিত? এজাইলাম ছাড়াও আমি যেতে পারবো। কেননা আমার রেজাল্ট খুব ভালো। দুটি এ প্লাস, নটরডেম কলেজের সিল আছে, আছে ঢাবি ফিজিক্সের দুটি ফার্স্ট ক্লাস যা এক ব্যাচের ১৫০ জনের মাঝে মাত্র ২০-২৫ জনের মতো পায়। আমার কি তাহলে বাইরে চলে যাওয়া উচিত? নাকি দেশে থাকলে একদিন মূল্যায়ন পাব? দেশ সেবার যে মহান ব্রত নিয়ে সব ছেড়ে এই পেশায় এসেছি, দেশ কি আমাকে সেই পর্যায়ে সেবা করার মতো বড় দায়িত্ব দেবে? নাকি সারাজীবন আমার অমুক বন্ধু নাসায় ইঞ্জিনিয়ার, ও গুগলে জব করে, ও মাইক্রোসফটের ইঞ্জিনিয়ার, ও আছে মেটায়-- এসব বলেই ভাঙা ঘরে বসে আনন্দ পেতে পেতে একাকী জীবন শেষ করে দিতে হবে?
বন্ধ ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা, আমার কী করা উচিত, মত দিন প্লিজ!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:০৬