সেদিন যখন ভূমিকম্প হল তখন হঠাৎ বুকের মাঝটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।সবাই চিৎকার করছিল। আমার কি যেন হল হঠাৎ! আলমারিটার পাশে গিয়ে নির্বাক ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখে ভাসছিল একটা দিনের স্মৃতি।অনেক পুরোনো একটা দিন।৬/৭ বছর তো হবেই।
...রাতে যেদিন হলের ছাদে উঠে প্রথম আমায় ফোন দিয়েছিলি সেদিনও কথার মাঝে ৭/৮ সেকেণ্ডের একটা ভূমিকম্প হয়েছিল।টের পাবার পর তোর সে কি হাসি!খুব অবাক হচ্ছিলাম। এই পাগলের সাথে কি কথা বলবো।পাগলের সাথে কেন যেন আরো কথা বলেছিলাম।বহুদিন, বহুসময়। পথও চলতে চেয়েছিলাম একটা সময়।সিরিয়াসলি-ই।যদিও এ ধরনের চিন্তা প্রতিবারই মাথায় আসলে একইসাথে ভাবতাম - এই পাগলের সাথে কি পথ চলব।ধূ্র! পথ‘তো আসলেই আর চলা হলনা।জামাই নিয়ে সুখে আছি।তো্র চেয়ে ভাল আছি অন্তত।ভাল কথা, তুই কেমন আছিস রে ? শুনলাম নতুন জব শুরু করেছিস।হাতা গুটিয়েই কি অফিসে যাস? কিংবা, বাসায় ফিরে ঘামে ভেজা শার্টটা ছুঁড়ে ফেলে রাখিস যেখানে, পরেরদিন অফিসে যাবার সময় আবার ওখান থেকেই তুলে নিয়ে পরে চলে যাস নাকি? ভুলেও একাজ করিস না কিন্তু! নাহলে দেখবি দুদিন পর কলিগরা সবাই নাক শিঁটকাচ্ছে।মাইনে দিয়ে কেন একটা আউলা-ঝাউলাকে রাখবে বলতো?ভার্সিটিতে তো আমার মত ফ্রি মাইনের একজনকে পেয়েছিলি, বকে বকে শুধরে দিতো । ও আচ্ছা! মাইনে কত পাস রে? মোটা মাইনে পাবি বলে তো মনে হয় না।যেমন উল্টাপাল্টা তোর চলাফেরা তেমন উল্টাপাল্টা তোর কথাবার্তা।বড় বড় কথা বলতে ওস্তাদ, অথচ পরীক্ষার খাতায় পেতি ডাব্বা।যাকগে, মাইনে যা পাস তা দিয়ে কি কি করিস খুব জানতে ইচ্ছে করে। প্রথমে এক প্যাকেট সিগারেট কিনবি সেটা ভাল করে জানি।আর কি কি করিস বলতো? তখনতো অনেক বড় বড় কথা বলতি। চাকরির টাকা দিয়ে এই করবি, সেই করবি।প্রথম মাসের মাইনে দিয়ে আমাকে একটা পার্স কিনে দিবি বলেছিলি। আরেকবার ওই যে রিক্সায় করে টংয়ের সামনে নামতে গিয়ে স্যা্ন্ডেলটা ছিঁড়ে গেল তখনো তুই বলেছিলি ভাল দেখে একটা স্যান্ডেল কিনে দিবি চাকরী পেলেই। কিচ্ছু দিসনি।উল্টা এসব বলে বলে প্রতিবার মাস শেষে যে আমার কাছে হাত পাততি। সেই টাকাও কি শোধ দিয়েছিস কখনো? আচ্ছা আমার টাকা না দিস কিন্তু ওই জামালের টং দোকানটায় যে বাকি খেতি সেটাতো দিয়েছিস পাশ করার পর, নাকি? অবশ্য সেটা দিবি আমি জানি। এই, জেবা কেমন আছে রে? ও কিসে পড়ে এখন?ওকে ডাক্তার বানাস না, টীচার বানা।ভাল মানাবে।
ভাল কথা, আজ এত কথা বলছি কেন? তাইতো! কেন বলছি রে?
বাবা কেমন আছে? মায়ের বুকের ব্যথা কি হয় এখনো আগের মত? ওনাকে মাঝে মাঝে খুব দেখতে ইচ্ছা করে, জানিস! একবার রাতে যে মা‘র বুকের ব্যথা বেড়ে গেল শুনে তড়িঘড়ি করে বাসায় চলে গেলি মনে আছে? বাস না পেয়ে ট্রাকের পিছে চড়ে? পরে গিয়ে যে শুনলি মা‘র আসলে জ্বর এসছিল। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছিল তোর নাম ধরে বারবার। তাই দেখে বোনটা কিছু না বুঝে তোকে ফোন করে বসলো। বুকের ব্যথার কথা বললে তুই আসবি নিশ্চিত, তাই জন্য মিথ্যা করে সেটাই বলেছিল। বাসা থেকে ফেরার পর হলের সামনের পুকুর পাড়ে বসে তোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'কিরে মায়ের জন্য খুব দরদ,না? মায়ের ব্যথা বুঝিস আসলেই?' মুখ টিপে তোর ওই শয়তানি মার্কা হাসিটা দিয়ে কি বলেছিলি মনে আছে? ‘বুঝিনা মানে? মা তো হসনি।যেদিন হবি সেদিন বুঝবি‘ শুনে এত্ত হাসি পাইছিল।আচ্ছা, তুই কিভাবে জানতি যে এই ব্যথা আমি কোনদিন পাবোনা?বলতো! কিছুদিন আগে ডাক্তারও একই কথা বললো, জানিস? ‘আপনি কখনো মা হতে পারবেন না‘
কি আজব! এসব কথা কেন বলছি তোকে?তাও আবার তোর মত পাগলকে। কেন বলছি? কেন-রে?