নীলগিরি থেকে ফিরে খুব ক্লান্ত লাগছিল। বাবুই তো এসেই ঘুমিয়ে পরেছে। ঘুমোতে যাবার আগে মনে হল একবার রিডিং রুম থেকে ঘুরে আসা দরকার। ইমেইল চেক করা হয়নি। এখন রেগুলার যোগাযোগ করতে হয় আফ্রিকায়।আফ্রিকান এই রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ল্যাবরেটরি ডেটাবেজে অনেক মেডিসিনাল প্লান্ট এর রিপোর্ট আছে।এই উপমহাদেশের যত স্পেসিস ওরা এখন পর্যন্ত কালেক্ট করেছে সব রিপোর্ট চেয়েছে নীলিমা। কাজটা ঠিকমত শেষ করতে পারলে বেশ ভালো একটা কিছু দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে। প্রায়ই মনে হয় ফার্মাসির উপরে কিছু পড়ালেখা করা দরকার ছিল। তাহলে কাজ করতে আরো সুবিধা হত। একটা পিজিডি(পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা) করতে পারলেও হয়ত কাজ চলত। কিছু বই পড়ার চেষ্টা করছে। অনলাইনেও দেখছে রেগুলার।
টেবিলের উপর চিঠি পরে আছে অথচ কেউ কিছু জানালো না। অনেক দিন শফিকের কোনো চিঠি আসেনা। আর খুব প্রয়োজন না হলে নীলিমা কখনই লিখেনা। খুব চা খেতে ইচ্ছা করছে। চা নিয়ে এসে তারপর পড়বে ভেবে চিঠিটা টেবিলে রাখতে যেয়ে চোখে পরল চিঠিটা রেহানা লিখেছে। রেহানা তো কখনও লিখেনা। হঠাৎ ? কোনো সমস্যা নয়তো।
প্রিয় নীল
জানিনা তোর মনে পরে কিনা শফিক তোকে মাঝে মাঝে নীল বলে ডাকত। আমার খুব হিংসা হত তখন। মেয়েদের মন বড় অদ্ভুত তাইনা? তোর সেচ্ছা নির্বাসনে কখোনো ব্যাঘাত ঘটাবনা ভেবেছিলাম।আজ বাধ্য হয়ে লিখতে বসা।গত মাসে শফিকের স্ট্রোক হয়েছে। শরীরের ডান পাশটা প্যারালাইজ্ড হয়ে গিয়েছে। কথাও জড়িয়ে যায়। আর হয়ত কখনোই তোকে লিখতে পারবেনা। চিন্তা করিসনা। আমিতো আছি। যদি কখনও প্রয়োজন পরে জানালে অবশ্যই সাহায্য করার চেস্টা করব । দোয়া করিস ওর জন্য। ভালো থাকিস।
রেহানা
মেডিকেল কলেজে রেহানা খুব কাছের বন্ধুদের একজনই ছিল। কিন্তু রবির সাথে জড়িয়ে যাবার পর আস্তে আস্তে সবার সাথেই কেমন যেন দূরত্ব হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু রেহানা সেটা মেনে নিতে পারেনি। ফলে যা হবার তাই, দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই গিয়েছে। সম্পর্ক আর কখনও আগের মত হয়নি।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ালেখা করে পেশায় গৃহীনি নীলিমা, অনেকেই কটাক্ষ করত। কিন্তু সেটা মেনে নিতে একবিন্দুও চিন্তা করেনি নীলিমা।সবাই বলত রবির ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছে সে। ইন্টার্নশিপ শেষ করেই বিয়ে করে ছোট একটা বাসা নিয়ে সংসার শুরু। দুজনে একসাথে জয়েন করে একটা ক্লিনিকে। পাশাপাশি বিসিএস এর জন্য পড়ালেখা।এরকম সময় বাবুই এর আগমন বার্তা। সবমিলিয়ে বেশ ভালোই কাটছিলো দিন গুলি। বাবুই জন্মের পর আর ক্লিনিকে যায়নি। বাবুই কে নিয়ে দিন রাতের সব ব্যস্ততা। এরই মাঝে একদিন শফিক আর রেহানা বেড়াতে এলো। পুরোনো বন্ধুর সাথে অনেকদিন পর দেখা।নতুন বিয়ে করেছে। দুজনেরই স্কলারশিপ হয়েছে নিউজিল্যান্ডে। রেহানার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নীলিমার হাউজ ওয়াইফ লাইফ নিয়ে বেশ ব্যাঙ্গ করেই কথা বলল। কিভাবে চেষ্টা করলে স্কলারশিপ পেতে পারে সেই জ্ঞান দিতেও ছাড়লনা। রেহানাটা সবসময় এমনই থেকে গেলো।সেদিন রাতে খুব মন খারাপ ছিল নীলিমার।
শফিকের জন্য খারাপ লাগছে।নাম করা হার্টের ডাক্তার নিজেকে বাঁচাতে পারলোনা প্যারালাইজ্ড হয়ে যাওয়ার হাত থেকে। রেহানাও অনেক নাম করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের চক্ষুবিভাগের প্রফেসর। অথচ রবি এবং নীলিমা ! রবি বি সি এস পাশ করে এখন কোনো এক মফস্বলে চলে গিয়েছে। আর নীলিমা পাহাড়ে।