somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিক্ষিপ্ত সত্তাদের একান্ত কিছু ছন্নছাড়া চিন্তার মেঘ

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিক্ষিপ্ত সত্তাদের অনেক দিন কোন সময় দেয়া হয়না।আজ হঠাৎ নিজেরাই যেন জোরাজুরি করে কথা বলতে শুরু করল,একমুঠো অভিমান জমে আছে যেন ওদের।
-কি হল তোমার?আমাদের ভুলেই গেছ না?
--আরে না ,সত্তাকে কি ভুলে যাওয়া যায়,বল?
-তাহলে একবারও এসে যে কথা বলে যাওনা?একবারও যে ডাক শুনি না তোমার,একবারও যে বুঝিনা তুমি এসেছিলে?
--কারণ আসার মত সাহসটা যে হচ্ছিল না,এতই নিস্পৃহ হয়ে যাচ্ছি দিনকেদিন,ভয় হয় তোমার সামনেও যদি চুপ করে থাকি শুধু!
-বাহ,ভালো বলেছ,আমাকেও ভয়?
--কি জানি!
-কি হয়েছে তোমার?বল তো আমাকে
(কন্ঠে তীব্রভালবাসা আর চিন্তার বিরামচিহ্ন)

--তেমন কিছুনা,আবার কি যেন,ভাবছি কিছু ব্যাপার।
-কিরকম?
--মাঝে মধ্যে মনে হয়,মানুষ ভালবাসে কি করে?
মানে আদতেই কি একজন মানুষের আরেক জন মানুষের জন্য অনুভুতি জন্মে যায়?
অদ্ভুত না ব্যাপারটা ,বল?
-হুম,তুমিও তো অনেক কে ভালবাসে,সেটা কেন?
--সেটাই তো ভাবছি,কি করে বুঝলাম যে ভালবাসি তাদের?
-যাকে তোমার বিশ্বাস হবে খুব,যার প্রতি স্বার্থ কাজ করবেনা,জানবে তাদেরই তুমি ভালবাসো।
প্রিয় সেসব মানুষের মুখে একটুকরো হাসি আসবে এটাই যখন তোমার কোন কষ্টের চেয়ে,পরিশ্রম কিংবা অনিচ্ছার চেয়ে বেশি কাজ করবে,যখন তুমি তোমাকে ,তোমার অনুভুতি কে,তোমার মন্দ লাগা,,বিরক্তি কিংবা রাগ কে কারও জন্য ছাড় দিতে পারবে সেটাই মূলত ভালবাসা!
-খুব ভালো বলেছ।কিন্তু আশে পাশে আজ যে শুধু ভাঙনের খেলা,তাই দেখে ভালবাসা সম্পর্কে মনের মধ্যে জন্ম হওয়া যেই ধারণাটা তা কেমন যেন এলোমেলো লাগে।বুঝতে পারিনা,কোনটা ঠিক!!
--হুম,আজকাল শুধুই ভাঙন দেখি,মানুষ বোধকরি ভুলেই গেছে
ভাল আর বাসা দুইটি আলাদা শব্দের মিলনটাই ভালবাসা।আর ভালবাসার প্রকৃত কারণটাই এই মিলে থাকা আর একে অন্যকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকার নাম ই তো ভালবাসা......
-কেন সমস্যা হয় ভালবাসায়?কেন সবাই ভালবাসতে ভয় পায়?
--বিশ্বাস,পারস্পারিক বোঝাপড়া,সম্মানবোধ ই সবচেয়ে প্রয়োজন ভালবাসায়,ভালবাসার জন্য ,ভালবাসা পাওয়ার জন্য,আর সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে স্বার্থত্যাগ,
যখন কি পেলাম কি পেলাম না-করে মানুষ বেশি ব্যস্ত হয়,সে তার প্রাপ্তি কেও খুইয়ে দেয়।হারিয়ে ফেলে তার সবকিছু,আর সবচেয়ে বাজেটা হয় তখন ,যখন সে নিজেকেও হারিয়ে ফেলে.......
আমি না বুঝি না মানুষ কেন যা পায় তা পেয়ে এক পর্যায়ে শুধুই অভিযোগ করে যায়?
সে যখন পেতে চেয়েছিল তখন তো প্রাপ্তিটাকেই সে বড় করে দেখেছিল,তাইনা??আজ কেন কোন প্রাপ্তির বিষয়বস্তুর চেয়ে সেই বিষয় এর নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো- সেটা এত জরুরি হয়ে যায়?
তবে কি বলব,পাওয়ার ইচ্ছাটায় কোন ফাঁক ছিল?
-তা না মনে হয়,প্রত্যাশা জিনিসটা খুবই ভয়ানক।এবং সব কয়টা সম্পর্কে এই ব্যাপারটা যখন ঢুকে যায়,তখনই শুরু হয় ভাঙনের কাঁপন..পূর্বাভাস!
--ঠিক বুঝলামনা।বুঝিয়ে বল
-যেমন ধর,নরনারীর সহজাত প্রেম,একটা ছেলে আর মেয়ে যখন নিজেদের সত্তার সমর্পণ করতে চায়,কি ভাবে তারা?
সে এই মানুষটাকে এতটা সুখী করবে,এই মানুষটার জীবনটা সবটা ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে,মন খারাপ দু:খ সবকিছু একসাথে লড়বে,তাকে ভালবেসে নিজে পূর্ণ করবে,নিজের ভালবাসার গুণটা নিজের মধ্যে অনুভব করে তাকে দিবে হৃদয়ের প্রতিটা বিন্দু ভালবাসা,তাকে তাঁর পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ অনুভব করাবে তার সবটা ভালবাসা দিয়ে!!
তাইনা?
তাকিয়ে দেখো,মানুষ প্রথমে শুধু দিতেই চায়,দিয়ে পূর্ণ করতে চায় নিজেকে।
যেই জিনিসটার শুরু হয়,দেয়ার প্রবণতা দিয়ে,সেটা শুধু পাওয়া তে শেষ হয় কেন?
কেন শুধু কাজ করে,কেন ও এমন করলনা,কেন ওমন করল না এসব দন্ব ?তবে কি কেউ ভালবাসতে পারেনা?কেন নিজের না পাওয়াটা আরেকজনকে দেয়ার ইচ্ছার চেয়ে বেশি হয়??
মানুষ এত স্বার্থপর কেন হয়?
--তুমি কি এর ঊর্ধ্বে?
-নাহ,আমি এর ঊর্ধ্বে না,কিন্তু সামগ্রিক মানুষের মধ্যে ভালবাসার এই কি পেলাম কি পেলাম ব্যাপারটা খুব ভাবায় আমাকে,মনে হয় পাওয়াটাই সব?
কেউ কারও জন্য অপেক্ষা করতে পারেনা যেন,স্হিতিশীলতা ব্যাপারটা যেন নাই হয়ে যাচ্ছে ইদানিং,হয় থাকবে নয় থাকবেনা,ব্যাপারটা আজকাল খুব সোজা!
কেউ কারও জন্য একবিন্দু কষ্ট স্বীকার করতে রাজি না,
কেউ ভাবেনা,যে ভালবাসার সিদ্ধান্তটা তো এই মানুষটাকেই নিয়েছিল,কোন স্বপ্নের মনগড়া কোন রাজপুত্র বা রাজকন্যাকে না!!
কেন সবাই শুধু এমন কাউকে ভালবাসতে চায়,যার কোন দোষত্রুটি নাই।
কারও কোন দোষত্রুটিতে মানুষ যেন হাতে লাল কলম নিয়ে দোষ অন্বেষণে লেগে যায়।
খুব অদ্ভুত লাগে!!
কোন মানুষই কি দোষমুক্ত??সে নিজেও কি?
আমার কি মনে হয় জানো?খুঁতযুক্ত মানুষকেই নিখুঁত ভাবে যে ভালবাসতে পারে সে-ই প্রকৃতভাবে ভালবাসে!!
--হুম,তবে তো বলতে হবে,প্রকৃত ভালবাসা টা খুব কম ই আছে!
-ব্যাপারটার গভীরতায় কি কেউ ঢুকে?সারাজীবনের প্রতিজ্ঞা এত সহজে মানুষ কি করে ভুলে যায়?কিছু হল,আর ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা কি করে হয় মানুষের?তাহলে কি মানুষের চাওয়া দিন দিন শুধু বদলায়?
আজ যা ছাড়া নিজেকে ভাবা যায়না,কাল সেটা ছাড়া মানুষ কি করে বেঁচে থাকে?মানুষ কি তবে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসেনা?
তবে কেন সম্পর্কের জালে আটকে পড়া?
আর যদি জড়িয়েই যাওয়া সম্পর্কে,কেন স্বার্থত্যাগের কথা থাকেনা মাথায়?
শুধু আমি আমি আমি করে কি ভালবাসার প্রকৃত মানে খুঁজে পাওয়া যায়???
আমিত্ব কে ভালবাসতে থাকলে যে কখনও নিজের প্রতিই ঘৃণা জন্মে যাবে!!
যেই নিজের জন্য চিন্তা করে মানুষ স্বার্থপর হয়ে যায়,সেই বিরক্তি আর রাগ যখন সহজাত প্রবৃত্তি হয়ে যাবে,যখন অভ্যাস হয়ে যাবে,তখন তো এগুলো নিজের দিকেই প্রতিফলিত হয়ে আসবে,প্রতিবিম্ব দেখা যাবে নিজেরই কুৎসিত এক রূপ!!!
কারণ সত্তার চেয়ে বড় প্রতিফলক কি আদৌ আছে???
তবে কেন মানুষ যা আছে,যা পায় সেটাতেই ভাল থাকেনা?
কেন খারাপ ভাল তবু আমার- এরকম কোন চিন্তা কাজ করেনা?
কেন মানুষের মধ্যে প্রাপ্তির আনন্দের চেয়ে শুধুই অপ্রাপ্তির অভিযোগ?
কিছু পাওয়ার পর কি নেই এটা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কাছে?
--আমি জানিনা তোমার এসব কথার উত্তর,আমিও যে বুঝতে পারিনা এটা,আমার কাছে মনে হয়,ভালবাসা,সেটা যার জন্যই হোক,
সেটা একটা প্রার্থনার মত,
নামাযে সেজদাহে পড়ে তুমি যদি ভাবতে থাক কয় রাকাত পড়লে,কত বাকি,এসবে কিন্তু নামায আর ত্রুটিমুক্ত হয়না,বরং এরকম বিক্ষিপ্ত হয়ে তার মূল উদ্দেশ্য হারায়,কারণ তখন আর সমর্পণের বদলে শুরু হয়-মাথা ঠোকাঠুকির হিসাব নিকাশ!!
তেমনি ভালবাসাতে ও থাকবে শুধুই সমর্পণ,কাউকে দেবার,তাকে দেয়ার মাঝেই নিজেকে খুঁজে পাবার।হিসাব নিকাশ দিয়ে যে সম্পর্ক হয় সেটা শুধুই দাতা-গ্রহীতার-ভালবাসার না।
-হুম,মানুষ যে কবে এটা অনুধাবন করবে,আর নিজের মাঝে চর্চা করবে,যদি করত তবেই শুধু ভাঙন থামানো সম্ভব হত।
স্বর্গীয় এই অনুভুতিটায় মানুষ ভেসে বেড়াতে পারত!!
কিন্তু আমার ভয় হয় জানো-
কারণ মানুষ যে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী!!!
হঠকারিতা যে তার আজন্ম বৈশিষ্ট্য......................।
-
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:০১
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×