somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলতে পারিনা মা-তবু আজ শুধু একটু বলি

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে একটা দুর্ঘটনা ঘটল,মনটা অসম্ভব রকম খারাপ,চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে!
দিন দিন কি যেন হয়ে যাচ্ছি আমি!
আমার কাছে মৃত্যু ব্যাপারটা খুব স্পষ্ট না,কিন্তু বাঁচতে কেন হবে তাও যে স্পষ্ট না।
আমি তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ না,কোথাও কোন কন্ট্রিবিউশন নাই,আমার জন্য পৃথিবীতে খুব যে মানুষজন খুশি হয়েছে,মানুষজনের কাজে এসেছি খুব তাও না।আমি না থাকলে কোথায় কোন শুণ্যস্হান ও হবে বলে মনে হয়না,আর কোন শুণ্যস্হানই তো সময় শুণ্য রাখেনা।নিজের কোন উপযোগিতা খুঁজে বেড়াই,খুব একটা কোন প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারিনা।
বাসায় আসলাম,ঝিম মেরে বসে ছিলাম,আম্মু কে দেখে হঠাৎ খুব কান্না আসল,আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল
-কি হয়েছে?কাঁদ কেন?
আমি তাঁকে আমার কথা গুলো বললাম,অনেক দিন পর মা কে কিছু কথা বললাম।বুঝতে পারছিলাম তাঁর খুব কষ্ট লাগছিল,কিন্তু তাঁর কষ্ট লাগবে-এই ভয়ে আমার জমে থাকা কথা গুলো যে দিন দিন বাড়ছেই,আর এই বেড়ে যাওয়া কষ্ট গুলো আমাদের যে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে দিনদিন।এটাও যে আমার সহ্য হয়না।
ছোটবেলায় কত সহজে মাকে সব বলতাম,
ছোটবেলায় আমার প্রায়ই জিনিস চুরি হত,কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে থাকতেও,
এই দিন এটা নেই,সেদিন ওটা নাই,আর আমিও ছিলাম বেশ ভুলোমনা।হারিয়ে ফেলতাম প্রায়প্রায়ই।
আমার পৃথিবীর মত দেখতে সার্পনার টা যেদিন হারিয়ে গেল-কি মন খারাপ আমার!
আজ অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস পাতি হারিয়ে গেছে।অনেক বেশি মাত্রায়ই মন টা খারাপ।আর দিন দিন সবকিছু নিয়ে বেড়ে ওঠা জন্জাল গুলোতো আছেই।অকারণে কারণ খোঁজার একটা নতুন ব্যামো তৈরি হয়েছে যেন!
তারপর মা র ও মন খারাপ হয়ে গেল,আমরা মায়ে-মেয়েতে কিছুক্ষণ চেপে ধরে কাঁদলাম!
হুম,অনেক দিন পর।
এভাবে কাঁদলাম মন খুলে মার কাছে।বড় হয়ে যাওয়ার বাবা মার কাছে আবদার করা,সমস্ত খুটিনাটি গল্প করা ব্যাপারগুলো কিভাবে জানি কমে যায়।
ভালবাসাটা ঠিক আগের মতই থাকে,কিন্তু প্রকাশটা দুপক্ষ থেকেই খুব অন্যরকম হয়।আমি মায়ের বুকটাতে মুখ চেপে ছিলাম,আমি চুপ করেছিলাম,বুঝতে পারছি,আমি আর মা থেকে থেকে কেঁপে উঠছি।মনে হচ্ছিল কান্নার এক সমুদ্রে দুজনদুজনকে চেপে শুধু বেঁচে আছি।
কান্নার পানিতে পুরাই মাখামাখি!
আমি কেঁদেই যাচ্ছি,কতদিন এভাবে যে কাঁদি নাই,কেঁদেও যেন শান্তি লাগছিল খুব!
আর চুপ করে জীবনের স্লাইড শোর মত একের পর এক স্মৃতি আসছিন যেন সামনে,
ছোটবেলায় আমি আর সব বাচ্চাদের মতই একটু বেয়ারা ছিলাম।উচ্ছন্নে যাওয়া না,কিন্তু হালকাপাতলা লক্ষীগোছের দুষ্ট ছিলাম।
তবে স্কুলে যাওয়ার সময় আমার খুবই বাড়াবাড়ি শুরু হত-চুল বাঁধা নিয়ে।
নাহ,এভাবে হয়নাই,ঐভাবে কর-এত জ্বালাতাম!!উফ!
পছন্দ না হলে,চুল খুলে ফেলতাম।
আবার যখন ভাত খাওয়ার সময়-মার কথাগুলো................
আরেকটু খাও মা,
আরেকটু,
এই যে শেষ!!
আর আমার বিছানার চাদরের তলে লুকিয়ে যাওয়া,আর আম্মুর জোরাজুরি!
এত জ্বালাময়ী ছিলাম আমি!!ভাবলে নিজেরই কেমন রাগ লাগে।
আম্মুর সাথে কিছু হলেই আমি আম্মুকে চিঠি লিখতাম,কেন জানি মুখে বলতে পারতামনা।বিছানার পাশে বালিশের নিচে চিঠিটা রেখে আসতাম,পরে আম্মু নরমাল হলে বুঝতাম,আম্মুর রাগ ভেঙেছে।
আমি যখন ছোট ছিলাম,আম্মু আমার পা দুটা এভাবে গালের মধ্যে নাকি ধরে রাখত,হাত ছুঁয়ে থাকা,জড়িয়ে ঘুমায়ে থাকত।এত আদর লাগে আমার মা-সন্তানের সম্পর্কটা।
কেমন যেন আদর মাখা!
আগে যখন রাস্তা দিয়ে আসার সময়,ছোটবাচ্চাগুলোকে দেখতাম স্কুল থেকে ফেরার পথে মায়ের হাতের মাঝে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে,খুব মনে পড়ে ছোটবেলাটা!আমি স্কুলে যাওয়ার সময় আধো ঘুম ঘুম চোখে প্রায় ঘুমিয়েই থাকতাম,আর আম্মু আমার সামনে হাতদিয়ে ধরে থাকত রিক্সাটার হুডে,আমি সেই হাতেই ঘুমিয়ে থাকতাম।
আর ফেরার সময়??
কত সব রাজ্যের কথা আমার!সারাদিনের ফিরিস্তি না বলে যেন শান্তি হতনা আমার।কতশত কথা যেন জমা হত,আর হরবর করে সব বলে দিতে থাকতাম।
আর পরীক্ষার সময়,মা'র আয়তুল কুরসি দোয়া না পড়ে দিলে আমার মনে হত-আমি শেষ!সবদিন এসব ছিল রুটিনবাঁধা,পরে যখন হলে গেলাম,ফোন করে পরীক্ষার আগে দোয়া শুনতাম,আম্মুকে বলতাম ফুঁ দিতে,তারপর আমি নিজে নিজেকে ফুঁ দিতাম!
আর পরীক্ষার আগের রাতের জড়াজড়ি করে ঘুমানো??বারবার ঘুম ভেঙে উঠা?
সবকিছুতে যেন মায়ের বুকেই সব আশ্রয়,ঐদিন আম্মুর সাথে ঘুমাতে আমার হবেই-নাহলে যে পরীক্ষা খারাপ হবে!কত শত আহলাদি আবদার,কত শত কথা!!

আর এখন কতরকমের মন খারাপ জমা হয়,কিছুই কেন যেন বলতে পারিনা।মাঝেমধ্যে মনে হয় শুনলে তুমি রাগ করবা,আবার অধিকাংশ সময় ই মনে হয় কি দরকার তোমাকে বলে মন খারাপ করে দেয়ার!আমি কি বড় হয়ে গিয়েছি মা?আমি যে তোমার কাছে কখনই বড় হতে চাইনা।কেন বয়স মা-বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কটাকে সেরকম সহজ থাকতে দেয়না?নাকি সমস্যাটা আমাদেরই?
কি জানি,শুধু জানি,মা তোমার কাছে আমি এখনও সেরকম ছোট হয়েই থাকতে চাই,জড়াজড়ি করে কাঁদতে চাই,আর তোমার মুখের একটুকরা হাসির কারণ হতে চাই,তোমার ভেতরে লালন করা প্রাণটা যত বড়ই হোক না কেন,যদি এখনও বলতে পারিনা খুব সহজে,আমাকে ক্ষমা করো মা।
কিন্তু জানো মা
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি,আমার বেঁচে থাকার কারণটা কি তবে তুমি??তোমরা?
হুম,আমি তোমার জন্যই বাঁচব,তোমাদের জন্যই বাঁচব,কারণ আমি যদি নিজের কষ্টের কথাই শুধু ভাবি,আর জীবন-মৃত্যু নিয়ে ভাবতে থাকি,সেটা তো শুধু অকৃতজ্ঞতা নয় মা,এ যে বিশ্বাসঘাতকতা!আমি চাইনা তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে মা!!
তুমি শুধু থেক আমার পাশে??হুম??
ভালবাসি মা!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:১৫
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×