somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য: পুরুষপাখি

২০ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অতল রাতের থেকে তুলে আনি পাখি ও পাপ। পাপ সে এক হিরণ্ময় অ›ধকারের ডাক নাম। অ›ধকারের একশো তিনটা নাম। পাখি তার মধ্যবর্তী। একটি গান বেজে বেজে ডুবে যায় কণ্ঠের ভিতর। কোনো সুর কেঁপে কেঁপে ডুবে যায় সেতারের নির্লিপ্ত তারে। তবে আমরা এখানে এসেছি কেনো? কারো সবুজ আঙুলে ঝুলে আছে মহাকাল। ঘিরে আসছে আতপ্ত ছায়া। এতো সেই দূর বনের প্রত্যাখ্যাত করুণ। কেউ বলেছিলো দূরবর্তী তীরে আছে নকশার আকর। ভুল জেনেছি। জেনেছি বিলম্বিত সন্ন্যাস। বাগানগুলি জংলা হয়ে উঠে, জংলার ঝাড়ে পুরুষপাখি নাচে।

ইথারের ভাষা কী? হালকা কম্পন। যে বাদক অবিশ্রাম বাজায়Ñ যে বাদক জন্মা›ধÑ তার নখের আয়নায় কি জেগে থাকে কোনো দ্বীপদেশের অভাবনীয় রেখাচিত্র? আমরা কাদার ভাষা জানি না। যে-কাদা মাছের গায়ে আঁশ হয়ে লেগে থাকেÑ তার প্রয়োজনীয়তা দুর্বোধ্য রোদের অক্ষরে খরার খবর বলে নিÑ এইকথা বলা যাবে না। সন্ন্যাসেরও প্রকার থাকে। যেমন কাদা ও মাছের পারস্পরিক সন্ন্যাস। একজন অন্যজনের সাথে একা হয়ে থাকা। একজন জড়জীবনÑ অন্যে অবাধ সন্তরণ বা সাঁতার। সাওতাল পরগনায় ধুয়ে গেছে বিলাস এবং বিদ্যুতের রাহিত্য আদিকালে খুবি স্বাভাবিক একটা বিষয়। বিষয়বিষাদ আজ আমাদের শেখরের খোঁজে ছড়িয়ে পালক। কখনো অস্ট্রিক, নিষাদ, কখনো অনার্য দ্রাবিড় উপবন।

পাখি আর পাপ তার দীনতার নাম। সূর্যাস্তের পাড়ায় শাহরিক মুগ্ধতা ও ক্লান্তি নিয়ে সে তাকিয়ে একটি শোকযাত্রার অলৌকিক জামা পরে। যেমন আছে প্রেমিকা ও সহোদরার মৃত্যুর বিশদ বিবরণ। মলাটে নদী নেই, পিকাসোর রেখাচিত্র। বালিকার হাতে দোলে অব্যক্ত অভিমান। ইদানীং অভিমান ঠাকুর ঘরে বিনোদিনীর পদতলে ছড়ানো সিঁদূর। যেখান ফল্গুলতা, উজ্জ্বল গ্রাম, ত্বকের মসৃণতা, পেলব পাথরের যকৃতে লুকোনো বীজাণু। তারপরও সে সব কথা আমাকে বলেÑ তার পাহাড় ও পাতালের কথা। ঘুড়ির দেশের রঙ ও সুতোর কথা। সুতো কাচের গুড়ো মাখানোর অবিশ্রান্ত কথা সে আমাকে বলে। আমি শুনতে চাই না। পুরনো দর্জির দোকানে গিয়ে কান সেলাই করি। আর সে নতুন করে আমার কান তৈরি করে তাতে ঢেলে দেয় কথার পাথর। এক একদিন সে শুধু মৃতদের কথাই বলে। আর বলে বাদকের ডাক নাম অ›ধকার। তার ঘরের একটা পেইন্টিং এ দুটো গাছ আমার কাছে প্লাস্টিকের মনে হয়। অনেকটা নৃশংস।

বন্যার কথা ভাবি। একবার বন্যা হয়েছিলো পাহাড়ের দেশে। বনজ-মানুষ বন্যাকে উপহাস করে বন্যার স্রোতে শাল এবং সেগুনের জোড়া জোড়া পাতা ভাসায় রাত তৃতীয়প্রহরে, পাতার উপর হালকা মাটির প্রদীপ। আমি শাল বনে হারিয়ে যাই শূন্যতার হাত ধরে। শূন্যতা আমাকে বাদামি এবং কালো বিষয়ে কিছু কথা বলে। বন্যার তরল আরেকটু গাড় হলেই শুকনো পাতারঙ। সে তারপরও থামে না এক একদিন সেজেগুজে আসে। আমি তাকে বকাবকি করি, দূরে নগ্ন বকপাখি আর কাক দেখাই। কাকপাখির বাসায় রূপার নথের কথা বলি। সে রাগ করে শান্ত হয়ে উবু হয়ে বসে মাঠের ঘাসে। ঘাসের জ্বরজ্বর শরীর, তাতে সিনেমার ক্লান্তি। ছায়াছবি যেদিন সিনেমা হলোÑ সেদিন আমরা হারালাম শ্যাওলার মন কেমন করা রঙগ›ধ।

আমি তার ডায়েরি অনুবাদ করতে গিয়ে পেলাম প্রজাপতির কাছে লেখা তার দুটি চিঠি। চিঠিতে হরিদার এবং নিকট আশ্রমের কথা আছে। শ্যাওলার রঙ আমাদের পুকুরে গাঢ় হলে তার কথা ভাবি। সে খুব ভালো ছবি আঁকতে পারতো না। অন্যদের জলরঙের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। আমি দৃশ্যখাদকের চোখে ঘুমটুম সব ভাঁজ করে রেখে একটা গুইসাপের দিকে তাকিয়ে থাকি। গুইসাপ মুগ্ধ হয়ে আমাকে দেখে। কেননা আমিই প্রথম জেনেছি, পাখিদের মধ্যে পুরুষরাই নর্তক হয়।

আমিও তার মতো থাকি জেগে শাহরিক মুগ্ধতা ও ক্লান্তিÑ আমি অবিশ্রাম বাদক, আমি মৌনপাখি, আমি অ›ধকার। আমি নিদারুণ পাপ এবং সুন্দর।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×