somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝুকিপূর্ণ শ্রম থেকে শিশুদের বিরত রাখুন

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এদেশের অধিকাংশ মানুষ এখোনো গরীব এবং অশিক্ষিত। বেচে থাকার জন্য এসব মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলছে। দরিদ্র এসব পরিবারে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জন্য পদে পদে অপেক্ষা করে লাঞ্চনা-গঞ্জনা। ছোটো এসব শিশু একটু বড় হলেই পেটের তাগিদে বাবা-মার ইচ্ছায় কিংবা স্বেচ্ছায় বেছে নেয় সংগ্রামী জীবন। ঝুকে পড়ে বিভিন্নধরনের ঝুকিপূর্ণ কাজে, যা তা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লক্ষের বেশি ছেলেমেয়ে যাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত। এদের বেশিরভাগই গ্রাম থেকে শহরে এসে ভীড় করে। তারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরী, ফার্ম, ক্যামিকেল ফ্যাক্টরী কিংবা সাভির্স সেক্টরগুলোতে কাজ নেয়।
প্র্রশ্ন হলো বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে শিশুশ্রম কতটুকু বন্ধ করা সম্ভব? এক কথায় উত্তর হলো এদেশে শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ এরা যদি কাজ বন্ধ করে দেয় তবে এদের দুবেলা দুমুঠো খেতে দেয়ার দায়িত্ব সমাজে কে নেবে? তাই বলে ঝুকিপূর্ণ কাজ কি সর্মথন করা চলে? ঝুকিপূণ শিশুশ্রম সর্মথনের প্রশ্নই উঠে না। যে সমস্ত কাজ শিশুর বিকাশে বা বেড়ে উঠার জন্য হুমকিস্বরূপ আমরা তার বিপক্ষে। এদেশে মোটামুটি ৪২.৪ মিলিয়র শিশু রয়েছে, যার মধ্যে ৭.৪ মিলিয়ন শিশু কোনো না কোনোভাবে শ্রমিক এবং নিজ কিংবা সংসারের দয়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত।
শিশু শব্দটি নিষ্পাপ। তারা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে খেলাধূলা, নাচ, গান, পড়াশুনা করতে ভালোবাসে। অন্তত ধনী-গরীব সব শিশুর জন্য একথাগুলো প্রযোজ্য। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য আমাদের দেশের শিশুদের একটি বড় অংশ লেখাপড়া করার এই সময়টিতে নিজ কিংবা পারিবারিক আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য কখনো নিজেকে কর্মজিবী হিসাবে, কখনোবা নানান ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে ফেলে। কবির ভাষায়- ‍ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। অথচ ছোটবেলা থেকে অধিকার বঞ্চিত এসব শিশুগলো নিজের ইচ্ছেগুলোকে কবর দিয়ে দেয়। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এমনকি প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়। অথচ প্রত্যেক শিশুর জন্য প্রাথমিক বা মৌলিক শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শিক্ষা মানুষের জীবনকে আলোকিত করে। নিরক্ষরতার অন্ধকারে ডুবে থাকলে সে জাতি কোনদিন উন্নতি করতে পারে না। আর শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সহজেই কেউ ঠকাতে পারে না। যেমন- আল-আমিনের কথা ধরা যাক। খুব ছোটবেলা আল-আমিনের বাবা তাদের ছেড়ে চলে যায়। তার মা বাসা বাড়ীতে কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিল। গরীব হলেও আল-আমিনের মায়ের অগাধ বিশ্বাস শিক্ষার উপর। তাই কষ্ট করে হলেও সে ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দেয় স্কুলে-প্রাথমিক শিক্ষা নেয়ার জন্য। আল-আমিন স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি বিকাল বেলা অবসর সময়ে পাড়ার দোকানে চা বিক্রি করে। নিজের হাত-খরচের টাকা চা বিক্রি করে অনায়াসেই এসে যায়। বেশ ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে মা-ছেলের সংসার। আল-আমিন এখন নিজে তারা মাকে শেখায় কিভাবে নিজের নাম দস্তখত দিতে হয়।
অপরদিকে আরেকজন বালক হানিফ। হানিফের অনেকগুলো ভাই-বোন। ছোটবেলা থেকে সংসারের দায়িত্ব সে নিজের কাধে নিয়ে নেয়। একটি কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে কাজ নেয়। ফ্যাক্টরির শ্রমিক ম্যানেজার শিশু শ্রমিক বলে হানিফকে টাকা পয়সা কখনো দেয়, কখনো দেয় না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- সে ঠিকমত কাজ করতে পারে না। অথচ হানিফ বড় একজন মানুষের সমান কাজ করে। ছোটো বলে তাকে একটুও বাড়তি কোনো সুযোগ দেয়া হয় না। এদিকে কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে কাজ করার জন্য দিনকে দিন তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। নানান ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
আমরা শিশুশ্রমকে সর্মথন কখনো করি না আর সেটা যদি হয় ঝুকিপূর্ণ তাহলে অবশ্যই তার সম্পূর্ন বিরুদ্ধে। প্রত্যেক শিশুর রয়েছে সুন্দরভাবে বেচে থাকার অধিকার। আর ওয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার। বাংলাদেশে কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েছে যারা ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রম এবং প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যবাধকতা করার জন্য কাজ করে আসছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে তোলার দায়িত্ব সবার। তাদের বোঝাতে হবে ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রম শিশুদের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর। তাদেরকে সুযোগ দিলে তারাও সব শিশুর মত লেখাপড়া আর সংস্কৃতির মাধ্যমে নিজেদের বিকাশ ঘটাত পারবে। আজকের শিশুরা অনেক বেশি সচেতন। মিডিয়ার মাধ্যমে তারা জানতে পারে তাদের অধিকারগুলো সম্পর্কে। এটা অবশ্যই একটি পজিটিভ দিক। নিজের দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রমানিত করার জন্য অবশ্যই উচিত নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার। আর এজন্য সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×