মেয়েটার ঠোঁট বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।দুই পাশের গাল গুলোও সরে যাচ্ছে এদিক ওদিক।অনেকটা কান্না করলে যে ভাব টা আসে,সেই ভাবটা।আমার দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।
_ ভাইয়া!!
_ বলো।
আর তুমি ইজি হয়ে দাঁড়াও,আমি তোমাকে এখানে মারতে আসি নি।
_ তাহলে আমাকে কেনো ডেকেছেন?
_ ডেকেছি জরিমানা নিতে।
মেয়েটা সত্যি একটু অবাকই হলো মনে হয়।হা হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।মনে হচ্ছে এই মাত্র সে দুনিয়ার মাটিতে পা রেখে ঘাস দেখতে পাচ্ছে।
_এই মেয়ে।
_জ্বী,
_ জ্বী কী!!কিচ্ছু জানো না নাকি?
_ কই না তো।কী জানবো?
_ বারান্দায় কয়টা গাছ তোমার?
_ জ্বী ভাইয়া, একটা।
_ একটা !!একটা গাছে কয় বালতি পানি ঢালা লাগে?
_ আমি তো বালতি তে করে পানি দিই না।আর আপনি এভাবে বলবেন না, আমি ওকে চামচে করে পানি খাইয়ে দিই।
_ চামছ দিয়ে খাইয়ে দাও মানে!গাছের মুখ আছে?
_ আরে নাহ।চামচে করে পানি দেই আর কী!
_ ওও।তাহলে আমার বারান্দায় প্রতিদিন সমুদ্র দেখি কেনো?.
কথাটার উত্তর না দিয়ে আবারো চুপ হয়ে গেছে।এতক্ষণ বেশ ভালো ভাবেই ফ্রি হয়ে কথা বলছিলো।এই কথাটা শুনে আবারো ভয় পাওয়া শুরু হয়েছে।তার মানে এর ভেতর নিশ্চই কিছু না কিছু আছে।জানতেই হবে ব্যপার টা কী_ _ _
_ কী হলো,বলছো না যে!বারান্দায় এত পানি আসে কোত্থেকে?
_ আমি কীভাবে জানবো বলেন,!
_ না জানলে জরিমানা দাও।
_ কিসের জরিমানা?সামান্য পানি ঢালার জন্য জরিমানা দিতে হবে?
_ তুমি শুধু পানি ঢালো নি,আরো কি কি মেশানো ছিলো ওখানে।
_ তো তাতে কী হয়েছে?
_ তোমার তো কিছু হয় নি।হয়েছে তো আমার জামা কাপড়ের।বারান্দায় যতগুলো শার্ট রেখে আসছি,সবটায় দাগ লেগে গেছে।
_ আচ্ছা, আপনি একটু দাঁড়ান।আমি আসছি একটু।
_ যাবা যাবা।আমার জরিমানা টা দিয়ে তারপর যাবা।
_ হ্যা তাই দিবো।
মেয়েটা চলে যাচ্ছে।আর আমি তার যাওয়া দেখতে লাগলাম।তার চলে যাওয়ার মধ্যে কেমন একটা চঞ্চলতা দেখতে পাচ্ছি।মনে হচ্ছে কাউকে কিছু এক্ষুনি দিতে যাবে,না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ পর আবার আসলো সে।আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেছে আবার।
কী হতে পারে এখানে?
অনেকগুলো ফুল,
একটা জামা,
নাকি একটা বই?
এগুলো ভাবতে ভাবতেই প্যাকেট টা খুললাম।
নাহ, ভেতরে একটা নীল শার্ট।
সাথে একটা চিরকুট।
তাহলে কী ও জেনে শুনেই সব কিছু করেছে?সব কিছু কেমন তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, চিরকুট টা পড়া যাক।
____
চিরকুট__
শুনুন,
আমি প্রতিদিন ফুল গাছ টায় একটু পানি দিতাম।আর বাকী গুলো আপনার বারান্দায় ফেলে দিতাম ইচ্ছা করে।
সুযোগে ছিলাম একটা নীল জামার।কাল দেখা মাত্র আর লোভ সামলাতে পারি নি।পানির সাথে কাদা মেখে ওটাতে ফেলে দাগ লাগিয়ে দিয়েছি।
জানতাম আপনি এটার জন্য আমাকে অবশ্যই ধরবেন।কারণ নীল জামাটি আপনার অনেক প্রীয় ছিলো।আর আমি আপনার সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে পেয়ে যাবো।
কী করবো বলেন!আপনাকে পাওয়ার জন্য অনেক লোভ হয়।হ্যা,এটাকে লোভ ই বলতে হবে।হোক না সেটা আপনার প্রীয় জিনিসগুলোকে ভেংগেচুরে।
আপনিও হয়তো আমার জন্য সেগুলোকে অপ্রীয় বলে ভাংবেন শত বার।
আসছি.. .. .. .
কাল বিকেল ৪ টায় অপেক্ষা করবো।নীল শার্ট আর আরো একটি চিরকুটের জন্য।
_____
আমি একটু হতবাক হয়ে আছি।মেয়েটাকে যতটা গাধা মনে করতাম,ততটা গাধা ও না।
আমি আরো একবার চিরকুট টা পড়ে নিলাম।আরো একবার,আরো একবার।যতবারই পড়ছি, সাথে একটা করে সিগারেট জ্বলছে।
নাহ।আজ অনেকগুলো সিগারেট খেয়ে নিবো।একসাথে অনেকগুলো।
কারণ আমি জানি,কাল থেকে সে আমাকে আর এগুলো খেতে দিবে না।
বলা চলে, সে আমাকে আর আমারই হতে দিবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮