somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: আয়নিত ভালবাসা

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝরাতে ঝিকঝিক ঝিকঝিক ট্রেনের শব্দে তন্দ্রা ছুটে যায় তন্দ্রার। অয়নের পাঠানো শেষ মেইলটার কথা মনে পড়ে, এমনই ট্রেনের কথাইতো লিখেছিল ও। তখনই প্রায় ছুটে গিয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে এসে ওয়ার্ডে সেভ করে রাথা অয়নের মেইলটা পড়তে শুরু করে ও।
" জানিস তন্দ্রা, ঐদিন খুব মনে পড়ছিল, যেদিন তুই আমি একসাথে জয়দেবপুর গিয়েছিলাম ট্রেনে। হুইসেলের শব্দে তুই যেরকম আঁতকে ওঠে বারবার আমার কাছে চলে আসছিলি, তখন তোকে আসলেই বুদ্ধু মনে হচ্ছিল। জানিস এখানকার ট্রেনগুলো নাদেশের ট্রেনের মত ওত হুইসেল দেয় না, মনে হয় কেউ যেন অনেক কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না, এমন একটা অবস্থা!"



বছর দুয়েক আগের কথা, তন্দ্রা তখন সবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। বেশ লাজুক প্রকৃতির বলে ও সহজেই কারও সাথে মিশতে পারত না। কিন্তু তারপরেও অন্তরা, মনির আর দিবার সাথে কি করে যেন ওর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একদিন ওদেরই আড্ডায় কোথাথেকে এক উদ্ভ্রান্ত ছেলে এসে হুট করে বসে পড়ল। মনিরই পরিচয় করিয়ে দিল,
"তন্দ্রা, ও হচ্ছে অয়ন। আমাদের সিনিয়র যদিও তবে অনেক ফ্রেন্ডলি। এবার অনার্স দেবে।"
:হ্যালো,...আচ্ছা তুমি কি অনেক কম কথা বল?
:না তেমন না।
মুখে বললেও তন্দ্রা আসলে যারপরনাই বিরক্ত হয়েছিল।



এরপর থেকে ওদের আড্ডায় প্রায়ই অয়নের আগমন ঘটতে থাকে। একথা সেকথার মাঝে অয়ন একদিন তন্দ্রাকে কিছু কথা বলে,

'তন্দ্রা লেগেছিল এ দু'আখিতে,
তন্দ্রা এসেই বলে গেল আমি রয়েছি কি ফাঁকিতে!'


খুব রেগে গিয়েছিল সেদিন তন্দ্রা এটা শোনার পর। ওঠে চলে গিয়েছিল আসর ছেড়ে। অয়ন অবশ্য সেদিন ওর রাগ ভাঙ্গাতে গিয়েছিল, কিন্তু খুবই যে অভিমানী তন্দ্রা!



:জানিসতো অয়ন ভাইয়া কটা প্রেম করেছে এই ভার্সিটি লাইফে?
:মানে!
:না মানে একটু বুঝে শুনে চল আরকি।
:কি বলতে চাস মুনির?
:যেভাবে ওদিন চলে আসলি তাতেতো বোঝাই যাচ্ছিল যা বোঝার। আর তাছাড়া অয়ন ভাইয়া এমনই যে ওর প্রতি মেয়েরা এমনই একটু উইক।
:তুই কি আমাকে আর সব মেয়ের মত মনে করিস?
:ফ্রেন্ড হিসেবে আমার তোকে যা বলার দরকার ছিল, তাই বললাম। আর কিছু না।



অয়নকে নিয়ে মুনিরের এমন কথা কেন জানি ভাল লাগছিল না তন্দ্রার।বাসায় এসে এটা নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করে ও। সেদিনও যখন ও অয়নকে একটা মেয়ের সাথে দেখেছে তখনও ওর রাগ হয়েছে অনেক। কিন্তু কেন?
একসময় এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতেই ছাদে চলে যায় ও। ফুল গাছে পানি দিতে দিতেই কে যেন ওর নাম নিয়ে ডাক দেয় ওকে।
:একি, তন্দ্রা! তুমি এখানে?
:আপনি? আপনি আমাদের ছাদে কি করছেন?
:সেটা তো আমারও প্রশ্ন!
:এ বাড়িতে আমরা থাকি, তিন তলায়।
:তাই? আমরাতো আজই আসলাম এ বাড়িতে। তিন তলার উত্তর দিকে ফ্ল্যাটে।
:ও। তাহলেতো দেখা হবে।
:হুম, তাতো হবেই। মুখোমুখি দরজা যেহেতু। আসি তাহলে গোছগাছ এখনও বাকি।
অয়নের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তন্দ্রা। এ কি ইশারা খোদা?



এরপর থেকে প্রায়শই বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় অয়নের সাথে ছাদে দেখা হতে থাকে তন্দ্রার। এবং আস্তে আস্তে এই দেখা করাটা একসময়ই প্রতিদিনই হতে থাকে। এর মাঝে তন্দ্রাকেও 'আপনি' থেকে 'তুমি' তে পদোন্নতি দেয় অয়ন। এমনই একদিন হঠ্যাত্‍ই অয়ন প্রশ্ন করে বসে তন্দ্রাকে।
: Do you like me?
:বুঝলাম না।
কিছুটা অবাক হয়েই বলে তন্দ্রা।
:নাহ, মনে হল তাই বললাম আর কি। হাহাহা!!!.........


এরকমই চলছিল, তন্দ্রা আর অয়নের। হয়ত অয়ন কখনও সেদিনকারমত কতগুলো আবেগের কথা বলে। আবার কখনও তন্দ্রা তার মিষ্টি গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনায়। অয়নের অনার্স পরীক্ষাও শেষ হয়ে যায় এরইমাঝে।

অয়নের হেঁয়ালীপূর্ণ কথা তার আবেগ তন্দ্রাতে পরিপূর্ণতা পাবার আগেই ইউকে তে পাড়ি জমায় অয়ন, তন্দ্রাকে তার ভালবাসার তন্দ্রায় রেখে। তখনও বুঝে উঠতে পারে নি তন্দ্রা, ওর মন আসলে কি চাচ্ছিল!





প্রায় এক বছরের বেশি হয়ে গেছে অয়ন তন্দ্রাকে রেখে গেছে। কাল রাতে মেইলটা আবারও পড়ার পর আজ হঠ্যাত্‍ করেই জয়দেবপুরে এসেছে তন্দ্রা, তাও ট্রেনে। কত মধুর স্মৃতিই তো আছে এখানে অয়নের সাথে। ঠিক করে এখানে বসেই মেইলের উত্তর তা দেবে ও। ল্যাপটপটা ব্যাগ থেকে বের করে মেইলের উত্তর লিখতে বসে তন্দ্রা।

" তন্দ্রা হয়ত জানেই না কারও ভালবাসায় সে আয়নিত। তাই সে হয়ত কখনওই বলে উঠতে পারে নি। হয়ত আমার লাজুকতাও কাজ করেছিল এতে। কিন্তু কেউ যদি সরাসরি বলত, তবুও কিন্তু সে কখনই না করে উঠত না। তন্দ্রাতো তন্দ্রা ছেড়ে সবসময়ই দেরি করে, এবারও নাহয় করল।"

মেইলটা সেন্ড করতে যেয়েও তন্দ্রার হাত কাঁপছিল। পাঠাবে কি পাঠাবে না এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে তন্দ্রা এখনও ভুগছে। এই সময়ে স্টেশনে একটা ট্রেনের হুইসেলের শব্দ পেয়ে সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্ব ঝেড়ে মেইল্টা পাঠিয়েই দেয় তন্দ্রা।


অয়নের ভালবাসাতেই আয়নিত হয়ে সারাজীবন নাহয় তন্দ্রাচ্ছন্নই থাকল তন্দ্রা!!!



সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৩৫
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×