সে যে দেখতে সুন্দরনা। এটা তার অপরাধনা। অপরাধটা হচ্ছে তুই মিথ্যা বলতে পারছনা।
মেয়েটার মধ্যে তেমন কিছু নেই। সহজ সরল সাধারণ একটা মেয়ে। বাঙ্গালী মেয়েরা যেমন হয়, তেমন একটা মেয়ে সে। কোন গুন নেই, সৌন্দর্য নেই এরকম একটা মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হবে এটা কেউ বিশ্বাস করতে চাইলোনা। বিশ্বাস করতে না চাইলেও কেউ আবার অবাকও হয়নি। কারন যারা আমাকে চেনে, তারা সবাই জানে আমি এমনই। সব সময় স্রোতের বিপরীতে দাড়াই। সবাই শুধু চেয়েছিল, আমি যেমন মেয়েটা ঠিক তেমনই হতে হবে।
কোন কিছু না থাকলেও মেয়েটার মধ্যে দুটো জিনিস আছে। যেটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সে গুরুজনের সেবা করে। তাদের ভক্তি করে। এরকম একটা মেয়ে আমার দরকার। সারা বছর বাবা-মাকে জ্বালিয়েছি। তারা আমার উপর রুস্ট। এখন এরকম একটা মেয়ে ঘরে এনে সে জ্বালাটা প্রায়চিস্ট করে নেবো। আরেকটা হচ্ছে তার দুটি চোখ। গোলগাল টানটান দুটি চোখ। ভয়ানক আকর্ষণ রয়েছে চোখ দুটিতে। দেখে মনে হয়, হাজারো স্বপ্ন ভরা। মায়ায় গড়া। একবার যে কেউ সেই চোখের দিকে তাকাবে। সেই মায়ার রাজ্যে হারিয়ে যাবে। শত চেস্টা করে সে চুম্বকীয় আকর্ষণ থেকে নিজেকে ফেরাতে পারবেনা। এরকম গভীর আকর্ষণ মায়ার সাগরে আমি হারিয়ে যেতে চাই। দিনভর কাজের শেষে যখন ঘরে ফিরবো। তখন তার চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে থাকবো। এভাবেই পার করে দেবো প্রতিটি রাত। ভাললাগা মুহূর্ত। রোমান্টিক সময়। সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে কেউ যেমন পুরো সমুদ্রের সৌন্দর্য অবলোকন করে শেষ করতে পারেনা। উল্টে এর সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যায়। তেমনি আমি হারিয়ে যাবো।
“আচ্ছা এতোই যখন স্বপ্ন তোমার। তাহলে তার মাঝে হারিয়ে না গিয়ে তাকে চিরতরে হারিয়ে ফেললে কেন?”
সেটা আরেক কাহিনী। কোন এক ভালবাসার দিনে সে অনেক সেজেগুজে এসেছিলো। সাধারণত সে তেমন সাজেনা। কিন্তু ঐদিন অনেক সাজগোছ করেছিলো। এসেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, কেমন দেখাচ্ছে আমাকে? সত্যি কথা বলতে কি, ওইদিন তার সাজটা আমার কাছে ভাল লাগেনি। কেমন যেন দেখাচ্ছিল তাকে। বুকের কথা বুকের মধ্যে না রেখে মুখে প্রকাশ করে দিলাম। সত্যি কথাটাই বললাম তাকে। ব্যাস হয়ে গেলো চুড়ান্ত দফারফা। ভালবাসার দিনে মানুষের ভালবাসা শুরু হয়, আর আমার হয়ে গেলো শেষ। কাংখিত ভালবাসা না পেয়ে সে হনহন করে চলে গেলো। সেইযে গেলো, আর আসেনি। আমারও আর তার মাঝে হারিয়ে যাওয়া হয়নি।
রুনুর চলে যাওয়ার গল্প শুনে রানু একবার নড়েচড়ে বসলো। এবার চেপে জিজ্ঞাসা করলো, “আচ্ছা বলতো! আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?” এবার আমি পড়ে গেলাম মহা ফাপড়ে। এক রুনুকে হারিয়ে ফেলেছি। এবার এই রানুকেও কি হারাতে হবে? তাকেওতো ভাল দেখাচ্ছেনা। সৌন্দর্য দিয়ে বাছ বিচার করলে রানুর চেয়ে রুনুই এগিয়ে থাকবে।
আমার উত্তরের জন্য রানু আর অপেক্ষা করলোনা। ঝড়ের বেগে চলে গেলো সে। যাবার সময় কাচ্চির বাটিটাও নিয়ে গেলো। উত্তরের বিলম্ব দেখে রানু আর অপেক্ষা করেনি। যা বুঝার বুঝে নিলো। সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে কেউ কখনো দেরী করেনা।
আমি দেরী করেছিলাম। কিন্তু সে চলে যেতে দেরী করেনি। আমিও আর তাকে যেতে বাধা দেইনি।
দুর থেকে তার যাওয়াটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে বললাম, তারা যে দেখতে সুন্দরী না। এটা তাদের দোষনা। দোষতা হচ্ছে তোর, কারন তুই মিথ্যা বলতে জানিছনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:০৮