somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতির একাল-সেকাল ও তুলসীপাতার গণতন্ত্র

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনীতির একাল-সেকাল ও তুলসীপাতার গণতন্ত্র
প্রাচীন আমলে রাজনীতি মূলত: রাজার নীতিতে সীমাব্ধ ছিল। ক্ষমতা দখল, প্রজার শাসনই ছিল রাজার মূর্খ্য কাজ। সেই যুগে রাজ-কার্যদি সম্পূর্ণ করার সুনিদিষ্ট কোন নিয়ম বা আইন ছিল না। পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাটের উপর রাজাগন তৎক্ষনীক ব্যবস্থা গ্রহনে উৎসাহ বোধ করতেন। অনেক ক্ষেত্রেই চাতুরতার সাথে শক্তি প্রয়োগই ছিল প্রধান উপায়। এতে রাজা বা শাসকের স্বেচ্ছাচারিতার চরম বর্হিঃপ্রকাশ ঘটত। কোন কোন ক্ষেত্রে সুহৃদ রাজা প্রজার মঙ্গলে সিদ্ধান্ত নিলে চারি দিক হৈই চৈই পড়ে যেত; তিনি হয়ে উঠতেন জনপ্রিয় ও প্রজাহিতৈষী শাসক। প্রাচীন বাংলার রাজনীতি বিশ্লেষন করলে, এই কথাটি ধ্র“ব তারার মতই উজ্জল প্রমানিত হয়। বাংলার গুপ্তবংশ, মৌর্যবংশ, পাল-সেন বংশ, সুলতানী কিম্বা মুঘল আমলের ইতিহাসে এর যথাযথ প্রমান মিলে। উদাহারন স্বরুপ আমরা মুঘল আমলের খোজাঁ সম্প্রদায়ের নির্যাতন, হেরেমের অজানা কাঁন্না, কিম্বা শক্তি দিয়ে অন্যায় ভাবে অপরের রাজ্য দখল ও রাজার শির উচ্ছেদ ইত্যাদির কথা বলতে পারি।
কিন্তু সভ্যতার এই যুগে রাজনীতি শব্দটি বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবি রাখে। জীবনের সাথে প্রয়োজন, মান, ও সময়ের সম্পর্ক যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের চেতনার বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। শাসকের প্রাচীন রীতি-নীতি মানুষের কাছে অপর্যাপ্ত ও অসম্পূর্ন মনে হয়। ফলে শাসক ও শাষিতের মধ্যে গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এমতবস্থায়, শাসকগন দিনকে দিনে তাদের শাসন ব্যবস্থায় নতুনত্ব আনতে বাধ্য হন। তাদের এই সংস্কার শাসক-শাষিতের মধ্যে সুদুর প্রসারি পরিবর্তন বয়ে আনে। আমাদের এই ভূ-খন্ডে বিট্রিশ শাসনামলের শেষের দিকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা হয় বলে অনেকেই মনে করে থাকেন। অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম ও ব্রিটিশ ভারতের প্রথম আইসিএস পাশকারী সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির নেতৃত্বে ১৮৮৫ সালে সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস নামে এই রাজনৈতিক দলে নিয়মতান্ত্রিক বিকাশ ঘটে। এতে শাসক ও শাসিতের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব ও কতর্ব্যবোধের সৃষ্টি হয়।এরপর পরই ১৯০৬ সালে মুসলীম লীগ, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলীম লীগসহ স্বাধীনতাওর অসংখ্য রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটে।
আধুনা-বিশ্বে রাজা-রাজনীতিও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা, কল্যাণ ও গণতান্ত্রিক শব্দ দুটি দ্বারা অলংকৃত। একবিংশ শতাব্দীর প্রায় ২০৬টি রাষ্ট্রের অধিকাংশই রাষ্ট্রই এই স্লোগানে মূখরিত এবং গণ-প্রজাতন্ত্রীক শাসন ব্যবস্থায় সু-প্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশেও উপরোক্ত দুটি শব্দকে সাংবিধানিক ভাবে সর্বচ্চে রাখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শব্দটির সমষ্টিগত অর্থ হচ্ছে ‘জনগনের শাসন ব্যবস্থা। গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- জনগনের জন্য, জনগনের দ্বরা গঠিত শাসন ব্যবস্থাই হচ্ছে গণতন্ত্র। এই ধরনের সরকার জনগনের মতের উপর প্রতিষ্ঠত ও ব্যক্তি স্বতন্ত্রের প্রতীক। আর কল্যাণ মূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে-রীতি-নীতি ও দায়িত্ব সম্পূর্ন চেতনায় জনগনকে খুশি রাখা ব্যবস্থা।
স্বাধীন বাংলার অভ্যূদয় থেকে আজ অব্দি গণতন্ত্র-ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমে কোন শাসকই যথাযথ ভূমিকা রাখেন নাই। অবস্থা বা পরিস্থিতি নয়, নিজেদের উদাসিনতা ও ব্যক্তিক অহমিকায় শব্দ দুটির ব্যবহারিক অর্থ বার বার হোঁছট খেয়েছে বা খাচ্ছে এবং এই শব্দ দুটি নিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্ঠা চলছে। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাঙ্গালীর মনে যে গণতান্ত্রিক অভিলাষ জাগিয়ে তুলেছিলেন; স্বাধীনার পরবর্তীতে তিনি নিজেই তার যথার্থ প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতা পিছনে নেতা-নেতৃত্বও বাংলাদেশ তিনটি শব্দই ওতোপোত ভাবে জড়িত। আশাহত জনগন তার এই ব্যর্থতাকে মেনে নেয়নি। তাই তাকে জীবন দিয়ে প্রমান করতে হয়েছে গণতন্ত্রও জনকল্যাণই সর্ব সাধারনের একমাত্র কাম্য। পরবর্তীতে জেনারেল জিয়ার ‘স্বেরাতান্ত্রিক গণতন্ত্র, এরশাদ সরকারের ‘স্বৈরাতন্ত্র, খালেদা জিয়ার গণতান্ত্রিক লেবাসের অন্তরালে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট-পাট জনগনকে আরও বেশী গণতান্ত্রিকমনা ও আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পথে, অগ্রসর হতে সাহসী ভুমিকা রাখতে অনুপ্রানিত করছে।
বতর্মান সরকারের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মক ভাবে ধাক্কা দিয়েছে। অধিকাংশেই সরকারের এই নিবার্চনকে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারি, ও বল প্রয়োগের নির্বাচন মনে করেন। ক্ষমতাসীন সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নও মৌলবাদের দোঁহায় দিয়ে এই নিবাৃচনের যতই সাংবিধানিক ব্যাখ্যা করুন না কেন? তা গণতন্ত্র বিশ্বাসী বাংলার মানুষের কাছে গ্রহন যোগ্যতা হরিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন সরকারের এই ভোটা বিহীন নিবাচর্ন ‘বালির বাধঁ। কারন আধুনা-বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনীতিক সফলতা জনসাধারনের মতামতের উপর নির্ভরশীল। ২০১৪ সালের এই নিবার্চন অতীত কালের সকল বির্তকীত নিবার্চনকে হার মানিয়েছে। সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সচেতন নাগরিক মাত্রই বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। নিযার্তন-নীপিড়ন করে নয়; ভাল ব্যবহারে জনসমথর্ন আদায় করাই গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।এটা অতিব দুঃখের বিষয় যে, ইতি মধ্যে নিবার্চনকে কেন্দ্র করে দেশের ৬৮টি জেলখানায় প্রায় ৭০ হাজার নাগরিকে অনিদ্রায় রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে। দেশের সিংহভাগ নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নাই বা করা থেকে বিরত থেকেছে। আর্ন্তজাতিক বিশ্ব এই নিবার্চনকে রয়কট করেছে। এমতব্যস্থায়, পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতকে সঙ্গি করে সরকারেরর স্মৃত্য বিজয় হাঁসি জনমনে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। বিষেজ্ঞদের মতে, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী গোটি কয়েক আরামপ্রিয় ব্যক্তির এই গণতন্ত্র, গণতন্ত্র খেলা দেশও দেশবাসীর জন্য মঙ্গল নয় বরং অশান্তিই বয়ে আনবে এটা অনেটাই নিশ্চিত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×