শিক্ষা/শিক্ষিতের সংজ্ঞা কি?
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বি,এ (অনার্স) এমএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সভ্যতার এই উৎকর্ষন মানব জাতির বিশুদ্ধ ভাবনার উন্মুক্ত ফসল। জীবন যাত্রার ধাপ পরিক্রমায় এই উন্নতি বা অগ্রগতি; জীবন জিজ্ঞাসার কাছে অত্যাবশ্যকীয়, যা যুগ যুগ ধরে সমাজ-সভ্যতাকে প্রভাবিত করছে। মান, সময় ও নিরাপত্তা এই তিনটি শব্দই জীবনচক্রকে আবর্তিত করছে বিধায়, পরিশোধীত চিন্তার অধিকারী মানুষকে এই ‘চক্রাকার আর্বতন, ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করছে। জীবনচক্রের এই অন্তহীন পথে, সুশিক্ষাই-মানব মুক্তির একমাত্র পাথেয়; যা দেশ, কাল, জাতি ও মহাকালের স্বাক্ষী। এখন প্রশ্ন আসে, ডযধঃ রং বফঁপধঃরড়হ? অর্থাৎ শিক্ষা কি?
একথা সত্য যে, আজ অব্দি পৃথিবীতে কোন পন্ডিতই শিক্ষার সুষম সংজ্ঞা প্রদান করতে পারেন নাই। যত গুলো সংজ্ঞা সভ্যার এই যুগকে প্রভাবিত করছে, তার অধিকাংশ সংজ্ঞাই আত্মকেন্দ্রীক-ও ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার ধারনা মাত্র। অভিজাত পরিবারের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন শিক্ষিত ব্যক্তিকে ‘হিরার অংটির সাথে তুলনা করেছেন,। তিনি তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘হিরার সুদৃঢ়তা ও উজ্বলতা এই দুটিই একজন শিক্ষিত ব্যক্তির মাঝে দিদিব্যমান থাকা চাই,। অনেকে মনে করেন, রবী ঠাকুরের এই সংজ্ঞাটিতেও তার পারিবারিক আভিজাত্যের ইন্দন রয়েছে। আবার পাশ্চ্যের পন্ডিরা বলেছেন, ঊফঁপধঃরড়হ রং ঃযব যধৎসড়হরড়ঁং ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ঃড় নড়ফু সরহফ ধহফ ংড়ঁষ। প্রশ্ন আসে, আত্মার সাথে দেহ ও মনের সমুন্বয়ের ধারনার ধরনের প্রকৃতি কি? অথবা আত্মার বাস্তব ভিত্তি কি?
ভাববাদীদের মতে, আত্মা এক অদৃশ্য বস্তুু। যার বাস্তব ভিত্তি নাই। কিন্তু অস্তিত্ব আছে। নিদিষ্ট নিয়ম বা শৃংখলার মধ্যে তার অনুভব লক্ষণীয়। অনেকে মনে করেন, আত্মার সাথে দেহ ও মনের ধারনা অনেকটাই রীতি-নীতি ভাব-আদর্শের দ্বারা জীবন পরিচালনা ও সৃষ্টি জগতের কল্যানমূলক ভাবনায় মুহিত থাকা। সেই অর্থে ধর্মীয় অনুশাসন ও বিশুদ্ধ চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই শিক্ষিত।
একথা সত্য যে, চিন্তার বিশুদ্ধতা শিক্ষিত সমাজকে সত্য প্রচারে ও প্রসারে বিধায়কের ভুমিকা পালনে সাহায্য করে বিধায়- অবশ্য অবশ্যই তাদেরকে চিন্তা বিশ্লেষনে মগ্ন থাকতে হবে এবং সেই সাথে যুগ যুগের ঘটনা-অভিজ্ঞতা ও তার সময় প্রেক্ষাপট বিশ্লেষনও প্রয়োজন।
বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ সৈয়দ মুস্তবা আলী বলেছেন, ‘শিক্ষার আশ্রয় অবশ্য অবশ্যই পুস্তকে; যাতে বহু কাল অব্দি শিক্ষামূলক বিশ্বসভ্যতার জীবন ও সমস্যা সর্ম্পকে সম্মক ধারনা বা বিশ্লেষন রয়েছে। যদিও একথা সত্য যে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষা ও শিক্ষিত দুটি শব্দই মানুষকে দ্বিধান্বিত করছে। অধিক অথের্র সাথে জীবনের সর্ম্পক, মানুষকে সুশিক্ষার বদৌলতে আত্মকেন্দ্রীক ও সংকীর্ন মনোভাপন্ন করে তুলেছে। তাই শিক্ষিত সমাজও রীতি-নীতি বা বিশুদ্ধ-আদর্শে আটকীয়ে না থেকে, ভোগবাদী ও ক্ষনস্থায়ী ভাবনায় বিভোর রয়েছে। যা শিক্ষিত সমাজের জন্য অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এই জন্য মধ্য যুগের এক কবি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলেছিলেন, এরা দুর্জন; শিক্ষিত হলেও পরিতাজ্য;। কিন্ত আধুনিক যুগেও এই সত্যের ব্যাপক বিশ্লেষন শিক্ষিত সমাজে অনুপস্থিত।
মানব জীবনের এই সংর্কীন সময়ে শিক্ষিত সমাজকে, অবশ্য অবশ্যই রীতি-নীতি ও বিশুদ্ধ আদর্শভিত্তিক একটি সুনিদিষ্ট পথের দিকে আঙ্গুলী নিদের্শ করা প্রয়োজন; যার বিশ্লেষন ও ভাবনা গোটা মানব জাতিকে যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করবে। কিন্তু অতিব দূঃখের সহিত বলছি যে, আামি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা সত্যেও আজ অব্দি স্যাত্ত্বিক শিক্ষিতের সাক্ষাৎ পাই নাই। বরং দেখেছি, এখানকার শিক্ষিতরা ভাব বিশ্লেষন নয়, ব্যক্তিত্বের দমকী দিয়ে কিম্বা একাডেমীক কাগজের জোরে ব্যক্তিক সুবিধার ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। এটি শুধু আজ প্রতিষ্ঠানিক কিম্বা সামাজিক সমস্যা নয়; বরং আর্ন্তজাতিক সমস্যাও বট্।ে
একথা অতিব সত্য যে, গোটা বিশ্বের অধিকাংশ শিক্ষিত সমাজ আজ ভিলাষ-বেশী ও নান্দিক শিক্ষার খোলসে ডিম্বাকৃতির রুপ ধারন করেছে। যাতে সময় ও সুয়োগ বুঝে অশুদ্ধ-বিশুদ্ধ দুই দিকেই ডিকবাজী খাওয়া যায়। ট্রেডিশন ও কমার্শিয়াল শিক্ষার কাছে তাত্ত্বিক ও বিশুদ্ধ আদর্শীক শিক্ষা আজ নিপীড়িত-নির্যাতিতও বলা যায়। মুক্ত চিন্তার নামে অশুদ্ধতা মানুষকে গিলে খাচ্ছে। যার দরুন জীবনের কাছে জিজ্ঞাসার প্রশ্ন আজ ব্যতিকে পরিনত হয়েছে। মর্ডান-ট্রেডিশনে, শিক্ষিত সমাজ ক্ষয় প্রাপ্ত জীবন ভোগে ব্যতি-ব্যস্ত। তা‘হলে এহেন অবস্থায়, শিক্ষা আর শিক্ষিতের সংজ্ঞা কি হওয়া প্রয়োজন???