somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাহোর থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ ও স্বাধীনতাত্তর বাংলার রাজনীতি

২৮ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জেনারেল জিয়াঃ-
1975 সালের 7 নভেম্বর ‘সিপাহী জনতার’ অভ্যূত্থানে খালেদ মোশারফ নিহত হন। 8 নভেম্বর এক ফরমানবলে ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক’ বিচারপতি আবু সাদাত মোঃ সায়েম 1975 সালের 15 আগষ্ট জারিকৃত সামরিক আইন বহাল রাখার ঘোষনা দেন। তিনি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সামরিক বাহিনীর ‘চিফ অব স্টাফ’ ও কমোডর মোশারফ হোসেনকে নৌ-বাহিনীর প্রধান এবং এয়ার ভাইস মার্শাল এম.জি তাওয়াবকে বিমান বাহিনীর প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক প্রশাসক নিয়োগ করেন। শেখ মুজিব আমলের বিক্ষুব্ধ আমলা ও প্রশাসনিক এলিট আবুল ফজল, কাজী আনোয়ারুল হক, ও আব্দুর রশিদদের পরিকল্পনা কমিশনার এবং ডঃ মীর্জ্জা সফিউল আযম ও আবুল খায়েরকে রাষ্ট্রপতির উপদেষ্ঠা নিয়োগ করেন। সচিবালয়, জনসংস্থা এবং জেলা পযার্য়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদেও তিনি রদ-বদলসহ অধিকহারে সামরিক বাহিনীর লোকদের নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি সুকৌশলে মেজর জেনারেল মীর শওকত আলীর নেতৃত্বে ‘নবম পদাতিক ডিভিশন নামে একটি বিশ্বস্ত আস্থা/অনুগত ডিভিশনের উৎত্থান ঘটান। 1976 সালের 21 নভেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোঃ সায়েম প্রধান সামরিক প্রশাসক পদ থেকে সরে দাড়ালে CMLA মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান উক্ত পদ দখল করেন। সামরিক প্রশাসক পদ দখলের এক বছরের মাথায় 1977 সালের 29শে এপ্রিল জেনারেল জিয়া ‘রাষ্ট্রপতি’ পদটিও দখল করেন। তিনি আইন শৃংখলা ও প্রতিরক্ষা খাতকে অধিকহারে গুরুত্ব দিয়ে এ-খাতগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। বিদেশীদের পুজিঁ বিনিয়োগের লক্ষে তিনি জাতীকরন নীতি প্রত্যাহার, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য কর মওকুফ এবং বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেন। মূলতঃ তার উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় 1976 সালের 27 নভেম্বর ‘ব্যাংক অব ক্রেডিট এন্ড কর্মাশিয়াল ইন্টরন্যাশনাল (B.C.C.I) প্রতিষ্ঠিত হয়। জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রীয় মূলণীতি ‘সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যায় সামাজিকও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায় বিচারের কথা প্রচার করেন। তার অনুসৃত-নীতিতে দেশ ‍পুজিঁবাদী বিশ্বের কাছ থেকে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋন অনুদানে এক অভূতপূর্ব অধ্যায়ের সূচনা হয়। তিনি মহানমুক্তি যুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের স্বার্থে 1975 সালের 31শে ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল ঘোষনা করেন। ফলে রাজাকার আল-বদর, আল-সাম ও শান্তি কমিটির সদস্যগন সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে পূর্নবাসীত হবার সুযোগ লাভ করেন। 1976 সালের 28 জুলাই এক নতুন ‘রাজনৈতিক দলবিধি’ ঘোষনা এবং রাজনৈতিক দল গঠন ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকালাপের অনুমোদন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন ‘রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ-সংগঠনের বেলায়ও এই কথা প্রযোজ্য থাকবে। শর্তে আরও উল্লেখ করা হয় পুনরাদেশ না দেওয়া পযর্ন্ত রাজনৈতিক দল গুলো ঘরোয়া রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারবে।
তার রাজনৈতিক দলবিধির পক্ষে ব্যাপক সাড়া জাগে। দেশে তৎকালীন সময় 53টি রাজনৈতিক দল অনুমোদনের জন্য নাম নিবন্ধনের আবেদন করলে, সরকার যাচাই-বাছাই করে 21টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন অনুমোদন করেন। 1977 সালের জানুয়ারী মাসে জেনারেল জিয়া সর্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ঘোষনা করেন এবং নিবার্চিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সম্মানী ভ্রাতাবৃদ্ধি এবং ইউপি কার্যপরির্ধিও বর্ধিত করেন। তৎপর তিনি 1977 সালের 30 এপ্রিল 19 দফা নীতি ও কর্মসূচী ঘোষনা করেন। তার প্রনিত 19 দফা কর্মসূচী ছিল নিন্মরুপ-
১। সর্বোতভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
২। শাসনতন্ত্রের চারটি মূলনীতি অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের সমাজতন্ত্র জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রতিফলন করা।
৩। সর্ব উপায়ে নিজেদেরকে একটি আত্বনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা।
৪। প্রশাসনের সর্বস্তরে, উন্নয়ন কার্যক্রম এবং আইন-শৃংখলা রক্ষার ব্যাপারে জনসাধারনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা।
৫। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীন তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা।
৬। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করা এবং কেউ যেন ভুখা না থাকে তার ব্যাবস্থা করা।
৭। দেশে কাপড়ের উৎপাদন বাড়িয়ে সকলের জন্য অন্তত মোটা কাপড় সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৮। কোন নাগরিক গৃহহীন না থাকে তার যথাসম্ভব ব্যাবস্থা করা।
৯। দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা ।
১০। সকল দেশবাসীর জন্য নূন্যতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা।
১১। সমাজে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতষ্ঠা করা এবং যুব সমাজকে সুসঙ্গহত করে জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা।
১২। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারী খাতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দান।
১৩। শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সুস্থ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
১৪। সরকারি চাকুরীজীবিদের মধ্যে জনসেবা ও দেশ গঠনের মনোবৃত্তিতে উৎসাহিত করা এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
১৫। জনসংখ্যা বিস্ফোরন রোধ করা।
১৬। সকল বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং মুসলিম দেশগুলির সাথে সম্পর্ক জোরদার করা।
১৭। প্রশাসন এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকাররে শক্তিশালী করা।
১৮। দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়নীতিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা।
১৯। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার পূর্ন সংরক্ষণ করা এবং জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুদৃঢ় করা।
1977 সালের এপ্রিল মাসে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষনে ‘তার অনুসৃত নীতি ও কর্মসূচীর প্রতি জনগনের আস্থা যাচায়ের জন্য 30মে প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধীকারের ভিত্তিতে দেশব্যাপী এক বিশেষপন্থার ‘গনভোটের’ আয়োজন করেন এবং এই গনভোটের পক্ষে ব্যাপক প্রচারনা চালান। এই গনভোটের নির্বাচনে 99.88% ভোটে তিনি জয় লাভ করেন। যদিও এই গনভোট বা ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটে ব্যাপক বল প্রয়োগ ও কাচুপির অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এই গনভোটের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারনা করলেও দেশের ‘দক্ষিনপন্থি ও ধর্মভিত্তিক’ রাজনৈতিক দলগুলো জেনারেল জিয়াকে অকুণ্ঠ সমর্থন দান করে। 1977 সালের আগষ্ট মাসে তিনি ‘পৌরসভা নির্বাচন’ ঘোষনা করেন। এই নির্বাচনে তাদের সমর্থীত প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে জয় লাভ করে।
1977 সালের 3 জুন সামরিক প্রশাসক জেনারেল জিয়া সরকার ‘রাষ্ট্রপতি ‘ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। এই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক দল; জাগদল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি; ভাসানী, ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ তফসিলি ফেডারেশন ) এর পক্ষে জেনারেল জিয়া ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে এবং ‘গনতান্ত্রীক ঐক্য’ জোটের পক্ষে (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, ন্যাপ (মোজ্জাফর), বাংলাদেশ পিপলস্ লীগ, গন-আযাদী লীগ) মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী নৌকা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। মোট 3কোটি 84 লক্ষ 96 হাজার 247 জন ভোটারের মধ্যে 53.54 ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধীকা প্রয়োগ করেন। এই নির্বাচনে জেনারেল জিয়া 76.63 ভাগ ভোট পেয়ে ‘প্রেসিডেন্ট নিবার্চিত’ হন। যদিও এই ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। 1978 সালের 30 জুন প্রেসিডেন্ট জিয়া 28 জন মন্ত্রী ও 2জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে একটি শক্তিশালী মন্ত্রীসভা গঠন করে বেসামরিক সরকার গঠনে উদ্যোগী হন। তার মন্ত্রীসভায় 18জন গনতান্ত্রিক, 4জন ন্যাশনাল আওয়ামী ভাসানী, 2 জন ইউপিপি ও তিনজন মুসলীমলীগও তজন তফসিলি ফেডারেশনের সদস্য ছিলেন। গনভোটের পরপরই জেনারেল জিয়া 1978 সালের 1লা সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় গনতান্ত্রিক ফ্রন্টের ব্যানারের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পি গঠন করেন। নব গঠিত বি.এন.পির আহব্বায়ক নির্বাচিত হন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। 1978 সালের 28 আগষ্ট জাগদলের আহব্বায়ক হিসাবে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার পদত্যাগ ও দলের বিলুপ্তি ঘোষনা করেন। ক্ষমতা বৈধকরন ও বেসামরিকি করনের লক্ষ্যে জেনারেল জিয়া 1979 সালের 27 জানুয়ারী জাতীয় সংসদের নির্বাচন ঘোষনা করেন। কিন্তু ব্যাপক ভাবে সামরিক দমনাভিযান, রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি, সাংবাপত্রের স্বাধীনতা খর্ব, রাজনৈতিক কার্যকালাপের উপর বিধি/নিষেধের কারনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি, জাতীয়লীগসহ অন্যান্যদল গুলো নির্বাচন বয়কট করলে জেনারেল জিয়া প্রথমে 12ই ফ্রেরুয়ারী এবং পরবর্তীতে 18ই ফ্রেরুয়ারী নির্বাচনের তারিখ পূর্নঘোষনা করেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র 39টি আসন পেলেও বি.এন.পি নিরন্কুষ সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। জেনারেল জিয়া নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির পদ দখলের পর 1979 সালের 6এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন। ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া ঈগিতে ডানপন্থি এবং ধর্মীয়দল গুলো সংবিধানের মূলনীতি বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের বিরোধীতা করে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেন। এই সময় মওলানা ভাসানী এবং বিমান বাহিনীর প্রধান তাওয়াব ইসলামী সংবিধান প্রনয়নের জন্য একটি বিবৃত্তি প্রদান করেন। মধ্যপাচ্যের দেশগুলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং পুজিঁবাদী বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো প্রেসিডেন্ট জিয়াকে সমাজতন্ত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে জিয়া সরকার 15 আগষ্ট থেকে 1979 সালের 6 এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক প্রশাসক থাকাকালীন সমস্ত কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতির জন্য সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী আনেন। এই সংশোধননীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহীর রাহমানির রাহিম অথার্ৎ দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি কথা সংযোজন এবং রাষ্ট্রীয় মূনীতির ক্ষেত্রে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ধর্মরনরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থাও বিশ্বাস এবং সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে অথনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচার কথাগুলো প্রতিস্থাপন করেন। তার এই শব্দগুলোতে বাংলা ভূ-খন্ডে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধীরা ব্যাপক ভাবে উৎসাহী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে আঘাত বর্ষিত হয়। 30শে মে 1981 সালের বর্ষণশ্রান্ত রজনীর শেষ প্রহরে ভোর 4টায় চট্রগ্রাম সেনা ডিভিশনের জি.ও.সি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের নেতৃত্বে একটি বিদ্রোহী সেনাদলের ঝটিকা আক্রমনে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে ঘুমান্ত প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অবঃ) জিয়াউর রহমান নিমর্ম ভাবে নিহত হন। সার্কিট হাউজের পাহারারত পুলিশ এবং প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষিরা প্রাণ-পন প্রতিরোধের চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা না হলে প্রতিরোধ যুদ্ধেই দেহ ত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে আবুল মঞ্জুরের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠনের ঘোষনা দেওয়া হয়। জিয়া হত্যার পর সংবিধান অনুয়ায়ী উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহন করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘চিফ অব ষ্টাফ’ মেজর জেনারেল এইচ.এম.এরশাদ সাত্তার সরকারের প্রতিপূন সর্মথন জানালে রাষ্ট্রপতি এক জরুরী বৈঠক ডেকে সমগ্র দেশে ‘জরুরী অবস্থা জারী’ করেন। সাত্তার সরকার ও সেনা প্রধান এইচ. এম.এরশাদের যৌথ শক্তির আহব্বানে জিয়া সরকারের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীগন ঐক্যবদ্ধ হলে সরকার ‘বিদ্রোহী সেনাদের আত্ম-সর্মপনের ঘোষনা দেন। উপায়ন্ত না দেখে বিদ্রোহী সেনাদলের একাংশ আত্মসম্পন করলে জেনারেল মঞ্জুরের নেতৃত্বে বিদ্রোহী সেনাদলটি সাফল্যের আশা ছেড়ে দিয়ে পালায়নের পথ বেচেঁ নেয়। 1981 সালের 1 জুন পালায়নরত অবস্থায় মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে বন্দি করা হয়। কিন্তু কোন কিছু জিগাসা করার পূর্বেই কয়েকজন উৎশৃংখল সেনা বিচার বহিঃভুত ভাবে তাৎক্ষনীক ভাবে মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করেন। যার ফলে 48 ঘন্টার মধ্যেই মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের অভ্যূত্থানের পরি সমাপ্তি ঘটে। উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সংবিধানের 123(2) ধারা মতে রাষ্ট্রপতির শূন্যপদ পূরনের লক্ষে 1981 সালের 15 নভেম্বর দেশে নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। বিচারপতি পদে আসীন থাকার কারনে তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহনে বাঁধা প্রাপ্ত হলে 1981 সালের 1 জুলাই তৎকালনী প্রধানমন্ত্রী শাহ্ আজিজুর রহমান জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব আনেন। 8 জুলাই আব্দুস সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে বৈধ উল্লেখ করে সংবিধানের ‘ষষ্ঠ সংশোধনী’ আনা হয়। তৎপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পির প্রার্থী হিসাবে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ডঃ কামাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম.এ.জি ওসমানী, মেজর এম.এ জলিল, মোহাম্মদ উল্লাহ, হাফেজী হুজুরসহ প্রায় 83জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাই শেষে 31জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। 64.80% ভোট লাভ করে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার নির্বাচনে জয় লাভ করলে আওয়ামী লীগসহ বিরোধীরা এই নির্বাচনে ভোট কারচুপির আভিযোগ আনেন। নির্বাচনে জয় লাভের পরপরই তিনি স্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে একটি মন্ত্রীসভার ঘোষনা দেন কিন্তু দলীয় কোন্দল ও সেনাবাহিনীর ‘চিফ অব ষ্টাফ’ মেজর জেনারেল এরশাদের ক্ষমতালিপ্সার কারনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের চার মাসের মাথায় দুইবার তাকে মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিতে হয়। পরিশেষে শাসনকার্য পরিচালনায় ব্যর্থতা, সামরিক বাহিনীর চাপ, অর্থনৈতিক মন্দা ও 1982 সালে 24 মার্চ সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ.এম এরশাদের সামরিক আইন জারির ফলে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির পদ থেকে আপসারিত হন।
জেনারেল এইচ. এম এরশাদের শাসনকালঃ-
1982 সালের 24 মার্চ সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ.এম এরশাদ ‘সামরিক আইন জারি করেন’ এবং সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে রাষ্ট্রীয় সর্বময় ক্ষমতা দখল করেন। যদিও নামে মাত্র ‘রাষ্ট্রপতি’ হিসাবে বিচার পতি এ.এফ.এম আহসান উদ্দিন চৌধূরীর নিয়োগ অব্যাহত রাখেন। 1983 সালের নভেম্বর মাসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি এ.এফ.এম আহসান উদ্দিন চৌধূরী জনদল নামে 208 সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষনা করেন। 1984 সালের 11 অক্টোবর ঢাকায় ‘জনদলের’ উদ্যোগে জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা জনাব কোরবান আলী, বি.এন.পির নেতা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধূরী, ইউপিপি নেতা কাজী জাফর, বি.এন.পি নেতা ব্যারিষ্টার আমিনুল ইসলাম যোগদান করেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় পরবর্তীতে ‘ জাতীয় ফ্রন্ট, গঠিত হয়। 1982 সালের 11 এপ্রিল ‘সামরিক প্রশাসক’ হিসাবে জেনারেল এরশাদ 5 দফা কার্যক্রম ঘোষনা করেন।
1. শতকরা 7 হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন।
2. অপচয়মূলক ব্যয়রোধ।
3. বেসরকারী পুজিঁ বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান।
4. খাদ্য স্বয়ং সম্পূর্ন অজর্ন এবং
5. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন।
জেনারেল এরশাদ শাসনব্যবস্থা সংকুচিত করনের জন্য 45টি মন্ত্রনালয়ের পরির্বতে 26টি মন্ত্রণালয় এবং 60টি বিভাগের স্থলে 45টি বিভাগের ঘোষনা দেন। তিনি 155টি জনসংস্থানকে সংকুচিত করে 109টিতে নামিয়ে আনেন। মূলতঃ ব্যয় ও দুনীর্তি সংকুচনের লক্ষ্যে তিনি এই পদক্ষেপ গ্রহন করেন। 1983 সালের 28শে এপ্রিল প্রশাসনিক কাঠামো পূর্নগঠন কমিটির সুপারিশের আলোকে তিনি ‘সনাতন থানা’ প্রশাসনকে সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। 7নভেম্বরে প্রথম পর্যায়ে 45টি থানাকে মান উন্নয়ন থানায় রুপান্তরিত করেন।
1983 সালে এই সকল মান উন্নিত থানার নামকরন করেন ‘উপজেলা’। তিনি পুরাতন কিছু সংখ্যক মহকুমাকে ‘জেলায়’ উন্নিত করেন। বিচার ব্যবস্থা জনগনের দ্বারগোড়ায় পৌছে দেওয়া এবং সহজ লভ্য করার জন্য এরশাদ সরকার উপজেলায় ‘স্বতন্ত্র ম্যাজিষ্ট্রেট ও মুনসেফ আদালত’ স্থাপন করেন। তিনি রংপুর, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা চট্রগ্রাম ও সিলেটে ‘হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ’ স্থাপন করেন। 1983 সালের 20 মার্চ কৃষিমন্ত্রী এ.জেড.এম ওবায়দুল্লাহ খানের প্রদত্ত রিপোটের আলোকে ভূমি সংস্কারের জন্য কতগুলো নীতি নির্ধারন করেন। তিনি শিল্প-নীতিকে আরও প্রসারিত করে বেসরকারী খাতকে উৎসাহীত করেন এবং বেসরকারী খাতে ব্যাংক স্থাপন ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের অনেকগুলোকে বেসরকারী মালিকানায় ফেরত প্রদান করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডঃ এ মজিদ খানের নেতৃত্বে ‘শিক্ষানীতি’ প্রনয়ন শিক্ষাব্যবস্থাকে মৌলিক স্তর, প্রস্তুতি স্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, এবং উচ্চ শিক্ষাকে চারটি স্তরে বিভক্ত করেন। তিনি প্রাথমিক পযার্য়ে বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি আরবী শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 1983 সালের 11 ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন। 1লা এপ্রিল হতে ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি প্রদান করেন। 27 ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ অধ্যাদেশ জারি করে 4352টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং 1984 সালের ফ্রেরুয়ারী মাসে 76টি পৌরসভা ও তিনটি মিউনিসিপাল কর্রোরেশনের নির্বাচন সম্পূর্ন করেন। 1986 সালের 1লা জানুয়ারী ‘জাতীয় ফ্রন্টভুক্ত পাচটি (বি.এন.পি শাহ-আজিজ, ইউপিপি কাজী জাফর, মুসলিম লীগ বি. এ. সিদ্দিকী, এবং গনতন্ত্রী পার্টি) দল নিজেদের ভেতরে মতানৈক্যদূর এবং নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান সুসংহত করনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় পার্টি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম দেন।
1984 সালের 24 মার্চ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। 27 শে মে একই দিনে রাষ্ট্রপতি এবং সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। কিন্তু 15 দলীয় ঐক্যজোট, 7 দলীয় ঐক্যজোট, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ সামরিক আইন প্রত্যহার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিলে জেনারেল এরশাদ পুনরায় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহন, রাজনৈতিক কার্যকালাপ নিষিদ্ধ এবং শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করেন। তৎপর কড়া সামরিক বিধি নিষেধের মধ্যে 16 ও 20 মে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 1985 সালের 21 মার্চ ‘সংবিধান অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পযর্ন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে এইচ.এম এরশাদের প্রদত্ত ও গৃহিত কর্মসূচীসমূহের প্রতি জনসমথর্ন করেন কি না এইমর্মে গনভোটের ব্যবস্থা করা হয়। উক্তগন ভোটে শতকরা 94.14 ভাগ আস্থা সূচক ভোটে জয়লাভ করেন। 1986 সালের 7 মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করা হয়। আওয়ামী লীগ 8 দলীয় জোট, জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগসহ 28টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে। নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়যুক্ত হয়। যদিও এই নির্বাচনে বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন 7 দলীয় জোট নির্বাচনকে বয়কট করে। নির্বাচনের পরবতীতে আওয়ামী লীগও এরশাদ সরকারের বিরোদ্ধে মিডিয়া ক্যূর অভিযোগ তুলে। জেনারেল এইচ.এম এরশাদ সেনাবাহিনীর ‘চিফ অব ষ্টাফ’ থেকে পদত্যাগের পর নির্বাচন কমিশনার 1986 সালের 15 অক্টোবর ‘রাষ্ট্রপতি’ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগও বি.এন.পিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করলেও এরশাদের ‘জাতীয় পার্টি ও হাফেজ্জী হুজুরের খেলাফত আন্দোলন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। এই নির্বাচনে এরশাদ 86% ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
1983 সালের জানুয়ারী মাসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এরশাদ বিরোধী 15দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। 14ই ফেব্রুয়ারীতে ঢাকায় ‘ভবিষ্যৎ ছাত্র রাজনীতি’ নিয়ে এরশাদ সরকারের সাথে ছাত্রদের মতানৈক্য দেখা দিলে পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। এতে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। 1983 সালের সেপ্টেম্বর মাসে বি.এন.পির নেতৃত্বে গড়ে উঠে এরশাদ বিরোধী 7 দলীয় জোট। তারা পাচঁ দফা কর্মসূচী নিয়ে আন্দোলনে নামে। শ্রমিক সম্প্রদায় ‘স্কপ, গঠন করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের গতি সঞ্চারন করে। 15 দল, 7 দল ও শ্রমিক কর্মচারীদের দুবার্র আন্দোলনের চাপে এরশাদ সরকার 1983 সালের 1লা এপ্রিল থেকে ঘরোয়া এবং নভেম্বর থেকে সমগ্র দেশে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার অনুমতি দেন। সরকার বিরোধী জোটগুলো 28 নভেম্বর সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। এতে সাধারন জনতার ব্যাপক অংশ গ্রহনে সরকার ভীত হয়ে পুনরায় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।
1984 সালের 24 মার্চ এরশাদ সরকার উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করলে বিরোধী দল গুলো তা বয়কট করে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করেন। কিন্তু সরকার বিভিন্ন অযুহাতের দাবী করে অনেকটাই জোর জবর-দস্তি করে 1985 সালের 16 মে এবং 20মে দু-পর্যায়ে উপজেলা নির্বাচন সর্ম্পূন করেন। কিন্তু ব্যাপক জনরোষের পরিপেক্ষিতে 1986 সালে 7মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন 15 দলীয় জোট, বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন 7 দলীয় জোট অংশ গ্রহনের প্রস্তুতি নিলে সরকার নানা কৌশলে তাদের বাহিরে রাখেন। পরবর্তীতে এই প্রহসন মূলক নির্বাচনকে সকল বিরোধীদল এক যৌথ ইস্তেহারের মাধ্যমে বয়কট করেন।
1987 সালের 29 মার্চে 31জন বুদ্দিজীবি গনতন্ত্র পূনরুদ্ধারে সরকারের বিরোদ্ধে একটি ঐতিহাসীক বিবৃত্তি প্রদান করেন। ফলে নতুন করে সরকার বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যজোটের সৃষ্টি হয়। ফলে 15 দল, 7 দল, 5 দলীয় নেতাদের সমঝোতায় 22 থেকে 24 জুলাই পযর্ন্ত 54 ঘন্টা হরতালের আহব্বান করা হয়। ব্যাপক জনরোষের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকার 1লা আগষ্ট ‘জেলা পরিষদ বিল, পূর্নবিবেচনার জন্য সংসদে ফিরত পাঠান। তা সত্যেও বিরোধীদের পক্ষ থেকে 10ই নভেম্বর ঢাকা অবরোধ কমসূচী পালনের ঘোষনা দেওয়া হয়। 28 অক্টোবর শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জনগনকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আসন্ন 10 নভেম্বর অবরোধ সফল করার আহব্বান জানান। সরকারও পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে রাজধানীমূখী সকল ট্রেন, বাস, লঞ্চ, নৌকা ও যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যম বন্ধ করে দেন। কিন্তু জনতা শতবাধা বিপত্তিকে দূরে ঢেলে পায়ে হেটেই রাজধানী অভিমূখে যাত্রা শুরু করে। 10 নভেম্বর জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান পযর্ন্ত লোকে লোকারন্ন হয়ে উঠলে সরকারদলীয় ক্যাডারও পুলিশবাহিনী-সাধারন জনতার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়। এই সময় পুলিশের গুলিতে বহুলোক হতাহত হয়। সরকার 12 নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেন। ফলে গনরোষ শহর থেকে গ্রামাঞ্চলেও জড়িয়ে পড়ে। 27 নভেম্বর রাতে রাষ্ট্রপতি এরশাদ সারা দেশে জরুরী অবস্থা জারি করেন। 3 ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের থাকা জামায়েত-ই-ইসলামীর সংসদ সদস্যগন পদ ত্যাগ করেন। 6 ডিমসম্বর রাতে সরকার সংসদ ভেঙ্গে দেন এবং 10 ডিসেম্বর শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি প্রদান করে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। কিন্তু বিরোধদলীয় ঐক্যজোট সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনিহা প্রকাশ করে- 1988 সালের 28 ফেরুয়ারী এক সমাবেশের ডাক দেন। এই সমাবেশে জামায়ে-ই-ইসলামীও যোগদান করে। সমাবেশে ব্যাপক জনসাধারনের উপস্থিতিতে সরকার ভীত হয়ে 3শে মার্চ জাতীয় সংসদ ও একই তারিখে পৌর-নির্বাচন ঘোষনা করেন। এই নির্বাচনে আ. স.ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন ‘একাত্তর দলীয় সম্মিলত ঐক্যজোট (কপ) ফ্রিডম পার্টি, 27 দলীয় ইসলামী জোট, জাসদ (সিরাজ), জনদল, বাংলাদেশ খিলাফত আন্দোলন অংশ গ্রহন করলেও আওয়ামী নেতৃত্বাধীন 15 দলীয় জোট, বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন 7 দলীয় জোট এবং 5 দলীয় জোট নির্বাচনকে বয়কট করেন। কিন্তু সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্য-বাধকতা দেখিয়ে শেষ পযর্ন্ত নির্বাচন করেই ফেলে।
1990 সালের 10 অক্টোবর বিরোধী দলীয় ঐক্যজোট সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালন করলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। 10 অক্টোবর 22টি ছাত্র সংগঠন একত্রিত হয়ে সর্বদলীয় ‘ছাত্র ঐক্য পরিষদ’ গঠন করেন। সব দলীয় ‘ছাত্র ঐক্য পরিষদে’ পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয় যে‘ স্বৈরাচার এরশাদের পতন না হওয়া পযর্ন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। খুব দ্রুতই দেশের পেশাজীবি, বুদ্ধিজীবি সংগঠন গুলো ছাত্রদের সাথে একাত্ম ঘোষনা করেন। 11 অক্টোবর ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদের’ ডাকে সারা দেশে ধর্মঘট পালিত হয়। এতে পুলিশের গুলিতে 1জন ছাত্র নিহত হলে আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারন করে। ফলে সরকার রাজধানীর স্কুলও কলেজ গুলো অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করলে 18 অক্টোবর ছাত্ররা ঢাকা বিশাববিদ্যালয় বন্ধের সরকারী আদেশের বৈধতা চ্যালেন্স করে আদালতে একটি রিট পিটিশন করেন। ডঃ কামাল হোসেন প্রচাষ্ঠায় 11 ও 12ই নভেম্বর আদালত সরকারী আদেশকে অবৈধ ঘোষনা করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলে দেওয়ার রায় প্রদান করেন। ফলে সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে ডঃ কামার হোসেনের বাড়ীতে ব্যাপক বোমা ও গোলা বর্ষন করে।
1990 সালের 24 জানুয়ারী চট্রগ্রামে এরশাদ বিরোধী এক সমাবেশে পুলিশ ব্যাপক গুলা বর্ষন করে। ইতিপূর্বে 1988 সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের গুলিতে বহু লোক হতাহত হয়। 14 15,ও 16 অক্টোবর সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। 26 অক্টোবর বগুরায় ক্ষিপ্ত জনতা জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। 27 অক্টোবর সারা দেশে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কমসূচীর ডাক দেওয়া হয়। 17 নভেম্বর জাতীয় যুব সংহতির সমাবেশে উপস্থিত দুইমন্ত্রীর নিদের্শে সরকারী বাহিনীর পান্ডা এবং পোষ্য পুলিশ ছাত্রদের উপর ব্যাপক গোলা বষর্ন করে। ফলে আস্তে আস্তে আন্দোলন ক্ষিপ্ত থেকে ক্ষিপ্ততর হতে থাকে। 1990 সালের 19 নভেম্বর 8, 7, ও 5 দল এরশাদ আন্দোলন জোরদার ও ক্ষমতা হস্তান্তরের রুপরেখা ঘোষনা করেন যা ঐতিহাসিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে পরিচিতি লাভ করে। তিন দলীয় জোটের এই রুপরেখায় বলা হয়-
1. 8 7 ও 5 দলীয় জোটভূক্ত কোন দল এরশাদ সরকারের অধীনে ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে না। জোটভূক্ত দলগুলো কেবলমাত্র একটি নিরপেক্ষ নিদর্লীয় সরকারের অধীনে ‘সার্বভৌম সংসদ’ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে।
2. প্রকৃত গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এরশাদ সরকারকে বাধ্য করা হবে। পদত্যাগের পূর্বে এরশাদ সরকারকে তিনজোটর নিকট গ্রহনযোগ্য উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
3. এরশাদ সরকারের পদত্যাগের পর নবনিযুক্ত উপ-রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে গঠিত নিরপেক্ষ ও নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধিনে তিন মাসের মধ্যে অবাধ ও সুষ্টভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিন হবে।
4. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘সার্বভৌম’ সংসদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
5. বেতার ও টেলিভিশনসহ সকল গনমাধ্যমকে স্বাযত্তশাসন প্রদান করতে হবে।
তিনজোট কতৃর্ক 19 নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রুপরেখা ঘোষিত হলে প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর একে ‘পর্বতের মুষিক প্রসর’ আখ্যা দেন। 20শে নভেম্বর বিরোধী জোটগুলো একত্রিত হয়ে 24 ঘন্টা হরতালের ডাক দেন। হরতালে পুলিশ গুলি চালালে 1জন নিহত এবং শত শত হরতাল সমর্থক আহত ও গ্রেফতার হন। 22 শে ডিসেম্বর ছাত্রঐক্য মিছিলে সরকার গুলা বর্ষন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রনামধারী 6 জন সন্ত্রাসী ব্যাপক তান্ডব শুরু করে। 25 নভেম্বর সমগ্র হলে অবস্থানরত ছাত্ররা তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মুখর হয়ে উঠে তখন সরকারী মদদপুষ্ট 6জন ছাত্রনামক সন্ত্রাসী ব্যাপক গুলা বর্ষন শুরু করে। ফলে ছাত্রঐক্য আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থারত সরকারী মদদপুষ্ট এই সন্ত্রাসীদের বিতাড়নে বদ্ধপরিকর হন। এই সময় ছাত্রঐক্যের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে 17 বছরের তরুন শ্রমিক নিমাই নিহত হলে ছাত্ররা বিক্ষব্ধে ফেটে পড়ে। তাদের বিক্ষুব্ধ মিছিলটি বাংলা একাডেমীর কাছে আসলেই সরকারী বাহিনীর সদস্যরা মিছিলের উপর ব্যাপক গুলা বর্ষন করেন। তাদের গুলিতে রিস্কা আরোহী ঢাকা মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের অন্যতম নেতা ডাঃ শামছুল আলম খান (মিলন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএস.সির পাশে রাস্তায় নিহত হন। এই ঘটনার প্রতিবাদে ডাক্তারা তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় নেমে পড়ে এবং ডাঃ মিলন হত্যার প্রতিবাদে স্ব-স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করে। ছাত্রঐক্য নেতৃবৃন্দের ডাকে প্রেসক্লাবের সামনে একটি প্রতিবাদী সভা অনুষ্টিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা এই সময় ‍পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিকেল 4টায় শেখ হাসিনাকে 32 নম্বর ধানমন্ডি বাসায় অন্তরীণ রাখা হয়। বেগম খালেদা জিয়া নজরদারী এড়িয়ে আত্ম গোপন করতে সমর্থ হন। এই সংবাদ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র দেশের সাধারন জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ফলে রাষ্ট্রপতি এরশাদ রাতের বেলায় টি.ভি ভাষনে সমগ্র দেশে জরুরী অবস্থা জারি করেন। ঢাকায় রাত 9টার পর এবং চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীতে রাত 12টার পর থেকে অনিদিষ্ট কালের জন্য কার্ফু জারি করেন। দেশের সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের এক মাসের ছুটি ঘোষনা করা হয়। এই ঘোষনার প্রতিবাদে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা লাঠি-সোঠা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রায়ের বাজার, মিরপুর, রামপুরা প্রভূতি স্থানে সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষব্ধ করে। রাতের গভীরে সরকার সি.পি.বি নেতা আব্দুল কাইয়ুম মুকুলকে গ্রেফতার করেন। বি.এফ.ইউ.জে এবং ডি.ইউ.জে এর সভায় উপস্থিত সাংবাদিকগন জরুরী অবস্থা, সেন্সরশীপের প্রতিবাদে ধর্মঘট এবং পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ ঘোষনা করেন।
28 নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বরনকালের বৃহত্তর ছাত্র মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মতিঝিল এলাকা প্রদর্শন করে। একই সময় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটও সরকার বিরোধী মিছিলের আহব্বান করেন। বিকেলের দিকে ছাত্রও শিক্ষকদের একটি শান্তিপূর্ন মিছিল ‘শিশু একাডেমীর’ কাছে পৌছালে পুলিশ তাদের উদ্দেশ্যে কাদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেন। একই দিন রামপুরায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ, ধানমন্ডিতে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা, ঝিগাতলায় শ্রমিক-জনতার মিছিলে গুলি এবং মালিবাগে জনতা রেলপথ উপড়িয়ে ফেলে রাজধানীর সাথে উত্তর বঙ্গের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। সারা দেশে বহুসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়। 30 নভেম্বর বায়তুল মোকারম মসজিদের তিন জোটের সম্মিলিত কর্মসূচী অনুয়ায়ী ‘এ-পযর্ন্ত আন্দোলনে নিহতদের’ উদ্দেশ্যে এক গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামজ শেষে ডাঃ কামাল হোসেন, বেগম মতিয়া চৌদুরী, নূরুল ইসলাম নাহিদ, মোজাহিদুর ইসলাম সেলিমসহ প্রায় 20হাজার লোকের মিছিলে পুলিশ ব্যাপক লাঠি চার্চও গুলি বষর্ন করেন।
1লা ডিসেম্বর শনিবার তিনজোটের ডাকে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে হরতার পালিত হয়। ঐদিন ঢাকার মীরপুরে বি.ডি.আর জনতা সংঘর্ষে 7 জন নিহত হয়। প্রেসক্লাবের সামনে পেশাজীবি-সাংস্কৃতিক জোটের মিছিলে পুলিশের ব্যাপক লাঠি চার্জ এবং ডেমরা শ্রমিক মিছিলে গুলি চালালে 1 জন নিহত হয়। রাতে বি.বি.সির খবরে বলা হয় চট্রগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লায় সংঘর্ষ অব্যাহত এবং সারা দেশে 12জন নিহত। 2 ডিসেম্বর চট্রগ্রাম ও নারাযগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে হরতাল পালিত হয়। মতিঝিল ও জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সমাবেশে শেখ হাছিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার লিখিত বিবৃতি প্রচার করা হয়। উক্ত সমাবেশে পুলিশ ব্যাপক লাঠি চার্জ করে। এই সময় আইন ঝীবিগন অনিদিষ্ট কালের জন্য আদালত বর্জনের ডাক দেন। সারাদেশে বিক্ষব্ধে পুলিশের নির্যাতনে 5জন নিহত হলে মীরপুরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 3 ডিসেম্বর সচিবালয়ে বি.সি.এস প্রশাসন ক্যাডারের 205 জন সদস্যের পদত্যাগ পত্র পেশ এবং 58টি এনজিও চলমান গনতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম ঘোষনা কর। একই দিন বি.বি.সিতে স্বাক্ষাৎদান কালে উপ-রাষ্ট্রপতি মত্তদুদ আহম্মদ পেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তরকে কাল্পনিক ব্যাখ্যা বলে উড়িয়ে দেন। 4 ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথে জনতার ঢেউ নামে। সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকতা, তৃতীয় ও চতুর্থ্র শ্রেনীর কর্মচারীরা কর্ম বর্জন ও আন্দোলনের সাথে একাত্ম ঘোষনা করেন। উপ-রাষ্ট্রপতি মত্তদুদ আহম্মেদ এই সময় ওকাব এর ডাকা সাংবাদিক সম্মেলন বর্জন করেন। ছাত্রঐক্য পরিষদের বুলেটিনে ‘বিদ্রোহ আর বিপ্লব আজ চারিদিকে, প্রকাশ ও প্রচারনায় জনতার মাঝে ব্যাপক উন্মাদনার সৃষ্টি করে। পুরো ঢাকা বাসী আন্দোলনের উদ্বিপনায় রাস্তায় নেমে আসে। রাত দশটায় ইংরেজী সংবাদের এরশাদের পদ ত্যাগ, উপ-রাষ্ট্রপতি পদে উপযুক্ত ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি নিয়োগের আহব্বান এবং জরুরী অবস্থার অধিনে প্রদত্ত অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করা এবং সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষনা প্রদান করেন। রাত 11টায় কাওরান বাজারের আল্লাহওয়ালা ভবনে জাতীয় পার্টির অফিসে ভঙ্গচুর এবং আ.স.ম আব্দুর রবের অফিসে অগ্নি সংযোগ করে। 5 ডিসেম্বর সকাল 7:35 মিনিটে ঢাকা বেতারে শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রচার এবং দেশবাসীর প্রতি আইন-শৃংখলা ও শান্তি বজায় রাখতে ধৈর্যধারনের আহব্বান জানান।
8, 7,ও 5 দলের পছন্দসই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিচারপতি সাহাবুদ্দিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে ‘কেয়ারটেকার সরকারের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিন জোটের অনুরোধে দায়িত্ব শেষে পুনরায় বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়ার শর্তে 1990 সালের 6 ডিসেম্বর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন।
বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের অমর কৃতিত্ব 1991 সালের 27শে ফেরুয়ারী একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সন্ত্রাসমুক্ত নিবাচর্ন উপহার দেওয়া। ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ হিসাবে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রের সর্বচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয়েও জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া সবকটি ভাষনে বার বার বিচারপিতি পদে ফিরে যাবার আকুলতা প্রকাশ করে ছিলেন। তার শাসনামলকে প্রধানতঃ দুই পযার্য়ে ভাগ করে আলোচনা করা যুক্তিযুক্ত।
1990 সালের 6 ডিসেম্বর থেকে 1991 সালের 18ই সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত সংবিধান অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান হিসাবে এবং পরবতীর্তে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর কার্যকরের মধ্যদিয়ে 1991 সালের 19 সেপ্টেম্বর থেকে 9 অক্টোবর পযর্ন্ত বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে। তিনি তিনজোটের প্রদত্ত 31জন বিশিষ্ট নাগরিকের তালিকা থেকে 17জনকে নিয়ে একটি উপদেষ্ঠা পরিষদ গঠন করেন। তার দ্বারা নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ঠাগন হলেন-
1. অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী- শিক্ষা।
2. অধ্যাপক ওয়াহিদুদ্দীন াাহম্মদ-জ্বালানী খনিজ পদার্থ এবং পূতকর্ম।
3. অধ্যাপক রেহমান সোবাহান- পরিকল্পনা।
4. অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মদ- সংস্কৃতি ও খাদ্য।
5. অধ্যাপক ডাঃ এ.এ মাজেদ- স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা।
6. বিচারপতি এম. এ খালেক- আইন, বিচার ও সংসদীয় বিষয়।
7. জনাব কফিল উদ্দিন মাহমুদ- অর্থ।
8. জনাব ফখরুদ্দীন আহম্মদ-পররাষ্ট্র।
9. জনাব আলমগীর এম.এ.কবীর- সমাজকল্যান, মহিলাবিষয়ক এবং যুব উন্নয়নও ক্রিড়া।
10. জনাব এ.কে. এম মুসা- শিল্প মন্ত্রণালয়।
11. জনাব পজলুর রহমান- সেচ, পরিবেশ, বন, মৎস্য ও পশু সম্পদ।
12. জনাব এ.বি.এম.জি কিবরিয়া-যোগাযোগ এবং টেলিযোগাযোগ্
13. জনাব ইমাম উদ্দিন আহম্মদ- বানিজ্য।
14. জনাব বি.কে দাস-ত্রাণ ও পূর্ণবাসন।

15. জনাব এম. আনিসুজ্জামান- কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থা।
16. জনাব চৌধূরী এম.এ আমিনুল হক- শ্রম, জনশক্তি এবং অভ্যন্তরীন সম্পদ।
উপদেষ্ঠা পরিষদ গঠন কারর পর তিনি জাতীর উদ্দেশ্যে এক ভাষনে ‘দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন তার মূল কাজ অতিশীঘ্রই জাতীয় সংসদের নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অপর্ন। 1991 সালের 27 ফেব্রয়ারী জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করা হয়। মনোনয়ন পেশের শেষ তারিখ ছিল 13ই জানুয়ারী। এই নির্বাচনে 298টি আসনে মোট প্রার্থী ছিল 27774 জন। সারা বাংলাদেশের 24142টি কেন্দ্র ভোট গ্রহন হয়। এই নির্বাচনে সব কটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও বি.এন.পি দলীয় মনোনয়ন প্রদান করে এবং নির্বাচনে বি.এন.পি সর্বাধিক আসনে জয় লাভ করে এবং আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বৃহত্তর দল হিসাবে আত্ম-প্রকাশ করে।
1991 সালের 14 আগষ্ট জাতীয় সংসদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন গৃহিত হয়। এই আইনে সংসদ সদস্যগনকে প্রকাশ্যে ভোটদানের বিধান রাখা হয়। 28শে সেপ্টেম্বর তারিখে জারিকৃত 33নং অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন সংসদ সদস্য তার নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট না দিলে তিনি তার সদস্য পদ হারাবেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলো প্রকাশ্যে ভোট দান এবং 33নং অধ্যাদেশ আইনের তীব্র বিরোধীতা করেন। তারা এই আইনকে সংবিধান বিরুধী আখ্যা দেন। ফলে সরকার 1991 সালের 3 অক্টোবর 33নংঅধ্যাদেশটি বাতিল করলেও প্রকাশ্যে ভোটদানের বিধানটি চালু রাখেন। 1991 সালের 8 অক্টোবর তারিখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বি.এন.পির প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদের প্রথম স্পিকার জনাব আব্দুর রহমান বিশ্বাস এবং আওয়ামীলীগ, বাকশাল (বিলুপ্তকৃত) গনতন্ত্রী পার্টির হয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বদরুল হুদা চৌধূরী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। এই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস 172টি এবং বিচার পতি বদরুল চৌধূরী 92টি ভোট লাভ করেন। ফলে আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে এই নির্বাচনে জয়যুক্ত ঘোষনা করা হয়। 1991 সালের 10 অক্টোবর সংবিধানের একাদশ সংশোধনী মোতাবেক বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মদ তার পূর্বতন পদে অর্থাৎ প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যান। পরবতীর্তে তিন জোটের রুপরেখা অনুয়ায়ী সংসদীয় সরকার ব্যবষ্থার প্রবর্তন করেন। (চলবে----)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×