somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহরের দিনলিপি ও একটা হারানো বছর

১৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
একটা নরম মেঘ সকালটা কে ধরে রেখেছে ভোরের খুব কাছাকাছি,
নিরব রাস্তার বৈদ্যুতিক তারে বসে মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে দু একটা বিস্মৃত শালিক
আজ এই শহরের সব ঘড়িগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কোন বিকেল না রেখেই রাত নেমে যাবে ঝুপ করে।
আমি চাইছি সকাল টা দীর্ঘ হোক, এক সহস্র বছরের সমান দীর্ঘ!
অথচ হয়তো সেটা দু প্রহরের বেশি দীর্ঘ হলেই
দরজা খুলে চেয়ে বসবো একটা কড়মড়ে বাঁশ পাতা খামের মতো হলুদ দুপুর!


২।
অবশেষে বৃষ্টি নামলো, অন্ধকার ঘর,
চোখ বন্ধ করে দেখি-
ভিজে রাস্তা, জুবুথুবু দেবদারু
একাকী বুড়ো ক্যাসেলের ব্রিজ,
নবগঙ্গায় ঝড় এলেই নিখোঁজ হবার স্বপ্ন দেখা
বৈঠাহীন সেই পাগল ডিঙি..


৩।
ইচ্ছে করে পৃথিবীটাকে দুহাতে ধরে দলাই মলাই করেদিই,
বদলে দিই এর মানচিত্র,
যেখানে কোন দেশ নেই,
একটি মাত্র মহাদেশ, একটা সাগর।
ছেড়ে দিই কিছু পরিব্রাজক, দু চারটা সুখি মানুষ,
এঁকে দিই মেঘেঢাকা একটা চির বর্ষার অক্ষাংশ,
একটা চির বসন্তের,
একটা আলোছায়া বন....


৪।
হতাশার কোন সঙ্গী হয় না, কষ্টের কোন বন্ধু।
দুঃখ বরাবর ই এক নীলকালো আকাশ
ইলেকট্রিসিটিহীন শহরে একটা মরা চাঁদের ঘোলা আলো,
খোলা ছাদে গল্পরত কিছু মুখ
একাএকা ফ্রস্ট থেকে কিছু উচ্চারণ
হঠাৎ অনুজের কন্ঠে অপার্থিব হয়ে ওঠছে রবীন্দ্রনাথ..
বিনা অভিযোগে থেমে গেছে সব গল্প, সব কোলাহল,
এমন সব হারানো সময়...


৫।
খড় রং রোদ দেখে চোখ জ্বলে
বাতাসর স্পর্শে কাঁপে দেহ,
শার্টটাকে জড়িয়ে ধরতে চাই দু হাত,
কোথা থেকে জেনেছে তারা উষ্ণতা মানে শুধু জড়িয়ে ধরা!
খক খক শব্দে বিজাতীয় ভাষায় কথা বলে উঠে ও কে, অসুস্থ সময়?
শুনি কিয়ামত সন্নিকটে,
অথচ এখনো কোন খবর না দিয়ে চলে আসা মৃত্যুকে আমার অসম্ভব মনে হয়।


৬।
সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে চোখ রাঙাচ্ছো পারদ স্কেলের ৯৮.৩ দাগে
সীমান্ত রেখায় আর কতক্ষণ?
ওপাশে জাহান্নাম এপাশে বধ্যভূমি (তোমার অথবা আমার)
এসো চুমু খাই, আগুন চুমুতে দেখি কতটা তোমার বিষ?
তুমি না আমি..দেখি কে কাকে পায়?


৭।
বনের মাঝে নিঝুম একটা সরোবর,
যার নীরবতা কে চুরমার করে জলে ছায়া ফেলে উড়ে গেল একটা মাত্র পাখি....
এমন তীব্র দুপুরে এর নাম মন খারাপ!
এর নাম অসীম অকারণ!


৮।
এ এক নিজের সাথে কথা বলা ছাড়া কিছু নয়।
প্রত্যাশায় দ্বিতীয় কেউ নেই যে বুঝতে সক্ষম,
এখন তো আয়নাতে যে সেও যথেষ্ট অপরিচিত অবয়ব নিয়ে দাঁড়ায়।
এখানেও কোন কথা নেই।
দীর্ঘ একটা নীরবতা একশত বছরের মতো,
তবে জড় স্থির নয় -
একটা বায়ুশূন্য টানেল দিয়ে ছুটে চলা শব্দহীন ট্রেনের মতো-
প্লাটফর্মের অপেক্ষার প্রত্যাশা বুকে নির্বাক,
যেখানে ভেতর টা চিৎকার করে যাচ্ছে উচ্চারিত হচ্ছে না কোন শব্দ!
মুক অভিনয়? হতে পারে, তবে অভিব্যক্তি প্রকাশ পাচ্ছে না একটুও..।


৯।
সময়ের উল্টো পিঠ থেকে উঠে এসেছে মুখোশের উল্টো পিঠ!
আমি কি জানতাম না মুখোশের কথা?
মুখোশের পর মুখোশের স্তর
আর মুখোশের পেছনে আর একটা মুখোশের আড়ালে থাকার গল্প?!


১০।
বিস্মৃতির ঘুমে জেগে আছে চোখ
সেখানে অন্ধকার প্রবেশ করছে জলপ্রপাতের মতো
আর সে জলস্রোতে ভেসে যাচ্ছে অধর,
ওষ্ঠ, হাত, হাতের আঙুল- পুরোটো অবয়ব,
ভেসে যাচ্ছে দিন রাত অতীত বর্তমান সময়ের হিসাব
চেয়ে আছি এক মুক অন্ধকারের ভেতর!


১১।
পৃথিবীর দীর্ঘতম রাতের অন্ধকারে জেগে আছে বাতিস্তম্ভ গুলো।
দু পাশের সারিবদ্ধ ইমারত সব ভূতের মতো ঈষৎ আলো অন্ধকার প্রলেপে।
এই রাতে একা ঘরে ফিরছে যে তার সামনে দাঁড়িয়ে এক অন্য শহর!


১২।
এখানে দুটো নদী মিলে তৃতীয়টির জন্ম
অথচ তিনটিরই এক নাম
একতীরে দেবদারু প্রাচীর, ওপাশে পাখিদের গ্রাম!
এই অন্ধকার ছায়া বক্রাকার পথে
যেখানে ডুমুর আর সুপারী বাগান-
মেঘের পাহারা এড়িয়ে জলে ছায়া ফেলে আছে পূর্ণিমা পেরনো চাঁদ,
টেলিফোনের তারে একটা ধূসর পেঁচা,
মাথার উপর কাব্যহীন বাতিস্তম্ভ
তবু আমরা এইখানে জীবন ও মৃত্যুকে ভুলে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম..



সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×