somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাস্তি

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“মার্গারিটা?” ফেন্ডির দামী পার্সটা মার্বেলের পাব কাউন্টারে রেখে বসতে বসতে বলল মেয়েটা। হাতে মোহিতোর গ্লাস আলতো ভাবে ধরে রেখেছে। সম্ভবত পেছন থেকে আসার সময়েই নিয়ে এসেছে কারো হাত থেকে, অথবা আরো আগেই এসেছে, কিন্তু আমার সামনে আসেনি।
আমি মাথা নাড়লাম, “ফ্রেঞ্চ সেভেন্টি ফাইভ।”
অপ্রস্তুত মুখে বলল, “স্যরি, আসতে একটু দেরি করে ফেলেছি। কলিগ ছিল সঙ্গে এতক্ষণ। কর্নারেই ছিলাম। তুমি যে চলে এসেছো আমি খেয়াল করিনি। নাহলে আরো আগেই ওকে বিদায় করে দিয়ে চলে আসতাম।”
আমি আড়চোখে তাকালাম। ঝিকমিকি একটা টপস পরেছে, সাথে জিন্স। ইজি পিক্সি হেয়ার কাট দেয়া ব্রাউনিস চুলে। এত ছোট চুলেও দূর্দান্ত লাগছে। মাশকারা ভারি করে লাগিয়েছে। সাথে রগ এলার লুমিনাসের গাঢ় লাল লিপস্টিক দেয়া। হালকা করে মুখে মেক আপ করেছে। মুখ চক চক করছে ঘামে। যদিও একটু আগেই একটা টিস্যু ওয়েস্ট বাস্কেটের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে মুখ মুছে।
“কতক্ষণ বসেছিলে?” টুল টেনে পাশে বসল মেয়েটা। সবুজ রঙের চোখ। ছবিতে নীলচে কাল মনে হয়েছিল।
আমি গ্লাসে ধীরে ধীরে চুমুক দিলাম একটা। জ্বলছে গলাটা কেন যেন। ঢোক গিলে বললাম, “ঘণ্টা খানেক?”
অপরাধীর মত করে ফেলল মুখটা, “আয়্যাম রিয়েলি স্যরি… আসলেই দেরি করে ফেলেছি।”
আমি হাসলাম সামান্য, “তুমি দেরী করে না আসলে জানতাম না অপেক্ষাও এত সুন্দর হয়।” সস্তা ফ্লার্ট। মেয়েটার প্রভাবিত হবার কথা না।
হলও না। কথাটা শুনে খানিকটা ভদ্রতা সূচক মাথা ঝাঁকালো মেয়েটা কেবল। সম্ভবত এত বেশি সস্তা রসিকতা আশা করেনি আমার কাছে। আমি আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম মেয়েটা কি চিন্তা করছে? স্যোসাল মিডিয়াগুলোতে মেয়েটার প্রোফাইলগুলোয় যতটুকু ঘেটেছি, কাছাকাছি একটা স্বস্তা এপার্টমেন্টে ভাড়া থাকে শেয়ারে। বয়স ছাব্বিশ। আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গ। নিউক্যাসল কিংবা এরকম কিছু একটা দেখেছিলাম হোম টাউন। এখানে কাজ নিয়ে এসেছিল। ভিসার মেয়াদ থাকতে থাকতে পিআর নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পায়নি। এখান ওয়ার্কিং ভিসা নিয়ে টানা টানি চলছে। কোনো পার্মানেট চাকরি নেই। টুকটাক রেস্টুরেন্ট আর সুপার শপে জব করে। একটা ওল্ড হোমেও সপ্তাহে তিনদিনের জন্য ডিউটি করে দিয়ে আসে।
আমি জিজ্ঞেস করতে গেলাম না যে কোন কলিগ বা বন্ধু ছিল সাথে। মেয়েটার পার্সের চেহারা দেখার পর পরই বুঝে গেছি যা বোঝার। বিদেশ বিভূঁইয়ে ওয়ার্কিং ভিসা নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকা যে মেয়েকে ওল্ড হোমের মত জায়গাতেও চাকরি করতে হয়- সে যদি ফেন্ডির পার্স বহন করে, সেটা অবশ্যই নিজে জোগার করেনি। কেউ দিয়েছে। এবং যে সে দেয়নি। যার এত এত ডলার খরচ করে এই জিনিস গিফট করার মত তেল আছে, একমাত্র সেই ব্যাক্তিই পারবে; এবং সেটার অবশ্যই নিছক বন্ধুত্বের বিনিময়ে হওয়ার কথা না।
“তোমার নামটা যেন কি?” মেয়েটা হাতের উলটো পিঠ দিয়ে নাকের ঘাম মুছল।
“নীল।”
“ঔ, স্যরি, ভুলে গিয়েছিলাম। ফোনে তো বলেছিলে। আমারই মনে থাকছে না। আসলে তোমাদের ওদিকের নামগুলো আমার কাছে খুব কঠিন লাগে।” স্মিত হাসল মেয়েটা।
“তোমার নাম কিন্তু সহজ। সেলিনা এম্বার। আমাদের দেশে কিন্তু গ্রামের দিকে এই সেলিনা নাম খুব চলে।“
“সত্যি! জানতাম না তো!” যদিও তেমন অবাক কিংবা আনন্দিত মনে হল না মেয়েটাকে। কথা ধরে রাখার জন্য কথা বলা যেন। “তা আলফ্রেডের সঙ্গে তোমার পরিচয় কীভাবে?”
“আমার এজেন্টের সাথে আসলে পরিচয়। আমার সঙ্গে না। আমার এজেন্টই আলফ্রেডকে খুঁজে বের করেছিল। সেখান থেকে পরে তোমাকে সাজেস্ট করল।”
“এজেন্ট?” ভ্রু কুঁচকে তাকালো সেলিনা।
“মানে আমার ম্যানেজার বলতে পারো।”
“ওহ। তা কীসের ব্যবসা যেন তোমার?”
“মেডিসিন আর মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্টের।” সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলাম।
“এই শহরে কবে এসেছো?” এক চুমুকে মোহিতোর গ্লাসটা খালি করে দিল মেয়েটা।
“দশ বারো দিন হচ্ছে।”
“ঘুরতে না কাজে?”
“দুটোই বলা যায়। তবে কাজ শেষ এখন। বাকি কটা দিন বিশ্রাম করতে চাই।” বিশ্রাম শব্দটায় হালকা জোর দিয়ে হাসলাম ওর দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা কেন যেন ঠিক সহজ হচ্ছে না আমার সঙ্গে। আড়ষ্টতা কাটছে না তার।
“ভীড় বাড়ছে তাই না? আমি টানা ভীড় আর মিউজিকের মধ্যে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারি না। টায়ার্ড লাগতে থাকে।”
আমি হাতের গ্লাসটায় একটা চুমুক দিয়ে সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালাম, “তুমি চাইলে আমরা ক্লাব থেকে বের হয়ে বাহিরে কোথাও যেতে পারি। এখানে যেহেতু অনেক বেশি শব্দ।“
সেলিনা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “তা অবশ্য যাওয়া যায়। আমাকে আলফ্রেড বলেছিল এখানেই পাশের মোটেলে রুম রিজার্ভ করা আছে আমার নামে, তোমাকে নিয়ে ওখানে যেতে। যদি চাও এখনই সেখানে যেতে পারি?”
“ইচ্ছে করছে না। এরচেয়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে আধা ঘণ্টা ড্রাইভ করে আমার কটেজে ঘুরে আসতে পারো। সাগরের বাতাসে ড্রাইভ করলে ক্লান্তি কমবে কিছুটা।”
“প্রস্তাবটা খারাপ না। তুমি কি গাড়ি এনেছো সঙ্গে?”
“হ্যাঁ। একটা লিমোনিজ ভাড়া করে দিয়েছে আমার এজেন্ট।”
“একাই এসেছো এখানে? নাকি ড্রাইভার সাথে আছে?”
“নাহ। একাই চালিয়ে এসেছি। মোটামুটি সিগন্যাল রিড করতে পারি। সাইড দিতে জানি। পুরদস্তুর ড্রাইভার হতে পারিনি। জীবন বাঁচিয়ে চলার মতো চালাই আরকি।”
“সেকি! আসলেই ভাল করে চালাতে পারবে?” সন্দিহান চোখে তাকায়।
“তুমি পারো?” পালটা প্রশ্ন করলাম।
“পারি। একটা ওয়্যার হাউজের ফোর্টি ফিট হাই কিউব কন্টেইনার চালাতাম ছয় মাস। লাইসেন্স আছে।” নির্লিপ্ত গলায় বলল।
“বেশ, তুমি চালাবে।” পকেট থেকে চাবি বের করে মার্বেলের টেবিলের ওপর দিয়ে ছুঁড়ে দিলাম স্লাইড করে। ওর পার্সের গায়ে গিয়ে থামলো চাবিটা।
খানিকটা বিস্ময় চোখে উঁকি দিলেও মাথা ঝাঁকালো, “ওকে।” চাবির তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি ফ্রেঞ্চ সেভেন্টি ফাইভের বাকি অংশ গলায় ঢেলে গিয়ে উঠে পড়লাম। কার্ড বের করে পে করে দিলাম। তারপর সেলিনাকে পথ দেখিয়ে বের করে নিয়ে আসলাম ক্লাবটা থেকে। ভীড় আসলেই বাড়ছে। ঠেলে ধাক্কিয়ে বের হবার সময় পোলিশ কয়েকটা ছেলে সেলিনার দিকে চেপে এলো। আমি যদিও টেনে সরিয়ে নিলাম। কিন্তু মেয়েটার জিন্সে একজন পেছন থেকে চাপড়ে দিল বেশ কুৎসিত ভাবে। আমি ভেবেছিলাম সেলিনা নিজেই ঘুরে দাঁড়িয়ে চড় কষাবে। কিন্তু প্রায় কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গীতে আমার হাত ধরে বের হয়ে এলো।
বাহিরে নিকষ কালো আকাশ। তারা জ্বলছে তার মাঝে দু চারটা। চাঁদ নেই। রাস্তা খালি। নির্দিষ্ট দূরত্বে ল্যাম্পপোস্ট জ্বলছে। পার্কিং লটে গাড়ি আর বাইক সারি সারি করে রাখা। সেলিনা চাবি তুলে বাটন টিপতেই পার্কিং এর ডান দিকে আমার লিমোনিজটা শব্দ করে উঠল। সামনের লাইট জ্বলে উঠল। দুজনেই চুপচাপ গাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। বিয়ারের ক্যান পড়ে রয়েছে রাস্তায়। গাড়ির দিকে যেতে যেতে সেলিনা একটা ক্যানে লাথি দিয়ে সরিয়ে দিল। নিস্তব্ধ পার্কিং লটে সেই শব্দটা অনেক জোরে কানে বাজলো। আমি গাড়ির দরজা খুলে সামনের সিটে উঠে বসলাম। পাশে তাকাতে দেখলাম, ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলেও সেলিনা উঠল না। কি যেন ভাবছে পার্কিং এর বাইকগুলোর দিকে তাকিয়ে।
“কি হল? দাঁড়িয়ে আছো যে?” আমি ভ্রূকুটি করলাম।
সেলিনা কিছু বলল না। ঘুরে দুই সাড়ি ওপাশে বাইকগুলোর দিকে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে গাড়ির ভেতর দিকে গলা বাড়িয়ে তাকালাম। স্ট্রিট লাইটের আবছা আলোয় দেখা গেল পার্সের ভেতর থেকে চক চকে একটা ধারালো ছুঁড়ি বের করেছে সেলিনা। এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফড়ড়ড় ফড়ড়ড় করে টান দিয়ে একে একে চারটা বাইকের সিট চিঁড়ে দিল। একেবারে ফোম শুদ্ধ চিঁড়ে দিয়ে তুলে ফেলেছে। এমনকি নিচের ওয়েল লাইনেও ছুঁড়ি চালিয়ে দিল নির্দিধায়। তারপর একদম সন্তুষ্ট মনে ফিরে এলো গাড়িতে। পার্সে ছুড়িটা আগের জায়গায় ঢুকিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। দরজা লাগিয়ে আবছা অন্ধকারে আমার দিকে তাকিয়ে এই প্রথম হাসলো, “ছ্যাঁচড়াগুলোর আশা করি বাইক ঠিক করাতে খবর হয়ে যাবে। এই দফায় সিটের ওপর ছুঁড়ি মেরে ছেড়ে দিলাম। এরপর যদি ভুলেও কোনোদিন আবার ব্যাকে হাত দেয়- সেক্স লাইফের ইতি টেনে দিবো একেবারে!”
আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম। যদিও হাসিটা বিশেষ শক্ত মনে হল না নিজের কাছেই। কেমন যেন ভোঁতা, নেতিয়ে পড়া দূর্বল হাসি মনে হল। “বাইকগুলো যে ঐ ছেলেগুলোরই তুমি শিওর তো?”
“মেয়েদের চোখ সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই নীল। আমি ক্লাবে ঢোকার সময়েই ছেলেগুলো ঢুকেছিল। তোমার কি মনে হয় আন্দাজে কিছু বাইকের সিট কাভার ছিঁড়ে আসব আমি?”
“তাও ঠিক। তাও ঠিক।” আমি সব বুঝে ফেলার মত করে মাথা ঝাঁকালাম।
গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে সেলিনা আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল, “কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“পোলজিথ বিচ হাউস।”
শিস দিয়ে উঠল সেলিনা, “কত জন উঠেছো ওখানে?”
“আমি একাই।”
“ঠাট্টা করছো?” বিশ্বাস হল না যেন ওর।
“ঠাট্টা করবো কেন? কাজে এসেছিলাম। দল বল নিয়ে হ্যাঙ্গওভার করতে না। একাই তো উঠব। হ্যাঁ, সাথে আমার এজেন্ট স্টুয়ার্ট ছিল দিন ছয়েক। এরপর ওর লোকাল অফিসে ফেরত গেছে। এখন একাই আছি।”
“তাই বলে আস্ত একটা সী বিচ কটেজ ভাড়া করতে হবে! খরচ জানো?” সেলিনা অবিশ্বাসী চোখে তাকায় আমার দিকে, “মানলাম ব্যবসা করো। কিন্তু তোমাকে দেখে আমার মোটেও সেরকম বড়লোক মনে হয়নি। লিমোনিজ তো যে কেউ ভাড়া করে।”
আমি হাসতে লাগলাম।
পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে বাহিরের সাগর ঘেষা রাস্তায় নিয়ে এলো। জানালা খোলা। সাগরের ঠাণ্ডা লোনা বাতাস এসে চোখে মুখে লাগছে।
“তোমার ফ্যামিলির কেউ আসতে চায়নি? বসন্তের এই সময়টায় এদিকে অনেকেই ঘুরতে আসে। সময় ভালই কাটত।”
“কেউ নেই। আমি একাই।” সংক্ষিপ্ত জবাব দিলাম।
একটু অবাক হল সেলিনা। যদিও প্রশ্নটাই অবান্তর করেছে। বুঝতে পেরেছে হয়ত। ফ্যামিলির কেউ থাকলে নিশ্চই সেলিনাকে নিয়ে বের হতাম না আমি।
“আচ্ছা তোমার বয়স কত? ইফ ইউ ওয়ান্ট টু সে…” সেলিনা পরিবেশটা সহজ করতে চাইল।
আমি লুকিং গ্লাসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “এই ধরো হাজার বছর খানেক? বিসি ১৮৯৩ এর আশে পাশে?”
হেসে উঠল মেয়েটা, “আচ্ছা তাই! তা এত হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে কি করে বেড়াচ্ছো?”
“পৃথিবীর গল্পের স্বাক্ষী হচ্ছি। অনেক মানুষের জীবনের গল্প হচ্ছি?” যেন প্রশ্নের মত উত্তর দিলাম।
“তুমি খুব অদ্ভুত নীল!” রোডের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে সেলিনা আমার দিকে এক নজর তাকায়।
আমি স্মিত হাসলাম, “ভয় নেই। আমার বয়স ৪৬ বছর হবে এই সামারে। আর আমি ক্ষতিকারক নই।”
“ক্ষতি করতে চাইলেই সুবিধা করতে পারবে না। আমি কিন্তু জুজুৎসু জানি।”
“পার্সের ভেতর এতবড় ব্রহ্মাস্ত্র রাখার পর এই বিশাল দামি তথ্যটা না দিলেও আমি ভদ্রই থাকতাম। কসম!”
খিলখিল করে হেসে উঠল সেলিনা। “কি করবো? শেল্ফ ডিফেন্সের জন্য হলেও এইসব তথ্য নিউজ বুলেটিনের মত না চাইলেও চালিয়ে দিতে হয়। ইউ ডোন্ট নো হোয়াট উই আর বাউন্ড টু ফেস এভ্রি সেকেন্ড অন আর্থ। শরীর জিনিসটা কিছু কিছু সময় মনে হয় পালিয়ে বাঁচতে পারলে ভাল হত। পাখি, কিংবা অন্য কিছু।”
আমি সিটে হেলান দিয়ে বাহিরের কালো সমুদ্রটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সাদা সাদা ফেনা জ্বলছে যেন কালোর বুকে। নড়ে চড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ঢেউ। আমি বিড়বিড় করে বললাম, “আমি সব জানি মিস এম্বার।”
“হু? কিছু বললে?”
“নাহ। বললাম, আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তুমি নিশ্চিন্তে আমার সাথে সময় কাটাতে পারো। বাই দ্য ওয়ে, মেসেজ চেক করে নিও। আলফ্রেডের ক্লজ অনুসারে তোমার একাউন্টে তিন হাজার ডলার ট্রান্সফার করে দেয়া হয়েছে।”
সেলিনা অদ্ভুত চোখে তাকালো আমার দিকে।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০

সাগরের ঠিক পাশেই প্রাইভেট বীচ নিয়ে আলাদা আলাদা জায়গায় কটেজগুলো তৈরি। আমি যে কটেজে উঠেছি সেটায় একটা ছোট্ট সুইমিং পুলও রয়েছে। পাশে প্রায় দেড় শোঁ ফিট দূর দিয়ে পাথরের চাঁই দিয়ে দেয়াল আলাদা করা। সীমান্ত গুলো এমন ভাবে করে দেয়া হয়েছে যে অন্য কটেজে কে আছে কেউ জানবে না। শব্দ আসা তো অনেক দূরের কথা। মোদ্দা কথা, একদম নিজের মত নিরিবিলি পরিবেশ। আমি এসব দেখেই ভাড়া করেছিলাম।
কটেজ থেকে নেমে সামনের দিকে তিনশো গজ হেঁটে গেলে সাগর। জোয়ারের সময় কটেজের নিচ পর্যন্ত পানি উঠে আসে মাঝে মাঝে। কটেজের নিচের অংশ গ্লাস কাভার করা। স্বচ্ছ কাঁচের সেই মেঝে দিয়ে জোয়ারের পানি আসা সাগর দেখা যায় গভীর রাতে। এখনো জোয়ার শুরু হয়নি। শুধু বালুই দেখা যাচ্ছে এখন।
সুইমিং পুলটা দোতলার বেডরুমের সাথে লাগানো। চার শো স্কায়র ফিটের পুল। গভীরতা তেমন একটা বেশি না। একপাশের দেয়াল কাঁচ দিয়ে বাঁধানো। ওটা কটেজের ছাদের শেষ দেয়াল। ওখান থেকে সাগর দেখা যায়। নীলচে পানি, হিডেন লাইট জ্বলছে। আলো আধারির অদ্ভুত সুন্দর একটা মিশেল। সেলিনাকে নিয়ে কটেজে ঢোকা মাত্র ও বিস্ময়ে কথা হারিয়ে ফেলল দীর্ঘ কয়েক মুহূর্তের জন্য। আমি ওকে ওর বিস্ময় কাটানোর সময় দিলাম। একা ছেড়ে দিলাম ঘোরার জন্য। গায়ের জ্যাকেটটা খুলে বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে কিচেনের দিকে চলে এলাম। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে দিলাম গরম করতে। দুপুরে অর্ডার করে এনেছিলাম। ক্ষিদে না থাকায় খাওয়া হয়নি। এখন কেন যেন ক্ষুধা লাগছে। সেলিনারও হয়ত লেগেছে। ব্যবস্থা করে রাখি।
খাবার গরম করে, ডাইনিং টেবিলে যতক্ষণে সব গুছিয়ে রেখে ওপরের রুমে আসলাম, দেখি পুলের পাশে জিন্স আর চিকচিকে টপ্স পড়ে রয়েছে। সাঁতার কাটছে সেলিনা পুলে। ব্ল্যাক স্ট্রিপের রংটা লালচে সাদা চামড়ায় নীল আলোতে চক চক করে উঠছে যতবার আলোর সাথে ধাক্কা লাগছে। আমি চুপচাপ পুলের পাশে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসলাম। প্যান্ট ভিজে যাচ্ছে না গোটানোয়।
“কি হল? নামবে না?” সেলিনা জিজ্ঞেস করে।
“ইচ্ছে করছে না। তুমি চাইলে আমরা ডিনার এক সাথে করতে পারি। আমার ক্ষুধা পেয়েছে অনেক।”
“সেকি! মাত্রই তো নামলাম। তুমি খেয়ে নিতে পারো। আমার ক্ষুধা নেই।” সেলিনা মাছের মত নিখুঁত ডিগবাজি দিল পানির মধ্যে। কোনো রকম আলোড়ন না তুলেই।
আমি উঠে পড়লাম। হাতে অনেক কাজ।
সেলিনা খাচ্ছে না আমার সঙ্গে। আমাকে খেয়ে নিতে হবে। তারপর বাকি কাজগুলো আরাম্ভ করতে হবে। আমি দ্রুত নিচে এসে খাবার খেতে শুরু করে দিলাম। মোবাইলে গুগল স্ক্রল করে করে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দেখে নিতে লাগলাম। খেয়ে নিচের স্টোর রুমে গিয়ে ব্যাগ থেকে দরকারী কিটসগুলো বের করে তৈরি করা শুরু করলাম।
সব কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগলো না। ঠিক পঁচিশ মিনিট সময় নিলাম। এরপর ওপর তলায় উঠে এলাম। হাতের ছোট্ট ব্যাগটা বিছানার পাশে মেঝেতে এমন ভাবে রাখলাম আমি ছাড়া সেলিনা দেখতে পাবে না। অবশ্য সেলিনা তখনও পুলেই ছিল। আমি দরজার কাছে গিয়ে থাই গ্লাস সরিয়ে বললাম, “বৃষ্টি আসতে পারে। পুলেই থাকবে? এদিকের বৃষ্টি খুব একটা সুবিধার না দেখলাম। শীলা পড়ে প্রায়ই।”
“আমাকে আমার নিজের এলাকা চেনাচ্ছো?” হাসতে থাকে সেলিনা। সম্ভবত সাঁতারটাকে ভীষণ উপোভোগ করছে সে। তবে বেশিক্ষণ থাকল না আর। আমি ভেতরের দিকে চলে আসার সাথে সাথেই পুলের কিনারে চলে আসলো সে। উঠে পড়ল। আমি ওয়্যারড্রোব থেকে একসেট টাওয়েল আর নাইটি বের করতে লাগলাম সেলিনার জন্য। ভেজা শরীর নিয়ে রুমের ভেতর চলে আসলো। টপ টপ করে পানি পড়ছে কার্পেটের ওপর। দ্রুত হাতে ভেজা ব্রা আর পেন্টি খুলে কার্পেটের ওপর ছুঁড়ে ফেলল। দু হাত দিয়ে ভেজা লেপ্টে থাকা ছেলেদের মত চুলগুলো চেপে বাড়তি পানি ঝড়িয়ে নিলো।
আমি টাওয়েল আর নাইটি ওর হাতে দিতে দিতে বললাম, “তোমার জন্য খাবার রেখে দিয়েছি। খিদে লাগতে পারে। চাইলে খেয়ে ফেলতে পারো। অথবা ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখা যায়।”
টাওয়েল দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে নিতে নিতে সেলিনা শান্ত স্বরে বলল, “হুম। খাব। আসলেই খিদে লেগেছে। সাগরের বাতাস আর পুলের সাঁতার খিদে ধরিয়ে দিয়েছে। কি আছে ম্যান্যুতে?”
“স্টেক, রুটি, ডাল, মরটসুটি আর জিন। ও হ্যাঁ, সাথে একটা নিরীহ ওমলেট।”
“আমার পেটে আগুন জ্বলছে লিটারেলি! এগুলো বলে সেটা আরো বাড়িয়ে দিলে।” টাওয়েলটার ওপর নাইটি চড়িয়ে নিলো সেলিনা। ভেজা পায়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো নিচে নামার জন্য। আমি তৈরি ছিলাম না। আচমকাই যেন ঘুরে আমার প্রায় ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে মেয়েটা বলে উঠল, “তুমি খুব অদ্ভুত নীল। আমি তোমার মতো স্বচ্ছ চোখ কোনো পুরুষের দেখিনি। তোমার চোখে লোভ নেই কেন?”
আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার আগেই আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো সেলিনা, “স্যরি…” যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেছে।
আমি কিছু বললাম না। সেলিনা দীর্ঘ একটা মুহূর্ত আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল, “আমি মানুষের চোখের ভাষা পড়তে পারি। নিরাপদ, অনিরাপদ, লোভী, অলোভী, রেপিস্ট, পার্ভার্ট কিংবা তুমি… তুমি ঠিক আমার চেনা জানা পরিসরের মানুষ নও।”
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম, “খিদা লাগলে কি তোমার কথা বার্তা ফিলোসোফিক্যাল হয়ে যায়? আগে খেয়ে আসো। আমার কাজ আছে কিছু, সেরে নেই। ঘর একদম ময়লা করবে না। আমার অগোছালো কিচেন একেবারেই পছন্দ না।”
মৃদু হাসল মেয়েটা। চোখের তারায় জ্বল জ্বল করলো সেই হাসি। হাসিটা আস্থার হাসি। সেলিনা ঘুরে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে।
আমি একটা সূক্ষ্ম চাপা নিঃশ্বাস ফেলে কাজ শুরু করলাম। মেয়েটা আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।
০০০০০০০০০০০০

জিনের বোতলটা নিয়ে দুজনেই সৈকতে হাঁটছি। বাতাসের বেগ বাড়ছে। শব্দ করে ফেনিল ঢেউ এসে কোরালের ওপর ভাঙছে। আমার পাতলা টি শার্ট আর ট্রাউজার ভেদ করে হীম শিতল বাতাস হাঁড়ের ভেতর কাঁপন লাগিয়ে দিচ্ছে। জিন কয়েক ঢোক খেয়ে গলা জ্বালিয়ে ফেলেছি এর মধ্যেই। র’ জিনিস খাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। সেলিনা ওর পাতলা ফিনফিনে নাইটি পরেই চলে এসেছে আমার সাথে। বাতাসে নাইটির প্রান্ত উড়ছে। সে নির্লিপ্ত মুখে খালি পায়ে আমার সাথে হাঁটছে। টুকটাক কথা যাই হচ্ছে, বেশির ভাগ সেলিনাই বলছে। আমি শুনে যাচ্ছি কেবল। দেশে ওর ছোট বোন স্কুলে কি কি করে বেড়াচ্ছে, কিংবা মার দোকানের দেয়াল ভাঙা নিয়ে পাশের দোকানির সঙ্গে কি ঝামেলা হয়েছে, কিংবা ভিসা নিয়ে তাকে কতবার এম্বেসিতে নাজেহাল হতে হয়েছে- এসব এলোমেলো আলাপ। নির্দিষ্ট কোনো ছন্দে নেই কথা।
“আচ্ছা, আমি একাই তো কথা বলছি। তোমার কথাও কিছু বল? তোমার কে কে আছে?”
“কেউ নেই। একাই।”
“মানে? কোনো পরিবার? রিলেটিভ, বন্ধু?” সেলিনা সামান্য অবাক হল।
“এখন আর কেউ নেই। এক সময় ছিল।” কথা বলতে ভাল লাগছে না। ঘড়ির দিকে তাকালাম। রেডিয়ামের ডায়াল বলছে রাত এখন প্রায় সাড়ে বারোটা। বাতাস ভারী হয়ে গেছে। এলোমেলো ভাবে বড় বড় ফোটায় দুয়েকটা বৃষ্টির ছিঁটে এর মধ্যেই গায়ে এসে লেগেছে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে কটেজে পৌঁছানোর আগেই ভিজে যাব। সেলিনা আমার বাহুর ভেতর নিজের একটা হাত পেঁচিয়ে ধরে হাঁটছে। ওর নরম নিঃশ্বাস মাঝে মাঝে গলার কাছে টের পাচ্ছি।
“ফেরা দরকার কটেজে। বৃষ্টি শুরু হবে মনে হচ্ছে।”
“হুম। ফেরা যায়।…” শ্রাগ করল সেলিনা, “আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে সহজ হতে পারছো না?”
হাসলাম, “কেন পারব না? অবশ্যই সহজ হয়েছি। সহজ হওয়া মানে নিশ্চই চট জলদি ফিজিক্যাল হওয়াটাকে বোঝাচ্ছো না?”
“না, তা কেন বোঝাবো?” অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দিলে। হাত সরিয়ে নিয়েছে আমার বাহু থেকে। মনে হল যেন নিজেকে খানিকটা উপেক্ষিত মনে করছে সে। যদিও উপেক্ষা করার মত সেরকম কিছুই আমি এখনো করিনি। আমাকে পেছনে রেখে হাঁটা শুরু করল সে কটেজের দিকে।
ফিরে এলাম, মাত্র বারান্দায় উঠেছি- সঙ্গে সঙ্গে হুড় মুড় করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সেই সাথে আকাশ চিঁড়ে বাজ পড়ছে। আবহাওয়ার এত দ্রুত পরিবর্তন এদিকটায় খুব স্বাভাবিক ঘটনা। সেলিনাকে মোটেও অবাক মনে হল না। আমি বারান্দার দরজা লাগিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম, পানির ছিটে ঘরের ভেতর চলে আসছে। খানিকবাদে কটেজের নিচে সাগরের পানি উঠে আসবে।
ওপরতলায় আমি উঠলাম সেলিনার পর। সেলিনা আগেই উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। আমি নিচ তলার স্টোর রুমের ব্যাগটা থেকে কয়েকটা জিনিস নিয়ে যতক্ষণে ওপরে উঠলাম, লাইট নিভিয়ে দিয়ে ঘরটার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেলিনা। নিচের রুম গুলো থেকে ওপর দিকে আসা আবছা আলোয় যেটুকু বোঝা গেল নাইটি খুলে ফেলেছে, কার্পেটের ওপর পড়ে রয়েছে সেটা। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই এগিয়ে এসে শক্ত করে দুই হাতে আমার মাথার পেছনের চুল আর গলা জড়িয়ে ধরল। রগ এলারের নোনা মিষ্টি ঠোঁটের স্বাদ পেলাম মুখে। ভেজা নিঃশ্বাস পড়ছে মুখের ওপর। তিতির পাখির ডানার মত কাঁপছে পুরো মানুষটার নরম শরীর। আমি বাঁধা দিলাম না। নিজের হাতে ধরে থাকা ছোট্ট একটা আলপিনের মত সূঁচ ওর পিঠে হাত দেয়ার সময় বিঁধিয়ে দিলাম। ঠোঁট দুটো মুহূর্তের জন্য শক্ত হয়ে গেল, পরক্ষণেই ঢিল পড়ল সমস্ত স্নায়ুতে। মাত্র বিশ সেকেন্ডের মাথায় পুরো মানুষটা টলে উঠল, তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরের ওপরেই পড়ে যেতে নিলো। আমি ধরে ফেললাম বিদ্যুৎ গতিতে।
আবছা অন্ধকারেও দেখতে পেলাম মেয়েটার চোখের তারায় একই সঙ্গে বিস্ময় এবং অসম্ভব রকমের ভয় উঁকি দিয়েছে।
জ্ঞান হারালো সেলিনা।
আমি সাবধানে মেয়েটাকে বিছানায় প্রথমে উপুর করে শোয়ালাম। লাইট জ্বালিয়ে দিলাম, পর্দাগুলো টেনে দিলাম সব জানালা আর দরজার। বিছানার পাশের ছোট্ট ব্যাগটা তুলে ওর পাশে বসলাম। হাত দিয়ে ওর ভার্টিব্রা কলামের হাড় গুণে গুণে নির্দিষ্ট কয়েকটা পজিশন একটা কলম দিয়ে দাগিয়ে নিলাম। একই সাথে কপালের দুই পাশে দুটো জায়গা মার্ক করে নিলাম। সময় লাগলো না কাজটা করতে।
সিলভার কালারের ছোট্ট যন্ত্রটা বের করে ওর ভার্টিব্রা কলামের নির্দিষ্ট জায়গা গুলোতে লাগিয়ে দিলাম। মাথার দুইপাশের জায়গাগুলোতে চিকন সূঁচের মত পাইপগুলো পজিশন করে মূল যন্ত্রটায় যোগ করলাম লাইন সবগুলো। তারপর সুইচ অন করলাম।
কয়েক সেকেন্ডে জন্য কেঁপে উঠল সেলিনা। কিন্তু জাগলো না।
আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। মাকড়শার জালের মতো অনেকগুলো সূক্ষ্ম কৌশিক নল যন্ত্রটা থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে সেলিনার মাথার পেছনে গিয়ে যুক্ত হচ্ছে একটা পয়েন্টে। মৃদু গুঞ্জন তুলে শব্দ হচ্ছে যন্ত্রটার। আমি হাত ঘড়ি দেখলাম। সময় নিচ্ছে পুরো প্রসেসিংটা। আধা ঘন্টা পেরিয়ে গেছে।
জিনের বোতলটা নিচ তলা থেকে নিয়ে এলাম। আবার গলা ভেজালাম।
বিছানার ওপর সেলিনার নগ্ন শরীরটা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। আমি একটা চেয়ার টেনে ওর মাথার কাছে এসে বসলাম। হাত ঘড়ি দেখলাম। একটার মতো বাজে। বাহিরে ঝড় হচ্ছে রীতিমত। জানালার কাছে আছড়ে পড়ছে বৃষ্টি আর বড় বড় শীলা। নিজস্ব জেনারেটার লাইন থাকায় কারেন্ট যাচ্ছে না।
সময় গড়াচ্ছে।
আড়াইটা…

আমি চেয়ারে বসে ঢুলতে আরাম্ভ করেছি ঘুমে। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।
চোখ বন্ধ হয়ে এসেছিল বোধহয়।
হঠাৎ গালে নরম হাতের স্পর্শ্ব পেতেই চমকে জেগে উঠলাম। হাত থেকে জিনের বোতল কার্পেটে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। অনেকটাই ভিজিয়ে ফেলেছে কার্পেট। কিন্তু সেদিকে নজর দিতে পারলাম না। আমার সামনে মেয়েটা বিছানায় উঠে বসেছে। হাত বাড়িয়ে আমার গাল ছুঁয়ে বড় বড় চোখে স্ফটিক স্বচ্ছ জল নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। সেই দৃষ্টিতে অসম্ভব মমতা, ভালবাসা আর কষ্ট মিশে আছে।
আমি ফিসফিস করে বললাম, “নিশা?”
ঠোঁট কামড়ে হাসল মেয়েটা, “কেমন আছো নীল?” স্পষ্ট বাংলায় কথা বলে উঠল মেয়েটা। যন্ত্রটা থেকে সমস্ত পাইপ, সংযোগ, প্রবাহ সব থেমে গেছে। খুলে পড়েছে মেয়েটার শরীর থেকে। আমি ধীরে ধীরে টুল থেকে ওর বিছানায় উঠে এলাম। “তুমি ভাল আছো সোনা?”
নিশা আমার গাল ছুঁয়ে হাসল। “হ্যাঁ।” তারপর লক্ষ্য করল নিজের শরীরে কোনো কাপড় নেই। মুহূর্তের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে আমার দিকে তাকাল, “আমাকে আবার কার শরীরে এনে ঢুকিয়েছো তুমি এখন?”
“মেয়েটার নাম সেলিনা এম্বার। আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গিনি।”
“আমি কতক্ষণ থাকবো ওর শরীরে?”
“ডিপেন্ডস। ও রেজিস্ট করা শুরু করলে তুমি বিলুপ্ত হতে থাকবে। এজন্য ওকে লম্বা সময়ের জন্য অজ্ঞান করে নিয়েছিলাম। যাতে তোমাকে রেজিস্ট করতে না পারে।” শান্ত গলায় বললাম।
আচমকাই নিজের ভেতর গুটিয়ে গেল নিশা। অনেক কিছু মনে পড়তে শুরু করেছে তার। বিছানার চাদর টেনে নিল গায়ে, “আমাকে এভাবে অন্য মানুষের শরীরে আনাটা কি বন্ধ করবে না তুমি?” খানিক আগের ভালবাসা মাখা কণ্ঠ বদলে ভয়ার্ত মানবীর স্বর প্রকাশ পেল, “তুমি কি করতে চাচ্ছ?”
“আমার জানা দরকার তুমি আমার সহকারী রাসেলের সঙ্গে কেন আমার সব গবেষণার প্যাপার শেয়ার করেছিলে? আর কেন তার সাথে তোমাকে শোয়ার দরকার পরেছিল? এমন কি সমস্যা ছিল যে আমাকে তুমি বলতে পারোনি?” আমি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। নিচ থেকে আসার সময় একটা স্পেশাল গান নিয়ে এসেছিলাম। ওটা ট্রাউজারের ভেতরে থেকে বের করে ওর দিকে তাক করলাম। গানটা ঠিক বুলেট ফায়ার করার গানের মতই দেখতে, কিন্তু এখানে বেশ কিছু স্পেশাল সেট আপ দেয়া রয়েছে। গুলি করলে সেলিনার শরীরের পার্শিয়াল যে ট্রান্সফিউশন হয়েছে, সেই সেলগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। সোজা ভাষায় নিশা মারা যাবে সেলিনার শরীরে। অতপর সেলিনা আগের মত ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠবে যেন কিছুই হয়নি এমন ভেবে।
নিশা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে গানটার দিকে তাকালো।
আমি ঠাণ্ডা গলায় বললাম, “আমার এগারো বছরের তিল তিল করে কষ্টে তৈরি করা গবেষণা বডি ট্রান্সমিশন প্রজেক্ট তুমি পুরোটাই এমন একজনের হাতে তুলে দিয়েছো যে কিনা আমাকে সব সময় প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে এসেছে। আমার ধ্বংস চেয়েছে। এমনকি আমাদের মেয়েটাকেও তুমি নিরাপত্তা দিতে পারোনি। ষোল তলা এপার্ট্মেন্ট থেকে ছুঁড়ে ফেলে মারা হয়েছিল, বাচ্চা একটা মেয়ে। কি অপরাধ করেছিল সে? তোমাদের এক সাথে দেখে ফেলেছিল?”
নিশা হিঁশিয়ে উঠল, “কারণ তুমি ছিলে একজন সেডিস্ট। মাথা খারাপ একজন মানুষ। যে নিজের কাজ ছাড়া আর কিছু বুঝে না। বুঝতে চায় না সে পরিবার কি চায়। আমাকে তুমি কি পরিমান টর্চার করেছো পুরো জীবনে একবার ভেবে দেখেছো? আমি কার সাথে কথা বলি, কি বলি, কেন বলি- এসব জানার চেষ্টা না করেই তুমি আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিতে। তুমি উন্মাদ নীল, বদ্ধ উন্মাদ এক সায়েন্টিস্ট। নইলে রাসেলকে তুমি মারতে পারতে না। শুধু কি মেরেছিলে? মেরেই তো ক্ষান্ত হওনি, ওকে আবার রিস্টোর করেছিলে আরেকজন পুরুষের শরীরে, সেখানেও মেরেছো। কি করনি তুমি? কতবার মেরেছিলে ওকে তুমি? আমাকেই বা আর কত বার মারবে? আমার কি মুক্তি নেই?”
আমি পিস্তলটা আস্তে আস্তে ওর দিকে তুলে ধরলাম। “আমি তোমাকে অনেক ঘৃণা করি নিশা। আমাদের তুষি হয়ত বেঁচে থাকতো, যদি তুমি হিপোক্রেসিটা না করতে। বাস্টার্ডটা কিছুতেই সাহস পেতো না বাচ্চাটাকে ছুঁড়ে ফেলার। আমি তোমাকে যতবারই খুন করি না কেন, তোমার শাস্তি শেষ করা সম্ভব না। আমি তোমাকে নরকের শাস্তি এই পৃথিবীতে দিতে চাই। অনন্ত মৃত্যু যন্ত্রণা। অনন্ত পূণর্জন্ম!” নিজের অজান্তেই চোখের সামনের অংশটা সব ঝাপসা হয়ে এলো। তুষির রক্তাক্ত শরীরটা কোলে নিয়ে আমি হাসপাতালের করিডোর ধরে ছুটছি পাগলের মতো। গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছি ডাক্তার নার্সের জন্য। নিথর বাচ্চাটার শরীরে কোনো স্পন্দন নেই। সব কেমন যেন শূণ্য শূণ্য লাগা শুরু করেছে সেই দিনটার মত। সমস্তটা ক্ষতটা ঠিক আগের মতই তাজা। অটুট।
নিশা তীব্র চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করল, কিন্তু তার আগেই আমি ওর শরীর দিকে তাক করে গানটা টানা ছয়বার ফায়ার করলাম। ঠিক পিস্তলের মতই ফায়ারের শব্দ হল। কিন্তু গুলি হল না কোথাও। কেবল নিশা ছিটকে বিছানা থেকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়ল। ছটফটিয়ে উঠল কয়েক সেকেণ্ডের জন্য, যেন গুলি খেয়েছে এমন। কাঁপল কিছুক্ষণ। তারপর নিথর হয়ে গেল শরীরটা কার্পেটের ওপর।
আমি মুখ ভর্তি একদলা থু থু দেয়ালে ফেললাম। অসম্ভব রাগ আর ঘৃণা নিয়ে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম ওখানেই। হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মোছার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু সেই শক্তিটুকু পাচ্ছি না কেন জানি। কাঁপছি থর থর করে।

০০০০০০০০০০
ভোড় চারটার দিকে আস্তে আস্তে উঠে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। গান, যন্ত্র, পাইপ লাইন যা কিছু ছিল সব স্টোর রুমে গিয়ে রেখে এলাম সেই ব্যাগে। ভাল করে ভেঙ্গে বললে আমার এক্স ওয়াইফ নিশার স্পাইনাল ফ্লুইড, মগজের কিছু অংশ সহ স্টিমুলেটর যন্ত্রটা সাবধানে আগের মতো প্যাক করে রাখলাম। যেন নষ্ট না হয়। এর আরো কাজ বাকি ভবিষ্যতের জন্য। উঠে এসে সেলিনার অজ্ঞান শরীরটা মেঝে থেকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। চাদর দিয়ে ঢেকে দিলাম মেয়েটাকে।
স্টোরে ব্যাগটায় সব গুছিয়ে রাখার সময় তুষির এলবামটা হাতে লেগেছিল। ওটা নিয়ে এসে নিচতলার কাউচে বসলাম। ছয় বছরের মেয়েটার হাসি মাখা ছবিগুলো উলটে উলটে দেখতে লাগলাম। ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসতে থাকে ভেতরটা। প্রায় আট বছর হচ্ছে মারা গেছে মেয়েটা। আমার স্ত্রী নিশা আর প্রাক্তন প্রজেক্ট এসিস্ট্যান্ট রাসেল মিলে খুন করেছিল। সেই খুনের শাস্তিই দিয়ে যাচ্ছি আজও। প্রায় উনিশ বছর আগে বেশ বড় ধরণের একটা প্রসেস আবিষ্কার করেছিলাম আমি। মৃত মানুষের স্পানাইল কর্ড আর মগজের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে স্টিমুলেট করে অন্য মানুষের শরীরের যুক্ত করে কিছু সময়ের জন্য মৃত মানুষটার চেতনাকে আবার বাঁচিতে তোলা যেত। আবার সেই চেতনাকে লুপ্ত করে ফেলার কিংবা বলা যায় মেরে ফেলার মত উপায়ও ঘাটতে ঘাটতে খুঁজে বের করে ফেলি আমি। কিন্তু এত কিছু করতে গিয়ে নিজের পরিবারটাই বিসর্জন দিতে হয় মূল্য হিসেবে। স্ত্রী বিশ্বাস ঘাতকতা করে বসে আমার সাথে। দীর্ঘদিনের বন্ধুও পিঠে ছুড়ি বসিয়ে দেয়। প্রজেক্ট নিজের নামে হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। অন্য কোম্পানির কাছে ফর্মূলা বিক্রি করে দিতে যায়। সেই সময়েই সবটা ধরে পড়ে যায়। নিজের মেয়েকে চিরতরে হারাই।
পুরো ঘটনাটার শেষটা ছিল রাসেল এবং নিশাকে খুন করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ওদের একবার এই নশ্বর দেহের মৃত্যু ঘটিয়ে আমি শান্তি পাইনি। বেছে নেই নিজেই তৈরি সেই রিভাইভাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রসেসটা। যেটা দিয়ে রাসেল এবং আমার স্ত্রী নিশাকে মৃত্যু যন্ত্রণা বরং বার দিতে থাকি। প্রতিবার সুন্দর একটা শুরু দিয়ে জেগে ওঠে তারা নানান মানুষের শরীরের। তারপর ধীরে ধীরে তাদের মেমোরির শেষের অংশগুলো এক্সট্রাক্ট হতে থাকে এবং নশ্বর মৃত্যুর পুরো বিষয়গুলো আবার মনে পড়তে থাকে তাদের। পাপ, কৃতকর্ম, হতাশা- পূণরুত্থান এবং মুক্তির জন্য আকুতি পুরো সেট আপ গুলোকে একের পর এক সাজিয়ে তৈরি করে দিয়েছি আমি। যেন তাদের অসীম মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে যেতে হয় দিনের পর দিন।
এলবামটা মাথার কাছে রেখে শুয়ে পড়লাম কাউচে। নিশাকে আজ নিয়ে প্রায় আঠারো বার খুন করেছি আমি। একটা সত্যিকারের শরীরে, বাকি সতেরো বার অন্য মানুষের শরীরে।
কালই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হবে। রাসেলকেও আবার শাস্তি দেয়ার সময় হয়ে গেছে।
এটা সেটা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়েছিলাম ঠিক মনে নেই। একসময় ঝাঁকুনি খেয়ে জেগে উঠলাম, “নীল? শুনছো? রাতে এখানেই ঘুমিয়েছিলে?”
ঘোলাটে চোখে তাকালাম। সেলিনা নেমে এসেছে। আমার হাত ধরে ঝাকাচ্ছে। সেই চিক চিকে টপ্স আর জিন্স পরা। সকাল হয়ে গেছে। আমি চোখ কচলে উঠে বসলাম। “হু?”
“রাতে কি এখানেই শুয়েছো তুমি?” বড় বড় কালো চোখ মেলে তাকালো সেলিনা।
আমি পিট পিট করে তাকালাম, ওর চোখের কর্ণিয়া সবুজ না দেখেছিলাম গত রাতে? নাকি বারের আলোয় ভুল দেখেছি। ব্রাউন ব্ল্যাক কি দেখেছিলাম?
“রাতে কি আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিল?” বেশ স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করল সেলিনা। কিচেনে গিয়ে কফি বসালো।
“আমার ঠিক খেয়াল নেই।” দ্বায় সারা উত্তর দিয়ে উঠে পড়লাম। দরজা খুলে বারান্দায় বের হয়ে এলাম। বাহিরের সতেজ বাতাসে এসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। পকেট থেকে মোবাইল বের করে এজেন্টকে ফোন দিলাম।
“হ্যালো? নীল? কি খবর?”
“আমার জন্য ফ্লাইটের বুকিং দাও। আজই ফিরব।”
“কাজ হয়েছে তোমার?”
“হুম।”
“মেয়েটা সুস্থ আছে তো? নাকি আবার ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা আছে? আগের বছর কিন্তু তোমার জন্য আমাকে ভালই দৌড়াতে হয়েছিল হাসপাতালে। সেই লিয়ানা মেয়েটা এখনো কিন্তু ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি। নিশার মেমোরির কিছু অংশ রয়ে গেছে ওর ভেতর। সে নাকি এখনো স্বপ্নে দেখে যে তুমি তাকে গুলি করে মেরে ফেলছো। কপাল ভাল যে ওর কাছে পুরো ঘটনাটাই স্বপ্ন।”
“নাহ। এবারে মেমোরী ক্লিন। টের পায়নি কিছু। আগের বার কিছু ম্যাকানিক্যাল ডিফ্যাক্ট ট্রেস করেছিলাম মেশিনটায়। সারিয়ে নিয়েছি। তুমি ফ্লাইট কনফার্ম করো স্টুয়ার্ট।”
“ওকে। আধা ঘণ্টা পর জানাচ্ছি কোন ফ্লাইট।” লাইন কেটে গেল।
আমি ফিরে কিচেনের দিকে ঢুকতে নিবো, কাঁচের দেয়ালের এপাশ থেকে কিচেনের একাংশ দেখা যায়। দেখলাম সেলিনা বাম হাতে ছুড়ি নিয়ে একটা আপেল কাটছে। থমকে দাঁড়ালাম। সেলিনা গত রাতে ডান হাতে চাকু নিয়ে বাইকের সিট চিঁড়েছিল। রাইট হ্যাণ্ডেড মানুষ আচমকা আপেল কাটতে লেফট হ্যাণ্ডেড মানুষের মত কাজ করবে কেন?
ঘাড়ের কাছটায় শির শির করে উঠল।
নিশা লেফট হ্যাণ্ডেড ছিল… চোখের আইরিশ ছিল ঘন কালো… একটু আগে সেলিনার চোখ কালো দেখেছিলাম…
আমি থাই গ্লাস ঠেলে সাবধানে ভেতরে ঢুকলাম। সতর্ক ভঙ্গীতে তাকালাম সেলিনার দিকে। সেলিনা আমাকে দেখেছে ঢুকতে। মুখ ঝুকিয়ে আপেল কেটে যাচ্ছে এখনো। কিছু বলছে না।
আমি স্টোর রুমটার দূরত্ব আন্দাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখান থেকে সেলিনা আট ফিট দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে ছুড়ি নিয়ে। আর স্টোর রুমটা আমার থেকে প্রায় আঠারো ফিট দূরে। আমি জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভেজালাম, “স-সেলিনা?”
“হ্যাঁ?” ফিরে তাকালো মেয়েটা । অস্বাভাবিক লাগলো না। কেবল চোখটা কালই লাগছে।
“কিছু না। আমার একটু জরুরি কাজ ছিল। বের হতে হবে এখনি। তুমি কি নিজে নিজে চলে যেতে পারবে?”
“হ্যাঁ! কফিটা শেষ করে বের হয়ে যাচ্ছি। তুমি খাবে?”
আমি ধীর পায়ে স্টোর রুমটায় সামনে চলে এলাম। “নাহ। তুমি খাও। তুমি বের হলে আমি যাব।”
মাথা ঝাকালো সেলিনা। আপেলের একটা স্লাইস মুখে দিয়ে কফিটা নিলো। মেয়েটা বা হাতে কফির কাপ ধরে রেখেছে।
আমি ঘামছি অল্প অল্প করে। হাতের তালু ভিজে উঠেছে। মেয়েটা আসলেই সেলিনা এম্বার তো? নাকি…
“নিশা?” অনুচ্চ স্বরে ডাকলাম আমি।
ঝট করে ফিরে তাকালো সেলিনা, “হ্যাঁ?”
“নিশা?”
“কে নিশা?” বিস্মিত মুখে তাকালো।
“কেউ না। কেউ না।”

(সমাপ্ত)

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২৯
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×