বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ ‘আজকের বাংলাদেশ’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় প্রচারিত টক্ শোতে মিথ্যার বেসাতি করলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর (কারো কারো মতে জামায়াতে ইসলামীর বিএনপি শাখার আমীর) বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান। তিনি মিথ্যাচার এতোটাই নির্লজ্জের মত চালাচ্ছিলেন যে, এক পর্যায়ে এগুলো শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তার সঙ্গে অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি অপু উকিল। আর টিভি স্টেশনটির চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী স্টুডিও থেকে লাইভে অংশ নিয়েছিলেন আরো তিনজন।
এক পর্যায়ে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন আজম খানের কাছে জানতে চান গত কয়েকদিনে সারাদেশে সরকারি বিভিন্ন দফতর, প্রতিষ্ঠান, রাস্তার হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা এবং সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা হয়েছিল, সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, মন্দির ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল সেটা কারা করেছিল? এ প্রশ্নের জবাবে কাল বিলম্ব না করেই আজম শুরু করলেন ষড়যন্ত্রের গন্ধ দিয়ে। সরকারের সাজানো নাটক বলে। বললেন, এগুলো জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্রশিবির করতেই পারে না। (অবশ্য উপস্থাপক তার কাছে জানতে চাননি- এগুলো জামায়াত-শিবিরের কাজ কাজ কি না।) স্বপ্রণোদিত হয়ে আজম খান বললেন, এখানে জামায়াতের কেউ নেই। তাই আমিই তাদের হয়ে বলছি, দেখেন এগুলো জামায়াত করতেই পারে না। তারা কেন হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালাবে? তারা কেন সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবে। বললেন, প্রথম আলোর মত পত্রিকায় পর্যন্ত এসব খবর ছাপা হলেও কোন সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়নি যে, কোথাও জামায়াত-শিবিরকে দেখা গেছে। এরপর আর নাই বা লিখলাম...। তিনি আরো অনেক কথাই বলেছেন যেগুলো ... ... পাঠক বুঝে নেবেন। নির্লজ্জের মত এমন মিথ্যাচারে ছি...ছি...ছি... দেয়া ছাড়া আর কিছু নেই।
তার কথা শুনে আমি অবাক হইনি। অবাক না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোন বিবেকবান নাগরিকই তার কথায় অবাক হবে না। কারণ ১ মার্চ খালেদা জিয়া যে বিবৃতিটি সাংবাদিক সম্মেলনের নামে সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শুনালেন তাতে সব দায়ই সরকারের ঘাড়ে চাপালেন। একবারও তিনি জামায়াত-শিবিরের তান্ডবের কথা বলেননি। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেননি। সুতরাং তারই অ(উ)পদেষ্টা আজম খান এর বাইরে গিয়ে সত্য বলার মত জ্ঞান অর্জন করেননি। সত্য বলতে হলে মানুষের মনের ভাষা বুঝতে হয়, মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হয়, চোখ-কান খোলা থাকতে হয়। কিন্তু সেই ক্ষমতা আজম খানদের নেই। তারা যে চোখ থাকিতেই অন্ধ।
আরেকটি বিষয় তিনি বলেছেন। তিনি শাহবাগ আন্দোলনের সমালোচনা করতে গিয়ে বার বার প্রজন্মের এই আন্দোলনকারীদের শাহবাগী শাহবাগী বলে উচ্চারণ করছিলেন। এতেই পরিস্কার বুঝা যাচ্ছিল শাহবাগ আন্দোলন যে তাদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছে এতে তারা ভীষণ শংকিত। শাহবাগের গণজাগরণ না থামা পর্যন্ত এটিকে নিয়ে তাদের ভয় এবং শংকা দূর হবে না। শাহবাগ আন্দোলন যে মুখোশধারীদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এতেই তারা সন্ত্রস্ত।
আজম খানদের জেনে রাখা উচিত মধ্যরাতে টিভি টক্ শোতে গিয়ে মিথ্যার বেসাতী আর গলাবজি করে পার পাওয়া যাবে না। ৪২ বছর ধরে এ দেশের মানুষ যে ক্ষতটি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেই ক্ষত ক্যানসারের মত কুরে কুরে খাচ্ছে প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষকে, বাঙালীকে। এই ক্ষত থেকে, এই গ্লানি, অপবাদ, একাত্তরের ঘাতক-দালালদের দৌড়াত্ম্য থেকে মুক্তি পেতে নতুন প্রজন্ম শপথ নিয়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অঙ্গীকার করেছে পূর্বসূরীদের ঋণের দায় মেটানোর। তাই শাহবাগের গণজাগরণকে আজম খানরা যেভাবে যে নামেই ডাকেন না কেন, এটি ততোক্ষণ পর্যন্ত থামবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মাংলার মাটিতে সম্পন্ন না হবে। আজম খানদের মনে রাখা উচিত, তারা যে বিষাক্ত সাপকে (জামায়াত-শিবির) স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন, শাহ আজিজের মত রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, ২০০১ সালে এসে আলশামস, আলবদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহীদের গাড়িতে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত মাখা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন সেই দায় থেকে তারা কখনও মুক্ত হতে পারবেন না। আর এখন যতভাবেই চেষ্টা করুণ না কেন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার দিন শেষ।
খালেদার উপদেষ্টা আজম খানের মিথ্যাচার...