একটা বিষয় খুব পরিস্কার হয়ে গেছে। বেগম জিয়া আজান দিয়ে নেমেছেন। এতোদিন তিনি কোন সুযোগ পাচ্ছিলেন না কি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। আজ এটা পরিস্কার হয়ে গেল, নাস্তিক-আস্তিক প্রশ্ন তুলে এবার তিনি নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান। কারণ গত বুধবার এবং গতকাল শুক্রবার তার দেয়া বক্তব্য এ বার্তাটি পরিস্কার করেছে।
কিন্তু একটা বিষয় বেগম জিয়াকে মনে রাখতে হবে, আপনি মানুষকে যতটা না বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন মানুষ কিন্তু ততোটা বোকা নয়। ২০১৩ সালে এসে মানুষ অনেক বদলে গেছে। আপনি শুধু তাদরকেই বোকা বানাতে পারবেন বা দলে ভিড়াতে পারবেন, যারা এখনো অন্ধকার যুগে বসবাস করে, পশ্চাৎপদ জীবনযাপন করে, যারা ধর্মান্ধ, যাদের নিজেদের কোন বোধশক্তি নেই, শুধুমাত্র তাদেরকেই আপনি দলে ভিড়াতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি ভুলেও মনে করেন যে এদেশের নতুন প্রজন্ম, তরুণ সমাজ যারা দেশকে ভালোবাসে মায়ের মত তাদেরকে বিভ্রান্ত করে আপনার পক্ষে নেয়া যাবে তাহলে এই ২১ শতকে এসে আপনি সত্যিই বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। আপনার বুদ্ধীদাতারাও অন্ধকারে সাঁতার কাটছে।
এই লেখার শেষ অংশে আমি কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছি। পাঠক নিশ্চয়ই সেগুলোর জবাব খুঁজবেন।
গত বুধবার বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালদো জিয়া প্রায় দুই বছর পর দলের নয়াপল্টনের কার্যালয়ে গিয়ে এক সমাবেশে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে বিষোদগার করেছিলেন। বলেছিলেন, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ নাস্তিকদের।
তার ওই বক্তব্যের পর ওই দিনই একটি লেখায় বিরোধী দলীয় নেতাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলাম, প্লিজ মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী শাহবাগ নিয়ে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহর করুন। দয়া করে শাহবাগ নিয়ে মিথ্যাচার করবেন না। কিন্তু আজ মনে হয়েছে, ওই অনুরোধ জানানোটি ছিল সম্পূর্ণ ভুল। কারণ তিনি যে সদ্য মুফতী হয়েছেন সেটা জানা ছিল না। তাছাড়া তিনি তো এখন আর বিএনপি’র চেয়ারপারসন আছেন কি না সেটাও সন্দেহ। তার বক্তব্য শুনে পরিস্কার মনে হচ্ছে তিনি জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন।
শুক্রবার (১৫ মার্চ/১৩) বেগম খালেদা জিয়া মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এর ক্ষতিগ্রস্থ গোয়ালী মান্দ্রা মনিপাড়া কালীমন্দির পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্য প্রদানকালে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে চরম বিষোদগার করেছেন। বলেছেন, শাহবাগে যারা যায় তারা নাস্তিক। শাহবাগ চত্বর হচ্ছে নাস্তিকদের চত্বর।
পাঠকের সুবিধার্থে আমি তার বক্তব্যের ওই অংশ হুবুহু তুলে ধরলাম- খালেদা জিয়া শাহবাগ তরুণদের সমাবেশের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “শাহবাগ আন্দোলন নিরপে নয়। এখানে আওয়ামী লীগ ও নাস্তিক ছেলে-পেলে আছে। তারা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না।”
শাহবাগ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “দেশে ১৬ কোটির মধ্যে পাঁচ কোটি যুবক-তরুণ আছে। তার এক ভাগও এই শাহবাগে নেই।”
“শাহবাগের তরুণরা আইন-আদালত-বিচার মানে না। তারা সরকারও মানে না। এই নষ্ট ও নাস্তিক তরুণদের নিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অপকর্ম করছে। উদ্দেশ্য জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানো।”(সূত্র- বিডিনিউজ ২৪)।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কে আস্তিক আর কে নাস্তিক এটা বলার অধিকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম জিয়াকে কে দিয়েছে?
তিনি কি সত্যি সত্যি মুফতী ডিগ্রি লাভ করেছেন?
তিনি বলেছেন, শাহবাগের তরুণ সব নষ্ট। আমার প্রশ্ন তার সন্তানরা কি খুব ভাল?
আমি আমার ছোট্ট শিশু সন্তানকে নিয়ে যে শাহবাগ গেলাম, সে এবং তার মত আরো যেসব শিশুরা সেখানে গেল তারা সবাই কি তাহলে এখন নাস্তিক?
এসব বিষোদগারপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে তিনি কি বুঝাতে ”াচ্ছেন?
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে বেগম জিয়ার এমন বক্তব্যের পর আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষগুলোকে এখন আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং চূড়ান্ত রায় কার্যকর করতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে হেরে গেলে দেশ পিছিয়ে যাবে আরো অনেক বছর। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও আগামী ১০০ বছরে হবে না।