somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিল্লুর রহমান- একজন রাজনৈতিক শিক্ষকের মহাপ্রয়াণ...

২২ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ তার অন্তিম যাত্রা...। চির বিদায়...। শায়িত হবেন চির নিদ্রায়। আর কখনও ফিরে আসবেন না। আর কখনও তার কথা শুনা যাবে না। তাকে অভিবাদন জানানো হবে না। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল...। সবুজ-শ্যামল এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের গভীরে। তার মৃত্যু নেই। তিনি অক্ষয়, অমর...।
বলছিলাম আমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নেয়া এক আদর্শবান রাজনীতিবিদ, দেশপ্রেমিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা, ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনের অগ্রভাগের সৈনিক, ’৬৬ ছয় দফা আন্দোলনের সামনের সারির নেতা, ’৬৯ এর গণ অভূত্থ্যান আর ১৯৭১ এর মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সংগঠক বাংলাদেশের অভিভাবক সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কথা।
তিনি আজন্ম যে আদর্শ, নৈতিকতা, রাজনৈতিক মূল্যবোধ, বাঙালিত্ব নিজের মধ্যে লালন করেছেন, জীবদ্দশায় তার সবগুলোই তিনি ব্যবহার করেছেন দেশের জন্য। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে তিনি আজন্ম লালন করেছেন দেশের প্রতি ভালোবাসা। নিজের রাজনৈতিক আদর্শ থেকে চুল পরিমান বিচ্যুত হননি। বরং মহাদেুর্যোগেও তিনি আকড়ে ধরেছিলেন সেই আদর্শকে। বাংলাদেশের ৪২ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে একেবারে মাঠে থেকে উঠে আসা এই রাজনৈতিক নেতা-ই তার জীবনের শেষ সময় পার করেছেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর আর কোন রাজনৈতিক নেতাই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। যারাই রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তাদের কেউই একেবারে শিকড়ের রাজনীতিবিদ নন। এদের কেউ কেউ এসেছেন বন্ধুকের নলের সাহায্যে...।
রাজনৈতিক জীবনে জিল্লুর রহমানের অর্জন দেশের অন্য যেকোন রাজনীতিবিদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ঠিক তেমনি তিনি হারিয়েছেনও সবচেয়ে বেশি। হারিয়েছেন তার সবচেয়ে প্রিয় কাছের মানুষটিকে। যিনি ছিলেন রাজপথের রাজনৈতিক সহকর্মী তার সেই প্রিয় সহধর্মীণি আইভী রহমানকে হারানোর পর থেকে যেন অনেকটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন প্রবীণ এই রাজনৈতিক শিক্ষক। তারপরও দলের বিপদে তিনি হাল ধরেছেন অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে। বিশেষ করে রাজনৈতিক জীবনের শেষাংশে এসে ১/১১ এর পটপরিবর্তনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন চরম অস্থিরতা, সংস্কারের বাতাসে যখন রাজনীতি উড়ছে, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কারাগারের চার দেয়ালের ভিতর বন্দি ঠিক তখন তিনি আওয়ামীলীগের মত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটির দুর্দিনে সত্যিকারের একজন রাজনৈতিক নেতা ও অভিভাবক হিসেবে সংগঠনটিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন।
জিল্লুর রহমান ছিলেন এমন একজন আদর্শবান ও ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা। যার বিরুদ্ধে নেই কোন দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ। যিনি ছিলেন একেবারেই নির্মোহ-নিলোর্ভ। ভদ্র-নম্র, অতিবিনয়ী এই রাজনৈতিক নেতার মুখ থেকে কেউ কখনও শুনেননি রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণাত্ব ও শ্লেষাত্বক কথা। তাইতো দলমত নির্বিশেষে তার প্রতি মানুষের এতো ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ...।
তার এই চলে যাওয়া একেবারেই জাতির অসময়ে। দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ চলছে ঠিক তখনই তার চলে যাওয়া। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জীবনের শেষ লগ্নে এসে দেখে যেতে পারেননি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দৃশ্য। তবে তিনি যে আদর্শ, দেশপ্রেম, বাঙালিত্ব ধারণ করেছিলেন জীবনের প্রতিটি ক্ষণে, এদেশের নতুন প্রজন্ম সেটিকে ধারণ করেছে তাদের মধ্যে। তার আদর্শকে লালন করেই সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় এদেশের মাটিতে কার্যকর করেই জিল্লুর রহমানসহ লাখো শহীদের স্বপ্ন পূরণ করবে তারা।
বাঙালির এই মহান নেতা জিল্লুর রহমানকে আজ অপরা‎ে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে।
হে মহান নেতা, খাঁটি দেশপ্রেমিক আপনার জন্য লাল সালাম...।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিরহ

লিখেছেন গোধুলী বেলা, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৪

একটি কবিতা লিখা হবে বাদে কিছুক্ষণ
মেঘমালারা বারি পাত করিছে ক্ষণে ক্ষণ।
গগনভেদি কামান গোলা পরিছে মুহুর্মুহু
দুরুদুরু ভয়েতে কাপিছে বুক বাদ যায়নি কেহ।

জানালার পাশে  প্রেমিকার ছলছল চোখ
বৃষ্টিরো সাথে সে কেঁদে  ভাসাইছে বুক।
হাজারো... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×