somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা যখন বাবা-মা, স্বর্গের সিঁড়িতে নয় মাস...

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হোম টেস্ট-কিটে আগেই বোঝা গিয়েছিল। তবে বিষয়টা ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে জানা গেল সেপ্টেম্বার ২৯ তারিখে...যে আমরা বাবা-মা হতে চলেছি। জানার পর কেমন যেন একটা লজ্জা-লজ্জা ভাব কাজ করছিল :#> আমার শশুড়-শাশুড়ী, শালা-শালীরা কনগ্র্যাচুলেট করতে শুরু করল। আমার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেল :#> :#> এই দীর্ঘ নয়টি মাস আমার উপর দিয়ে কোন কিছু না গেলেও আমার বউয়ের উপর দিয়ে যে অমানবিক ঐশ্বরিক ঝড় বয়ে গেল তা বর্ণনাতীত। শুনেছিলাম প্রথম তিনমাস থাকে কষ্টকর, মাঝের তিনমাস কিছুটা কম থাকলেও আবার শেষ তিনমাস কষ্টের পরিমাণটা বেড়ে যায়। সবার সাথে শেয়ার করার জন্যই ধাপে ধাপে বিষয়টা তুলে ধরলাম।

প্রথম তিনমাসঃ
যখন জানা গেল, তখন প্রায় দেড়মাস চলছে। শারীরক বিদ্রোহের প্রথমেই যেটা হল, আমার বউয়ের খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেল এবং সাথে সাথে বমি শুরু হলো। শরীরে মিনারেলের ঘাটতি দেখা গেল। ডাক্তার বললেন, এটার নাম হাইপারমেসিস গ্র্যাভিন্ডেরাম। সমাধান একটাই, হাসপাতালে রেখে স্যালাইন আর ইনজেকশন। মূলত মাত্রাতিরিক্ত বমি থেকে এটা হয়েছে। বমির পরপর তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ত। ওর অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, পানি খেলেও বমি হয়ে যেত। এর মধ্যেও ও অফিস করতো। কিন্তু অবস্থা ক্রমেই খারাপ হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে মনোয়ারায় ভর্তি করলাম। পরে জানলাম হাইপারমেসিস গ্র্যাভিন্ডেরাম হলে শরীর থেকে পানির সাথে সাথে মিনারেলের ঘাটতি দেখা দেয়; যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এর সমাধান হল; প্রচুর পরিমানে ডাবের পানি বা মিনারেল আছে এমন খাবার খাওয়া খাওয়া।

মাঝের তিনমাসঃ
ধীরে ধীরে ওর বমির সমস্যাটা কমে আসল। মাঝের তিনমাসে তেমন মেজর কোন সমস্যা দেখা দেয় নি। শারীরিক সমস্যাগুলোও অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল।

শেষের তিনমাসঃ
ওর শেষের তিনমাসে বেশকিছু সমস্যা একসাথে দেখা দেয়। একটি হচ্ছে মাসট্রাইটিস। সমস্যাটি খুবই রেয়ার এবং হলেও সাধারণত ডেলিভারির পরে হয়। এটি হলে স্তনে প্রচন্ড চাপা ব্যাথা হয় এবং ডেলিভারির আগ পর্যন্ত হতেই থাকে। সাধারণতঃ বুকে দুধ আসার কারণে স্তনের লিম্ফগুলো ফুলে ওঠায় এই ব্যাথার উৎপত্তি। ভলিজেল নামের একটি ক্রিম লাগানোর পরামর্শ দিলেও খুব একটা কাজে আসেনি।
এইমাঝের সময়টাতে তাকে শশুড়বাড়ী নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তাদের অবহেলা আর উদাসীনতার কারনে এ সময়ে যে সেবা বা যত্ন পাওয়ার কথা তার কিছুই সে পায়নি। বরং সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে তাকে সবার জন্যে রান্না করতে হতো, শশুড়-শাশুড়ী এসময় স্টার জলসায় সিরিয়াল দেখায় ব্যাস্ত থাকতো। যদিও ছয়মাস আগে নিজের মেয়ে প্রেগন্যান্ট হলে এর বিপরীত চিত্র দেখেছিলাম। যাইহোক, প্রতিদিন ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রান্না এবং বিশ্রামের ঘাটতির কারণে তার হাইড্রামিনাস দেখা দিল বা ফ্লুইড কমে গেল। এভারেজ রেটিং ১১-১৫ থাকলেও তার নেমে আসল ৬-এ। এই অবস্থায় আর দেরী না করে তাকে আবার বাবার বাড়ীতে নিয়ে আসলাম এবং ও অফিস থেকেও ছুটি নিয়ে প্রায় তিনসপ্তাহ বাসায় রেস্ট নিল। ফ্লুইডের পরিমান আবার কিছুটা বাড়লো। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন নাক দিয়ে মারাত্নক রক্তক্ষরণ শুরু হলো। রুমাল দিয়ে অনেকক্ষণ চেপে ধরে রাখার পরে অবশ্য ঠিক হয়েছিল। ডাক্তার বলল এটা নাকি এপিসট্যাক্সিস। নাকের ভেইনগুলো ফেটে গিয়ে এধরনের ঘটনা ঘটায় এবং প্রেগন্যান্সী টাইমে এটা হতে পারে, তবে ভয়ের কিছু নেই।

এ সময়ে খাওয়া-দাওয়াঃ
আমার শশুড়বাড়ীর দিক থেকে এ সময়ে বেশ কিছু নিময়-কানুন মেনে চলা হত। কাজু আর পেস্তা বাদাম দিয়ে আমার শাশুড়ী নাড়ু বানিয়ে খাওয়াতেন যাতে বাবুর ব্রেন ভাল হয়। জাফরান দিয়ে দুধ খাওয়াতেন যাতে বাবুর ত্বক সুন্দর হয়। দুধের ক্ষেত্রে দুবাইয়ের নিডো ভাল। হাঁসের মাংস বা বোয়াল মাছ খেতে দিতেন না। আর বিবিধ বিধি-নিষেধ মানতেন। আমার বউ সবসময় লোহার পেরেক আর ম্যাচের কাঠি সংগে রাখতো। হতে পারে এগুলো কুসংষ্কার, তবে মানলে ক্ষতি কি?

আমাদের ডাক্তারঃ
আমাদের ডাক্তার ছিলেন ডাঃ তাহমিনা, হলি ফ্যামিলির সহকারী অধ্যাপক-বসেন মালিবাগ মেডিনোভায় আর সিজার করেন মনোয়ারাতে। উনি প্রথম থেকেই অনেক সময় (প্রায় ৪৫ মিনিট) ধরে আমাদের কথা শুনতেন। আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন। পুরো সময়টিই উনি যথেষ্ট কোঅপারেটিভ ছিলেন। এই সাইট থেকেও আমার বউ প্রতিদিন বাচ্চার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করতো।

টেস্টঃ
বাসার কাছে হওয়ায় অধিকাংশ টেস্টই করিয়েছি মালিবাগের মেডিনোভায়। তবে পদ্মায়-ও টেস্ট করিয়েছি, ফোর-ডি এনামোলি স্ক্যান সেখান ভাল। সেখানকার খরচ মেডিনোভার তুলনায় কম এবং সার্ভিসও ভাল পেয়েছি। তবে ডাক্তারের পরামর্শে আনোয়ার খান মডার্ন ডায়াগনোস্টিকে ডাঃ হুমায়রা ইসলামের কাছে আল্ট্রা সাউন্ড করাতে গিয়ে আমাদের প্রায় ছয় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। যদিও তার রিপোর্টের সাথে অন্যগুলোর অ্যানামোলি টেস্টের রিপোর্টের কোন গুনগত পার্থক্য আমার চোখে পড়েনি। আট মাসের একজন প্রেগন্যান্ট মহিলাকে ছয় ঘন্টা চেয়ারে বসিয়ে রেখে টেস্ট করে কি উপকারটা হলো-আমি বা আমার বউ কেউই বুঝলাম না!X(X(X(

অবশেষে ২০১৪ সালে মে মাসের ১০ তারিখ রাত ১১:৫২ মিনিটে আমাদের প্রথম সন্তান জন্ম নিল। অপূর্ব সুন্দর এক কন্যা। কোন কান্নাকাটি নেই, চোখ পিটপিট করে সবাইকে দেখছিল। এবং হটাৎ করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে নিঃশব্দে হেসে উঠলো। ওর নানা আজান দিলেন। আমিও পাশের নামাজ ঘরে নফল নামাজ পড়লাম। এতরাতে সব মিষ্টির দোকন বন্ধ। শেষে এক দোকান থেকে ক্যাডবেরি চকলেট নিয়ে আসলাম। সবকিছু মিলিয়ে আলো-আঁধারিতে এক ঘোরগ্রস্থ পরিবেশ।

সবাই জানতে চায়, বাবা হওয়ায় আমার অনুভূতি কি? আমি কোন বাক্য খুঁজে পাইনা। আসলেই তো, আমার কেমন লাগছে, আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারি না। আমার বউ অবশ্য বলে, আমি এই বিষয়টা পরে বুঝতে পারবো...আমার সাথে ওর সম্পর্ক শুরু হলো মাত্র...তাই মনেরটা মনেই থাক। সব অনুভূতি সহজপাঠ্য হয়ে গেলে অনেকটাই নিরস হয়ে যায় যে!

২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×