somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থাভাবে আজও বাবার কবর দেখার সুযোগ হয়নি

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অর্থাভাবে আজও বাবার কবর দেখার সুযোগ হয়নি। এই কষ্ট কি ক্ষুধার চেয়েও কোন অংশে কম? হয়তো ক্ষুধাকে অবদমন করা যায়না বলেই তা মেটানোর জন্য আমাদের নিয়ত প্রচেষ্টা। আর অন্যটি দীর্ঘ ৩৮টি বছর বুকের মাঝে বয়ে বেড়ানো।

১০ ই ডিসেম্বর ১৯৭১, দুপুর ১২টা, স্থানঃ মংলা বন্দর। ভারত সরকারের থেকে উপহার পাওয়া দুটি গানবোট পদ্মা ও পলাশ। সাথে রয়েছে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর গানবোট পানভেল। লক্ষ্য তৎকালীন পাকিস্তানী নৌঘাটি পি.এন.এস তিতুমীর দখল করা। হঠাৎ আকাশে তিনটি জঙ্গী বিমানের আগমন। অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন না। কিন্তু ততক্ষণে ভুল যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বিমান আক্রমনে বিধ্বস্থ গানবোট পদ্মা। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থায় পলাশের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। তার এই আদেশে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ইঞ্জিন আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন। মৃত্যুর মুখোমুখি এই অবস্থানে জাহাজ পরিত্যাগ করে নিজের জীবন বাঁচানোর বদলে দেশের জন্য লড়াই করার জন্য আহবান জানান সহযোদ্ধাদের। দৃঢ় প্রত্যয়ে বিমানগুলোর দিকে কামান চার্জের জন্য ছিলো তার এ আহবান। ফিরে আসেন নিজের যুদ্ধক্ষেত্র ইঞ্জিনরুমে। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে আর চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপূর্যপুরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস হয়ে যায়। আহত হন তিনি। কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপর-ও চেষ্টা চালিয়ে যান পলাশ কে বাঁচানোর। অবশেষে পলাশের ধ্বংশাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসা নদীতে। প্রাণশক্তিতে ভরপুর এ যোদ্ধা একসময় পাড়ে এসে পৌছান। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে ঘৃণ্য রাজাকারের দল অপেক্ষা করছে তার জন্য। আহত এই বীর সন্তান কে তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে রূপসার পাড়ে। তাঁর বিকৃত মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায়। এইসব রুহুল আমিনদের জীবনের বিনিময়েই আসে স্বাধীনতা।

হয়তো ভাগ্যজোরেই পরবর্তীতে জুটে যায় বীরশ্রেষ্ঠ উপাধী। কিন্তু আজো ভাগ্য সহায়ক হয়নি তার সন্তান শওকত আলী পাটোয়ারীর। আজো তিনি পারেননি রূপসা নদীর পারের তার বাবার সমাধী দেখার। দেশের জন্য জীবন দেয়া এই বীরশ্রেষ্ঠ সহ সকল শহীদেরা কিন্তু সংসারের টান, পৃথিবীর মায়া সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন আমাদের স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীন আমি আজ মাথা উচুঁ করে হাটি, চিৎকার করে শ্লোগান দেই জয় বাংলা বা বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলে। আমার একাধিক বাড়ী... ঠিক এই মুহুর্ত্বে ব্যাংকে আমার কত টাকা জমা আমি জানি না। অথচ আমার এই অবস্থানে আসতে যে মানুষটি জীবন দিলো, তার পরিবারের কথা একটিবার ভাবার মতো কিছুটা সময় আমার হয়নি। তার সন্তান আজ বাবার কবর একটিবার দেখতে না পারার কষ্টে কাদেঁ।

যুদ্ধে নিজের জীবন দানের বীরত্বের চেয়ে অন্যকোন মহৎ কাজ হয়তো এ জগতে দ্বিতীয়টি নেই। যাঁদের জীবনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শিখেছি, পেয়েছি নাগরিক অধিকার, তাঁদের কথা ভাবার মতো সময় কি আমাদের হবে না? শওকতদের কান্না কি আজো আমাদের র্ষ্পশ করবে না? আমাদের দায়ভার আর কতদিন আমরা এড়িয়ে যাবো? রাষ্ট্রযন্ত্র শওকতদের কান্না থামাতে পারবেনা, এ আমি বিশ্বাস করিনা। কবে সেই দিন আসবে যেদিন আমরা শওকতদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবো? যতদিন সেই মুহুর্ত্ব না আসছে ততদিন মাথা উচুঁ করে চলার কোন অধিকার আমার নেই। আমি লজ্জিত... দায়ভার শোধরাতে না পারার লজ্জায়। আমি লজ্জিত... অকৃজ্ঞতার লজ্জায়। আমি লজ্জিত... রাজাকারদের পেছনে মিছিলে অংশ নেয়ার লজ্জায়। আমি লজ্জিত... ইতিহাস ভুলে যাবার প্রচেষ্টার লজ্জায়।


এ আমার লজ্জা...। এ আমাদের লজ্জা...। এ আমার জাতীসত্বার লজ্জা...




======================
ছবিঃ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি
তথ্যসূত্রঃ বাংলা উইকিপিডিয়াপ্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:০৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×