
এখন যদি আমি আপনার সামনে শুধু নিষিদ্ধ শব্দটা রেখে মাত্র দুই সেকেন্ড সময় দিয়ে বরি আপনি এরপাশে আরেকটি শব্দ বসান কাহলে কি বসাবেন? পল্লী? অসুবিধা নেই, আপনি না বসালেও অধিকাংশ তাই বসাবে। এটাই নিয়ম, আমাদের জীবনে নিষিদ্ধ পল্লী এমন ভাবে এসেছে যে আমাদের মনের অজান্তেই এই শব্দটি চলে আসবে। আচ্ছা একটা মেয়েকে যদি আমি এই নিষিদ্ধ শব্দটা দেই সেও কি একই উত্তর দিবে? তার কাছে তো নিসিদ্ধ পল্লীর সেই আবেদনটি নেই। তবে আমার দাদীকে এই শব্দটি দিলে তিনি হয়ত উত্তর দিতেন “আউট বই”। কারন তার সময়ে মেয়েদের এই ধরনের আউট বই পড়াটা নিষিদ্ধ ছিলো, এবং আমি নিশ্চিত তাদের আগ্রহ চুড়ান্ত ছিলো সেই সব আউট বইয়ের প্রতি। যেমনটা আমার ছিলো ক্লাসের এক ছেলের যোগাড় করা ২০টাকা দামের সেই ম্যাগাজিন গুলো যা আমাদের উঠতি কিশোরদের লালস্য ভরা চোখের পিপাশা মেটাতো। এই আগ্রহ যৌনতা দ্বারা যেমন ব্যাখ্যা করা যায় তেমনি এই ‘পুস্তক’গুলোর নিষিদ্ধ অবস্থাও একে অনেকটাই জনপ্রিয় করে তোলে। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুয়ের আকর্ষন থাকাটাই কিন্তু স্বাভাবিক। শুধু স্বাভাবিক ই নয় এটি একটি চরম সত্য। আরে এই নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষনটা না থাকলে তো আমরা এই পৃখিবীতেই আসতাম না। ধর্মমতে আদম হাওয়াকে যদি গন্ধম খেতে নিষেধ না করা হতো তাহলে হয়ত তারা স্বর্গের রং-নুপের মধ্যে থেকে সেই গনধমের দিকে ফিরেও তাকাতো না। কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে ওই নিষেধটা করেই। তাই আজও আমি পৃথিবীতে বিচরন করে যাচ্ছি, এবং নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষনকে নাক শিটকাচ্ছি। ছোটবেরা থেকেই শুরু করি, টিভি দেখতে মানা ছিলো, তাই টিভির প্রতি আকর্ষনটা অন্যরকম ছিলো আমার কাছে, মানা ছিলো আইসক্রিম খাওয়ার, ফুচকা চটপটি খাওয়ার তাই ঘরে হাজার বিরিয়ানী খেয়েও স্বাদ মিঠতো না। এইগুলো তো ছোটবেলার সেই নিখাদ খাটি চাওয়া গুলো। কিন্তু নিষেধের প্রতি আকর্ষন আরও বড়, আরও বিশাল। কিছু নিষেধের প্রতি মানুষ আকর্ষিত হয়েছে তাকে জয় করার নেশায়। যেই কারনে এভারেস্টের চুড়ায় পতাকা উড়ল, উত্তর দক্ষিন গোলার্ধে নৌকা ভিড়ল, আজও যে কারনে বারমুডাকে আমরা জয় করতে চাই, আজও যেকারনে আমাজনে আমরা বারে বারে হারাই। এই সব উদ্যমকে নিষেধাজ্ঞা কম প্ররোচিতো করেনি। আমাদের সমাজে নিষেধ সাইনবোর্ডটি অনেক বেশী ঝুলো থাকে যৌণতার গলির পাশে। প্রেম নিষেধ থাকলে হয় প্রেমের প্রতি আগ্রহ, বিয়ে করে মানুষের জান কোরবান, কিন্তু বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞাই একজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তৈরী করে। আমি কখনই তসলীমা নাসরিনের উন্নত লেখার মানের কারনে তার বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। হয়েছি তার পেছনে অনেক বড় ভুমিকা পাল করেছে তার উপর “নিষিদ্ধ” সাইনবোর্ডটি। পকেটের কষ্টের টাকা খরচ করে নারী কিনেছিলাম, কারন বইমেলায় ধেখলাম মলাটের উপর লেখা “সাড়ে চার বছর ধরে নিষিদ্ধ”। সব কিছু ভুলে যান, আপনাকে একটা কাজ করতে মানা করা হলো, খুবই মামুলি একটা মানা, আপনি হয়তো সাময়িক ভাবে মেনে নিলেনও, কিন্তু আমি নিশ্চিত আপনি শান্তি পাবেন না। সেই নিষেধ আপনাকে তাড়া করবেই। এটাই নিয়ম। এটাই হওয়া স্বাভাবিক। বেড়া ভাঙ্গবো বলেই তো মানুষ হয়েছি। এই নিষেধ না মানাই সভ্যতাকে অনেক কিছু দিয়েছে। কেড়েও নিয়েছে অনেক কিছু। কিন্তু থামেনি গড় মানুষ। নিষেধ ভাঙ্গার ব্যাপারে কোন নিষেধ মানেনি মানুষ।
তবে হ্যা, এটা ঠিক কিছু নিষেধ না মানা আমাদের জন্যে বেশ দুঃখেরই বটে, অনেক কষ্টও দেয়, তৈরী করে সামাজিক অস্থিরতার,কিন্তু বলে কি লাভ? মানুষ তো নিষেধ মানবে না। থামাবে না পথ চলা তার নিষিদ্ধ ইচ্ছার পথে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ রাত ১:৪৫