somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ্যমবুশ ৮

০২ রা মে, ২০২৫ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তেলআভিভের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নিচে ‘অপারেশন কক্ষ’। সময় রাত তিনটা ছুঁইছুঁই। ঘরের ভেতর আলো কম, শুধু স্ক্রিনের আলোতে চারজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বসে আছেন—টেবিলের ওপারে এনক্রিপ্টেড ভিডিও কলে কায়রোর গোয়েন্দা সদরদপ্তর।

কায়রো প্রান্তে পরনে ধূসর স্যুট, চোখে রিমলেস চশমা, মিশরের গোয়েন্দা সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর হামদি আল-নাসের। পাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।

হামদি শুরুতেই বিনয়ের সুরে বলেন,
“আমরা পরিস্থিতির গভীরতা বুঝি, মি. আভিন। কিন্তু সহযোগিতার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত আছে, আপনাদের জন্য হয়তো অস্বস্তিকর, কিন্তু বাস্তব।”

ইসরায়েলি উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লিওর আভিন মুখ নিচু করে নোট নেন। পাশে বসে থাকা মোসাদের মিডল ইস্ট শাখার প্রধান চোখ সরু করে তাকিয়ে আছেন স্ক্রিনে।

“আপনি সরাসরি বলুন, হামদি। সময় আমাদের হাতে বেশি নেই,” আভিন কণ্ঠে ক্লান্তি ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন।

“তিনটি বিষয়,” হামদি স্পষ্ট গলায় বলেন।
“প্রথমত, গাজার ওপর সব সামরিক হামলা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে একটি পূর্ণমাত্রার মানবিক করিডর খুলে দিতে হবে, সেখানে আমরা আমাদের রেড ক্রিসেন্ট, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠাব। এবং তৃতীয়ত, আপনারা গাজা আক্রমনের এর আগের অবস্থা পুনঃস্থাপন করবেন। অর্থাৎ যুদ্ধ শেষ, অবরোধ সীমিত, বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দিতে হবে।”

কথার শেষে কক্ষটা যেন হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকেন।

আভিন ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলেন,
“আপনারা চাইছেন, যারা আমাদের সৈন্যদের কেটে ফেলেছে, যারা রকেট ছুঁড়েছে আমাদের শহরে, তাদের সঙ্গে যেন আমরা আবার সহাবস্থান করি, যেন কিছুই হয়নি?”

হামদি শান্ত গলায় জবাব দেন,
“আমরা চাই সংঘাত বন্ধ হোক। এবং সেটা তখনই সম্ভব, যখন উভয় পক্ষ ছাড় দেয়।”

মোসাদ কর্মকর্তা এবার হালকা গর্জে ওঠেন,
“আমরা ‘ছাড়’ দিয়েছি, তিন হাজার মৃত ইসরায়েলি, পাঁচটা ধ্বংস হওয়া যুদ্ধজাহাজ, একটা ক্যারিয়ার হারানো, হাইফা ছিন্নভিন্ন। এখন আপনি বলছেন, আমরা যেন ঘাড় নুইয়ে নিই?”

“আপনারা চাইলে সাগরের শত্রু খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারি,” হামদি নিরুত্তাপভাবে বলেন।
“কিন্তু তার বিনিময়ে আপনাদের মানবিক মূল্য দিতে হবে। বিশ্ব আপনাদের দিকে চোখ রেখেছে।”

আভিন তাকিয়ে থাকেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর ঠাণ্ডা স্বরে বলেন,
“প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব।”

হামদি মাথা নেড়ে বলেন, “তাড়াতাড়ি করুন। সময় আপনার পক্ষে নেই।”

ভিডিও কল বন্ধ হয়। কক্ষ নিস্তব্ধ।

কয়েক সেকেন্ড কেউ কিছু বলে না। তারপর হঠাৎ মোসাদের কর্মকর্তা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,
“এই শুয়োরগুলো ভাবছে, আমাদের মাটি গিলে খাবে? গাজা যেন কোনো ধর্মশালা হয়ে গেছে ওদের কাছে!”

আভিন দাঁড়িয়ে জানালার দিকে তাকান। তার মুখে তিক্ততা।
“‘গাজা আক্রমনের আগের অবস্থান! সে তো যেন বলছে আমাদের সেনাদের কাটা হাত ভুলে যাও।”

আরেকজন কর্মকর্তা থেমে গিয়ে গলা নিচু করে বলে ওঠে,
“ওদের কেউ একটা খেলা খেলছে। ওদেরও সাগরের নৌকা ঘাটে ভিড়েছে। আমরা যদি এখনই মাথা না ঠাণ্ডা করি, ওরাই আমাদের শেষ ফাঁসিটা টেনে ধরবে।”

আভিন দাঁড়িয়ে থাকেন, চোখে ঘুমহীন ক্লান্তি। তারপর ঠোঁট চেপে বলেন,
“সবকিছু ভুলে গিয়ে ওদের সঙ্গে হাত মিলানো মানে নিজের ছেলেদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের জন্য প্রার্থনা করা।”

আরেকজন বলে ওঠে,
“এইরকম ভদ্র মুখে বিষ ঢালা কথাবার্তা খুব ভালো পারে মিশরীয়রা। আমরা যদি আজ থেমে যাই, আগামীকাল মিসর-তুরস্ক একসঙ্গে জাতিসংঘে আমাদের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনবে।”
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×