somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ্যমবুশ ১৩

১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গরম বাতাসের ঝাঁপটায় মরুভূমির বালু উড়ে বেড়াচ্ছে। শুষ্ক বাতাস যেন তপ্ত ছুরির মতো গায়ে লাগে। হঠাৎ করেই চারদিক কেঁপে উঠল, ট্যাংকের চেন ঘষা শব্দ, বুটের ছাপ ফেলে এগিয়ে আসা পায়ে হেঁটে সৈন্যদের হাঁটা, আর হালকা ইন্জিনের গর্জনে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠল।

একটি ইসরায়েলি ট্যাংক, সম্ভবত মেরকাভা-৪, সামনে এগিয়ে আসছে। তার পেছনে আরও তিনটি। মাঝখানে পায়ে হেঁটে আসছে একদল সৈন্য, তাদের চোখে লেন্স, গায়ে বডি আর্মার, হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল।

"ট্যাংক সামনে! সবাই প্রস্তুত!" মাথা নিচু করে বলল ইউনিট কমান্ডার, এক চোখে দূরবীন আর অন্য হাতে RPG ধরা।

কয়েকটা ছোট বালুর ঢিবির পেছনে লুকিয়ে থাকা ছয়জন গেরিলা যোদ্ধা চুপচাপ অপেক্ষা করছে। তাদের হাতে RPG, AK-74, আর একমাত্র পুরনো সোভিয়েত স্নাইপার রাইফেল। দম বন্ধ করে তারা লক্ষ্য করছে শত্রুর অগ্রগতি।

একজন পর্যবেক্ষক, একটি পরিত্যক্ত কাঁচাবালির ভবনের ছাদে বসে বাইনোকুলারে চোখ রেখেছে। তার ঠোঁট নড়ে ওঠে, কেবল তিনটি শব্দ:

“এখনো না…”

ট্যাংক যখন সামনে থাকা সংকীর্ণ গিরিখাদের মুখে প্রবেশ করে, ঠিক তখন বালুর নিচ থেকে উঠল একটি ডিসগাইজড ড্রোন। নীরবভাবে উড়ে গিয়ে পাঠিয়ে দিল সংকেত।

"এটাই সিগন্যাল!" কমান্ডারের গলা জোরে উঠল না, কিন্তু শব্দে ছিল অদম্য দৃঢ়তা।

ধাঁই! ধাঁই!! ধাঁই!!!
একসাথে তিনটি RPG ছোঁড়া হলো তিনটি দিক থেকে।

প্রথমটা গিয়ে লাগল সামনের ট্যাংকের চেইনে, বিস্ফোরণে তার ট্র্যাক ছিঁড়ে গেল।
দ্বিতীয়টি লাফিয়ে পড়ল মাঝখানের ট্যাংকের আর্মর-প্লেটের নিচে, ধাতব বিকট শব্দ, আগুনের শিখা।
তৃতীয়টি একটু মিস করে, পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়, কিন্তু এর শব্দ সৈন্যদের বিভ্রান্ত করে তোলে।

সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে গর্জে উঠল গুলি। বালুর নিচ থেকে যেন ভূতের মতো জেগে উঠল গেরিলারা। তাদের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল একযোগে শত্রুর দেহ ভেদ করতে লাগল।

একজন ইসরায়েলি সেনা কভার নিতে চেষ্টা করে, কিন্তু তার হেলমেটে ঠুক করে কিছু লাগে, সে আর উঠে না।

ট্যাংকের ওপর থাকা গানার মাথা তুলতেই, ঠাস!, একটি নিঃশব্দ স্নাইপার শট, গানার হেলে পড়ে গেল নিচে।

এই বিশৃঙ্খলায় ইসরায়েলি ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার মাটিতে বসে পড়ে রেডিওতে চিৎকার করে:

"Delta squad, fallback left! Return fire, cover formation!"

পাল্টা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে তারা। মরুভূমিতে যেন গর্জে ওঠে দানব। একটি হাফ-ট্র্যাক থেকে হেভি মেশিনগান চালু হয়, তার গুলি এক গেরিলার কাঁধ ছুঁয়ে যায়।

"উহ!" সে লুটিয়ে পড়ে। পাশে থাকা একজন দ্রুত তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়। তার নাম সায়েদ। কাঁধে রক্ত, কিন্তু সে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়।

“আমার হাত ঠিক আছে... আমি শেষ RPG টা চালাব!”

আরেকজন চিৎকার করে ওঠে “তুই পাগল! থাম!”

কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। সায়েদ নিজের বাম হাত দিয়ে শেষ RPG তুলে নেয়, দাঁড়িয়ে পড়ে ট্যাংকের দিকে তাক করে ছোঁড়ে

ধাঁই!!

এইবার টার্গেট ছিল চতুর্থ ট্যাংকের পেছনের ফুয়েল সেকশন। সরাসরি আঘাতে ট্যাংকটি আগুনে জ্বলে ওঠে। কিছু সৈন্য লাফ দিয়ে পড়ে, কেউ আর উঠতে পারে না।

বেঁচে থাকা কয়েকজন সেনা ধোঁয়ার আড়াল নিয়ে পালাতে শুরু করে।

"ওরা পালাচ্ছে!" একজন গেরিলা বলে।

"তাদের যেতে দাও," শান্তভাবে বলে ইউনিট কমান্ডার। "সবাই সায়েদের দিকে যাও। কাঁধে ইনফেকশন হতে দেবে না।"

সায়েদ মুচকি হেসে বলে, “আজকে হাত দিয়ে না পারলে কালকে বাম পা দিয়ে ছুঁড়ব ভাই।”

চারপাশে তখনও জ্বলছে ধোঁয়া, ধাতব গন্ধে ভারী বাতাস, ছড়িয়ে আছে পোড়া চেইন, ছিন্ন ব্যাজ, আর নিরবতা।

পাঁচ মিনিট আগেও এখানে ছিল এক বিশাল কনভয়। এখন কেবল ভাঙা ধাতুর স্তূপ।

“চলো,”কমান্ডার বলল, “আগামীকাল আবার শিকার আসবে। আমাদের জায়গা বদলাতে হবে।”
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ২:৩৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×