দ্বিতীয় অধ্যায় – ফাসল ১
মওদূদী সাহেবের আক্বীদা ও আমলের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
(পৃষ্ঠা ১৯-৩৪)
আমি এখানে মওদূদী সাহেবের পুরো জীবন-ইতিহাস লিখব না। শুধু তাঁর আক্বীদা ও আমলের যে কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো থেকেই পরবর্তী সমস্ত ভ্রান্তি বেরিয়েছে, সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরব।
১. মওদূদী সাহেব নিজেকে মুজতাহিদে মুতলাক মনে করেন
তিনি বার বার বলেছেন এবং লিখেছেন:
“আজকের যুগে চার মাযহাবের তাকলীদ আর ফিকহের পুরানো কিতাব চলবে না। একজন মুজতাহিদে মুতলাক (স্বাধীন মুজতাহিদ) দরকার যিনি কুরআন-হাদীস থেকে সরাসরি নতুন যুগের জন্য নতুন ফিকহ তৈরি করবেন।” আর তিনি নিজেকেই সেই ব্যক্তি মনে করেন। তাই তাঁর তফহীমুল কুরআন, খুতুবাত, রসাইল-ও-মাসাইল প্রভৃতি কিতাবে হাজার হাজার জায়গায় ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ, ইমাম গাযযালী, ইবনে তাইমিয়া – এমনকি ইমাম রাযী, ইবনে কাসীর রহ.-এর বিরোধিতা করেছেন।
২. তিনি ইসলামকে একটি “রেভল্যুশনারি আইডিওলজি” (বিপ্লবী মতবাদ) বলেন
তাঁর মতে ইসলাম কোনো ব্যক্তিগত দ্বীন বা আধ্যাত্মিক পথ নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক বিপ্লবী কর্মসূচি। যার একমাত্র লক্ষ্য হলো পৃথিবীতে আল্লাহর হুকুমত কায়েম করা। এই লক্ষ্যে পৌঁছার আগ পর্যন্ত নামায-রোযা-তাসাওউফ সব গৌণ।
৩. তিনি নিজের দলকে “হিযবুল্লাহ” ও বাকি সব মুসলিমকে “হিযবুশ শাইতান” মনে করেন
জামায়াতে ইসলামীর ভাষায়:
“আজকের দুনিয়ায় আল্লাহর দল একটাই – জামায়াতে ইসলামী। বাকি সবাই – দেওবন্দী, বেরলভী, আহলে হাদীস, শিয়া, সুফী – সবাই শয়তানের দল।” এ কথা তাঁর কিতাব “জামায়াতে ইসলামী কিয়া হ্যায়” ও “তাহরীকে ইসলামী কি ইখলাকী বুনিয়াদে” এ স্পষ্ট লেখা আছে।
৪. তাঁর মতে কুরআনের অনেক আয়াত জামায়াতে ইসলামীর জন্যই নাযিল হয়েছে
তিনি লিখেছেন:
“সূরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াত (‘কুনতুম খায়রা উম্মাহ’) আজকের জামায়াতে ইসলামীর জন্য নাযিল হয়েছে। সাহাবায়ে কিরামের যুগে এই আয়াত পুরোপুরি প্রযোজ্য হয়নি।”
অর্থাৎ সাহাবার চাইতেও জামায়াতে ইসলামী উত্তম উম্মত!
৫. তিনি উলামায়ে সালাফ ও খুলাফায়ে রাশিদীনের পথ ছেড়ে নতুন পথ বানিয়েছেন
তিনি বলেন:
“আজ পর্যন্ত যে ইসলাম চলে আসছে তা পুরানো, জরাগ্রস্ত। এখন নতুন যুগের জন্য নতুন ইসলামী আন্দোলন দরকার।”
অর্থাৎ ১৪০০ বছরের উম্মত ভুল পথে ছিল, ১৯৪১ সালে মওদূদী সাহেব এসে সঠিক পথ দেখালেন।
৬. তাঁর কাছে তাসাওউফ, খানকাহ, যিকির-আযকার, ফযায়েল পড়া – সবই “পলায়নবাদ”
তিনি লিখেছেন:
“যারা খানকাহে বসে যিকির করে তারা ইসলামের শত্রু। তারা সমাজের পরিবর্তন থেকে পালিয়ে যায়।”
৭. তাঁর দলের সদস্য হওয়াই যেন ইসলামের প্রথম স্তম্ভ
জামায়াতের তা’লীমের কিতাবে লেখা আছে:
“ইসলাম কবুল করার প্রথম ধাপ হলো জামায়াতে ইসলামীতে বায়আত করা। তারপর নামায-রোযা শিখতে হবে।”
৮. তিনি সাধারণ মুসলিমকে “জাহেলিয়াতের লোক” বলেন
তাঁর মতে আজকের কোনো মুসলিম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বললেও সে জাহেলিয়াতেই আছে যতক্ষণ না জামায়াতের আন্দোলনে শরীক হয়।
এই কয়েকটি মৌলিক কথা থেকেই পরে যত রকম ভ্রান্তি বেরিয়েছে – খাতমে নবুওয়াত নিয়ে সন্দেহ, নবী-সাহাবার শানে গুস্তাখী, তাকফীরের ফতোয়া, তাসাওউফকে গালি – সবই এই মূল থেকে উৎপন্ন।
আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাই যে, এই ধরনের চিন্তা যেন কোনো মুসলিমের দিলে ঢোকে।
ফাসল ১ শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




