তৃতীয় অধ্যায় – ফাসল ২
খাতমে নবুওয়াতের উপর সবচেয়ে ভয়ানক আক্রমণ
(পৃষ্ঠা ৩৫-৬৫ – প্রায় ৩০ পৃষ্ঠার সবচেয়ে গুরুতর অধ্যায়)
এই অধ্যায়ে শায়খ যাকারিয়া রহ. প্রমাণ করেছেন যে, মওদূদী সাহেবের লেখায় খাতমে নবুওয়াতের আক্বীদার উপর এমন আঘাত করা হয়েছে যা পুরো উম্মতের ইজমার বিরুদ্ধে, এবং যার ফলে কাদিয়ানীদের পথই খুলে যায়।
মূল অভিযোগ ও উদ্ধৃতিসমূহ (বাংলায় সংক্ষেপে ও স্পষ্টভাবে):
১. মওদূদী সাহেব লিখেছেন (“তফহীমুল কুরআন”, সূরা আহযাব ৩৩:৪০ আয়াতের তাফসীর, খণ্ড-৪, পৃ. ২৬৭-২৬৮, পুরানো সংস্করণ):
“নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হওয়ার মানে শুধু এই যে, এখন থেকে আর কোনো শরীয়তবাহী নবী আসবে না। কিন্তু গায়রে শরীয়তবাহী (যে নবী নতুন শরীয়ত আনবে না) নবী আসা সম্ভব। যেমন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম যখন দাজ্জাল মারতে আসবেন, তিনি নবী হয়েই আসবেন, কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীর একজন সদস্য হিসেবে।”
শায়খ যাকারিয়া বলেন:
এই একটি বাক্যই কাদিয়ানী ফিতনার চেয়েও ভয়ানক। কারণ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও ঠিক এই কথাইদা ব্যবহার করেছিল। সে বলেছিল: “আমি গায়রে শরীয়তবাহী নবী, তাই খাতমে নবুওয়াত ভাঙছি না।”
মওদূদী সাহেবও ঠিক একই যুক্তি দিয়ে নবুওয়াতের দরজা খুলে দিয়েছেন।
২. আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন (“তফহীমুল কুরআন” একই জায়গায়):
“খাতমে নবুওয়াতের পরও ‘নবুওয়তে গায়রে তাশরীয়ী’ এবং ‘নবুওয়তে বুরূযী’ (অংশগত নবুওয়াত) পাওয়া যেতে পারে।”
শায়খ যাকারিয়া বলেন:
এই শব্দ দুটি (গায়রে তাশরীয়ী ও বুরূযী নবুওয়াত) কুরআন-হাদীসে কোথাও নেই। এগুলো মির্যা কাদিয়ানীর আবিষ্কার। এখন মওদূদী সাহেবও সেই একই শব্দ ব্যবহার করছেন।
৩. তিনি আরো লিখেছেন:
“যদি কোনো ব্যক্তি নবুওয়াতের এমন দাবি করে যা মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়াতের সঙ্গে কোনো বিরোধ না করে, তবে তা কুফর হবে না।”
শায়খ যাকারিয়া বলেন:
এর চেয়ে বড় কুফরের কথা আর কী হতে পারে? কারণ খাতমে নবুওয়াতের মানে হলো: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর কোনো ধরনের নবীই আসবে না। তিনি সাহাবী (হযরত আবু বকর, উমর, আলী রা.) পর্যন্ত কাদিয়ানীদের মতো লোকদের হত্যা করেছেন। আর মওদূদী সাহেব বলছেন “কুফর হবে না”!
৪. তিনি “রসাইল ও মাসাইল” (খণ্ড-১, পৃ. ৭৬) লিখেছেন:
“যদি কেউ স্বপ্নে বা জাগ্রত অবস্থায় নবুওয়াতের দাবি করে, আর সে দাবি করে যে আমি পুরানো নবীদের মতোই নবী, কিন্তু আমার নবুওয়াত মুহাম্মদী শরীয়তের অধীন, তাহলে তার এই দাবি সহীহ হতে পারে।”
শায়খ যাকারিয়া বলেন:
এই কথার পর আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। এটা সরাসরি কাদিয়ানিয়াতকে বৈধ করা।
৫. শায়খ সাহেব আরো অনেক উদাহরণ দিয়েছেন, যেমন:
মওদূদী সাহেব বলেছেন: “নবুওয়াতের নেয়ামত এখনো বন্ধ হয়নি, শুধু তাশরীয়ী নবুওয়াত বন্ধ হয়েছে।”
তিনি হযরত ইবনে আরাবী রহ.-এর একটি বিতর্কিত কথাকে দলীল বানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি উম্মতে মুহাম্মদীতে এসে নবী হয়, সে আসলে উম্মতী-নবী।”
শায়খ যাকারিয়া রহ. এই পুরো অধ্যায়ে প্রমাণ করেছেন যে:
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর ইজমা হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর কোনো প্রকারের নবী আসা সম্ভব নয়।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম যখন আসবেন, তিনি এই উম্মতের একজন সদস্য হয়ে আসবেন, নতুন নবী হয়ে নয়।
“উম্মতী-নবী” বলে কোনো জিনিস ইসলামে নেই। এটা কাদিয়ানীদের তৈরি শব্দ।
অধ্যায়ের শেষ কথা:
“যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর কোনো ধরনের নবী আসার সম্ভাবনা রাখে, সে কাফির ও মুরতাদ। আর মওদূদী সাহেবের এই বক্তব্যগুলো ঠিক সেই দিকেই নিয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের ঈমানের হেফাজত করুন।”
ফাসল ২ শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




