ফিতনা-এ-মওদূদিয়াত
চতুর্থ অধ্যায় – ফাসল ৩
নবী-রাসূলগণের শানে গুস্তাখী ও বেয়াদবী
(পৃষ্ঠা ৬৬-৯৮ – প্রায় ৩৩ পৃষ্ঠা। এটি কিতাবের সবচেয়ে কঠিন ও বেদনাদায়ক অধ্যায়)
শায়খ যাকারিয়া রহ. এখানে মওদূদী সাহেবের নিজের কলম থেকে প্রায় ৪০-৫০টি উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছেন যে, নবী-রাসূলদের শানে এমন কথা বলা হয়েছে যা শুনলে কোনো মুমিনের রক্ত গরম হয়ে যায়।
নিচে সবচেয়ে বড় বড় গুস্তাখানা বাক্যগুলো বাংলায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হলো:
১. নবীদের “ব্যর্থতা” দেখানো
মওদূদী সাহেব লিখেছেন (“তফহীমুল কুরআন” ও “জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ”):
“অধিকাংশ নবী তাঁদের উম্মতের কাছে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁদের হাতে ক্ষমতা ছিল না, তাই তাঁরা শুধু নৈতিক উপদেশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফল হয়েছেন কারণ তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়েছিলেন।”
শায়খ বলেন:
“নবী কেউ ব্যর্থ হন না। আল্লাহ যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পূর্ণ করেছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকাকে ‘ব্যর্থতা’ বলা নবুওয়াতের শানে স্পষ্ট গুস্তাখী।”
২. হযরত দাউদ ও সুলাইমান আ.-এর আগে কোনো নবীর পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না
মওদূদী লিখেছেন:
“মানব ইতিহাসে প্রথম যে দুজন নবী ‘থিওক্রেটিক স্টেট’ (আল্লাহকেন্দ্রিক রাষ্ট্র) কায়েম করেছিলেন তাঁরা হলেন হযরত দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমাস সালাম।”
শায়খ বলেন:
“এর মানে হলো — হযরত ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, মূসা আলাইহিমুস সালাম — এঁদের যুগে কোনো পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না। এটা সব নবীর শানে গুস্তাখী।”
৩. নবীদের “সীমিত দৃষ্টি”
মওদূদী লিখেছেন:
“পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টি সংকীর্ণ ছিল, তাঁরা শুধু নিজেদের কওমের জন্য এসেছিলেন। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতার জন্য এসেছেন।”
শায়খ বলেন:
“কুরআন নিজেই বলে প্রত্যেক নবীকে তাঁর কওমের জন্য পাঠানো হয়েছে। এটাকে ‘সংকীর্ণ দৃষ্টি’ বলা নবীদের প্রতি বেয়াদবী।”
৪. হযরত নূহ আ.-এর ৯৫০ বছর দাওয়াতকে “অকার্যকর” বলা
মওদূদী লিখেছেন:
“হযরত নূহ আলাইহিস সালাম ৯৫০ বছর দাওয়াত দিয়েছেন, কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া কেউ ঈমান আনেনি। এ থেকে বোঝা যায় তাঁর পদ্ধতি পুরোপুরি সফল হয়নি।”
শায়খ বলেন:
“আল্লাহ নিজে কুরআনে এই ৯৫০ বছরের কথা বলেছেন গৌরবের সাথে। আর মওদূদী সাহেব বলছেন ‘পদ্ধতি সফল হয়নি’! এর চেয়ে বড় গুস্তাখী আর কী হতে পারে?”
৫. যুগে যুগে নবীদের “পরাজয়”
মওদূদী লিখেছেন:
“ইতিহাস দেখিয়েছে, যখনই নবী ও তাঁর অনুসারীদের উপর জুলুমের চরম সীমা হয়েছে, তখন আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। অর্থাৎ নবীদের দাওয়াত শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছে।”
শায়খ বলেন:
“নবীর দাওয়াত কখনো পরাজিত হয় না। আল্লাহ যা চান তাই হয়। এভাবে বলা যেন নবীদের পরাজিত সেনাপতি বানানো হচ্ছে।”
৬. সবচেয়ে ভয়ানক বাক্য
মওদূদী সাহেব লিখেছেন (“তফহীমুল কুরআন”):
“অনেক নবীকে তাঁদের কওম এমনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে যে, তাঁরা আর কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন চালাতে পারেননি। তাঁদের দাওয়াত শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।”
শায়খ যাকারিয়া বলেন:
“এই একটি বাক্যই যথেষ্ট যে, মওদূদী সাহেব নবুওয়াতের শান বোঝেননি। নবীদের কাজ ক্ষমতা দখল করা নয়, আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আর তা তাঁরা পূর্ণ করেছেন।”
অধ্যায়ের শেষে শায়খ লিখেছেন:
“যে ব্যক্তি নবীদের ‘ব্যর্থ’, ‘সীমিত দৃষ্টি’, ‘পরাজিত’ বলে, তার দিলে নবুওয়াতের হক আদায় হয়নি। এ ধরনের কিতাব পড়লে ঈমান চলে যাওয়ার ভয় আছে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।”
ফাসল ৩ শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




