সপ্তম অধ্যায় – ফাসল ৬
ইসলামকে রাজনৈতিক বিপ্লবী দল বানানো এবং তাসাওউফ-তাকওয়া-আখলাককে গৌণ করে দেয়া
(পৃষ্ঠা ১৭৯-২১০ – প্রায় ৩২ পৃষ্ঠা)
শায়খ যাকারিয়া রহ. এখানে লিখেছেন:
“মওদূদী সাহেবের আরেকটা সবচেয়ে বড় ফিতনা হলো – ইসলামকে শুধু একটা রাজনৈতিক বিপ্লবী আন্দোলন বানিয়ে দেয়া। আর নামায-রোযা-তাকওয়া-তাসাওউফ-আখলাক-যিকির-আযকার – সবকিছুকে পটভূমিতে ঠেলে দেয়া। যেন ইসলামের আসল কাজ ক্ষমতা দখল, বাকি সব গৌণ। এটা ইসলামের মুখ উল্টে দেয়া।”
মূল অভিযোগ ও উদ্ধৃতি:
১. ইসলাম মানে শুধু রাজনৈতিক বিপ্লব
মওদূদী সাহেব লিখেছেন (“জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ”, “ইসলামী রিয়াসত”):
“ইসলামের মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীতে আল্লাহর হুকুমত কায়েম করা। যে পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতা মুসলিমদের হাতে না আসবে, সে পর্যন্ত নামায-রোযা-হজ-যাকাত কোনোটারই পূর্ণ সওয়াব হবে না।”
শায়খ বলেন:
“এর মানে মক্কার ১৩ বছরের ইবাদত-তাকওয়া সব বেকার ছিল? সাহাবারা ক্ষমতাহীন অবস্থায় যে নামায পড়েছেন তা অসম্পূর্ণ? এটা কুরআন-হাদীসের সরাসরি বিরুদ্ধে।”
২. তাসাওউফ ও খানকাহকে “ইসলামের শত্রু” বলা
মওদূদী সাহেব লিখেছেন (“তানকীহাত”, “তহরীকে ইসলামী কি ইখলাকী বুনিয়াদে”):
“তাসাওউফ, খানকাহ, যিকিরের মজলিস – এগুলো ইসলামের শত্রুদের তৈরি করা ফাঁদ। এর মাধ্যমে মুসলিম যুবকরা রাজনৈতিক সংগ্রাম থেকে পালিয়ে যায়।”
শায়খ যাকারিয়া বলেন:
“তাসাওউফ তো জুনায়েদ বাগদাদী, সিররী সাকাতী, বায়যীদ বোস্তামী, আব্দুল কাদির জিলানী, শাহ নকশবন্দ, ইমাম গাযযালী রহ.-এর পথ। এদেরকে ‘ইসলামের শত্রু’ বলা মানে সাহাবা-তাবেয়ীনের পরের পুরো উম্মতকে গালি দেয়া।”
৩. ফযায়েলে আমালকে “গল্পের বই” ও “বিদআত” বলা
জামায়াতের পত্র-পত্রিকায় ও খুতবায় বার বার বলা হয়েছে:
“ফযায়েলে আমাল, ফযায়েলে দুরূদ, ফযায়েলে যিকির – এগুলো গল্পের বই, বিদআতী কিতাব। এতে কোনো দলীল নেই।”
শায়খ বলেন:
“আমি নিজে এই কিতাবগুলো লিখেছি। এতে শুধু বুখারী-মুসলিম-তিরমিযী-আবু দাউদের হাদীস। হাদীসকে বিদআত বলা মানে হাদীসের সঙ্গে দুশমনি।”
৪. জামায়াতে ইসলামীতে বায়আত করাই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ
জামায়াতের তা’লীমী কিতাবে লেখা আছে:
“ইসলাম কবুল করার প্রথম ধাপ হলো জামায়াতে ইসলামীতে বায়আত করা। তারপর নামায-রোযা শিখতে হবে।”
শায়খ বলেন:
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর আগে জামায়াতে ইসলামীতে বায়আত? এটা কোন শরীয়তের কিতাবে আছে?”
৫. পুরানো উলামা-মাশায়েখকে “জাহেল” ও “পলায়নবাদী” বলা
মওদূদী সাহেব ও তাঁর অনুসারীরা বলতেন:
“দেওবন্দ-সাহারানপুর-রায়বরেলির মৌলবীরা জাহেল। তারা শুধু মাদ্রাসা-খানকাহে বসে আছে। তারা ইসলামের আসল কাজ বোঝেনি।”
শায়খ বলেন:
“যে লোক হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ., মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ., মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-কে গালি দেয়, তার দ্বীনের কী হাল বোঝা যায়।”
অধ্যায়ের শেষে শায়খ লিখেছেন:
“ইসলাম আগে তরবিয়তের দ্বীন, তারপর তহযীবের দ্বীন, তারপর হুকুমতের দ্বীন।
মওদূদী সাহেব সব উল্টে দিয়েছেন – আগে হুকুমত, তারপর বাকি সব।
এতে ইসলামের আলো নিভে গিয়ে শুধু রাজনীতির আগুন জ্বলছে।
এই পথে যে চলে, শেষে তার ঈমানও থাকে না, আখলাকও থাকে না।”
ফাসল ৬ শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




