বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। একাধারে উনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পুরোধা এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি "শেখ মুজিব" নামে বেশি পরিচিত এবং এই মহান নেতার উপাধি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু। উনার কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন ছাত্রনেতা এবং একই সাথে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে উচ্চপদে আসীন হয়েছিলেন। উনার বড় গুণ ছিল তুখোড় বক্তৃতা প্রদানের ক্ষমতা। সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন বঙ্গদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তনের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেন। এই মহান নেতার দাবীগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল বর্ধিত প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন যার কারণে তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময় ছয় দফা পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন যাকে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে উনার বিচার হয় এবং পরবর্তীতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ সনের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করলেও উনাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয়নি।
পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবেরে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৭১ সনের মার্চ ২৫ তারিখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে বঙ্গবন্ধু কে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তীতে রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধু কে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর মধ্যে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
জন্ম ও শিক্ষা:
শেখ মুজিবুর রহমান তদানীন্তন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন এবং মা'র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। উনার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন উনার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৩৮ সনে আঠারো বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সাথে ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। আর পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। তিনজন পুত্রই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতে আততায়ীর হাতে নিহত হন।
রাজনৈতিক জীবনের সূচনা:
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। এ বছর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তিতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। তিনি স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবীর উপর ভিত্তি করে একটি দল নিয়ে তাদের কাছে যান যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি নিজেই। ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪২ সনে এনট্র্যান্স পাশ করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। এই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং অগ্রণী বাঙালি মুসলিম নেতা হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন এখানে তার ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য বিষয় ছিল একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন। ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৪ সনে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্র লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলকাতায় বসবাসকারী ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে তৈরি "ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের" সেক্রেটারি মনোনীত হন। এর দুই বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সনে অর্থাৎ দেশবিভাগের বছর বঙ্গবন্ধু মুজিব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার সময়ে কলকাতায় ভয়ানক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়। এসময় বঙ্গবন্ধু মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন।
পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি ৪ তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। এ সময় সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার নিম্নমানের উন্নয়নের জন্য এটিকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে মনে করতে থাকেন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন:
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে। ১৯৪৮ সনের ফেব্রুয়ারি ২৩ তারিখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের অধিবেশনে বলেন যে, উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই মন্তব্যে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অবিলম্বে মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এই বছরের ২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয় যাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। এখান থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পরিষদের আহ্বানে ১১ মার্চ ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয় ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ছাত্রসমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং অন্য ছাত্র নেতাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। এদের মুক্তি উপলক্ষে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় র্যালি হয় যাতে মুজিব সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ এই র্যালি অবরোধ করেছিল। পুলিশী কার্যক্রমের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অবিলম্বে ১৭ মার্চ দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। এতে ১১ সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু কে আবার আটক করা হয়।
১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবী আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি এই জরিমানাকে অবৈধ ঘোষণা করে তা আদায় থেকে বিরত থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ এপ্রিল মুসলিম লীগ বিরোধী প্রার্থী শামসুল হক টাঙ্গাইলে একটি উপ-নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু তার সেই আন্দোলনের সফলতার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনের ধর্মঘট করেন যার জন্য উনাকে আবার আটক করা হয়। এ সময়ই বঙ্গবন্ধু কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মাচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান। ২৩ জুন সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করলে বঙ্গবন্ধু মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধু কে দলের পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সচিব নির্বাচিত করা হয়। জুনের শেষ দিকে জেল থেকে ছাড়া পান। ছাড়া পাওয়ার পরই খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে বঙ্গবন্ধু কে সাময়িকভাবে আটক করে রাখা হলেও অচিরেই ছাড়া পেয়ে যান। এর পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে মিলে লিয়াকত আলি খানের কাছে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের চেষ্টা করায় ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু কে আটক করা হয়। এটি ছিল অক্টোবরের শেষদিকের কথা।
১৯৫০ সনের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমনকে উপলক্ষ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে এবারও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আটক হন। সেবার বঙ্গবন্ধুর দুই বছর জেল হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে। এ ঘোষণার পর জেলে থাকা সত্ত্বেও মুজিব প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। জেল থেকে নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে পরিচালনায় তিনি ভূমিকা রাখেন। এরপরই ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষার দাবী আদায়ের দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সময়ে বঙ্গবন্ধু জেলে থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। বঙ্গবন্ধুর এই অনশন ১৩ দিন কার্যকর ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন:
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের শেষে দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩ টিতে বিপুল ব্যবধানে বিজয় অর্জণ করে যার মধ্যে ১৪৩ টি আসনই আওয়ামী লীগ লাভ করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ আসনে ১৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয় লাভ করেন। সেখানে উনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল শক্তিশালী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান। ১৫ মে বঙ্গবন্ধুকে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয়। ৩০ মে করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর বিমান বন্দর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে আটক করা হয়। ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। ১৭ জুন আওয়ামী লীগ পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ২১ দফা দাবী পেশ করে যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৩ জুন দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন অর্জিত না হলে আইন সভার সকল সদস্য পদত্যাগ করবেন। ২৫ আগস্ট পাকিস্তানের করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন:
"Sir [President of the Constituent Assembly], you will see that they want to place the word "East Pakistan" instead of "East Bengal." We had demanded so many times that you should use Bengal instead of Pakistan. The word "Bengal" has a history, has a tradition of its own. You can change it only after the people have been consulted. So far as the question of one unit is concerned it can come in the constitution. Why do you want it to be taken up just now? What about the state language, Bengali? We will be prepared to consider one-unit with all these things. So I appeal to my friends on that side to allow the people to give their verdict in any way, in the form of referendum or in the form of plebiscite."
২১ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের নাম থেকে "মুসলিম" শব্দটি বাদ দেয়া হয়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পুণরায় দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ৩ ফেব্রয়ারি মুখ্য মন্ত্রীর সাথে আওয়ামী লীগের বৈঠকে দল থেকে খসড়া সংবিধানে স্বায়ত্ত্বশাসন অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানানো হয়। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সামরিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব রাখা হয় যা তিনিই সরকারের কাছে পেশ করেন। সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখ তার নেতৃত্বে একটি দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল বের হয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী এই মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিয়ে একসাথে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সালে ৩০ মে দলের জন্য সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করার তাগিদে তিনি মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ৭ আগস্ট সরকারি সফরে চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন যান। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা এবং সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খান দেশে মার্শাল ল জারি করে সকল ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এই বছরেরই ১১ অক্টোবর তাকে আটক করা হয়। জেলা থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। ১৪ মাস একটানা আটক থাকার পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু জেলের ফটক থেকে আবার গ্রফতার করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান নেতা:
উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করার মাধ্যমে তিনি ১৯৬১ সালে জেল থেকে ছাড়া পান। এবার শুরু করেন গুপ্ত রাজনৈতিক তৎপরতা। অন্যান্য সাধারণ ছাত্রনেতাদের নিয়ে গোপনে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা। ১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রয়ারি জননিরাপত্তা আইনে তাকে আবার আটক করা হয়েছিল। জুনের ২ তারিখে চার বছরব্যাপী মার্শাল ল অপসারণের পর একই মাসের ১৮ তারিখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৫ জুন অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মিলে আইয়ুব খান আরোপিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমে পড়েন। ৫ জুন পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে আইয়ুব খানের সমালোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোর যান এবং সেখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মিলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলেন। এটি মূলত বিরোধী দলসমূহের একটি সাধারণ কাঠামো হিসেবে কাজ করেছিল। পুরো অক্টোবর মাস জুড়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মিলে বাংলার বিভিন্ন স্থান সফর করেন এই যুক্তফ্রন্টের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে লন্ডন যান, সোহরাওয়ার্দী সেখানে চিকিৎসারত ছিলেন। এই বছরের ৫ ডিসেম্বর তিনি বৈরুতে মৃত্যুবরণ করেন।
সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুণরায় সংহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেখ মুজিব তত্কালীন পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১১ মার্চ একটি সর্বদলীয় সংগ্রমা পরিষদ গঠিত হয় যার মাধ্যমে মুজিব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেনাশাসক আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসিস প্ল্যান, সামরিক শাসন এবং এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরোধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন শেখ মুজিব। এই পদ্ধতি অনুযায়ী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা করা হয় এবং প্রদেশগুলোকে একত্রে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করতে গিয়ে, মুজিব আইয়ুব বিরোধী দল প্রার্থী ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন। যথারীতি নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পূর্বে তাকে আটক করা হয়। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতা এবং আপত্তিকর প্রস্তাব পেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এক বছরের কারদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অবশ্য উচ্চ আদালতের এক রায়ে তার আগেই তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এ সময় সামরিক বাহিনীর গণহত্যা আর বাঙালিদের চাহিদা পূরণে সামরিক শাসকদের ঔদাসীন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
ছয় দফা দাবী:
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবী পেশ করেন যাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা উল্লেখিত হয়েছিল। শেখ মুজিব এই দাবীকে "আমাদের বাঁচার দাবী" শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই দাবীর মূল বিষয় ছিল একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত পাকিস্তানী ফেডারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন। এই দাবী সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখান করেন এবং শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ কারণে তিনি উক্ত সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। মার্চ মাসের এক তারিখে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেন। প্রায় পুরো দেশই ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকায় বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে বন্দী হন। বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই তাকে আটবার আটক করা হয়েছিল। এই বছরের মে ৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানার শ্রমিকদের এক র্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবীতে ৭ জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ এই ধর্মঘট চলাকালে গুলিবর্ষণ করে যার কারণে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে আনুমানিক তিনজনের মৃত্যু হয়।
১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিসমূহ
• প্রথম দফা :
শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি: ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের বৈশিষ্ট্য হবে Federal বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে।প্রদেশগুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার প্রতিনিধি নির্বাচন জনসংখ্যার ভিত্তিতে হবে।
• দ্বিতীয় দফা :
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ।অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
• তৃতীয় দফা :
মুদ্রা ও অর্থ বিষয়ক ক্ষমতা: পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দু'টি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময়যোগ্য।এ ক্ষেত্রে দু'অঞ্চলে স্বতন্ত্র বা পৃথক পৃথক ষ্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। অথবা, এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে।বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্থান থেকে পশ্চিম পাকিস্থানে মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য সংবিধানে কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
• চতুর্থ দফা :
রাজস্ব কর ও শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা: সকল প্রকার রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে।কেন্দ্রীয় তথা প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান আঞ্চলিক তহবিল হতে সরবরাহ করা হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই ফেডারেল তহবিলে জমা হয়ে যাবে। এহেন সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ণ্ত্রন ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকে।
• পঞ্চম দফা :
বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা: পঞ্চম দফায় বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে নিম্নরূপ সাংবিধানিক বিধানের সুপারিশ করা হয়: (ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে। (খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারে থাকবে এবং অঙ্গরাজ্যের প্রয়েআজন অঙ্গরাজ্য কর্তৃক ব্যবহৃত হবে। (গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মতনির্দিষ্ট হারে অঙ্গরাজ্যগুলেআ মিটাবে। (ঘ) অঙ্গরাজ্যের মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে মুল্ক বা করজাতীয় কোন বাধা থাকবে না। (ঙ) সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণের এবং স্ব স্ব স্বার্থে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।
• ষষ্ঠ দফা :
আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা: (ক) আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা-সামরিক বাহিনী বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে। (খ) কেন্দ্রীয় সরকারের সকল শাখায় বা চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিটি ইউনিট থেকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করতে হবে। (গ) নৌ-বাহিনীর সদর দপ্তর করাচি থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করতে হবে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা:
সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়ে জেলে দুই বছর থাকার পর ১৯৬৮ সালের প্রথমদিকে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিব এবং আরও ৩৪ জন বাঙালি সামরিক ও সিএসপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে সুপরিচিত। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল শেখ মুজিবসহ এই কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সাথে এক বৈঠকে পাকিস্তানকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এতে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামী করা হয় এবং পাকিস্তান বিভাগের এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অভিযুক্ত সকল আসামীকে ঢাকা সেনানিবাসে অন্তরীন করে রাখা হয়। এর অব্যবহিত পরেই সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এই মামলাকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে সর্বস্তরের মানুষ শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলের মুক্তির দাবীতে রাজপথে নেমে আসে। এহেন পরিস্থিতে একই বছরের ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত আসামীদের বিচারকার্য শুরু হয়।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান:
বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি ৫ তারিখে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের এগার দফা দাবী পেশ করে যার মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি গৃহীত হয়। এই সংগ্রাম এক সময় গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণ আন্দোলনই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। মাসব্যাপী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, কারফিউ, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং বেশ কিছু হতাহতের পর আন্দোলন যখন চরম রূপ ধারণ করে তখন পাকিস্তান সরকার ছাড় দিতে বাধ্য হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান রাজনৈতিক নেতাদের সাথেএক গোলটেবিল বৈঠকের পর এই মামলা প্রত্যাহার করে নেন। এর সাথে শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলকে মুক্তি দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে শেখ মুজিবের সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভার আয়োজন করে। লাখো জনতার এই সম্মেলনে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করা হয়। উপাধি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। এই সভায় রাখা বক্তৃতায় শেখ মুজিব ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগার দফা দাবীর পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের আহ্বানে অনুষ্ঠিত একটি সর্বদলীয় সম্মেলনে মুজিব তাঁর ছয়-দফাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চাহিদাগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং তা প্রত্যাখ্যাত হলে সম্মেলন থেকে বের হয়ে আসেন। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় মুজিব ঘোষণা করেন যে এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে "বাংলাদেশ" নামে অভিহিত করা হবে:
" একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে "বাংলা" শব্দটি মুছে ফেলার সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। "বাংলা" শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আজ ঘোষণা করছি যে, এখন থেকে এই দেশকে পূর্ব পাকিস্তানের বদলে "বাংলাদেশ" ডাকা হবে"।
মুজিবের এই ঘোষণার ফলে সারা দেশে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং সামরিক কর্তারা তাঁকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে মূল্যায়িত করতে শুরু করেন। মুজিবের বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিগত আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে। অনেক বুদ্ধিজীবি ব্যক্তিত্ব্যের মতে, বাঙালিদের আন্দোলন দ্বিজাতিতত্ত্বকে অস্বীকার করার নামান্তর। এই দ্বিজাতিতত্ত্বের মাধ্যমেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। বাঙালিদের জাতিগত ও সংস্কৃতিগত এই আত্মপরিচয় তাদেরকে একটি আলাদা জাতিসত্ত্বা প্রদান করে।বঙ্গবন্ধু মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সমর্থ হন এবং কার্যত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান তথা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
ঘটনাপঞ্জি
৪ জানুয়ারি: সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচী পেশ করেন।
৭ ও ৮ জানুয়ারি: গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রাজনৈতিক ঐক্য ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি বা ড্যাক (DAC) গঠিত হয়।
২০ জানুয়ারি: ছাত্রদের মিছিলে গুলিবর্ষনের ঘটনায় নিহত হন ছাত্র আসাদুজ্জামান।
২৪ জানুয়ারি: পুলিশের গুলিতে নিহত হন কিশোর ছাত্র মতিয়ুর রহমান-সহ আরো অনেকে।
১৫ ফেব্রুয়ারি: কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে আটক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হক নিহত।
১৮ ফেব্রুয়ারি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌন মিছিলে গুলি চালালে নিহত হন শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা।
২১ ফেব্রুয়ারি: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার।
২৬ ফেব্রুয়ারি: বিরোধী নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার জন্য আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক আহবান করেন। পরবর্তীতে গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলে আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন।
১৯৭০ এর নির্বাচন ও স্বাধীনতা যুদ্ধ
১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানের কোটার ২ টি আসন ছাড়া বাকি সবগুলোতে জয়ী হওয়ার জন্য জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের ফলাফল পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করে। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো, মুজিবের স্বায়ত্বশাসনের নীতির প্রবল বিরোধীতা করেন। ভুট্টো এ্যাসেম্বলি বয়কট করার হুমকি দিয়ে ঘোষণা দেন যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান মুজিবকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানালে তিনি সে সরকারকে মেনে নেবেন না।
রাজনৈতিক অস্থিশীলতার মধ্যে ইয়াহিয়া খান সংসদ ডাকতে দেরি করছিলেন। বাঙালিরা এতে বুঝে ফেলে যে, মুজিবের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন।
ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং মুজিবসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও জনসাধারণের অসন্তোষ দমনে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ:
"এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক"।
মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ফয়সালাবাদের একটি জেলে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। পাকিস্তানি জেনারেল রহিমুদ্দিন খান মুজিবের মামলার পরিচালনা করেন। মামলার আসল কার্যপ্রণালী এবং রায় কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় নি। এ মামলাটি "লায়ালপুর ট্রায়াল" হিসাবে অভিহিত।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিচালিত অভিযান অল্প সময়ের মধ্যেই হিংস্রতা ও তীব্র রক্তপাতে রূপ নেয়। রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করে। বাঙালি ও অবাঙালি হিন্দুদেরকে লক্ষ্য করে বিশেষ অভিযানের কারণে সারা বছরজুড়ে প্রচুর হিন্দু জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ও পুলিশ রেজিমেণ্টে কর্মরত পূর্ব বাংলার সদস্যবৃন্দ দ্রুত বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং লীগ সদস্যবৃন্দ কলকাতায় তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব প্রবাসে বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তি বাহিনীর নেতৃত্ব বড় রকমের বিদ্রোহ সংঘটিত হতে থাকে। আন্তর্জাতিক চাপ থাকা স্বত্ত্বেও পাকিস্তানি সরকার মুজিবকে ছেড়ে দিতে এবং তাঁর সাথে সমঝোতা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
যুদ্ধবর্তী সময়ে মুজিবের পরিবারকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। তাঁর সন্তান শেখ কামাল মুক্তি বাহিনীর একজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার ছিলেন। মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর ভিতরে সংঘটিত যুদ্ধটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সরকারের অংশগ্রহণের পর, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় ফিরে সরকার গঠন করেন। পাকিস্তানি শাসকবৃন্দ মুজিবকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তিদান করে। এরপর তিনি লণ্ডন হয়ে নতুন দিল্লিতে ফিরে আসেন এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী’র সাথে সাক্ষাতের পর জনসমক্ষে “ভারতের জনগণ, আমার জনগণের শ্রেষ্ঠ বন্ধু” বলে তাঁকে সাধুবাদ জানান। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। গান্ধীর সাথে সেদিন তিনি ঢাকায় জড়ো হওয়া প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা দেন।
বাংলাদেশের শাসন:
শেখ মুজিবর রহমান অল্পদিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭০ এ নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা নতুন রাষ্ট্রের অন্তর্বর্তী সংসদ গঠন করেন। মুক্তি বাহিনী এবং অন্যান্য মিলিশিয়াদের নিয়ে নতুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গঠিত হয় এবং ১৭ মার্চ ভারতীয় বাহিনীর কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নেয়।
বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের পর মুজিব জাতিসংঘ ও জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিশ্চিত করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশের জন্য মানবীয় ও উন্নয়নকল্পের জন্য সহযোগিতা চান। তিনি ভারতের সাথে একটি বন্ধুত্বের চুক্তি স্বাক্ষর করেন যাতে অর্থনৈতিক ও মানব সম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক সাহায্যের আশ্বাস দেয়া হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারী কর্তা ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মুজিব ইন্দিরা গান্ধির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন। মুজিবের জীবদ্দশায় দুই সরকারের মধ্যে পারষ্পরিক সমঝোতা ছিল।
মুজিব তার অন্তর্বর্তী সংসদকে একটি নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেন এবং চারটি মূলনীতি হিসেবে “জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র” ঘোষণা করেন। মুজিব শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি রাষ্ট্রীয়করণ করেন এবং ভূমি ও মূলধন বাজেয়াপ্ত করে ভূমি পূনর্বণ্টনের মাধ্যমে কুষকদের সাহায্য করেন। ১ কোটি শরণার্থীর পূণর্বাসনের জন্য বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট কমে যেতে শুরু করে এবং দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। ১৯৭৩ সাল থেকে সংবিধান কার্যকর করা হয় এবং ১৯৭৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুজিব ও তাঁর দল নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা, স্যানিটেশন, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পানি ও বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটান। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনায় কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো ও কুটির শিল্পে রাষ্ট্রীয় অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়।
স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের গুলিতে ঝাঁঝরা বঙ্গবন্ধুর সারা দেহ
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট চ্যান্সেলর হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর । ১৪ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু রাত সাড়ে আটটার দিকে গণভবন থেকে বাড়ি ফেরেন। ১৪ই আগস্ট রাতে কাওরান বাজারে একটি ট্যাংক দেখা যায়, পিজি হাসপাতালের সামনে আরেকটি ট্যাংক দেখা যায় । মতিঝিলের কাছে আরো একটি ট্যাংক । এক কিলোমিটারের ব্যবধানে ৩টি ট্যাংক । আবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের সামনে আরেকটি ট্যাংক। সেদিন রাতে খন্দকার মোশতাক আহমেদের ৫৪ নং আগামসি লেনের বাসায় মেজর রশিদ এবং তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের আগমন। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্বর্ধনা জানানো হবে বলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কাজ করে মুজিবপুত্র কামাল সেদিন মধ্যরাতে বাড়ি ফেরেন। ঢাকা সেনানিবাসও ব্যস্ত, কর্নেল ফারুক বেঙ্গল ল্যান্সারের উদ্দেশ্য ভাষণে বলে – মুজিব সেনাবাহিনীদের শেষ করে দেবে এবং ল্যান্সারদের বাতিল করবে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে বলে –
এবার আঘাত হানার সময় এসেছে
ঘাতক চক্র তিন লাইন করে বেরিয়ে পড়ে। মাত্র দুই কিলোমিটার দূরেই তাদের লক্ষ্যবস্তু । গভীর রাতে রক্ষীবাহিনী তড়িঘড়ি করে শেরেবাংলা নগরস্থ এমএনএ’র হোস্টেলের সামনে লুঙ্গী ও গেঞ্জি পরে অবস্থান নিলেও অজ্ঞাত (!) কারণবশত কিছুক্ষণ বাদেই ফেরত যায় (কার নির্দেশনায় ফিরে যায়?)। একটি ট্যাংক পুরানো এয়ারপোর্টের রানওয়ে দিয়ে এসে একটি দেওয়াল ভেঙে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে ট্যাংকের বন্দুকের নলটি তাক করে। সে রাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি ট্যাংক অবস্থান নেয়। মুজিব ও তাঁর ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবত এবং ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণির বাড়ি ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। সৈন্যরা চারদিক থেকে মুজিবের বাড়ির ওপর গুলি বর্ষণ করতে থাকে। একটি বুলেট মুজিবের ছোটভাই নাসেরের হাতে লাগে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের মত এবারো বাড়ির সকলে মুজিবের শোবার ঘরে আশ্রয় নেয়, তখন ছিলো পাকিস্তানী বাহিনী আর এবার পাকিস্তানী ও ইসলামী মনোভাবাপন্ন বাঙালি আর্মির দল। মুজিব কয়েকজন অফিসারকে ফোন করেন, তাঁর স্ত্রী শাড়ির এক অংশ ছিড়ে নাসেরের রক্তাক্ত হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন। কামাল ওপর থেকে নিচে নেমে এসে গার্ডদের অবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন কিন্তু ততক্ষণে গার্ডরা নিরস্ত্র, এই মুহূর্তে মেজর হুদা কয়েকজনকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে গার্ডরা হুদাকে স্যালুট দেয় এবং মেজর হুদার সাথে থাকা একজন কামালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মুজিবের বাড়িতে আসার সময় সোবহানবাগে অবস্থানরত সৈন্যরা বিগ্রেডিয়ার জামিলের পথরোধ করে, জামিল নিজের পরিচয় দিলেও পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তাকে অগ্রসর হতে দেওয়া হয়নি এবং জামিল জোরপূর্বক জীপ নিয়ে এগোতে চেষ্টা করলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এদিকে সৈন্যদের অনেকে মুজিবের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে এবং রেহানার বন্ধ কামরায় ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে।
দেখি তারা কি চায়
বলে চেক লুঙ্গী ও সাদা কুর্তা (পাঞ্জাবী) পরিহিত মুজিব নিজ কামরা থেকে বের হয়ে আসেন। সিড়িতে হুদার সঙ্গে দেখা হলে মুজিব জিজ্ঞাসা করেন
ও’তুমি, কি চাও ?
হুদা বলে –
আমরা আপনাকে নিতে এসেছি
মুজিব একটু গম্ভীর গলায় বলেন
তোমরা কি আমার সঙ্গে তামাশা করছো আমি দেশকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিতে পারিনা
হুদা ঘাবড়ে যায়, এদিকে বাড়ির একজন কাজের লোক ক্রন্দনরত অবস্থায় বলে ওঠে –
কামাল ভাই আর নেই
হাবিলদার মোসলেহউদ্দিন ছাঁদ থেকে নিচে নামা অবস্থায় সিঁড়িতে মুজিবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাথে সাথে পেছন থেকে তাঁর স্বয়ংক্রিয় বন্দুক দিয়ে মুজিবের সমস্ত পিঠে গুলি করে ঝাঁঝরা করে ফেলে, মুজিব লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। এদিকে সৈন্যরা মুজিবের বাড়ি থেকে হাতের সামনে যা যা পাচ্ছিলো তাই তাই লুটে নিচ্ছিলো, মুজিবের স্ত্রী মিনতি করে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন
তোমরা সবকিছু নিয়ে যাও কিন্তু আমাদের জীবন নিওনা
কিন্তু নিচে বন্দুকের গুলির বিকট শব্দে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উপলব্ধি করেন, মুজিব আর নেই। তিনি ব্যাকুল হয়ে কেঁদে উঠে বলেন,
তোমরা ওকে শেষ করে দিয়েছ, আমাকেও আর রেখো না
বেগম মুজিবকেও গুলি করে মেরে ফেলা হলো। শেখ জামাল, তার স্ত্রী রোজী এবং কামালের স্ত্রী সুলতানা তখন ছিলো ড্রেসিং রুমে , বন্দুকধারীরা সেই কামরায় ঢুকে স্টেনগান দিয়ে তিনজনকে চিরতরে শেষ করে দেয়। তারা নাসের কে একটি বাথরুমে আবিষ্কার করে, তাকে ওখানেই হত্যা করা হয়। রাসেল একটা ঘরের এক কোনায় ভীত হয়ে বসেছিল, তার চোখে পানি। সে কেঁদে বলে,
আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে চলো
একজন উন্মাদ বন্ধুকধারী বলে ওঠে –
চল তোকে তোর মায়ের কাছে পৌঁছে দিবো
একজন পুলিশ কর্মকর্তা রাসেলকে হত্যা না করার অনুরোধ জানালে তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। এদিকে রাসেলের এক হাতে গুলি করা হয়, রাসেলের প্রচন্ড ব্যথায় ককিয়ে উঠে তার জীবন ভিক্ষার আবেদন করে, একটি বুলেটের মাধ্যমে তার জীবন ভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়।
ঘাতক চক্র
১৯৭৫ সালে নিহত মুজিব পরিবারের সদস্যগণ:
মুজিবের স্ত্রী, তিন ছেলে এবং দুই পুত্রবধূকে রক্তাক্ত কাপড়েই বনানী গোরস্থানে দাফন করা হয়, কিন্তু নিজেদের ইসলামের সিপাহী বলে দাবী করা সেই তথাকথিত মুসলিম ঘাতক চক্র সেখানে কোন জানাজা কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে দেয়নি। উপরন্তু কার কবর কোনটা, সেটাও চিহ্নিত করে রাখেনি। মুজিবের জন্যও বনানীতে কবর খোঁড়া হয়েছিলো, তবে মুজিবের লাশ এখানে দাফন করলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে এমন আশংকায় তারা ১৬ই আগস্ট সকালে একজন মেজর, একজন লেফটেন্যান্ট ও কিছু সৈন্যকে মুজিবের লাশসহ হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়া পাঠায়। সেই দল গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে গ্রামের লোকজন কি শেখ মুজিবের লাশ দাফন করবে ? উত্তরে জানানো হয়, যদি মরদেহ হস্তান্তর করা হয় তবে তারা দাফন করবে। গ্রামবাসীদের বলা হয়, তাদেরকে মুজিবের কবর ছাড়াও আরো ১০ -১২টি কবর খুঁড়তে হবে। দুপুর ২.৩০ নাগাদ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সেই লাশ নিয়ে উপস্থিত হয়, সেখানে গোপালগঞ্জ মহকুমার ম্যাজিস্ট্রেট একটি পুলিশবাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। যদিও ইসলাম সম্মত নয়, তবুও মেজর চাচ্ছিলো কফিনসহ লাশ কবর দিতে। গ্রামবাসীরা দাবী করেন –
আমাদের লাশ দেখতে দিতে হবে
মেজর সংকুচিত হয়ে বলেন –
লাশ না দেখে কি কবর দেওয়া যায়না ?
মৌলভী শেখ আব্দুল হালিম বলেন –
যায়, তবে আপনাদের তাঁকে শহীদ বলে ঘোষণা দিতে হবে।
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো, তখন মৌলভী বলেন –
আপনারা কি তার দাফন কাফন ইসলামিক আইন অনুযায়ী করতে চান না ?
শুনে চারিদিক নীরব নিস্তব্ধ। উত্তেজনাকর মুহূর্ত । অফিসারেরা দোটানায়। যদিও ওপর থেকে কঠোর নির্দেশ – গ্রামবাসীদের মুজিবের মরদেহ দেখানো যাবেনা। কিন্তু তারা উপলব্ধি করলো যে, যদি একজন মুসলমানকে মুসলমান গ্রামবাসীদের সামনে ইসলামী আইন অনুযায়ী কবর দেওয়া না হয়, তাহলে সেখানে বিদ্রোহের সৃষ্টি হতে পারে। এই কথা চিন্তা করে মেজর বললো –
হ্যাঁ, ইসলামিক আইন অনুযায়ীই হবে তবে তাদের উপস্থিতিতেই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
কফিন খোলা হলো। মুজিবের সারা দেহ বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এবং বরফ দেওয়া সারা কফিনটি লাল রক্তে মাখামাখি । গ্রামবাসীরা কফিনের আশেপাশে ভীড় জমাতে লাগলো এবং হতভম্ব ও নির্বাক হয়ে গেল। এদিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসতে শুরু করলো, তাদেরকে লাশের সামনে পৌঁছুতে বাধা দেওয়া হলো, কিন্তু যে কোন মুহূর্তে তারা সে বাধা ভেঙে এগিয়ে আসতে পারে, এজন্য প্রথমে এক লেফটেন্যান্ট চিৎকার করে তাদেরকে ফিরে যেতে বললো এবং ইমামকে বললো তাড়াতাড়ি করতে। আর মেজর কুকুরের মত ঘেউঘেউ করে চেঁচিয়ে উঠলো –
আপনাদের আর পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হলো।
প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দী শুনুন বঙ্গবন্ধুর লাশ কিভাবে দাফন হয়েছিল
মুজিবের লাশ তার গ্রামের বাড়ীর বারান্দাতে রাখা হয়। মুজিবের দেহে ৩৫টি বুলেট বিদ্ধ হয়েছিলো, ১টি বুলেট একটি অটোমেটিক রিভলভারের মাধ্যমে তার পেছন দিয়ে শরীরে ঢোকে, অর্থাৎ মোসলেহউদ্দিন ছাড়াও আরেকজন তাঁকে গুলি করেছিলো। মুজিবের পরনের কুর্তার পকেটে ধূমপানের পাইপ ও ভাঙা চশমাটি ছিলো। মুজিবের গ্রামের বাড়িতে ঐ মুহূর্তে কেউ ছিলেন না, আশেপাশের সকল দোকান পাটও বন্ধ ।একজন গ্রামবাসী একটি সাবান নিয়ে আসে। লাশের শেষ গোসলের জন্য গরম পানির ব্যবস্থা করা হলোনা। লাশ থেকে রক্ত পরিস্কার না করা হতেই উপস্থিত মেজর আবার ঘোঁতঘোঁত করে উঠলো –
তাড়াতাড়ি করুন, আপনাদের আর কত সময় লাগবে।
মুজিবের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত সায়েরা খাতুন হাসপাতাল থেকে কয়েকজন গ্রামবাসী ৪টি শাড়ি নিয়ে আসেন। তারা শাড়ির লাল পাড় ছিড়ে ফেলেন কিন্তু মেজর কাফন সেলাই করতে দিলো না। জানাজা হবে কিনা এমন প্রশ্নে মেজর সম্মতি জানালো এবং বললো তারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে কিনা।পুলিশ উত্তরে বললো- তারা যদি পাক পবিত্র অবস্থায় থাকে তবেই তারা জানাজায় অংশ নিতে পারবে। তারা জানাজায় অংশ নিতে ব্যর্থ হলো। মুজিবকে তাঁর পিতার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো ।
শেষ হল ইতিহাসের এক মহা নায়কের শেষ বিদায়।
কৃতজ্ঞতা:
১.Political Profile of Bongobondhu Sheikh Mujibur Rahman (English Version). প্রকাশক: Bangladesh Awami League। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-07-29.
২.২.০ ২.১ ২.২ ২.৩ ২.৪ ২.৫ ২.৬ ২.৭ Rashid, Harun-or. Mujib, (Bangabandhu) Sheikh Mujibur (HTML). Banglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-07-06.
৩.৩.০ ৩.১ Muhammad Nurul Kadir, Independence of Bangladesh in 266 days: history and documentary evidence, page 440, Mukto Publishers, Dhaka, 2004, ISBN 984-32-0858-7
৪.৪.০ ৪.১ ৪.২ ৪.৩ ৪.৪ ৪.৫ ৪.৬ Political Profile of Bongobondhu Sheikh Mujibur Rahman (HTML). প্রকাশক: Bangladesh Awami League। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-07-06.
৫, ব্লগার মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




