somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে তামাশায় নিভে যায় ঈমান প্রদীপ

০৮ ই মে, ২০১২ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে কত রকম মানুষ, কত রকম মুসলমান। কেউ নামায পড়ে, কেউ পড়েনা, কেউ ভাল কাজ করে, কেউ খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে।

এতসব কাজের মধ্যে যে কাজটি আজকাল অহরহ চোখে পড়ে, তা হচ্ছে হাসির ছলে না বুঝে ইসলাম বা মুসলমানদের কোনো বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা।

বন্ধুদের আড্ডায় আপনিও হয়তো শুনেছেন, ওই দেখ, হুজুরের কি সুন্দর ছাগলা দাড়ি!! সবার সাথে আপনিও হয়তো হেসে ফেললেন হো হো করে।

কথা কথায় কারো অক্ষমতা বোঝাতে ‘মোল্লার দৌঁড় মসজিদ পর্যন্ত’ কথাটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। কখনো ভেবে দেখেছেন, এ কথায় কাকে ঠাট্টা করা হল- আল্লাহর ঘর মসজিদ নাকি মোল্লা মৌলভীকে?

আমাদের নাটক সিনোমাতেও কখনো কখনো না বুঝে ইমাম বা হুজুর চরিত্র রূপায়ন করা হয় কোনো একটি নেতিবাচক বিষয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে, এতে দর্শকদের মনে জন্ম নিতে পারে বিরূপ ধারণা।

প্রিয় পাঠক, আল্লাহ পাকের কাছে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং তিনি যেগুলোর কারণে বান্দার সব আমল বাতিল করে দিতে পারেন, এসবের অন্যতম হচ্ছে- দ্বীন ইসলাম বা ইসলাম সর্ম্পকিত কোনো বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করা।

শুধু কি আমল বাতিল হয়ে যাওয়া, বরং কোনো কোনো কথা ও ঠাট্টা তো আপনাকে ইসলাম থেকে বের করে দেবে আপনার অজান্তেই।

এজন্যই আলেমরা বলেন, নামাজ না পড়া কুফুরী নয়, কিন্তু নামাজ বা নামাজীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কিংবা তামাশা করা কুফুরী। মুনাফেকদের প্রথম পরিচয় ছিল, তারা মুসলমানদের নিয়ে হাসি তামাশা করতো, তাদের বোকা ভাবতো। আল্লাহ পাক তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তারাই বোকা অথচ নিজেরা তা জানে না।’ (সূরা বাকারা-১৩)

ইমাম ইবনে কুদামাহ লিখেছেন, যে আল্লাহকে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গালি দিল, কিংবা যে আল্লাহ বা তার রাসুল কিংবা দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করল, সে কাফের হয়ে গেল। (আল মুগনী)

ইমাম নববী বলেন, স্বেচ্ছায় কিংবা কেউ যদি স্পষ্টভাবে এমন কোনো কথা বলে যা আল্লাহ ও তার রাসুলের কোনো বিধানকে তুচ্ছ করে, তা অবশ্যই কুফুরী।

ইমাম কুরতুবী লিখেছেন, মজা করার জন্য হোক বা সত্যি সত্যি হোক, ইসলামের কোনো সাধারণ বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করাও কুফুরী। এতে কারো দ্বিমত নেই।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, দ্বীনের যে কোনো স্পষ্ট বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফুরী। যে এমন করল তার ঈমান ধ্বংস হয়ে কুফুরীতে পরিণত হল।

আর তাই কোনো একজন সাধারণ মানুষ, যে দাড়ি রেখে দ্বীনের ওপর চলতে সচেষ্ট, যে নারী পর্দা রেখে চলতে চায়, তাকে যদি এ কারণে কেউ তুচ্ছ ভাবে কিংবা তামাশার দৃষ্টিতে দেখে, তবে নিশ্চয়ই বিষয়টি গিয়ে দ্বীনের সীমারেখা পর্যন্ত পৌঁছে, যা অত্যন্ত ভয়ানক বিষয়।

অনেক নামাযী মানুষ কিংবা দাড়িওয়ালা হয়তো অপকর্মে লিপ্ত, তার কর্মের জন্য সে নিজেই দায়ী। ধর্মের লেবাসধারীর অপকর্মের দায়ভার কোনো মতেই ধর্মের নয়। তাই তার ধর্মকে গালমন্দ করা বৈধ নয়, কারণ এটি তার স্বভাবের দোষ, তার নামায কিংবা আমলের এতে কোনো হাত নেই।

অহরহ পথে ঘাটে এসব বিষয় নিয়ে ‘মশকরা’ করায় মানুষ নিজের অজান্তেই তার দ্বীন থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যেতে পারে, সামান্য ‘বিদ্রুপে’ শেষ হয়ে যেতে পারে এতদিনের সব নেক আমল।

আল্লাহ পাক এমন লোকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা বলবে, আমরা একটু হাসি তামাশা করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে নিয়ে এবং তার আয়াতসমূহ ও তার রাসুলকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছ? তোমরা কারণ দেখিয়ো না, তোমরা তো তোমাদের ঈমানের পরও কুফুরী করে ফেলেছো।’ (সূরা তওবা-৬৫-৬৬)

পবিত্র কুরআনে অভিশপ্ত জাতিদের যেসব ঘটনা বিবৃত রয়েছে, তারা তাদের নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতো, নবীর অনুসারীদের নিয়ে পথে ঘাটে বিদ্রুপ করতো, আল্লাহ পাক তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন, পরকালেও তাদের এর বদলা দিবেন আল্লাহ।

মদীনার মুনাফিকদের অবস্থাও ছিল একই রকম। যা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবের বিবরণে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত।

খুব সংক্ষেপে কিছুটা হলেও আপনি হয়তো এর ভয়াবহতা অনুমান করতে পেরেছেন। আর তাই আজ থেকে সব বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা নয়, ইসলাম এবং এর সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য নয়, সামান্য একটু হাসির জন্য নিজের সব ঈমান আমল বিকিয়ে দেওয়া কোনো সচেতন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতের পাশে আমেরিকা-ইসরায়েল। পাকিস্তানের পাশে কারা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩


গত রাতে ইসরায়েল থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গেছে একটি কার্গো বিমান। তাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাইডেড মিসাইল বিপুল পরিমাণে আছে। এই মিসাইলগুলো অতি নিখুঁতভাবে মেঘ, বৃষ্টি বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সম্পূর্ণ কাশ্মিরের দখল পেতে মরিয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৩



ভারত হয়ত এবার যুদ্ধকরেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। পাকিস্তানও হয়ত যুদ্ধকরেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। এমতাবস্থায় ভারতের পাশে ইসরাইল এবং পাকিস্তানের পাশে চীন থাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈশ্বরের ভুল ছায়া – পর্ব ৩ | ভূমিকা-ব্রীজ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮



"তুমি যদি বাতাসকে ভালোবাসো, তাকে বশ করো না—তার সুর বোঝো। কারণ বাতাস একবার থেমে গেলে, তার কণ্ঠ আর কখনো শোনা যায় না।"

“ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট জোনে পরিণত করলো ড. ইউনুসের অবৈধ দখলদাররা ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২১



শেষ পর্যন্ত ড.ইউন তার আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেখালেন! উনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কখনোই কোন কাজ করেননি ।আমাদের কোনো দুর্যোগে কখনো পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই । যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×