somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরাই চুরি করি আমরাই চোর পুষি

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকাল ৮টা ৩০মিনিট। আলু ও ডিম ভাজি দিয়ে চারটে রুটি খেয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে রওনা হলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। পরনে সবসময়ের মত সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবি এবং মাথায় টুপি। পায়ে ইন্ডিয়ান জুতা।

আমাকে এখন ক্যাম্পাসে পৌঁছতে হবে ৪ ধাপে। প্রথমে ১ কি.মি. হাঁটতে হবে, এরপর ইজি বাইকে আড়াই কি.মি. যেতে হবে, তারপর বাস যোগে ১৩ কি.মি. যেতে হবে এবং শেষ ধাপে সাড়ে ৩ কি.মি. মিনিবাস দিয়ে গেলেই ক্যাম্পাসের সামনে নামা যাবে। এই মিনিবাসের নাম বাহাদুর শাহ পরিবহন লি.। আমার আজকের লেখা এ মিনিবাসকে নিয়েই।

প্রথমে একটু বাস সম্পর্কে জেনে নিই।

এ বাস চলে যাত্রাবাড়ী থেকে সদরঘাট রুটে। মিনিবাস হলেও অন্যান্য বড় বাসের মতই ৩০ থেকে ৩৫টা ছিট থাকে এতে। ঠিকমত বসা যায় না। বসলেও নড়াচড়া করা যায় না। অন্যের গা ঘেষে বসতে হয়। মোট কথা কষ্টকর জার্নি। তবুও সবাই যায় কারণ এই রুটে বাস চলে না, লেগুনা তো নিষিদ্ধ। এই বাসের বিকল্প শুধুই রিকশা। যার ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। তাই মাত্র ১২ টাকায় ১৫ মিনিটের যাত্রায় এই কষ্ট সবাই মেনে নেয়।

এ বাসে গেলে কয়েকটা ঝামেলায় পড়তে হয় তার মধ্যে একটি হলো সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থেকে এ বাসে উঠতে হলে বিশাল লাইনে সিরিয়াল ধরে তারপর উঠতে হয়। এ ক্ষেত্রে যে ঝামেলা হয় তা হলো, মিনিবাস যখন আসে তখন কিছু লোক জোর করে বাসে উঠে পড়ে। উঠতে উঠতে বাস ভর্তি হয়ে যায়। যার কারণে বাস আসলেও সিরিয়াল কমে না। আবার লাইনের শুরুতে যেখান থেকে বাসে ওঠে সেখানে বাস আসলে লাইন ভেঙ্গে অনেকে উঠে পড়ে যার কারণে সিরিয়াল ছাড়াও অনেকে ওঠে তাই লাইনের লোকেরা পিছে পড়ে যায়। এতে করে মহিলা, শিশু ও শান্তশিষ্ট লোকদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তারা না পারে হুড়োহুড়ি করে উঠতে আর না পারে বাটপারি করে সিরিয়াল ছাড়াই বাসে উঠতে। এটা নিত্যদিনের ঘটনা।

আজ লক্ষ্য করলাম, আমার সামনে লাইনে থাকা এক মহিলা তার ছোট মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রৌদ্রে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। লাইনের লোক কমছে না দেখে একবার লাইন ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলো হুড়োহুড়ি করে উঠার জন্য কিন্তু পারেনি। লাইনের শুরুতে গিয়েছিলো লাইন ছাড়াই উঠার জন্য কিন্তু তাতেও সফল হয়নি। অনন্যোপায় হয়ে আবার ফেরত এসে লাইনে দাঁড়িয়েছে। তার চেহারায় এক অসহায়ত্বের ছাপ পড়েছে। তার এই পরিস্থিতি দেখে আমার অবচেতন মনে প্রতিবাদী এক চেতনা তৈরী হলো। ভাবলাম যেসব বাস সিরিয়াল ছাড়া যাত্রী উঠাচ্ছে এগুলোকে আটকানো দরকার।

একটা বাস সিরিয়াল ছাড়াই যাত্রী ভরে এগিয়ে আসছিলো। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, চিৎকার করে বললাম, এ বাস যাবে না। ড্রাইভার বিরক্তি ভাব নিয়ে সরে যেতে ইশারা করলো। আমি আরও জোরে চিৎকার করে বললাম এ গাড়ি যাবে না। হয় সব যাত্রী নামাও অথবা এই সিরিয়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি সাইড করে রাখো। হেল্পার রাগে দাঁত কড়মড় করে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো আর অপরদিকে আমার গাড়ি আটকানো দেখে আমার পিছে এসে সিরিয়ালে থাকা কয়েকজন এসে দাঁড়িয়েছে। তারাও আমার সুরে সুর মিলালো। ড্রাইভার বাধ্য হয়ে সবাইকে নামিয়ে দিলো। যাত্রীরা কিছু বলতে চাইলে বললো গাড়ি যাবে না। অবশেষে সবাই নেমে পড়লে লাইন থেকে যাত্রী উঠিয়েই পড়ে বাসটি চলে গেলো।

এরপর যা হলো, কোন গাড়ি যাত্রী ভরে আনলেই অন্যরা তা আটকাতে লাগলো। দুএকজন নিজ উদ্যোগে লাইনের শুরুতে গেলো এবং সুশৃঙ্খলভাবে সবাইকে গাড়িতে উঠতে সাহায্য করলো যাতে লাইন ছাড়া কেউ ঢুকতে না পারে। কেমন জানি সবাই প্রতিবাদী হয়ে উঠলো।

আজকে এমন একটা সাহসী কাজ করেছি বলে আমি নিজেকে হিরো ভেবে এ পোস্ট লিখছি ভাবলে ভুল করবেন। এটা একটা সাধারণ প্রতিবাদ। এরচে আরও বড় বড় প্রতিবাদ আমাদের করার বাকি কিন্তু আমরা করছি না। আমি ভাবছি ভিন্ন কিছু। আজকের এ অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে...

আমি দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ এই রুটে চলি এবং মিনিবাসে এমন হুড়োহুড়ি করে ও লাইন ছাড়া উঠতে দেখি। কিন্তু এতদিন আমার মনে এ প্রতিবাদী চেতনা জাগ্রত হয়নি কেন?

আমার প্রতিবাদের আগে সবাই প্রতিবাদী হলো না কেন? কই, কাউকে তো কোনদিন এমন প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। কেন?

আমি একজন বাঙালি, আমার প্রতিবাদী চেতনা জাগতে এত বিলম্ব হলো। তাহলে পুরো জাতিটাই কি এমন যে তাদেরও প্রতিবাদী চেতনা জাগতে বিলম্ব হচ্ছে? আচ্ছা সবাই যদি এমন না হয় তাহলে শতশত জনতার মাঝে গুটিকয়েক পোষা গুণ্ডাদের হাতে মানুষ মার খায় কি করে? আবার যদি সাহসী না হয়ে থাকে তাহলে এই শতশত জনতাই আবার চোর-ডাকাত পিটিয়ে মারে কিভাবে?

একটা অফিসে ঘুষের অভাবে ফাইল আটকে থাকলে সেখানে যদি প্রতিবাদী কণ্ঠ তোলা হয় তাহলে সে অফিসে কি ঘুষ বন্ধ হবে না? পুলিশ যেখানে ঘুষ খায় সেখানেই যদি আমরা পুলিশকে ধাওয়া করি তাহলে কি পুলিশ ঘুষ খেতে চাইবে?

আসলে সব দোষ আমাদেরই। আমরাই চুরি করি, আমরাই চোর পুষি।

আজকের ঘটনায় আমাদের মতই কিছু যাত্রী যেমন অনৈতিকভাবে গাড়িতে উঠছিলো আবার আমাদের মতই কিছু যাত্রী তা দেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। তাহলে দোষটা কার? শুধু ড্রাইভার বা হেল্পারের নাকি আমাদেরও?

আমরা দেশের যে কোন পরিস্থিতির জন্য সরকার বা কোন বিভাগকে দায়ী করি, আসলেই কি সরকার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ একা দায়ী নাকি আমরাও দায়ী?

| ১১ই সেপ্টেম্বর'১৮ | জবি ক্যাম্পাস
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২৫
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×