বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহানের তৃতীয় পুত্র সায়েম সোবহান আনভীর। জন্মসূত্রে ধন কুবের। বয়স ৪২ বছর। যদিও তিনি এদেশের একজন সফল বিজনেস ম্যান। কিন্তু গণমাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো ১মিনিট৩৬ সেকেন্ডের সেলফোন কনভার্সেশন শোনার পর কোনোভাবেই তাকে আমার জেন্টেলম্যান মনে হয়নি। ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাহিত এবং সন্তানের জনকও।
ঘটনার ভুক্তভোগী মোসরাত জাহান মুনিয়া। বয়স ২১ বছর। তিন ভাই-বোনের সবার ছোট মুনিয়া। মিরপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিয়া থাকেন গুলশানের বাসা নং ১৯, রোড নং ১২০ এর তৃতীয় তলায়। ফ্ল্যাটভাড়া মাসে লাখ টাকা। দুইমাসের ভাড়া এডভান্স দিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে ফ্ল্যাটে ওঠেন মুনিয়া। সোমবার ২৭ এপ্রিল বেলা ১১টার পরে মৃত্যু হয় মুনিয়ার। এটা হত্যা না আত্মহত্যা সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সায়েম সোবাহান আনভীর (৪২) এর সাথে দুই বছর পূর্বে পরিচয় হয় মুনিয়ার। পরিচয়ের পর থেকে বিভিন্ন রেসস্টুরেন্টে দেখা করতো তারা। নিয়মিত আলাপ হতো ফোনে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালে স্ত্রী পরিচয়ে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে সায়েমের পরিবার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন। সায়েমের পরিবার থেকে মুনিয়াকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। মুনিয়ার বাড়ি কুমিল্লায়। তার পরিবারও কুমিল্লাতে থাকেন।
একুশ বছর বয়সি একটা মেয়ে তার দ্বিগুন বয়সি এক শিল্পপতির প্রেমিকা। তারা স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে দুই বছর ধরে ঢাকাতে বসবাস করেন। অভিযোগকারীর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে মোসরাত জাহান মুনিয়ার পরিবার বিষয়টি জানতেন। তাহলে কেন তারা মুনিয়াকে বাধা দেননি? বিয়ের প্রলোভনে একা মুনিয়া নয় পুরো পরিবার পড়েছিলেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার এতিম সন্তান মুনিয়া। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান একটা অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর আগে কী পিতার (মৃত) মান-সম্মান নিয়ে ভেবেছেন? তাহলে এখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করে ঘটনাকে মানবিক করার চেষ্টা কেন?
গণমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্টে দেখলাম স্বজন’রা অন ক্যামেরাতে এটা যে একটি হত্যাকান্ড তার পক্ষে নানা তথ্য এবং প্রমাণ দিচ্ছেন। ঝুলন্ত ডেডবডির কাছেই চেয়ার ঠি ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। দুই পা সামান্য বাঁকা পাওয়া গেছে। গলার বাম দিকে অর্ধচন্দ্রাকৃত ক্ষত। সব ঠিক আছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। মোসরাত জাহান মুনিয়া’র একটা স্বাভাবিক জীবন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত এই যে বসন্তের কোকিল স্বজন’রা ক্যামেরার সামনে চোখে পানি ফেলছেন, তারা গত দুই বছর কোথায় ছিলেন??
সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি স্বভাবতই একধরনের ক্ষোভ রয়েছে আমাদের। সেই ক্ষোভ উগরে দেয়ার জন্য যে কোনো ঘটনাতে সাধারণ মানুষ নিজেদের বিচারকের আসনে বসান। বিত্তশালী’রা খারাপ বলে রায় দেন। মেনে নিলাম বিত্তশালীরা খারাপ। তারা চরিত্রহীন। জানতে ইচ্ছে করে যারা নিজেদেরকে তাদের কাছে তুলে-মেলে ধরে তাদের বিষয়ে সাধারণ মানুষ কি ভাবে। ভুক্তভুগীর পদক্ষেপও ভুল, অনৈতিক এবং অন্যায় হতে পারে। এই যে লোভ কিংবা লাভের চিন্তা থেকে মানুষ বের হতে পারে না এটা সভ্যতার জন্য লজ্জার। লোভ একটি আন্তর্জাতিক পাপ! মায়া কান্না বড় খারাপ জিনিস…
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৪০