somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'সহবাসের জন্য আবেদন'...

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রোকেয়া হলে আবাসিক ছাত্রী হিসেবে দীর্ঘ ৭বছর কেটেছে। হলের নানা গল্পের একটা আজ বলি। হলের প্রতিটি কক্ষে ৪টা বেড থাকলেও থাকতে হতো ৫জনকে। মানে রুমের সব থেকে জুনিয়র দুইজনকে একটা বেড শেয়ার করতে হতো। প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া একমেয়ে হাউজ টিউটর রুমে এক দুপুরে একটা আবেদন পত্র নিয়ে হাজির। আবেদন পত্রে বিষয় উল্লেখ করা 'সহবাসের জন্য আবেদন'। হাউজ টিউটর ম্যাডামের চক্ষু তো চড়কগাছ! এই মেয়ে বলে কী?আসল ঘটনা হলো মেয়েটি 'দ্বৈতাবাসের আবেদন' করতে গিয়ে ভুলে সহবাস লিখে ফেলেছিল।

#
র‍্যাগিং নিয়ে ডিপার্মেন্টের সিনিয়র জুনিয়র শিক্ষার্থীদের এক ঝামেলা মেটাতে হয়েছিল। শুনানির এক পর্যায়ে অভিযোগকারিনীর মামা বললেন, তার মনে হচ্ছে বিষয়টা মিস ক্যারেজ হয়েছে। আমি অন্য শিক্ষকদের তাকিয়ে হেসে দিলাম। বললাম, শব্দটা সম্ভবত'মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং' হবে। অভিভাবক মামা তৎক্ষণাৎ শুধরে নিলেন, জ্বী জ্বী আমি ওটাই বলতে চাচ্ছিলাম।
#

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ অফিস অভিমুখে রিকশা পেলাম। রিকশাচালক ভাই হুড তুলে যেই না প্যাডেল ঘোরাতে শুরু করলো ওমনি পেছন থেকে বোরকা পরিহিত এক নারী 'এই ভাবি- এই ভাবি! করতে করতে প্রায় হুমড়ি খেয়ে এগিয়ে আসছিলেন। চালক ভাই রিকশা স্লো করতে গেলে বললাম, থামতে হবে না ভাই; আমি কারো ভাবি না। চালক আনন্দের সাথে এমন হো হো করে একখানা হাসি দিলো যে, গন্তব্যে পৌঁছে ১০টাকা ভাড়া বেশি দিছি!
#

বেশ কিছুদিন বাদে ক্লাসফেলো বন্ধু রাইসুলকে কল দিতেই প্রথম অনুযোগ, আমি যে অসুস্থ সে খোঁজ খবর তো নিবা না। আমি পরিস্থিতি বুঝে গলায় একচামচ দরদ মিশিয়ে পাল্টা জবাব দিলাম, তুমি অসুস্থ! ইয়া আল্লাহ জানি না তো। কী হয়েছে তোমার? ২০০শব্দের একটা রচনা শোনালো রাইসুল। উপসর্গ, চিকিৎসক খোঁজা... আস্থাহীনতায় তিনজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া, গোটা নয়েক প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, প্রেসক্রিপশন, ঔষধ এবং ঔষধ সেবনের নিয়মাবলি...। বললাম, তোমার প্রেসক্রিপশনের একটা ছবি তুলে পাঠিয়ে দিও তো। রাইসুল দ্বিধায় পড়লো; 'কেন? বললাম, তুমি আর আমি তো সমবয়েসি। তোমার যা রোগ হয়েছে, মনে করো যে ঐটা আমারও হয়েছে। তোমারটা ধরা পড়েছে আমারটা পড়েনি। তাতে কী। ইন এডভান্স ঔষধ খাওয়া শুরু করি। বেচারা আমার স্যাটায়ার ধরতে পারেনি। হেলথ রিলেটেড ইনফরমেশন এভাবে বিস্তারিত ভাবে শোনা বিরাট বোরিং!
#

আমার ফ্ল্যাটের ঠিক পেছনে যে ফ্ল্যাটটা,  সেখানে এক হ্যান্ডসাম ছেলে থাকে।  জানলাম কিভাবে? আমার রান্নাঘরের জানালা আর ছেলেটার বেডরুমের এট্যাচড বেলকনি একদম মুখোমুখি। রান্নাঘরের খোলা জানালা দিয়ে আমি প্রায় দিনই ছেলেটাকে দেখতে পাই। বারান্দায় রাখা একটা ড্রামের উপর বসে গ্রিলে পা বাধিয়ে সেলফোনে আলাপ করে।  ছেলেটা বেশ নিচু স্বরে আস্তে-ধীরে কথা বলে। কথা সে কমই বলে, শোনে বেশি। পায়ে পরিস্কার স্যান্ডেল,  নিয়মিত ধোয়া ট্রাউজার পরে।  বারান্দায় এককালারের ফর্মাল শার্ট শুকাতে দেয়া দেখে মনে হয় ছেলেটার রুচি ভালো। সবকিছু পারফেক্ট! কিন্তু বিপত্তি ভিন্ন খাতে। প্রায়শই ছেলেটার মা তারস্বরে চিৎকার করে  'পাপিয়া- পাপিয়া' বলে ডেকে পুরো বাসা মাথায় তুলে ফেলেন।  পাপিয়া ভদ্রমহিলার বাসার কাজের সহযোগী।  তার চিৎকার এতটাই জোরালো যে সেটা ৯৬ ডেসিবেলের উপরে উঠে যায়। অনেক সময়ই তা গায়েবি আওয়াজ বলে মনে হয়।  পাপিয়া মোড়ের মাথায় সবজি কিনতে গেলেও উনি যদি বাসা থেকে স্বাভাবিক ভাবে বলেন, পাপিয়া মনে করে ২০টাকার কাচামরিচ আনিস তো ; তাও পাপিয়া শুনতে পাবে। মাঝে মধ্যে আমি ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মধ্যে পাপিয়া পাপিয়া চিৎকার শুনি। যে মেয়ে দীর্ঘসময়  ধরে ফোনের অপরপ্রান্তে থাকে (ছেলেটার প্রেমিকা) তার জন্য মনে মনে সহানুভূতি জানাই। মেয়েটু তার হবু শাশুড়ি'র পাপিয়া পাপিয়া চিৎকার হজম করার মনোবল এবং সবল হৃদয়ের অধিকারী হোক। প্রেমঘটিত বিয়েতে ছেলেমেয়েরা নিজেদের দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং সেটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপারটাও একটা সময় ব্যতিক্রমী ব্যাপারে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। 
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৩৪
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×