somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনের কী কোনো মূল্য নেই? তাহলে কীভাবে এত অনিয়মের মধ্য দিয়ে গার্মেন্টস চলে? কীভাবে এতো গার্মেন্টস কর্মীর জীবন অবহেলায় ঝরে যায়?

২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টে আগুনে নিহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জনের লাশ সম্পূর্ণ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। আগুনে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও কমপক্ষে ৭৫ জন।
উল্লেখ্য, কারখানায় আগুন লেগে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেই তড়িঘড়ি করে গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সের এক লাখ টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ দেয়ার ঘোষণা দেয় মালিকরা। গত শনিবার রাতে আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টে আগুন লেগে ১৫০ জন শ্রমিক মারা যাওয়ার পরও তাই-ই হলো। রবিবার সকালে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। বিভিন্ন গার্মেন্টে ২০০০ সাল থেকে আগুনে পুড়ে মারা গেছে প্রায় ৬০০ শ্রমিক। অবশ্য বিজিএমইএর হিসাবে এ সংখ্যা মাত্র ২৭৫ জন। এ হিসাব ধরলে আগুনে প্রাণহানির ক্ষতিপূরণ বাবদ বিজিএমইএর এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অথচ বছরে গার্মেন্ট খাতের রপ্তানি আয় এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর দেশের অর্থনীতিতে এই বিপুল অবদানের কৃতিত্বের বড় অংশীদার যে শ্রমিকরা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সর্বশেষ আশুলিয়ায় অগ্নিকা-ে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিজিএমইএর যে খরচ হবে, তা তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার হোসেনের দুই দিনের রপ্তানি আয়ের সমান। গত বছর সে রপ্তানি করেছে প্রায় চার কোটি ডলারের পোশাক।
গত তিন দশকে যথেষ্ট উৎপাদন দক্ষতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। এখনো সস্তা শ্রমই এ শিল্পের বিকাশের মূল শক্তি। এর বদৌলতেই বিশ্ববাজারে অবস্থান ধরে রাখতে পারছে প্রায় পুরোপুরি আমদানি-নির্ভর এ রপ্তানি খাত। কম দামে পোশাক কেনার উৎস হিসেবে বিশ্বের বড় বড় পোশাক ব্র্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ আকর্ষণীয়। পোশাক বানাতে যা কিছু লাগে, তার সবই রয়েছে চীনে। সস্তায় পণ্য তৈরিতেও দেশটি সিদ্ধহস্ত। সেই চীনও এখন ঝুঁকছে বাংলাদেশের দিকে। কারণ তাদের শ্রমের মূল্য যে হারে বেড়েছে, তাতে খরচ পোষায় না। বাংলাদেশেও শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। এরপরও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে পোশাক বিক্রি করত সক্ষম এ দেশের শিল্পমালিকরা। এ সক্ষমতায় তাঁদের যতখানি কৃতিত্ব, তার চেয়ে অনেক বেশি ত্যাগ শ্রমিকের। পোশাকের বিশাল রপ্তানি ও তার পেছনে বিপুল আমদানি বাণিজ্যে মওকুফ করা শুল্ক টাকার অঙ্কে কত দাঁড়ায়, তার হিসাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানে। গবেষকদের হিসাবে, ১০০ ডলার রফতানি আয়ের পেছনে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি আমদানি বাবদ ব্যয় হয়ে যায় ৮০ ডলার। ২০ ডলারের সমপরিমাণ স্থানীয় মূল্য সংযোজন, খুচরা কিছু উপাদান বাদ দিলে তা আসে শ্রমিকের কায়িক শ্রম থেকে। তবু পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা শিল্পশ্রম নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। তাদের জীবনের দাম যে কতটুকু ধরা হয়, বারবার অগ্নিকা-ের ঘটনা তা স্পষ্ট বলে দেয়।
আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশন লিমিটেডে স্মরণকালের অগ্নিকা-ের পর সরকার নামকাওয়াস্তে নড়ে চড়ে উঠেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে দমকল বাহিনী দেশের সব কটি গার্মেন্টসে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিশ্চিত হয়েছে, শতকরা নব্বইভাগ গার্মেন্টসে অগ্নিনির্বাপকের সরঞ্জাম, ইমার্জেন্সি সিঁড়ি ও অটো ফায়ার স্পিংলার সিস্টেম নেই। নেই কোন প্রশিক্ষণরত অগ্নিনির্বাপক কর্মী। গার্মেন্টস মালিকরা বিল্ডিং কোড ও ফায়ার সার্ভিসের কোন শর্তই মানছে না। যে যার মতো পারছে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানীর কয়েকটি গার্মেন্টসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি গার্মেন্টসে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার সাজিয়ে রাখলেও অধিকাংশ গার্মেন্টসে অগ্নিনির্বাপকের সরঞ্জাম দেখতে পাওয়া যায়নি। অগ্নিকা- সম্পর্কে গার্মেন্টসের মালিক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের নেই কোন প্রশিক্ষণ। তাছাড়া অগ্নিনির্বাপক সম্পর্কে মহড়াও হচ্ছে না কোথাও। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সার্বক্ষণিক প্রতিটি গেট বন্ধ থাকছে। শ্রমিকদের নেই কোন নিরাপত্তার বালাই। কোন নিয়মনীতি না মানায় গার্মেন্টসে আশঙ্কাজনকভাবে অগ্নিকা-ের ঘটনা বেড়ে গেছে। তার পাশাপাশি মৃত্যুর মিছিলও রোধ করা যাচ্ছে না। আইন থাকলেও নেই কোন প্রয়োগ। আবার গার্মেন্টস মালিকরা রাজনৈতিক দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। চরম অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার মধ্যে চালানো হচ্ছে গার্মেন্টস সেক্টর। গত দুই দশকে আগুনে প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। যে কোন ঘটনা ঘটলেই গঠন করা হচ্ছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট কখনোই আলোর মুখ দেখছে না।
সঙ্গতকারণেই বলতে হয়, গার্মেন্টসে আগুন রোধে প্রতিমাসে যে কোনো ভবনের বৈদ্যুতিক ফিটিংস পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে ফিটিংসগুলো পরিবর্তন করার উদ্যোগসহ ফায়ার সার্ভিসের শর্ত পূরণ না করলে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। সংশি¬ষ্ট মালিক বা কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারে বিধান রাখতে হবে। শ্রমিকদের মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কোন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক গেট বন্ধ রাখলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকা- প্রতিরোধে আইন, আদেশ ও নির্দেশ সবই আছে। কিন্তু, প্রয়োগ নেই। গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকা- প্রতিরোধ ও প্রাণহানি এড়ানোর জন্য প্রচলিত আইন মানতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে প্রায় দেড় যুগ আগে। কখনো হালকা আর কখনো কঠোর ভাষায় প্রতিবছরই নির্দেশনা জারি করছে সরকার। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। ফলে দেশের সম্ভাবনাময় এ শিল্পে প্রতিনিয়ত ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। মৃত্যর মিছিলে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে শত শত শ্রমিক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৫ সালের কারখানা আইন, ১৯৭৯-এর কারখানা বিধিমালা এবং ১৯৫৯-এর ফায়ার সার্ভিস অর্ডিন্যান্সেথ প্রতিটি গার্মেন্টস কারখানায় অন্তত দুইটি সিঁড়ি, প্রতিটি কক্ষে অন্তত দুইটি করে দরজা, ফায়ার ফাইটিং তথা আগুন নেভানোর সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং কারখানায় যথেষ্ট পরিমাণ পানি রিজার্ভ রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু এসব আইন অমান্য করেই গড়ে ওঠে শত শত গার্মেন্টস কারখানা। এসব গার্মেন্টে অগ্নি প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় একের পর এক ঘটতে থাকে অগ্নিকা-সহ ভয়াবহ দুর্ঘটনা। তারপরেও সরকারের চেতনা হয় না। সরকারের গাফলতি কাটেনা। যেন সরকারের কাছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। আমরা এর অবসান চাই।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×