গত বছরের শেষের দিক থেকে এই বদঅভ্যাস টা হয়েছে তাঁর। এখন তো চেইন স্মোকারের তাকিলায় নাম উঠি উঠি করছে, তবে বৃত্ত ছেলেটার কারনে প্রায়ই বাধ্য হয়ে বেশ কিছু দিনের জন্য সিগারেট ছেড়ে দেওয়া লাগে। সেই সময়টাতে সিগারেটের কথা মনে হলেই তিথি তাঁর প্যাডটাতে বড় বড় করে লিখে রাখে “i quit smoking”
বাক্যটা লিখতে যদিও ভালো লাগে না তাঁর তবুও লিখা লাগে। বৃত্তের আবদার বলে কথা ।
বৃত্তের কথা মনে হতেই বুকের ভিতর কোথায় জানি তীক্ষ্ণ একটা ব্যথা অনুভব করল তিথি। কারন এই গ্রীষ্মের পর ইতালি থাকা আর সম্ভব হবে না তাঁর পক্ষে। বাবা সরাসরি বলে দিয়েছে “বছরের বছর তোকে এইখানে রেখে কোন লাভ নেই আমার।আমি তোকে দেশে পাঠিয়ে দিব ,নয়ত সোজা মা-মামার কাছে চলে যাবি। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ক্যাঙ্গারুর খাঁচায় বসবাস করবি।”
তিথিও সব কিছু গুছিয়ে এনেছে প্রায়।
বাংলাদেশের ভ্যাপসা গরম,ট্র্যাফিক,আবর্জনা,মশার চেয়ে ঐ ক্যাঙ্গারুর খাঁচা শত গুণে শ্রেয়। তবে যত ঝামেলা ঐ বৃত্ত ছেলেটাকে নিয়ে।কেন যে ছেলেটার সাথে মায়াতে জড়ালো তা আজো বুঝতে পারলো না তিথি।
‘নাহ , এমন করে চলতে পারে না । মাঝ পথে এসে সিদ্ধান্তটা ঝুলিয়ে রাখার কোন মানে হয় না’ ভাবে তিথি। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে বৃত্তকে ফোন দিল সে ।
-হ্যালো,মিস্টার সার্কেল !
*তিথি , কিছু বলবি ?
-নাহ , তোর সাথে ঢং করতে ফোন করেছি এই রাতদুপুরে ।
*অহ !
- বৃত্ত, তুই কি করবি ঠিক করেছিস কী ?
*ঠিক কোন বিষয় টা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল ?
- খেয়ালী করিস না। আমি উত্তর চাইছি। তুই আমার সাথে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিস? হ্যাঁ অথবা না !ভণিতা করবি না,প্লিজ ।
*না, আমি যাচ্ছি না। উত্তর পেয়েছিস কী ? মাঝরাতে আর ফোন দিয়ে যন্ত্রণা করিস না ,তিথি ।
ঐপাশ থেকে লাইন কেটে দিল বৃত্ত । বহু আগে মেয়েলী স্বভাবকে ঝেড়ে ফেলে বখে যাওয়া মেয়েটি ডুকরে কেঁদে উঠল ‘হু হু’ শব্দে ………………
সকাল সকাল ব্যাগ গুছিয়ে বৃত্ত বের হয়ে গেল বাসা থেকে।
রাস্তায় মানুষ জন নেয় বললেই চলে, দ্রুত পা ফেলছে সে। সকালের পাবলিক বাসটা কোন রকম ধরতে পারলেই হল।
গত কাল বিকেল থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে বৃত্ত কিন্তু কিছুতেই তিথিকে পাওয়া যাচ্ছে না ফোনে। বাসে উঠেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল করল সে।
কিন্তু লাইন পাওয়া গেল না।
আইসক্রিম হাতে ল্যাগেজ এর উপর বসে আছে তিথি । কিছুক্ষণ পরেই বিমানবন্দরের ট্রেন ধরবে।
যে মেয়ে গতকাল পর্যন্ত আত্মহত্যা করার চিন্তা করছিল সে কিনা আজ পা নাচিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে । কত বিচিত্র এই মানব জীবন।
“ঐ তোর ফ্লাইট কইটার সময়?”বৃত্তের গলা শুনে চমকে উঠল তিথি । পিছুফিরেএকবার বৃত্তের দিকে তাকিয়ে পরক্ষনে মুখ ফিরিয়ে নিল সে।
বৃত্ত গলা নামিয়ে প্রশ্ন করল “তিথি তুই অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিস ?”
-হুম, যাচ্ছি ।
*আমার কাছে দুইটা টিকিট আছে,গতকাল দুপুরে কিনলাম। যদিও টাকা থাকলে বহু আগে কিনে ফেলতাম।তোকেও আর ঠোঁট বাঁকিয়ে কাঁদতে দিতাম না ।
-তুই যাবি আমার সাথে ?
*নাহ, কিন্তু তুই চাইলে আমার সাথে যেতে পারিস ।
-কোথায়?
*বাংলাদেশ !
তিথি নিশ্চুপ বৃত্তের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল ।
গালে হাত রেখে প্রশ্ন করল বৃত্ত “তোর কি শীত করছে?”
তিথি মাথা নেড়ে বলল “নাহ, তবে তুই চাইলেই আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারিস।”
বৃত্তকে বুকে জড়িয়ে বিরামহীন কেঁদে চলছে তিথি আগামীর দিন গুলির কথা চিন্তা করে।
এই ছেলেটা সাথে থাকলে বাংলাদেশের ভ্যাপসা গরমেও মশারীর নিচে শুয়ে মুখ ফুটে বলতে হবে ‘এই শুন, আমার না খুব শীত করছে আজ’।