বাংলাদেশ খুনী নুর চৌধুরকে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে
নতুনদেশ ডটকম
বহি:ষ্কারাদেশ মাথায় নিয়েও বঙ্গবন্ধুর খুনী নুর চৌধুরী বিলাসবহুল কণ্ডো কিনে নির্বিঘ্নেই কানাডায় বসবাস করছেন। উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনার অজুহাতে কানাডা সরকার তাকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠাতে বা কানাডা থেকে বের করে দিতে সম্মত হচ্ছে না।
তবে বাংলাদেশ এখন খুনী নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তত কানাডা থেকে ভিন্ন কোনো তৃতীয় দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য দেনদরবার করছে। বর্তমানে কানাডা সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কানাডা সরকারকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি নতুনদেশ ডটকমকে বলেছেন,কিছু আইনি প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারনে বিশেষ করে কানাডার উচ্ছ আদালতের একটি নির্দেশনার কারনে কানাডা সরকার খুনী নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিতে পারছে না। আমরা বিকল্প একটি প্রস্তাব দিয়েছি কানাডা সরকারকে,চেষ্টা করছি তাতে কানাডাকে সম্মত করাতে।
দীপুমনি বলেন,কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জোড়ালোভাবে তাদের নতুন প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। তিনি আশা করছেন কানাডা সরকার তাঁর এই প্রস্তাবের ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি যখন খুনী নুর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়ার জন্য অটোয়ায় জোড় দেনদরবার করছেন, তখনি কানাডার প্রভাবশালী পত্রিকা দ্যা টরন্টো স্টার খুনী নুর চৌধুরীকে নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। টরন্টো স্টারের প্রথম পাতায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের জনগনের আবেগ অনুভূতির কথা তুলে ধরে কানাডার মূল ধারার জনগনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খুনী নুর চৌধুরী ভ্রমন ভিসায় কানাডায় এসে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে কানাডা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে কানাডার আদালত থেকেও তাকে বহি:ষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভিন্ন একটি মামলায় মৃত্যদন্ডে দণ্ডিত কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে সেই দেশে ফেরত না পাঠানোর নির্দেশনা থাকায় কানাডা সরকার তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হচ্ছে না।
টরন্টো স্টার লিখেছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানানো হলেও কানাডা সরকার তাতে সম্মত হয়নি। কানাডা সরকার ‘নুর চৌধুরীর মুত্যদণ্ডাদেশ পূনর্বিবেচনা করে অন্র কোনো শাস্তি দিলে সেক্ষেত্রে তাকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে’ বলে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই বলেছে উচ্চ আদালতের কোনো রায় পরিবর্তনের এখতিয়ার সরকারের নেই।
টরন্টো স্টারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, নুর চৌধুরী এবং তার স্ত্রী রাশেদা খানম ২০০৫ সালে টরন্টোর ইটোবিকোকে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার ব্যয়ে একটি কণ্ডো কিনে সেখানে বসবাস করছে। টরন্টো স্টারের সাংবাদিক সুনিয়ন্ত্রিত ওই কণ্ডোতে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে নুর চৌধুরী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহরে চেষ্টা করেছে। ওই ভবনের বাসিন্দারা বলেছেন, তারা লোকটিকে দেখেছেন কিন্তু তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। ওই সাংবাদিক নুর চৌধুরীর ফ্লাটে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর বাসা থেকে কেউ আর কোনো ধরনের সাড়া শব্দ করেন নি।
জানা গেছে, ডিপোর্টেশন আদেশ থাকায় নুর চৌধুরীকে প্রতি সপ্তাহে কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগে হাজিরা দিয়ে তার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত করতে হয় এবং নুর চৌধুরী সেটি নিয়মিতই করে যাচ্ছেন।
টরন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বর্তমানে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক আফসান চৌধুরীর বক্তব্য রয়েছে। আফসান চৌধুরী টরন্টো স্টারকে বলেছেন, বছরখানেক আগেও নুর চৌধুরীকে টরন্টোর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে দেখা যেতো। নূর চৌধুরীর কানাডায় অবস্থানের ব্যাপারে অধিকাংশ বাংলাদেশিই অবহিত আছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আফসান চৌধুরী বলেন, কানাডায় বসবাসরত অধিকাংশ বাংলাদেশির কাছেই নূর চৌধুরী একজন অপরাধী হিসেবে বিবেচিত।
মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত খুনী নুর চৌধুরীর কানাডায় বিলাসবহুল জীবন যাপনের খবরে কানাডায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তারা বলছেন, কানাডীয়ান সমাজে তারা একজন খুনীর সঙ্গে সহ অবস্থান করতে অসম্মানবোধ করছেন। তারা অনতিবিলম্বে খুনী নুর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহি:ষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
http://www.notundesh.com/shirshokhobor.html