নতুনদেশ ডটকমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি
প্রবাসে বিএনপি-আওয়ামীলীগ করার চেয়েও বেশি জরুরী বাঙালি এমপি নির্বাচিত করা
নতুনদেশ ডটকম
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি বলেছেন,প্রবাসে বিএনপি-আওয়ামী লীগ করার চেয়েও বেশি দরকার বাঙালি এমপি নির্বাচিত করা। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের শাখা বা সমর্থন জোড়ালো হলে যতোটা না লাভ তার চেয়েও বেশি লাভ কানাডীয়ান বা যেখানে বাঙালি আছে সেইদেশের সংসদে একজন অন্তত: বাঙালি এমপি থাকলে।
তিনি কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্নদেশে বসবাসরত বাঙালিদের সংশ্লিষ্টদেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কানাডা সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অটোয়ায় নতুনদেশ ডটকম,বাংলা টেলিভিশন ও সাপ্তাহিক বাংলা কাগজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি বলেন, আজও কানাডার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো। তারা সংগঠন নিয়ে, কমিটি নিয়ে অনেক কথা বলছিলেন। আমি তাদের স্পষ্ট করেই বলেছি কাজ করার জন্য কমিটির প্রয়োজন নেই। তাদেরও বলেছি আওয়ামী লীগ করেন ভালো কথা,কিন্তু কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে বাঙালির অংশ গ্রহন বাড়ান। একজন অন্তত এমপি নির্বাচিত করেন ।
প্রবাসে দলীয় রাজনীতি সম্পর্কে তাহলে আপনার মনোভাব কি ? প্রশ্ন করা হলে দীপুমনি বলেন, সেইক্ষেত্রে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনে ভিন্নদেশের রাজনীতিকে অনুমোদন করে কী না। অনেকদেশই আছে যেখানে অন্যদেশের রাজনীতি চর্চ্যা তাদের আইনে অনুমোদন করে না। আইন অনুমোদন করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড করতে অসুবিধে নেই। কিন্তু যে সবদেশের আইনে অন্যদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনুমোদন করে না সেখানে বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চ্যা না করাই ভালো।
তিনি বলেন,একবার ঢাকার এক পত্রিকা আমাকে উদ্ধৃত করে লিখে দিলো আমি না কি বলেছি প্রবাসে আওয়ামী লীগ করার কোনো দরকার নেই। দেখুন,এই ব্যাপারে আমার অবস্থান পরিষ্কার। হ্যাঁ, প্রবাসে দলের শাখা থাকলে,কর্মী থাকলে তারা দেশের বিপদে আপদে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন,বিশ্বজনমত গড়তে পারেন। কিন্তু আমি সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি কাঠামোকে বেশি গুরুত্ব দেই।
প্রবাসের দলীয় কর্মীদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে দীপুমনি বলেন,দেখুন প্রবাসে দলীয় রাজনীতিতে যারা সক্রিয় তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতেন, সংগঠন করতেন বলেই প্রবাসে এসেও তাতে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবাসে জন্ম নেওয়া,বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে কিন্তু তারা তেমন একটা আকৃষ্ট করতে পারেন না। অথচ তাদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে না পারলে প্রবাসে রাজনীতি,দল করে কমিটি করে কী লাভ?
দীপুমনি বলেন, নতুন প্রজন্মকেই যদি বাংলাদেশের ইতিহাস সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে না পারেন তাহলে প্রবাসে আওয়ামী লীগ বিএনপি করে লাভ কি? তিনি প্রবাসে বেড়ে ওঠা বাঙালি নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
কানাডা সফর সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু ইস্যূ নিয়ে কানাডা সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেই তিনি কানাডা সফরে এসেছেন। সেই সব ইস্যূতে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনী নুর চৌধুরীকে ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে কানাডীয়ান সরকারের মনোভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে দীপুমনি বলেন,এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তার কথা হয়েছে। কিছু আইনি প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারনে কানাডা সরকার সরাসরি তাকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিতে পারছে না। বিশেষ করে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের জন্যে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ বিকল্প একটি প্রস্তাবনা নিয়ে কানাডা সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছে। তবে কৌশলগত কারনে তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে চান নি।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,এর আগে কয়েক ঘন্টার জন্যে টরন্টোয় এসে আমি বিরোধীদলের (লিবারেল পার্টির) পাঁচজন এমপির সঙ্গে মধ্যাহ্ণভোজে মিলিত হয়েছিলাম। বিরোধীদলের সদস্যরা যাতে নূর চৌধুরীকে নিয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্তে বা উদ্যোগে বাধা না হয়ে দাড়ায় সেজন্যেই বিরোধীদলীয় এমপিদের সঙ্গে আগেভাগে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, কানাডা সরকার বাংলাদেশের জনগনের আবেগ অনুভুতির প্রতি সহানুভূতিশীল এবং নূর চৌধূরীকে দেশ থেকে বহি:ষ্কারের ব্যাপারেও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি টরন্টোয় অনুষ্ঠেয় মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলার উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। তিনি কানাডার বিভিন্নস্থানে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালিদের ওই মেলায় স্বপরিবারের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
Click This Link