somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবাজার বঙ্গদেশের পোষাক বাজার

০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনভর নানান লেখা, ছবি, গান(!) দেখলাম বঙ্গবাজার নিয়ে। ট্রেন্ডিং টপিক নিয়ে কথা বার্তা লিখা বন্ধ করে দিলেও নিজের দায়বদ্ধতা থেকে একটু লিখতে মন চাচ্ছে। লিখবোনা লিখবোনা করেও শেষ মুহুর্তে এক ব্যবসায়ীর পোস্ট দেখে আটকাতে পারলাম না।

বঙ্গবাজারের সাথে আমার খুব আবছা স্মৃতি আছে। বাবার সাথে খুব ছোটকালে একবার এসেছিলাম। আমার যতোদূর মনে পরে ফুলবাড়িয়ার দিক দিয়েই এসেছি, রাস্তা একদম ভাঙ্গা / কাঁচা ছিলো। মার্কেট নিয়ে আমার ইম্প্রেশন ছিলো ভেতরে ঢুকলে দম বন্ধ বন্ধ লাগে। জ্যাকেট কিনেছিলাম একটা।

এই মার্কেট এ এর পরে হাজার বার এসেছি। ঘুরেছি। সত্য বলতে গেলে গুলিস্তান আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা৷ এই জায়গায় স্বর্ন থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক পন্য, এমনকি টাকাও বিক্রি হয়! আর প্রতিদিন এক বর্গ কিলোমিটারের লেনদেন ৮ তলা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শপিং কম্পলেক্সে হয় কিনা সন্দিহান।

বঙ্গবাজার খুব প্রমিনেন্ট একটা মার্কেট এক এলাকায়। এক্সপোর্ট গার্মেন্টস এর সবচেয়ে বড় মার্কেট। বোধয় দেশের একক কাপড়ের মার্কেটের মাঝেই সবচেয়ে বড় হবে৷ এই জায়গা থেকে কাপড় সারা দেশে চলে যাচ্ছে। ঢাকা জোন এর সব রেডি মেড গার্মেন্টস এর মালের অন্যতম বড় পাইকারি মার্কেট ছিলো এইখানে। নিজের ছোট একটা প্রতিষ্ঠান ছিলো, তাই এক ঝলক বিজনেস দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম এই কাঠের মার্কেটের ফাঁক দিয়ে৷

বছরে আমরা যেই ৪০, ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি, যেই টাকার নড়বড়ে খুঁটির উপ্রে দাড়াইয়া আছি এখনো, পুরোটাই রেডিমেড গার্মেন্টস। মূলত করিটা কি আমরা? সূতা আনি, ফেব্রিক আনি, আমরা জাস্ট সেলাই করে ইউরোপ আমেরিকায় পাঠাইয়া দেই।
এক পোষাক বানাইতে যাইয়া কিছু পোষাকে মাপের ভুল হয়, কিছু পোষাকে মেশিনের দাগ লাগে, কিছু বানাই স্যপল, কিছু বানাইতে হয় এক্সট্রা। সেই ৫% এক্সট্রা মালামাল নানান নেতাপোতার হাত ধরে গার্মেন্টস থেকে বের হয়, গোডাউনে জমা হয় বছর ৩-৪, এরপর এই বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে আসে বস্তা বস্তায়। সর্ট করার পর দোকানে ঝুলায়, কিছু যায় দেশের সব প্রান্তে খুচরা দোকানে।
এইযে যেই ৫% জামা আমরা কিনি ন্যাকড়ার দামে, এইটাই আস্তে আস্তে দাড়াইছে বঙ্গবাজার নামে। বিশাল মার্কেট হইসে। আমরা গায়ে কাপড় জড়াইয়া ঘুরতে পারতাছি।

কাপড় জরাইয়া ঘুরতে পারতাছি বললাম, একটু হার্শ শোনাইলেও ব্যপারটা বাস্তব। আমরা কটন বা ফেব্রিক বেশিরভাগ আমদানীই করি৷ এইটার প্রোডাকশন আমাদের খুব কম। মূলত আমরা চাইনা, ইন্ডিয়া, জার্মানী থেকে নানান গার্মেন্টস সামগ্রী আনি৷ দেশে এইগুলা দিয়া বড়ভাইদের নীতিমালা অনুযায়ী জামা কাপড় বানাইয়া পাঠাই। বিনিময়ে এই সেলাই মেশিন চালানো গ্রামের স্বপ্নবাজ মেয়েটারে কিছু টাকা গুইজা দিয়া থামাই রাখি। ন্যায্য টাকা না বুঝাইয়া দিয়া বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি বানাইছি৷
সেই ৫% এক্সট্রা ঝুট কাপড় যেইগুলা বড়ভাইদের নির্দেশ থাকে ডেস্ট্রোয় করার, সেইটাকেই ফাঁকি দিয়ে কোনরকমে বের করেই গরীব একটা দেশের মানুষজন বড়লোকী কিছু পোষাক পরতে পারতাম।

সেই মার্কেট চোখের সামনে জ্বলছিলো, জ্বলছে( রাত ১০টার খবরেও দেখলাম ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রিত আগুন, যেটা এখনো জ্বালিয়ে রেখে আলু পোড়া দিয়েছে)
টেক্স না দিয়ে বিজনেস করুক, সরকারি নিয়ম নীতিমালা না মানুক, কমদামে পোষাক সরবরাহ করার ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম বড় ভূমিকা ছিলো এই মার্কেটের৷ আমি জানিনা এখনো দেশের মানুষের কতোটুক সামর্থ্য আছে এসির বাতাস খেতে খেতে ৩ হাজার টাকা দিয়ে জিন্স কেনার। সেখানে ২০২৩ সালেও ৩০০ দিয়ে জিন্স বিক্রি করতো বঙ্গবাজারে। এমন একটা মার্কেটে আগুন লাগা, এই ব্যবসায়ীদের মেরে ফেলা বা মরে যাওয়া সত্যিকার অর্থে দেশের স্থানীয় পোষাক বাজারে বিশাল প্রভাব ফেলবে নিস্বন্দেহে। আসছে ইদে সাপ্লাই চেইন প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে এক্সপোর্ট গার্মেন্টসগুলোর। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ইতোমধ্যে এক্সপোর্ট গার্মেন্টসের মার্কেটে একটা ভাটা চলছে তার মাঝে এই আগুন আসলে কোথায় নিয়ে যাবে পোষাক বাজার তা চিন্তার বাইরে এখনো।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×