somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিম্নে উল্লেখিত যে কোন হেপাটাটিস ভাইরাসের কারণে যদি লিভারের নেক্রো-ইনফ্লামেশন হয় (এক প্রকার প্রদাহ যাতে লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়) তাকেই ভাইরাল হেপাটাইটিস বলা হয়। ভাইরাস গুলো হচ্ছেঃ
১। হেপাটোট্রপিক ভাইরাসঃ
• হেপাটাইটিস এ ভাইরাস
• হেপাটাইটিস বি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস সি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ই ভাইরাস
• হেপাটাইটিস নন এ-ই ভাইরাস যেমনঃ
হেপাটাইটিস জি ভাইরাস এবং টিটিভি
কিছু নন-হেপাটোট্রপিক ভাইরাস আছে যগুলো ভাইরাল হেপাটাইটিস করতে পারে, যেমনঃ
• এপস্টেইন বার ভাইরাস
• সাইটোমেগালো ভাইরাস
• হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস
• ইয়েলো ফিভার ভাইরাস
• ডেঙ্গু ভাইরাস
চলুন ভাইরাসগুলোর ইনকিউবেশন পিরিওড জেনে নেই (ইনকিউবেশন পিরিওড হচ্ছে ভাইরাস শরীরে ঢোকা থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত যে সময় তাই।)
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস ১৫ থেকে ৪৫ দিন
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ৩০ থেকে ১৮০ দিন
হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ১৫ থেকে ১৫০ দিন
হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস ৩০ থেকে ১৮০ দিন
হেপাটাইটিস ই ভাইরাস ১৫ থেকে ৬০ দিন।
ভাইরাল হেপাটাইটিস যদি ৬ মাসের কম সময় পর্যন্ত থাকে একে একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস বলে। কিন্তু ভাইরাল হেপাটাইটিস যদি ৬ মাসের চেয়েও দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় তখন একে আমরা বলব ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস।
যেভাবে রোগটি ছড়ায়ঃ
১। পায়খানা বা বর্জ্য থেকে দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমেঃ
• হেপাটাইটিস এ ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ই ভাইরাস
২। ভাইরাস দ্বারা দুষিত সিরিঞ্জ বা ইঞ্জেকশনের সুঁইয়ের মাধ্যমে, বা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর রক্ত গ্রহণ করার মাধ্যমে, বা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে অথবা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ভাইরাস আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকেঃ
• হেপাটাইটিস বি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস সি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস জি ভাইরাস এবং টিটিভি।
যে কোন ভাইরাল হেপাটাইটিসের লক্ষণগুলো মোটামুটি একই ধরণের। নীচে লক্ষণগুলো দেয়া হলো-
মাথা ব্যাথা, জ্বর, গা ম্যাজ ম্যাজ করা, অরুচী, বিশেষ করে সিগারেট বা কফিতে বিস্বাদ লাগা, জন্ডিস দেখা দেওয়া, পেটের উপরিভাগে বিশেষ করে ডান পাশে ব্যাথা করা, লসিকা গ্রন্থি (lymph gland) বড় হয়ে যাওয়া, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, হাড়ের জোড়ায় ব্যাথা হওয়া, চামড়ায় ফুসকুরি দেখা দেওয়া। এছাড়াও নাকে কনজেসন, গলা ব্যাথা, কাশি, গায়ে ব্যাথা, শীত লাগা এই লক্ষণগুলোও থাকতে পারে। বমি ভাব বা বমি হওয়া, প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়ে যাওয়া এবং পায়খানার রং হাল্কা হয়ে কাদার মত হয়ে যেতে পারে।
এবার আসা যাক ল্যাব টেস্টে আমরা কি পাবঃ
১। SGPT ৪০০ থেকে ৪০০০ ইউনিট/লিঃ পর্যন্ত হতে পারে।
২। প্লাজমা বিলিরুবিন ২.৫ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ থেকে ২০ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ পর্যন্ত হতে পারে। তবে গ্লুকোজ-সিক্স-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইম ঘাটতিতে বা সিক্‌ল সেল এনিমিয়াতে বিলিরুবিন বেড়ে ২০ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ থেকে ৪০ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ পর্যন্ত হতে পারে।
৩। Serum alkaline phosphatase বাড়লেও সাধারণত ২৫০ ইউনিট/লিঃ এর বেশী হয় না।
৪। প্রথ্রম্বিন টাইম বেড়ে যেতে পারে।
এরপর আসা যায় ভাইরাল সেরোলজিতেঃ
ক) হেপাটাইটিস এঃ- anti HAV IgM পাওয়া যাবে একিউট হেপাটাইটিস এ ইনফেকশনে। পরবর্তীতে IgG দেখা দিবে এবং IgM চলে যাবে। এই IgG কয়েক বছর পর্যন্ত রক্তে পাওয়া যেতে পারে।
খ) হেপাটাইটিস বিঃ- প্রথমেই যে এন্টিজেন পাওয়া যাবে তা হল HBsAg. তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে এটা কমে যাবে। HBeAg, HBV-DNA এবং DNA polymerase থাকলে বুঝতে হবে ভাইরাস বংশ বিস্তার করছে। HBeAg ভাইরাল হেপাটাইটিস ক্রনিক রূপ নিচ্ছে এই সংকেত ও দেয়। যদি anti HBe দেখা দেয় বুঝতে হবে হেপাটাইটিস বি ভালো হওয়ার পথে। এখানে উল্লেখ্য প্রথম যে এন্টিবডি দেখা দেয় তা হল IgM anti-HBc. পরবর্তীতে IgG anti-HBc ধীরে ধীরে IgM anti HBc কে প্রতিস্থাপিত করে। Anti HBs কয়েক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং পরবর্তীতে যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রমণ করে তা প্রতিহত করে এই anti-HBs.
গ) হেপাটাইটিস সিঃ- Anti-HCV এবং HCV RNA পাওয়া যাবে হেপাটাইটিস সি ইনফেকশনে।
ঘ) হেপাটাইটিস ডিঃ- HDAg, IgM or IgG anti HDV হেপাটাইটিস ডি তে পাওয়া যাবে।
ঙ) হেপাটাইটিস ইঃ- IgM anti-HEV হেপাটাইটিস ই তে পাওয়া যাবে।
চিকিৎসাঃ
১। বেড রেস্ট (টয়লেট সুবিধাসহ) যতদিন না জন্ডিস ভাল হয়ে যায়।
২। রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে যতদিন না লক্ষণমুক্ত হবেন এবং সিরাম বিলিরুবিন ১.৫ এর কম না হবে।
৩। পথ্যঃ রোগীর যা খেতে ইচ্ছা হয় খাবে। তবে কম তৈলাক্ত এবং প্রচুর শর্করাযুক্ত খাবার অরুচিতে বেশী উপযোগী। পুষ্টিকর খাবারের সাথে গ্লুকোজ, ফলের রস এসব বেশি করে খেতে হবে।
৪। ঔষধ পত্র যতদূর সম্ভব পরিহার করে চলবেন।
এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে হেপাটাইটিসের জন্য এন্টিভাইরাল ঔষধ ব্যবহার করতে হতে পারে।
টিকাঃ হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস বি এর টিকা বাজারে এসেছে। হেপাটাইটিস সি, ডি এবং ই এর টিকা এখনো আসেনি। এই টিকাগুলো নিয়ম মত নিলে আপনি দীর্ঘদিন নিরাপদে থাকবেন। টিকা সম্বন্ধে কিছু কথাঃ
হেপাটাইটিস এ টিকাঃ ডোজ- ২ মিঃলিঃ ডেল্টয়েড মাসলে নিতে হবে ২ ডোজ ২ থেকে ৪ সপ্তাহ বিরতিতে। এরপর বুস্টার ডোজ নিতে হবে ৬ মাস পরে। এভাবে টিকা নিলে টিকা গ্রহণকারী ১০ বছর পর্যন্ত নিরাপদ থাকবেন।
হেপাটাইটিস বিঃ ০, ১ এবং ৬ মাসে একটি করে মোট তিনটি টিকা নিতে হবে। তবে বর্তমানে ৪টি ডোজ বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আপনি এবং আপনার পরিবার টিকা নিন, ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে!

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×