somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঘাইহাটে বাঙালিদের হাহাকার ত্রাণ যাচ্ছে উপজাতীয়দের জন্য : সীমানাছড়া ও গঙ্গারাম উপজাতিদের দখলে

০৪ ঠা মার্চ, ২০১০ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হায়রে কপাল নিজ দেশে উদ্বাস্তু আর কাকে বলে...................
রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাটের সীমানাছড়া ও গঙ্গারাম এলাকার বাঙালিরা এখনো ফিরতে পারেনি তাদের বসতভিটায়। পুরো এলাকা এখন দখল করে নিয়েছে ইউপিডিএফ’র নেতৃত্বে উপজাতীয়রা। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজাতীয়দের জন্য ট্রাকে ট্রাকে খাদ্য এবং ঘর নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ চলছে গত কয়েকদিন থেকে। আর উচ্ছেদ হওয়া বাঙালিরা বাঘাইহাটের গোয়ালঘর ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের বাঙালিদের ঘরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের জন্য কোনো ত্রাণ নেই। বরং চরম নিরাপত্তাহীনতায় তারা দিন কাটাচ্ছে। পরশু রাতেও বাঘাইহাট পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই রোজি আলমের বসত পুড়িয়ে দিয়েছে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। গতকাল সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি শহরের শালবন এলাকায় বাঙালিদের ৪টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উপজাতীয়রা। এদিকে গঙ্গারামের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হলেও পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাঙালিরা। আর উপজাতীয়রা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ত্রাণবণ্টন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে ত্রাণ দেয়া ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কেন এ বৈষম্য তার সঠিক কোনো জবাব নেই প্রশাসনের কাছে। গতকাল বাঘাইহাট ও গঙ্গারামে সরজমিনে ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
দুপুরে বাঘাইহাট পৌঁছে দেখা যায়, পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থিত গোয়ালঘর ও রাস্তার পাশে ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে মায়েদের কোলে থাকা অনেক শিশু। প্রায় শতাধিক পরিবার এখনও পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। নোয়াপাড়া থেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে আসা ৩ শিশুর জননী মিনারা বেগম অঝোরে কেঁদে কেঁদে বিলাপ করছেন সন্তানদের মুখে তিনি কি দেবেন, নিজেরা কি খাবেন তা বলে। উচ্ছেদ হওয়ার এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও তাদের জন্য কোনো ত্রাণ আসেনি। পরিচিত ও আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ভিক্ষাবৃত্তির মতো করে তার সন্তানদের মুখে আহার দিচ্ছেন মিনারা। অথচ তাদের সামনে দিয়েই প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে খাদ্য সামগ্রী যাচ্ছে উপজাতীয়দের জন্য। মিনারার মতোই বিলাপ এবং ত্রাণ ও নিরাপত্তার জন্য আকুতি গঙ্গারামের নাজমা বেগম ও রাতকাবা এলাকার ছকিনা বেগমের। তাদের দিন-রাত কাটছে এ গোয়াল ঘরেই। প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নেয়া ৭৫ বছরের বৃদ্ধ আহাদ আলী জানান, সশস্ত্র উপজাতিরা কেবল তাদের বাড়িঘরেই আগুন দেয়নি, তাদের গরু-ছাগল ও সঞ্চিত সব মালামাল নিয়ে গেছে। সব হারিয়েও বাঙালিরা এখন সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কারোরই সহায়তা বা আশ্রয় পাচ্ছে না। বরং গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সর্বস্ব হারিয়ে আসা শাহ আলম ও আবুল হাশেম ডালি জানান, বালুঘাট, সীমানাছড়া, রাতকাবা, ভাইভাছড়া ও নোয়া পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪১ বাঙালি পরিবার। আর গঙ্গারামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা শতাধিক। অথচ সরকার বাঙালিদের মাত্র ২৩ পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নত করেছে; কিন্তু তাদের জন্য এখনও ত্রাণ আসেনি। ওই এলাকার বাঙালিদের সব ঘরবাড়ি এখন চাকমাদের দখলে বলে জানান তারা। গঙ্গারাম থেকে বাঙালি উচ্ছেদের জন্য সশস্ত্র হুমকি ২০০৮ থেকে দেয়া হয় জানিয়ে তারা বলেন, সে বছর ১ আগস্ট রাসেল ও আমানকে অপহরণ করা হয়েছিল, তাদের এখনো খোঁজ নেই। গত বছর ৬ মে গঙ্গারামের বাঙালি নেতা মোঃ আলকাছ ও মুজিবরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৮৬ সালে ২৪ বাঙালিকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা অপহরণের পর হত্যা করে। তিনদিন পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করে এ বাঘাইহাট বাজারের পাশেই গণকবর দেয়া হয়। বাঙালিদের সে বাঘাইহাট আর গঙ্গারাম এখন উপজাতীয়রা দখল করছে। সেখানে অতীতে উপজাতীয়দের অস্তিত্বই ছিল না বলে জানান তারা। বৃদ্ধ সিদ্দিক, রফিক ও সোলেমান বলেন, তাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা দোকানপাট, ঘরবাড়ি সম্পদ সব শেষ হয়ে গেছে। উদ্বাস্তু হয়ে এখন কারোরই আশ্রয় বা সহায়তা পাচ্ছে না তারা, অথচ সংরক্ষিত বনভূমি দখলকারী চাকমারা এখন বাহির থেকে এসে সব দখল করে নিচ্ছে। মাদ্বার শাহ আলম ও দুলাল মিয়া জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সীমানাছড়ায় বাঙালি ২২ পরিবারেক উচ্ছেদ করে সেখানে স্কুলঘর নির্মাণ করেছে চাকমারা। আশপাশে অনেক জায়গা খালি থাকলেও কেবল বাঙালিদের উচ্ছেদ করতেই বসতবাড়ি ভেঙে অনুমোদনবিহীন এ স্কুলঘর নির্মাণ করা হয়। জানা যায়, ইউএনডিপির অর্থ সহায়তায় জোসনারানী, নারায়ণ মেম্বার, কালা কচু, গোবিন্দ্র হেডম্যান, রিদ বাবু, পরান চাকমা, রূপম চাকমা ও কামিণী চাকমা এ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় এবং বাঙালিদের উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেয়। এখানকার বাঙালি ২২ পরিবার তখন থেকে উদ্বাস্তু হলেও এ নিয়ে সেনা বা সিভিল প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এভাবে বিভিন্ন কায়দায় উচ্ছেদ হওয়া প্রায় ৪ হাজার বাঙালি এখন বাঘাইহাট এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদিকে গতকাল বাঘাইহাটবাজার অতিক্রম করতেই সীমানাছড়ায় বাঙালিদের পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলো দেখা গেলেও সেখানে কোনো বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গঙ্গারাম গিয়ে দেখা যায়, ৭/৮ হাজার চাকমার আনাগোনা। রাস্তার পাশে খাদ্যসামগ্রী ও টিনের স্তূপ। দলে দলে উপজাতীয় নারী পুরুষরা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনই সব তদারকি করছে। তবে সেখানে সেনাবাহিনীর কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। গঙ্গারামের বাঙালি বসতগুলোতে চাকমাদের নামফলক টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঙালি নেতা আলকাছের কবরস্থানের চিহ্ন ও ঘেরা ফেলে দিয়ে সেখানে উপজাতীয় মহিলাদের ছাউনি করা হয়েছে। বাজারে উপস্থিত রোজারী, তেগুনী ও মহমা চাকমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুড়ে যাওয়ার আগে গঙ্গারাম এলাকায় সর্বোচ্চ ১শ’ উপজাতি পরিবারের বাস ছিল। তা হলে এখন এত উপজাতি কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে তারা জানান, আশপাশ এলাকার সবাই এসেছে ত্রাণসামগ্রী নিতে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণে নিয়োজিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন উপজাতীয় নেতারা যাদেরকেই এনে হাজির করাচ্ছে তাদেরই ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে গঙ্গারাম এলাকায় উপজাতীয় ও বাঙালি বসতি সম্পর্কে সাজেক এলাকার লালচান পাংখোয়া জানান, অনেক আগে থেকে বাঘাইহাট এলাকায় বাঙালিদের বসত ছিল। সাজেক এলাকায় ছিল পাংখোয়া সম্প্রদায়। গঙ্গারাম এলাকায় কিছু বাঙালির বসবাস দেখা গেলেও পুরো রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় চাকমাদের অস্তিত্ব ছিল না। পার্বত্য চুক্তির পর কিছু চাকমা এ এলাকায় বসত গড়ে তোলে। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চাকমারা গঙ্গারাম এলাকায় রাতারাতি অনেক বসতি তৈরি করে এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায়। হঠাত্ এত চাকমা এ এলাকায় কোথায় থেকে কিভাবে এসেছে তা বুঝতে পারছেন না লাল চান পাংখোয়া। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মূলত এ এলাকায় চাকমা বসতি গড়ে পাংখোয়া সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার পর সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালি উচ্ছেদের মাধ্যমে এখন বাঘাইহাটের বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চাকমা ও ইউপিডিএফ।
এদিকে গতকাল পর্যন্ত উপজাতি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইউএনডিপি, ডাব্লিউএফপি, জেলা প্রশাসন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতি, বৌদ্ধভিক্ষু সংঘসহ বিভিন্ন এনজিও, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক সোরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানান, জেলা প্রশাসন গতকাল পর্যন্ত ৫শ’ পরিবারের জন্য টিন, খাদ্যসামগ্রী ও নগদ ৩০ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এতে ১শ’ বাঙালি পরিবারের জন্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানান। তবে বাঙালি পরিবারকে ত্রাণ দেয়ার কোনো সত্যতা গতকাল সরেজমিন পাওয়া যায়নি। বরং প্রশাসন প্রথমত ৩ শতাধিক উপজাতি পরিবারের সঙ্গে ২৩ বাঙালি পরিবারের তালিকার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত উপজাতি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৬৪০-এ পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। গতকাল বাঘাইহাটে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাদের কোনো আশ্রয়দাতা নেই, নিজ দেশেই তারা যেন পরবাসী। সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ আবুল কাশেমও কোনো সহায়তা না পেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর গঙ্গারামের উপজাতিদের আনন্দ উল্লাস দেখে মনে হয়েছে তারা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন এবং ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।
খাগড়াছড়িতে আবার আগুন : খাগড়াছড়ির শালবন গুচ্ছগ্রামের আদর্শপাড়ায় আবার আগুন দিয়ে বাঙালিদের ৫টি বসতঘর পুড়ে দিয়েছে উগ্র উপজাতিরা। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এসব বসতঘরে আগুন দেয়া হয়। তখন বাড়ির লোকজন স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী মরিয়ম বিবি, ফুলবানু ও মোঃ আলম জানান, উপজাতি সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়ে চলে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক জানান, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
এদিকে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন।রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাটের সীমানাছড়া ও গঙ্গারাম এলাকার বাঙালিরা এখনো ফিরতে পারেনি তাদের বসতভিটায়। পুরো এলাকা এখন দখল করে নিয়েছে ইউপিডিএফ’র নেতৃত্বে উপজাতীয়রা। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজাতীয়দের জন্য ট্রাকে ট্রাকে খাদ্য এবং ঘর নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ চলছে গত কয়েকদিন থেকে। আর উচ্ছেদ হওয়া বাঙালিরা বাঘাইহাটের গোয়ালঘর ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের বাঙালিদের ঘরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের জন্য কোনো ত্রাণ নেই। বরং চরম নিরাপত্তাহীনতায় তারা দিন কাটাচ্ছে। পরশু রাতেও বাঘাইহাট পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই রোজি আলমের বসত পুড়িয়ে দিয়েছে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। গতকাল সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি শহরের শালবন এলাকায় বাঙালিদের ৪টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উপজাতীয়রা। এদিকে গঙ্গারামের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হলেও পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাঙালিরা। আর উপজাতীয়রা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ত্রাণবণ্টন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে ত্রাণ দেয়া ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কেন এ বৈষম্য তার সঠিক কোনো জবাব নেই প্রশাসনের কাছে। গতকাল বাঘাইহাট ও গঙ্গারামে সরজমিনে ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
দুপুরে বাঘাইহাট পৌঁছে দেখা যায়, পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থিত গোয়ালঘর ও রাস্তার পাশে ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে মায়েদের কোলে থাকা অনেক শিশু। প্রায় শতাধিক পরিবার এখনও পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। নোয়াপাড়া থেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে আসা ৩ শিশুর জননী মিনারা বেগম অঝোরে কেঁদে কেঁদে বিলাপ করছেন সন্তানদের মুখে তিনি কি দেবেন, নিজেরা কি খাবেন তা বলে। উচ্ছেদ হওয়ার এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও তাদের জন্য কোনো ত্রাণ আসেনি। পরিচিত ও আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ভিক্ষাবৃত্তির মতো করে তার সন্তানদের মুখে আহার দিচ্ছেন মিনারা। অথচ তাদের সামনে দিয়েই প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে খাদ্য সামগ্রী যাচ্ছে উপজাতীয়দের জন্য। মিনারার মতোই বিলাপ এবং ত্রাণ ও নিরাপত্তার জন্য আকুতি গঙ্গারামের নাজমা বেগম ও রাতকাবা এলাকার ছকিনা বেগমের। তাদের দিন-রাত কাটছে এ গোয়াল ঘরেই। প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নেয়া ৭৫ বছরের বৃদ্ধ আহাদ আলী জানান, সশস্ত্র উপজাতিরা কেবল তাদের বাড়িঘরেই আগুন দেয়নি, তাদের গরু-ছাগল ও সঞ্চিত সব মালামাল নিয়ে গেছে। সব হারিয়েও বাঙালিরা এখন সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কারোরই সহায়তা বা আশ্রয় পাচ্ছে না। বরং গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সর্বস্ব হারিয়ে আসা শাহ আলম ও আবুল হাশেম ডালি জানান, বালুঘাট, সীমানাছড়া, রাতকাবা, ভাইভাছড়া ও নোয়া পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪১ বাঙালি পরিবার। আর গঙ্গারামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা শতাধিক। অথচ সরকার বাঙালিদের মাত্র ২৩ পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নত করেছে; কিন্তু তাদের জন্য এখনও ত্রাণ আসেনি। ওই এলাকার বাঙালিদের সব ঘরবাড়ি এখন চাকমাদের দখলে বলে জানান তারা। গঙ্গারাম থেকে বাঙালি উচ্ছেদের জন্য সশস্ত্র হুমকি ২০০৮ থেকে দেয়া হয় জানিয়ে তারা বলেন, সে বছর ১ আগস্ট রাসেল ও আমানকে অপহরণ করা হয়েছিল, তাদের এখনো খোঁজ নেই। গত বছর ৬ মে গঙ্গারামের বাঙালি নেতা মোঃ আলকাছ ও মুজিবরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৮৬ সালে ২৪ বাঙালিকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা অপহরণের পর হত্যা করে। তিনদিন পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করে এ বাঘাইহাট বাজারের পাশেই গণকবর দেয়া হয়। বাঙালিদের সে বাঘাইহাট আর গঙ্গারাম এখন উপজাতীয়রা দখল করছে। সেখানে অতীতে উপজাতীয়দের অস্তিত্বই ছিল না বলে জানান তারা। বৃদ্ধ সিদ্দিক, রফিক ও সোলেমান বলেন, তাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা দোকানপাট, ঘরবাড়ি সম্পদ সব শেষ হয়ে গেছে। উদ্বাস্তু হয়ে এখন কারোরই আশ্রয় বা সহায়তা পাচ্ছে না তারা, অথচ সংরক্ষিত বনভূমি দখলকারী চাকমারা এখন বাহির থেকে এসে সব দখল করে নিচ্ছে। মাদ্বার শাহ আলম ও দুলাল মিয়া জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সীমানাছড়ায় বাঙালি ২২ পরিবারেক উচ্ছেদ করে সেখানে স্কুলঘর নির্মাণ করেছে চাকমারা। আশপাশে অনেক জায়গা খালি থাকলেও কেবল বাঙালিদের উচ্ছেদ করতেই বসতবাড়ি ভেঙে অনুমোদনবিহীন এ স্কুলঘর নির্মাণ করা হয়। জানা যায়, ইউএনডিপির অর্থ সহায়তায় জোসনারানী, নারায়ণ মেম্বার, কালা কচু, গোবিন্দ্র হেডম্যান, রিদ বাবু, পরান চাকমা, রূপম চাকমা ও কামিণী চাকমা এ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় এবং বাঙালিদের উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেয়। এখানকার বাঙালি ২২ পরিবার তখন থেকে উদ্বাস্তু হলেও এ নিয়ে সেনা বা সিভিল প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এভাবে বিভিন্ন কায়দায় উচ্ছেদ হওয়া প্রায় ৪ হাজার বাঙালি এখন বাঘাইহাট এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদিকে গতকাল বাঘাইহাটবাজার অতিক্রম করতেই সীমানাছড়ায় বাঙালিদের পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলো দেখা গেলেও সেখানে কোনো বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গঙ্গারাম গিয়ে দেখা যায়, ৭/৮ হাজার চাকমার আনাগোনা। রাস্তার পাশে খাদ্যসামগ্রী ও টিনের স্তূপ। দলে দলে উপজাতীয় নারী পুরুষরা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনই সব তদারকি করছে। তবে সেখানে সেনাবাহিনীর কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। গঙ্গারামের বাঙালি বসতগুলোতে চাকমাদের নামফলক টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঙালি নেতা আলকাছের কবরস্থানের চিহ্ন ও ঘেরা ফেলে দিয়ে সেখানে উপজাতীয় মহিলাদের ছাউনি করা হয়েছে। বাজারে উপস্থিত রোজারী, তেগুনী ও মহমা চাকমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুড়ে যাওয়ার আগে গঙ্গারাম এলাকায় সর্বোচ্চ ১শ’ উপজাতি পরিবারের বাস ছিল। তা হলে এখন এত উপজাতি কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে তারা জানান, আশপাশ এলাকার সবাই এসেছে ত্রাণসামগ্রী নিতে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণে নিয়োজিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন উপজাতীয় নেতারা যাদেরকেই এনে হাজির করাচ্ছে তাদেরই ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে গঙ্গারাম এলাকায় উপজাতীয় ও বাঙালি বসতি সম্পর্কে সাজেক এলাকার লালচান পাংখোয়া জানান, অনেক আগে থেকে বাঘাইহাট এলাকায় বাঙালিদের বসত ছিল। সাজেক এলাকায় ছিল পাংখোয়া সম্প্রদায়। গঙ্গারাম এলাকায় কিছু বাঙালির বসবাস দেখা গেলেও পুরো রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় চাকমাদের অস্তিত্ব ছিল না। পার্বত্য চুক্তির পর কিছু চাকমা এ এলাকায় বসত গড়ে তোলে। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চাকমারা গঙ্গারাম এলাকায় রাতারাতি অনেক বসতি তৈরি করে এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায়। হঠাত্ এত চাকমা এ এলাকায় কোথায় থেকে কিভাবে এসেছে তা বুঝতে পারছেন না লাল চান পাংখোয়া। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মূলত এ এলাকায় চাকমা বসতি গড়ে পাংখোয়া সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার পর সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালি উচ্ছেদের মাধ্যমে এখন বাঘাইহাটের বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চাকমা ও ইউপিডিএফ।
এদিকে গতকাল পর্যন্ত উপজাতি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইউএনডিপি, ডাব্লিউএফপি, জেলা প্রশাসন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতি, বৌদ্ধভিক্ষু সংঘসহ বিভিন্ন এনজিও, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক সোরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানান, জেলা প্রশাসন গতকাল পর্যন্ত ৫শ’ পরিবারের জন্য টিন, খাদ্যসামগ্রী ও নগদ ৩০ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এতে ১শ’ বাঙালি পরিবারের জন্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানান। তবে বাঙালি পরিবারকে ত্রাণ দেয়ার কোনো সত্যতা গতকাল সরেজমিন পাওয়া যায়নি। বরং প্রশাসন প্রথমত ৩ শতাধিক উপজাতি পরিবারের সঙ্গে ২৩ বাঙালি পরিবারের তালিকার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত উপজাতি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৬৪০-এ পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। গতকাল বাঘাইহাটে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাদের কোনো আশ্রয়দাতা নেই, নিজ দেশেই তারা যেন পরবাসী। সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ আবুল কাশেমও কোনো সহায়তা না পেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর গঙ্গারামের উপজাতিদের আনন্দ উল্লাস দেখে মনে হয়েছে তারা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন এবং ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।
খাগড়াছড়িতে আবার আগুন : খাগড়াছড়ির শালবন গুচ্ছগ্রামের আদর্শপাড়ায় আবার আগুন দিয়ে বাঙালিদের ৫টি বসতঘর পুড়ে দিয়েছে উগ্র উপজাতিরা। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এসব বসতঘরে আগুন দেয়া হয়। তখন বাড়ির লোকজন স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী মরিয়ম বিবি, ফুলবানু ও মোঃ আলম জানান, উপজাতি সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়ে চলে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক জানান, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
এদিকে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×