মহাজোট সরকারের সমালোচনা করে দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এরশাদ
ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সামলান দখলদারী-টেন্ডারবাজী থেকে আপনার সোনার ছেলেদের ফিরিয়ে আনুন
-আওয়ামী লীগকে আমি ক্ষমতা দিলেও তারা আমাকে দিয়েছে দুঃখ আর লাঞ্ছনা
দিনাজপুর অফিস : সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দিয়েছি। কিন্তু বিনিময়ে দুঃখ আর লাঞ্ছনা ছাড়া কিছুই পাইনি। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে দিয়েছে ৬০ লাখ ১৬ হাজার ভোট কিন্তু আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে দিয়েছে ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ভোট। জাতীয় পার্টির নেতা ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতানুল ফেরদৌস চৌধুরীর বাসা যুবলীগ কর্তৃক দখল করে নেয়ার ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে থামান, দখলদারী-টেন্ডারবাজী থেকে যেন আপনার সোনার ছেলেরা বেরিয়ে আসে। আমাকে স্বৈরাচার বলা হয়। দেশে এখন সংসদীয় গণতন্ত্র চলছে। সাম্প্রতিককালে জাতীয় সংসদে এমপিদের আচরণ দেখে দেশের মানুষ আবার নতুন করে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা খুঁজতে শুরু করেছে। সম্মানিত সংসদ সদস্যদের আচরণ দেখে নিজেকে বারবার লজ্জিত মনে হয়।
গতকাল শনিবার সকালে দিনাজপুর লোকভবনে দিনাজপুর জেলা জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ একথা বলেন। জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আব্দুস সামাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহমেদ এমপি, মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, দিনাজপুর জেলা জাতীয় পার্টির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল, রংপুর পৌর মেয়র আব্দুর রব মানিক, রংপুর জাপার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জাপা সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল হক চৌধুরী, পঞ্চগড় জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক, কেন্দ্রীয় জাপার ভাইস চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার চৌধুরী জীবন, জেলা জাপা নেতা যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট নূরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহবায়ক মোঃ ওবায়দুল্লাহ বাবু, যুব সংহতির জুলফিকার হোসেন, শরীক দল দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও নবনির্বাচিত জেলা জাপা সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। এরশাদ দীর্ঘ ৯ বছর পর দিনাজপুরে সফল কাউন্সিল হওয়ায় তিনি জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দিনাজপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানান। এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি এখন কোন দুর্বল দল নয়, শক্তিশালী দল। আমি ক্ষমতায় থাকাকালে এমন কিছু করিনি, যাতে জনগনের কল্যাণ ব্যাহত হয়েছে। সর্বদা জনগণের কল্যাণ করেছি। আমি ছিলাম এদেশের সর্বশ্রেষ্ট সফল রাষ্ট্রনায়ক। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর কিছু চাই না, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। ৯ বছর রাষ্ট্রপ্রধান ৮ বছর সেনাপ্রধান ছিলাম। সুতরাং আমি সম্মান নিয়ে মরতে চাই। আমাকে সম্মান করবেন। সাথে শুধু একটি আবেদন-একটি বারের মত সুযোগ দিন যাতে মৃত্যুর সময় আমি জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখে যেতে চাই। তিনি বলেন, একটি মহল জাতীয় পার্টিকে মুছে ফেলতে চায়। হাজার চেষ্টা করেও জনগণের হৃদয় থেকে জাতীয় পর্টির নাম মুছে ফেলা যাবে না, কারণ জাতীয় পার্টির নাম আজ দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে লিখা আছে। কেননা, আমাদের শাসনামলে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে আজ দেশের যে কোন অঞ্চলে যান, বাস মোটরে যেতে পারবেন। দেশের একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বাস মোটরে যাওয়া যাবে। এ সবই আমার জাতীয় পার্টির অবদান। তিনি বলেন, আমি ২১টি জেলা থেকে ৬৪টি জেলা করেছি, উপজেলা করেছি। অসংখ্য স্কুল কলেজ সরকারি করেছি। আমার পর আর কোন স্কুল কলেজ সরকারি করা হয়নি। এরশাদ তার শাসনামলের উন্নয়নের বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, দুর্বলকে কেউ গণ্য করে না। শক্তিশালীকে হিসাব করে। এজন্য জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে এবং একটি শক্তিশালী দলে পরিণত করতে হবে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ২০২১ সালের ভিশন সফল করতে হলে জাতীয় পার্টিকে সাথে নিতে হবে। এরশাদকে প্রয়োজন হবে। এরশাদকে সাথে নিয়েই ভিশন সফল করতে হবে। অন্যথায় এ ভিশন সফল হবে না। এরশাদ জাপা নেতা ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসা যুবলীগ কর্তৃক দখল করে নেয়ার ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে থামান, দখলদারী থেকে যেন তারা বেরিয়ে আসে। তিনি আরো বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি থাকার শেষ দিকে নূর হোসেনকে হত্যা করা হয়। কিন্তু আমরা তাকে হত্যা করিনি। আপনাদের প্রয়োজন ছিল, তাই আপনারা লাশ উপহার দিয়েছেন। শেষে এরশাদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের সাহায্য করবো, আপনারাও আমাকে সাহায্য করেন। পরে দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও আহমেদ শফি রুবেলকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা জাপার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



