somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। লাশ ।।

২৭ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসুক মানুষের ভীড়ে লাশটি দেখাই দায়। প্রতিনিয়ত মানুষ দেখতে আসছে আর মৃত্যুর কারন জিজ্ঞাসা করছে। কয়েকজন উৎসাহী বক্তাকেও দেখা যাচ্ছে যারা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মৃত্যুর কারন বর্ননা করতে ব্যস্ত। কেউবা দোষ দিচ্ছে চাপা দেয়া বাসটির কেউবা লাশটির। মানুষ মারা গেলে তার প্রশংসা করাটা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন শুরু করল ''জয় পোলাটা বড় ভালা আছিল। সবার বিপদে আপদে... বাকি সবাই হু হা করতে লাগল। তারপর দেখা গেল সবার কাছেই একেকটা কাহিনী আছে জয় প্রসঙ্গে। জয় এই করেছে, জয় সেই করেছে। সব প্রশংসা! নিষ্ঠুর বিধাতা কখনো হৃত প্রাণ ফেরত দেন না। যদি একমিনিটের জন্য জয়ের প্রাণ ফেরত দিতেন, তাহলে জয় দু চোখে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে যারা প্রশংসা করছে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। চায়ের কাপে চিনি কম দিলে মালিকের গালি, মাটিতে চোখ রেখে রাস্তায় চলাচলের সময় জারজ বলে টিটকারী শুনে পার করা এই দীর্ঘ জীবনে প্রশংসা, মমতা যে পায়নি একটি বারের জন্যেও! আলোচনায় নতুন মোড় এসেছে। সবাই এখন জয়ের পাশাপাশি তার মায়ের জন্যেও আফসোসে ব্যস্ত। বৃদ্ধ মাকে দেখাশোনার জন্য যে কেউই রইল না। একজন বলল ''ওর মারে খবর দাও। আমরা লাশ নিয়া আইতাছি''

বয়সের ভারে বৃদ্ধ রহিমা বেগম চোখে একেবারেই কম দেখেন। তারপরও বুঝতে পারছেন সবাই তার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে মা কি করে এত পাষাণ হয়! ছেলে মারা গেছে অথচ চোখে এক ফুঁটা পানি নেই! রহিমা বেগমের বলতে ইচ্ছে হল যে ছেলের জন্য বালিকা রহিমার হাত রাঙেনি মেহেদীর রঙে, সে ছেলের জন্য কান্না আসেনা। আর্তনাদ এবং পাশবিক উল্লাসের সংমিশ্রণে জন্ম নেয়া ছেলের জন্য কান্না আসেনা।

ঘর ভর্তি মানুষ অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মরা বাড়ীতে সবাই আসে সমোবেদনা জানানোর প্রস্তুতি নিয়ে। ক্রন্দনরত আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় নীতিবাক্য আওড়ানো, মাঝে মাঝে এক দুইটি ধমক এবং দাফন সংক্রান্ত কিছু উপদেশ দেওয়ার মাঝে আনন্দ আছে। কান্নাহীন মরা বাড়ী অস্বস্তিকর হওয়াটাই স্বাভাবিক।

জয়ের লাশ বাড়ীর সামনে রাখা হয়েছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এখনো ব্যস্ত সবাই জয়ের প্রশংসায়। বার বার উচ্চারিত হওয়া জয় শব্দটি রহিমা বেগমকে কিছুক্ষণের জন্য বধির করে দিল। রহিমা বেগমের মনে পড়ে গেল তাকে সহ অন্যান্য নারীদের উদ্ধার করা মুক্তিযোদ্ধাদের জয় বাংলা বলে চিৎকার ধ্বনি। বোনদের জন্য চোখে পানি আর মুখে দেশ জয়ের হাসি নিয়ে তাদের আনন্দ চিৎকার এখনো রহিমা বেগমকে নাড়া দেয়। জয়ের নামটাও তাদের দেয়া। কপালে চুমো দিয়ে তার নামটা রেখেছিল সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো একজন। জয়ের পাওয়া প্রথম এবং শেষ চুমো।

***

অস্বস্তিকর পরিবেশের সমাপ্তি ঘটেছে। রহিমা বেগম এখন হাউমাউ করে কাঁদছেন। সবাই আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে সান্তনার পসরা সাজাতে। কান্না থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। হয়ত এ কান্না পুত্রকে না দেওয়া একটি চুমোর জন্য! অথবা সেই মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নভঙ্গের জন্য!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:০৭
৫৭টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×