মাতালের করা কোনো কাজের যুক্তি নেই। দূর্গন্ধময় আবর্জনায় ভরা এই আগা-মাথাহীন এই পোষ্টেরও কোনো মূল্য নেই। ধরতে পারেন রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কারো ডায়রীর দুই একটি পাতা। এই ডায়রীর মাতালরা বাস করে আলাদা এক জগতে। যেখানে সুশীলদের, যুক্তিবাদীদের প্রবেশ নিষেধ।
*জীবনের প্রথমঃ ভালো আমি কোনো কালেই ছিলাম না। কেবল ভদ্রতার মুখোশ পরে চলাফেরা করতাম। মদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় একটি ট্যুরে। বন্ধুদের খায়েশ জীবন আর কতদিনের! জীবিত থাকতে যদি এই পদার্থের স্বাদ না নিলাম তাহলে স্বর্গে বসে কিভাবে বুঝব শরাবান তাহুরা ব্যাটার দুনিয়ার তামাম সব মদ থেকে! এই যুক্তিতে প্রথমবারের মত স্বাদ নিলাম সমাজে নিষিদ্ধ এক পদার্থের। এ যেন সূচনা এক মহাপ্রলয়ের। তারপর থেকে মাঝে মাঝে বন্ধুত্ব ঝালিয়ে নিতে হয়।
অনুভূতিঃ সব মাতালেরই অনুভূতি একরকম। যখন এক মাতাল আনন্দে থাকে তার আনন্দ সংক্রমিত হয় অপর মাতালের মাঝে। একজনের কষ্ট আরেকজনের। অতীব দুঃখের ব্যাপার আমি এবং আমার সব বন্ধুবান্ধব নারী জাতির কাছ থেকে কেবল লাথি-গুতা উপহার পেয়েছি। তাই ভাবের জগতে প্রবেশের পর আমাদের চিন্তার রাজ্য দখল করে বসে কেবল নারীরাই। অমুক মানবীকে ভালোবেসেছিলাম, কিন্তু নিষ্ঠুর মানবী আমার মর্ম বুঝলো না টাইপের হাহাকার বের হয়ে আসে আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে। এক মাতাল কখনো বিষাদের সমুদ্রে আরেক মাতালকে একা ডুবে যেতে দেয়না। তাই আমরা সব মাতাল একসঙ্গে হাবুডুবু খেতে থাকি বিষাদের সমুদ্রে। মাঝে মাঝে অবশ্য ব্যতিক্রম হয়। ভাবের উচ্চস্তরে পৌছার পর আমাদের চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ থাকে কেবল বিধাতাকে ঘিরেই। হঠাৎ করে আমাদের উপর ভর করে মৃত্যুভয়। দেখা যায় এক মাতাল খালি গায়ে সিজদারত, আরেক মাতাল হয়ত ব্যস্ত জিকিরে। হয়তোবা অপবিত্র! তবে খাদ নেই বিধাতার প্রশংসায় মত্ত মাতালদের বিশ্বাসে কিংবা ভালোবাসায়। অবশ্য মাতলামির কারন হতে পারে পরিবেশ। মাঝরাতে আবছা আলো আবছা অন্ধকারের খেলায় ,উঁচু কোনো দালানের ছাদে কিংবা খোলা মাঠে বসে থাকা সব মাতালেরই নিজেকে একা মনে করাটা স্বাভাবিক। আর একাকী মানুষের আশ্রয় হতে পারে কেবল একজন নারী অথবা বিধাতা! যাইহোক বিধাতা এবং নারীর একটি মিল আছে। মিলটি হলো তারা দুজনই রহস্যময়।
বেষ্ট পার্টনারঃ ভাবের জগতে আপনাকে প্রবেশ করতে হলে যে জিনিষটি আপনার সবচেয়ে দরকার তা হলো সমঝদার সঙ্গী। আমারো এক বন্ধু আছে। ধরা যাক তার নাম জয়। সে মাতাল হওয়ার পর চট করেই ধরতে আজ বাজারে কি খাবে! পরিবেশের উপর নির্ভর করে ভারী গলায় বলতে থাকে পৃথিবীতে নারী জাতির কোনো স্থান নেই, সব অনিষ্টের মূল এরাই ইত্যাদি ইত্যাদি অথবা শুরু করে বিধাতাকে নিয়ে তার উচ্চস্তরের ফিলোসফি। মাতালদের জগতে ভিন্নমতের কোনো স্থান নেই। আমরা বাকীরা তার ভূল শুদ্ধ থিওরী এক বাক্যে মেনে নেই। মাঝে মাঝে হু হা কিংবা রাইট রাইট বলে তাকে উৎসাহ প্রদান করি। অন্ধকারে কেউ কারো চেহারা দেখতে না পারা, এর মাঝে তার ভারী গলায় আওড়ানো থিওরীগুলোকে মনে হয় যেন দৈব বাণী! দু একটা থিওরী হয়ত বলতাম, দূর্ভাগ্যের ব্যাপার নেশা চলে যাওয়ার পর কিছুই মনে থাকেনা! আফসোস বিশ্বব্রক্ষান্ড নিয়ে দেওয়া তার চমৎকার সব থিওরী কোথায় যে হারিয়ে যায় নিজেই জানিনা। তবে মাঝে মাঝে চিন্তাভাবনা থাকে কেবল আমাদের এক বন্ধুকে ঘিরে। যাকে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে আমাদের মত তৃতীয় শ্রেণীর বন্ধুদের কারনে। বন্ধুবান্ধবের জোরাজুরিতে সিগারেটের দুই টান মেরে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়া, জীবনে কোনোদিন মদের বোতল স্পর্শ না করা কিংবা সর্বদা ঝগড়া বিভেদ থেকে দূরে দূরে থাকা আমাদের এই বন্ধুটিকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সন্ত্রাসী তকমা নিয়ে। ধরা যাক তার নাম নয়ন। এক বন্ধুর গায়ে পড়ে ডেকে আনা দ্বন্দ্বের ফলে সংঘর্ষ। ঝরল অনেক রক্ত। তবে বলী কেবল একজনই। লড়াই বিভেদ পছন্দ না করলেও তুমুল সংঘর্ষের মধ্যেও যে পিছু হটেনি শুধুমাত্র বন্ধুত্বের কারনে। পালাবার সুযোগ থাকার পরও নির্বোধটি পালায়নি আমাদের কথা চিন্তা করে। আর আজ আমরা মাসে এক দুই দিন তার কথা মনে করি। কেউ তাকে স্মরণ করে দু একটা কথা বললে বাকীরা চুপ করে বসে থাকি। অপেক্ষা করি অন্যকেউ একজন হয়ত প্রসংগ পাল্টাবে! সেদিন জয়ও ছিল। সেও পালায়নি বন্ধুত্বের কারনে। একজন নিহত, কয়েকজন আহত আর বাকীরা কারাগারে। আহা! কি দিনই ছিল না সেদিন!
কারাগার বলতে মনে হলো আমি ছাত্রদল করি! একটি সরল কনফেশন। অনেকদিন আগে কনফেশন পেইজে নাহোল ভাই, মাহবুব ভাই, মোশাররফ ভাইকে উদ্দেশ্য করে আমার বিশ্বাসঘাতকতার কথা লিখেও ছিলাম। কিন্তু এডমিন সাহেব ছাপেন নাই। তিনি ব্যস্ত সিজেল আই লাভ ইউ অপু আই লাভ ইউ নিয়ে। ছাত্রদল করার কারন যখন কারাগারে ছিলাম তখন আমাদের কোনো আশ্রয় ছিল না। এমন অবস্থা ছিল যে দুই তিন বছরের মাঝে আলোর মুখ দেখব কিনা সন্দেহ ছিল। বিরোধীদের পক্ষ নিয়েছিলেন লীগের একজন এমপি, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান আর ডজন খানেক প্রভাবশালী নেতা। আমাদের এই বিপদে উদ্ধার কর্তা হয়ে আসেন একজন ছাত্রদল নেতা। তার লবিং এ আমরা কারাগারকে বিদায় বলে আমাদের চেনা পৃথিবীতে ফিরে আসি। যদিও আমাদের মুক্ত করার পেছনে তার স্বার্থ জড়িত। কিন্তু আমি কিংবা আমরা যতই নিকৃষ্ট হই না কেন অকৃতজ্ঞ নই। তাই বাধ্য হয়ে ছাত্রদল করি। শেখ মুজিবকে জাতির পিতা মানা আমি আজ জিয়ার সৈনিক বলে স্লোগান দেই। এখানে আদর্শ, নীতি বলে কিছু নাই। নেতার পোলাপাইন দরকার, সার্ভিস দরকার। যেটা আমরা দিচ্ছি। অবশ্য রাজনীতিতে আদর্শ বলে কোনোদিনই কিছু ছিল না। আদর্শ থাকে ব্লগে, ফেসবুকে।
মাতালকাব্যঃ সেবার আসর বসেছিল এক বন্ধুর খালি বাসায়। মাতাল অবস্থায় সবাই যখন ব্যস্ত নারী জাতির চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারে। তখন কাগজ কলম হাতে নিয়ে বসলাম কবিতা লিখতে। কাঁপা কাঁপা হাতে লিখা দূর্বল এই কবিতাটিকে (জানিনা এটাকে কবিতা ক্যাটাগরীতে ফেলা যায় কি না) কয়েকবার এডিট করার পর যা দাঁড়িয়েছে
...যেমন হারিয়ে যায় এক বালিকা, পেছনে ফেলে যায়
চোখ দিয়ে প্রকাশ করা এক জটিল অংক, বিষাদের জ্বরে
আক্রান্ত মানব অনভ্যস্ত ধূমপানে! আর দূর্বল অঙ্কে,
জানে সে! অঙ্কে লুকায়িত বালিকার অস্তিত্ব।
পৃথিবীর সর্বশেষ সিগারেট হাতে নিয়ে
পেছনের বেঞ্চের সেই ছাত্রটি আজো আটকে আছে সেই অঙ্কে,
তাকে শিখতে হবে ধূমপান, খুঁজতে হবে সমাধান।
একদিকে সিগারেট অন্যদিকে অঙ্ক, মানুষটি হাঁটছে সমান্তরালে,
শুধুমাত্র এক বালিকার জন্যে!
সেদিন এই কবিতা ছাড়াও আরো অনেক কিছু লিখেছি। এক বালিকার নাম কতবার যে লিখেছি হিসাব নেই। যে বালিকার পেছনে ঘুরছি তিন বছর থেকে, সেই বালিকার নাম ভূল বানানে লিখেছি টোটাল চারবার। আরো লিখেছি 'কালাম পঞ্চাশ' যদিও এই ইহজগতে আমি কালাম নামে কেউকে চিনি না। কেনই বা কালাম লিখলাম আর কেনই বা পঞ্চাশ লিখলাম কিছুই মনে নাই।
২০১৭: জীবনে কতবার ভাবের জগতে প্রবেশ করেছি আর কত কিছুই না ভেবেছি। নেশা কেটে যাবার পর কিছুই মনে থাকেনা। ব্যতিক্রম একবার। সেদিন ভাবের একদম উচ্চস্তরে পৌছে গিয়েছিলাম। পৌছার পর মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম 'আমি কত সালে মারা যাব? নিজেই নিজেকে উত্তর দিয়েছিলাম ২০১৭ সালে! মাতাল অবস্থায় করা অসংখ্য কর্মকান্ড, সৃষ্টিতত্ত নিয়ে আলোচনা করা অসংখ্য থিওরীর এক সুতোও আমার মনে নেই। কিন্তু ২০১৭ সালে মারা যাব এটি আমার বুকে গেঁথে গেছে। মাতালের যুক্তিহীন প্রশ্ন, যুক্তিহীন উত্তর বলেও নিজেকে প্রবোধ দিতে পারি নি। কেন যে ২০১৭ সালটা মনের ভেতর গেঁথে আছে নিজেই জানি না!
উৎসর্গঃ যে দুজনকে এই পোষ্টটি উৎসর্গ করেছি তার একজন হলো নয়ন। বন্ধুরে! তুই ভূল মানুষের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিস। আমরা তোর ভালোবাসার, তোর বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে পারি নাই রে বন্ধু! পারি নাই। দ্বিতীয়জন হলো জয়। প্রিয় জয়! তুই আজ নিজের ভূল বুঝতে পেরেছিস। আমাদের মত খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করে আজ তুই ব্যস্ত ক্যারিয়ার গড়তে। গড়তে থাক্! আমরা তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি। একজন কবরে, একজন হাটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, আরেকজন ব্যস্ত ক্যারিয়ার নিয়ে। আরো দু একজন লুকিয়ে লুকিয়ে চেষ্টা করছে এই হতচ্ছাড়া দেশটাকে বিদায় বলার। শালার আমরা বাকীরা যেখানে পড়েছিলাম আজো সেখানেই পড়ে আছি। লেখাপড়া, ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তার জায়গা আজ দখল করেছে পলিটিক্স! শুধুই পলিটিক্স আর পলিটিক্স!
------------------------ ---------------------
এখনো মাঝে মাঝে আসর বসে। বিষাদের চাদর জড়িয়ে আমরা মাতালরা গলা ছেড়ে গান গাই। সেই গানের পিছনে থাকে ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে প্রত্যাখাত হওয়ার গল্প! বিধাতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার গল্প! এক বন্ধুকে হারানোর গল্প! বিষাদের সাথে সহবাসে মত্ত ঐসব মাতালদের হৈ হুল্লোড়ের মাঝে এক মাতাল শুয়ে থাকে ২০১৭ সালের আতংক নিয়ে। পৃথিবীর সবথেকে বড় ভয়ের নাম হলো মৃত্যুভয়। মাতালটি হয়ত সাহস পেত যদি কোনো এক বালিকা এসে তার হাত ধরত। কোমল গলায় বলত তুমি এত ভীতু কেন?? ঠিক করেছি জীবনের যে অল্পকটা দিন বাকী আছে, সেই দিনগুলি তোমার সাথে কাটাব! মাতালটি হয়ত সাহস পেত। কারন মৃত্যু হচ্ছে একজন মানুষের পাওয়া সর্বশেষ দুঃসংবাদ। বালিকা পাশে থাকলে মাতালটি সৌন্দর্য্য খুঁজে পেত সেই দুঃসংবাদেও!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪১