খুব পরিচিত একটা ভাবনা। আমার
চারপাশে হাজারো মানুষ এই
ভাবনা নিয়ে আমাকে বলে, "আমি
মরতে চাই। আমার জীবন অর্থহীন।
আমার বেঁচে থেকে কোন লাভ
নেই। আমার জন্য কোন ভবিষ্যৎ নেই।
আমার কেউ নেই।"
আমি বলি, "হ্যা মরে যাও,
অনেকদিন তো বাঁচা হয়েছে,
এবার যেহেতু মরতে চাইছই, মরে
যাও। তবে মরার আগে একবার বলে
যাও কেন মরতে চাইছ?"
তারা বলে তাদের কষ্টের কথা। খুব
ধরাবাঁধা কিছু কারন তাদের মৃত্যুর
ইচ্ছার পেছনে কাজ করে। প্রেমে
ব্যর্থতা, পড়াশোনায় ভাল ফল না
করতে পারা, ভাল জায়গায় ভর্তি
হতে না পারা, সংসারে
অশান্তি, বেকারত্ব, মানসিক
যন্ত্রণা অনেক সময় শুধু বেঁচে
থাকার ক্লান্তিতেও তারা মরতে
চায়।
যারা মরতে চাইছ তাদের সবাইকে
একসাথে কিছু কথা আজকে বলি,
শোন, মানতে ইচ্ছা করলে মানো,
না মানতে ইচ্ছা না করলে
মেনোনাঃ
"জানালা দিয়ে বাইরে তাকাও।
অসংখ্য মানুষ খেতে পায় না,
অসংখ্য শিশু খালি গায়ে
সারাদিন রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
ওদের জায়গায় চিন্তা কর
নিজেকে। কেমন লাগে তোমার?
কেমন হত আজ যদি থালা হাতে
তোমাকে ভিক্ষা করতে হত?
পারতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে
বলতে, "আমি ভিখারি, ভিক্ষা
করছি"। পারতে??
প্রেমিকা বা স্ত্রী কষ্ট দিয়েছে
বলে রাতের বেলা বালিশ
ভিজিয়ে কেঁদে যাওয়ার
বিলাসিতা তুমি করতে পারো।
এবার আরও একটু দূরে যাই চল। চিন্তা
কর কমলাপুর রেলষ্টেশনে শুয়ে
থাকা মেয়েগুলোর কথা। ঘরহীন
আশ্রয়হীন মানুষদের কথা। রাতের
অন্ধকারে ওদের ধর্ষণ করে চলে যায়
দুর্বৃত্তের দল। ওদের কান্নার
আওয়াজ অন্ধকারেই শুরু হয়ে শেষ
হয়ে যায়। আমাদের কানে পৌছয়
না। ভাবতে পারো ওদের জায়গায়
নিজেকে?? চিন্তা করতে
পারো??
দেহব্যবসা করে যারা, যাদের
আমরা বেশ্যা বলে ডাকি, জানো
তুমি ওরাও যে ধর্ষণ হয়? পাঁচ সাতজন
মিলে বিনাপয়সায় ওদের কে
যেমনভাবে ইচ্ছা যা ইচ্ছা করে
ফেলে দেয়া হয়। তারপরও ওরা
থেমে থাকেনা। জীবন থেমে
থাকতে দেয়না তাদের। কাজ করে
খেতে হয়। আবারও কাজে নামতে
হয়। কি মনে কর, বেশ্যা বলে ওদের
কি কোন অধিকার নেই ধর্ষণ এর
বিরুদ্ধে কথা বলার? আছে, তবে তা
শুধু আইনের পুস্তকে, বাস্তব জীবনে
নয়। এই সমাজ তাদের সেই অধিকার
দেয়নি। পারবে তুমি ওদের
জায়গায় নিজেকে বসাতে?
পারবে চিন্তা করতে নিজেকে
ওদের মত সংগ্রামী ভাবতে?
যে ছেলেটা বা মেয়েটা একটা
বাহ্যিকভাবে এক কিন্তু ভিতরে
আরেক অর্থাৎ যাদের আমরা
"হিজড়া" বলি একটু ভাব তো ওদের
কথা। জন্মের আগে কে কোন লিঙ্গ
নিয়ে জন্মাবে তার উপর কোন
নিয়ন্ত্রন কি আমাদের আছে? নেই।
তারপরও সারাজীবন শুধু অপমান,
অপদস্থ হয়ে ওদের জীবন কাটাতে
হয়। মানুষ হয়ে জন্মাবার জন্য
সামান্যতম সম্মানের আশা ওরা
করা দূরে থাক, মানুষ হিসাবে
ওদের আমরা ভাবতে অস্বীকার
করি, ওদের প্রতি আমাদের আচরণ
অস্বীকার করে যে ওরাও মানুষ। আজ
যদি তুমি এমন হতে তখন কি করতে?
সহ্য করতে পারতে এত অপমান? বলা
যায় না, এই বার জন্মেছ সমাজ
স্বীকৃত লিঙ্গের পরিচয়ে, পরের
জন্মে এমন তো নাও হতে পারে
তাই না? ভাবতে পারো কি করতে
তখন তুমি?
জন্মেছ যখন একদিন মরবেই আর যে
মুহূর্তে মরবে তার সাত দিন পর ঠিক
কোন মুহূর্তে মারা গিয়েছিলে
ঠিক ঘড়ির কোন সেকেন্ডে তা
মনে করে বলতে পারবে এমন মানুষ
তোমার জীবনে কয়জন আছে একটু
ভাব। তার জন্য বেঁচে থাকো।
তোমার যদি এমন কেউ থেকে
থাকে তবে তোমার কোন অধিকার
নেই নিজের জীবনের সাথে
সাথে তার জীবনটাকেও নষ্ট করে
যাবার। কোন অধিকার নেই।
আর এসব কিছু ভাবার পরও তোমার
যদি সত্যি মনে হয় তুমি এদের
চেয়েও খারাপ আছ, তোমার
আসলেই বেঁচে থাকার অর্থ নেই
তবে হ্যা আমিও বলছি তোমার
বেঁচে থাকার অর্থ নেই। তুমি মরে
যাও। কারন তুমি আসলেই মৃত একজন
মানুষ। শুধু জলজ্যান্ত একটা শরীর
থাকলেই একটা মানুষ বেঁচে থাকে
না। তার মানবতার মৃত্যু যেদিন হয়,
সেদিন থেকেই সে মৃত। তুমিও তাই
মৃত। মরে যাও তুমি, মরে যাও।"