বাংলাদেশ এর সর্ববৃহৎ তাপবিদুৎ কেন্দ্র ঘোড়াশাল পাওয়ার স্টেশন এ বেশ কিছুদিন কাজ করেছি অপারেশন আর অটো-কন্ট্রোল ডিভিশানে আর আমার নিজেরও ছোট খাটো পাওয়ার এর একটা কোম্পনি আছে। কাজের স্বার্থেই আমার বাংলাদেশে পাওয়ার জেনারেশন সেক্টর, এর মানুষজন আর সামগ্রিক বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আছে। তাই চিন্তা করলাম রামপাল কোল পাওয়ার প্লান্ট সম্পর্কে আসলে কিছু ইনফরমেশন শেয়ার করা উচিত, নূন্যতম ভাবে আমার নিজস্য অবসারভেশন।
যাই হোক, চ্যানেল আই এর একটা ব্লগ পড়লাম কয়েকদিন আগে, সারমর্ম হলো রামপাল এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবন এর কোনো ক্ষতি হবে নাহ, আরো অনেকেই হয়তো একই ধরণের মতামত ধারণ করেন। গত কয়েকদিন কয়েকটি লেখা বেশ আলোড়ন তুললো, সবাই লেখা শেয়ার করা শুরু করলো যার মধ্যে একজন প্রতি-মন্ত্রী পর্যন্ত আছেন। পড়লাম লেখাটা, ২ মিনিট লাগলো, আর ওনার যুক্তিও হলো ২ টা, যার একটাও আমার সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছে নাহ, দেখুন আপনি কোনো অর্থ বের করতে পারেন কিনা -
- প্লান্ট টা হবে ১৪ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবন থেকে আর বাতাসে বর্তমান সালফার এর পরিমান রামপাল এ খুবই কম এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে নাকি সালফার এর নির্গমন প্রায় ০ এর কাছে চলে আসবে!
- পরের যুক্তি হলো সারা দুনিয়ার সবাই কোল পাওয়ার প্লান্ট করছে কাজেই আমাদেরও করতে হবে।
যাই হোক, আসল কথা কি জানেন, রামপাল কোল পাওয়ার প্লান্ট সম্পর্কে বলতে হলে আমাদের প্রথমে সত্যিকার অর্থে এর পরিবেশ এর উপর প্রভাব, অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনা এবং এর রাজনৈতিক সম্পর্ক এক সাথে দেখতে হবে, প্রত্যেকটা বিষয় এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমি অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এখানে করতে চাচ্ছিনা সংগত কারণেই!
আসুন পরিবেশের উপর প্রভাবটা দেখি। রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটা পাওয়ার স্টেশন হবে, মানে হলো প্রতি বছর নির্গমন হবে বীভৎস কিছু গ্যাস, ধাতু এবং এর পরিমান কি হবে তা Union of concerned Scientists, a USA-based group originally founded by MIT Scienties and students এর সাধারণ কোল পাওয়ার প্লান্ট এর এমিশন স্টাডি অনুসারে (১,২)
- ৮ মিলিয়ন টন CO2. তখন কি আমরা বলবো তাপমাত্রা বরে কোথা থেকে?
- ১৪০০০ টন সালফার ডাইঅক্সাইড নির্গমন হবে যখন সফিস্টিকেটেড ওয়ে তে এক্সহাউস্ট গ্যাস কন্ট্রোল করা হয়। আর এই সালফার হলো যেখানে সবচেয়ে বেশি কোল পাওয়ার প্লান্ট আছে, আমেরিকা আর চীন সেখানকার জনগণ এর স্বাস্থর অন্যতম ক্ষতির একটা কারণ। এর ফলে অনেক সময় অ্যাসিড বৃষ্টিও হয় যা ফসলি জমি, গাছপালা, গবাদিপশুর স্বাস্থর জন্যও খুবই ক্ষতিকর।
- ৭০০০ টন নাইট্রোজেন অক্সাইড। এই গ্যাস মানুষের শাসকষ্ট রোগ এর অন্যতম কারণ।
- ৪০০ পাউনড মার্কারি। এই ধাতু কি পরিমান ভয়ঙ্কর জানেন, বলা হয় আপনি যদি এক চা চামুচের ৭০ ভাগের ১ ভাগ মার্কারি ২৫ একরের একটা লেক এ ছেড়ে দেন তাহলে এর মাছ আর খেতে পারবেন নাহ, মার্কারি এতটা ক্ষতিকর মানুষের শরীরের জন্য। আমি ২০১১ এর দিকে অফিস এর কাজে কানাডা এর টরোন্টো শহরের মিসিসাউগা নামক একটা বিসনেস এরিয়া তে ছিলাম। সেখানে আমার এক ইজিপ্টিয়ান বন্ধু মাছ ধরতে নিয়ে যেত এবং আমরা যদিও নিয়মিত মাছ ধরতাম কিন্তু আবার ছেড়ে দিতে হতো কারণ গভর্নমেন্টের ওয়েবসাইটে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া থাকত মার্কারির পরিমানের এবং নিষেধ করা থাকতো নদীর মাছ নাখাওআর জন্য।
- এর সাথে আরো হিসাব করতে হবে লেড, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোকার্বোন্স এবং অন্নান্য ভারী ক্ষতিকর ধাতুর পরিমান।
আপনি কি জানেন এই লিস্ট এখনো শেষ হয়নি। পশুর নদী থেকে পানি নিয়ে বয়লার এ স্টিম বানিয়ে টারবাইন ব্লেড এ ছাড়া হবে ফলে টারবাইন ব্লেড নিৰ্দিষ্ট প্রেসার ও তাপে ঘুরবে তখন জেনেরেটরের রোটর ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স কেটে বিদ্যুৎএ রূপ নিবে। রামপাল এর ১৩২০ মেগাওয়াট এর জন্য নূন্যতম ৩০০ বিলিয়ন গ্যালন পানি পশুর যদি থেকে নিয়ে আবার পশুর নদীতেই ছাড়তে হবে। যদিও কুলিং টাওয়ার এর মাধ্যমে পানি ঠান্ডা করা হবে তবুও এই পানি নূন্যতম ২৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বেশি গরম থাকবে নদীর পানি থেকে, যার ফলে নদীর মধ্যে যেসব প্রাণী ও মাছ থাকবে তাদের হার্ট রেট বেড়ে যাবে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখোমুখি হবে।
আজকে দেখলাম প্রথম আলোর মাধ্যমে BIFPC (Bangladesh India Friendship Power Company) বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, অসংখ ধন্যবাদ তাদেরকে কিন্তু আমরা ডিটেল উত্তর আশা করছি। আমরা চাই উপরের প্রত্যেকটা পয়েন্ট এর গ্যাস লেভেল এর একটা এস্টিমেট দেখতে।
সবাই বলছে আমরা যারা এই রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান নিয়ে বিরোধিতা করছি তারা নাহ জেনে বুঝে করছি। একটা সাধারণ উদাহরণ দেই - মিয়ানমার এর জন্ম সত্যিকার অর্থে সেইদিন হলো আর সেখানে এখন একটা একতালা অথবা দুইতলা উড়াল সড়ক শেষ হয় ১ বছরে। আর আমি মালিবাগ এর বাসিন্দা, বাকিটা কি বলা লাঘবে? কতবার ভাঙা হলো, কতবার গর্ত খোঁড়া হলো, কি নিদারুন কষ্ট ভ্যোগ করছে পৃথিবীর মধ্যে ওয়ান অফ the ঘনবসতি পূর্ণ এলাকাটি। বহু মানুষ শাসকষ্ট রোগ এ ভুগছে এই এলাকায়, বাসা বাড়ি থাকার অনোপযোগী হয়ে ধুলোবালির আস্তানা হয়ে যাচ্ছে, কোনো প্রকার বিকারি নাই কর্তৃপক্ষের। এসবই ভয়ের বিষয়, কারণ আমরা জানি কতটুকু আশা করা যুক্তিযুক্ত।
সব কথার শেষ কথা হলো, আমরা এমন একটা দেশের মানুষ যারা দুবেলা ঠিকমতো খেতে পারিনা এবং সম্বল বলতে ওই এক চিলতে ধানি জমি আর বসতভিটা। এগুলোও আমরা বিসর্জন দিতে পারে দেশের উন্নয়ন এর স্বার্থে পদ্মা ব্রিজ হবে বলে। কোল পাওয়ার প্ল্যানট করবেন করেন, সাতান্ন হাজার বর্গ মাইলের মর্ধে যেখানে ইচ্ছা করেন, কিন্তু ওই সুন্দরবন এর নদীর মর্ধে কেন করবেন। বন্ধ করেন, আমাদের কথাও মাঝে মর্ধে একটু শুনেন।
১. Click This Link
২. Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৫