somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসতেও পারেন, কাঁদতেও পারেন — সিদ্ধান্ত আপনার।

২৪ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কে জিতল, কে হারল — প্রশ্ন perception-এর

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মানেই “ধারণা”র খেলা। আপনি যুদ্ধ হারালেও জিতবেন, যদি বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ মনে করে আপনি জিতেছেন।
ভাগ্যক্রমে, এখন মনে হচ্ছে দুই সপ্তাহের এই যুদ্ধ শেষের পথে। উপর থেকে যতটা বিশৃঙ্খল মনে হয়েছে, ভিতরে ছিল সুপরিকল্পিত চালের খেলা যেখানে সবাই কিছু না কিছু জিতেছে, আর কিছু না কিছু হারিয়েছে।

ইরান
ইরানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশাল, পরমাণু অবকাঠামো গুঁড়িয়ে গেছে, আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংসপ্রাপ্ত, সামরিক ও বেসামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। শীর্ষ নেতারা নিহত। এমনকি কারাগারগুলোও আক্রমণের শিকার ফলে অপরাধীরা রাস্তায়, পুলিশ ব্যস্ত।
“ইরানে হামলা করো না, খেসারত ভয়ঙ্কর” সেই অদৃশ্য লাল দাগটিও আর নেই।
ইরান অতীতে হামলার আগে কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্রকে তথ্য দিত। এবার ট্রাম্প সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে দেয়, ফলে ইরানের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ সমর্থনে ধাক্কা লাগে।
তবুও, তারা বিশ্বব্যাপী একটা সহানুভূতি পায়। যেসব রাষ্ট্র ইরানের কড়া সমালোচক ছিল, তারাও এখন অনেক নরম। ভেতরের বিভক্ত জনগণও ক্ষণিকের জন্য ঐক্যবদ্ধ। তারা বিশ্বের সামনে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি ও প্রযুক্তির সক্ষমতা দেখিয়েছে। তারা তাদের ৪৫০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হারায়নি, যা অত্যন্ত দামী ও কৌশলগত।

ইসরায়েল
গাজা যুদ্ধের পর ইসরায়েলের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক সময় বিশ্বের সেরা বলা হতো তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এবার সেই ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।
এরপর রয়েছে জনগন সমস্যা, অধিকাংশ নাগরিক দ্বৈত নাগরিকত্বধারী, শুধু রুশভাষীরা কিছুটা স্থিতিশীল। জনমনে ভীতি তৈরি হয়েছে, সরকারকে আবারও নিরাপত্তার বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।
তবুও, ইসরায়েলের মূল কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ হয়েছে ফিলিস্তিনে নিয়ন্ত্রণ, আরব অঞ্চলজুড়ে আকাশ দখল: সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইরাক, ইরান, ইয়েমেন সব জায়গায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা।
আর তারা দেখিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের সরকারকে ১০০% সমর্থন করে।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র তার নৈতিক অবস্থান থেকে কিছুটা পড়ে গেছে। এই মুহূর্তে, যখন আরেকটি পরাশক্তি (চীন) উঠে আসছে, এটা ভালো সংকেত নয়।
কিন্তু তারা আবারও বিশ্বকে দেখিয়েছে ভয় পাওয়ার মতো শক্তি এখনো তারাই। তারা যা চায়, যেভাবে চায়, সেটাই করতে পারে এবং করেও।
ট্রাম্প বেশ কিছু কৌশলগত চাল খেলেন:
– নিজেকে “শান্তির দূত” হিসেবে তুলে ধরেন (ভারত-পাকিস্তান, ইসরায়েল-ইরান, রাশিয়া-ইউক্রেন)
– ইরান যখন হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকি দেয়, তখন চীনের কাছে সাহায্য চান
– রাশিয়ার কথা উল্লেখই করেন না যেন তারা কেউই না
– সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরানকে একপ্রকার উন্মোচিত করে দেন

রাশিয়া
রাশিয়ার ভাবমূর্তি দুর্বল ও সুবিধাবাদী হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
ইরান রাশিয়ার পাশে ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের সময়, এবার রাশিয়া চুপ।
পুতিন প্রথমে বলেন, ইসরায়েলে রুশভাষী ইহুদি রয়েছে তাই তাদের বিষয়েও ভাবতে হবে।
শেষ দিনে গিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন রাশিয়া ইরানের পাশে?
ফলাফল? নেতিবাচক।

চীন
চীন ছিল নিরব দর্শক।
যেভাবে তারা ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ভূমিকা রেখেছিল, এবার তা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে বাধা দিতে চীনকে অনুরোধ করে, চীনকে একটি শান্তিপূর্ণ, ব্যবসায়িক ভাবমূর্তির দিকে ঠেলে দেয়।
চীনও সম্ভবত ঠিক সেটাই চায়| এখন তারা নিজেদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সীমান্তে মনোযোগী।

ভারত
এই যুদ্ধে ভারতের নাম উঠে আসে শুরুতেই।
গুজব ছড়ায়, মোসাদের হয়ে কাজ করা ভারতীয় নাগরিকদের সহায়তায় ইরানে হামলা হয়। ৩৭ জন ভারতীয় আটক হয়, কিছুজন নাকি ফাঁসি পায়। সত্য-মিথ্যা যাচাই কঠিন, কিন্তু ধাক্কা লেগে গেছে।
সোনিয়া গান্ধীর খোলা চিঠির পর কংগ্রেস সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
মোদি সরকারের জন্য ভাবমূর্তির ক্ষতি।

বাংলাদেশ
এই যুদ্ধ বাংলাদেশকে স্পষ্ট একটা বার্তা দেয়, শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি গঠন করুন।
আর প্রতিরোধ গড়ুন।
সীমিত বাজেটের মধ্যেও সম্ভব: আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন প্রযুক্তি, মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র — ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জে বিনিয়োগ করুন।

শেষ কথা:
এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় লাভবান? বিশ্ব সামরিক শিল্প।
এই যুদ্ধ স্পষ্ট করে দিয়েছে; কে কোথায় দাঁড়িয়ে, কী দুর্বলতা কোথায়।
বড় বা ছোট, ধনী বা গরিব; সবার জন্য বার্তা একটাই:
শান্তির পথ শক্তিশালী হওয়ার মধ্যেই নিহিত।
চাইলে শান্তি পাওয়া যায় না, তার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×