গত আগস্টের ১৬ তারিখে মিরপুরের একটি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। উত্তরের মেয়র বলেছে অগ্নিকাণ্ড লাগলেও কোন হতাহত হয়নি। উনার জন্য ব্যাপারটা কিছুটা স্বস্তির। মানুষ মারা গেলে উনার জন্য ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করা কঠিন হয়ে যেত, উনি অনেক প্রেসারে থাকতেন।
যাইহোক এই আগুন লাগার কারণে পঞ্চাশ হাজারের মতো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এরা প্রথম দু'একদিন রাস্তায় ছিল এরপর এদেরকে আশেপাশের স্কুলগুলিতে থাকার কিছুটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে। এতগুলো মানুষ নিজের থাকার জায়গাটুকু হারিয়ে ফেলেছে, এদের প্রতি সমবেদনা এবং তাদের উদ্দেশ্য করে কোন কিছু কি আমাদের রাষ্ট্রপতি বলেছেন? তাদেরকে কি আশ্বস্ত করেছেন তোমাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হবে, নাকি উনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন অনুষ্ঠানে উনার এবং উনার স্ত্রীর ডায়াবেটিসের গল্প বলে উপস্থিত দর্শকদের হাঁসাচ্ছেন!
যে মানুষগুলো তাদের সর্বোচ্চ হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঘুমোচ্ছে, তাদের কথা চিন্তা করে উনার ঘুম আসার কথা না। যে মানুষগুলো বাস্তুহীন হয়েছে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত উনার স্থির থাকার কথা না। আজকে ইনডিপেন্ডেট চ্যানেলে এই পোড়া বস্তি নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখলাম। সেখানে বসবাসরত মানুষজন এখনো পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির আবর্জনায় হাতরে বেড়াচ্ছে কোন কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা দেখার জন্য। কয়েকজন মাকে দেখলাম তাদের দুই তিন বছরের বাচ্চাদের নিয়ে ময়লার পাশে বসে আছে একেবারে ভাবলেশহীনভাবে। এই ছবিগুলি খুবই বেদনাদায়ক। আমাদের রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত এসব ছবি, প্রতিবেদন পৌঁছে কিনা কে জানে? যদি পৌঁছে থাকে তাহলে উনি এগুলি নিয়ে মাথা ঘামায় না কেনো? নাকি এই বয়সে এসব ঝামেলা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাচ্ছেন না উনি!
সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে যে ক্যাম্প করেছে তারমধ্যে অনেক আধুনিক সুযোগ সুবিধা আছে। প্রতিটি রোহিঙ্গাদের ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার আছে, সৌর বিদ্যুৎ আছে, ইউনিলিভারের প্রসাধনী আছে। অথচ নিজের দেশের লোকগুলির থাকার জায়গা কবে হবে সেটাই এরা জানেনা। দায়িত্ববান লোকজনদের কাছ থেকেও কোন আশার বাণী শুনছে না!
তবে এদের বস্তি এবং থাকার জায়গা নিয়ে উত্তরের মেয়র আতিকুল হক সেদিন একটি কথা বলেছেন। উনি কথা বলার আগে উনার পাশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন সহকারী পরিচালক বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিল "এটি একটি আবদ্ধ জায়গা, ঢোকার পথ একটা। আপনারা জানেন যে বস্তি সাধারণত দাহ্য জিনিস দিয়ে তৈরি হয়। তাই আগুন খুব দ্রুত ছড়ায়। এখানে গ্যাসের লাইন নেয়া হয়েছিলো প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে। যখন আগুন লাগে তখন প্লাস্টিক পাইপ গলে গিয়ে গ্যাস লিক হয়ে এই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।”
উনি কথা বলার পর মেয়র সাহেব বস্তিবাসীদের থাকার ব্যাপারে বলেছেন, "তারাও এই মুহূর্তে বলছে তারা কই থাকবে। আমরা আপাতত কাছের স্কুলগুলোতে থাকার বন্দোবস্ত করে দিবো। ওখানে যারা ছিল তারা কিন্তু বলেছে তারা ভাড়া ছিল। যারা বস্তির মালিক তারা বলেছে তারা ঘরগুলো আবার ঠিক করে দেবে। কোন ধরনের সাহায্য লাগলে আমরা করবো।"
এখন আপনি বলুন যারা বস্তির মালিক তারা যদি বস্তিগুলো আবার করে দেয় তাহলে তারা কি সেগুলো পরিকল্পিতভাবে করবে? দাহ্য পদার্থ, প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে গ্যাস লাইন, ঢোকার এবং বের হওয়ার একাধিক রাস্তা এগুলো কি তারা সঠিকভাবে করবে?
রাষ্ট্রপতি কিছু না বলার কারনে মেয়র সাহেব বাচ্চাদের মত কিছু কথা বলে চলে গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৭