এই ভাইরাসটির কথা যখন বিশ্ববাসী জানতে পারে, তখন এটাকে অনেকেই বায়োলজিক্যাল উইপন কিংবা জীবাণু অস্ত্র বলে মতামত দিয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো কয়েকদিন আগেও বলে আসছিল এটি একটি চাইনিজ ভাইরাস। আবার চীনারা বলে আসছিল এটি আমেরিকান সৈন্যদের দ্বারা ছড়ানো একটি জীবাণু অস্ত্র। এদিকে রাশিয়ার কিছু সংবাদ মাধ্যম এটাকে ব্রিটেনের কারসাজি বলার চেষ্টা করেছে। ব্লগারদের মাঝে আমাদের নুরু ভাই আবার এটাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবাণু অস্ত্র ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি করছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম চীনের উহানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় জি জুয়াং নামের এক ব্যক্তি। এরপর একজন চাইনিজ ডাক্তার(লি ওয়েনলিয়াং) সর্বপ্রথম এই খবর ৩০ ডিসেম্বর চাইনিজ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে এবং বিশ্ববাসী এটা সম্পর্কে তখন থেকে জানতে শুরু করে। চাইনিজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই ভদ্রলোককে ডেকে ওয়ার্নিং দিয়ে দেয় এমন গুজব না ছড়াতে। এই ডাক্তার পরে করোনা ভাইরাসের আক্রমণেই মারা যায়।
৩১ডিসেম্বর চাইনিজ অথরিটি এই ব্যাপারটি WHO'কে জানায় তবে সাথেসাথে এইও বলে এই ভাইরাসটি যে মানুষ থেকে মানুষে ছাড়ায় তার কোন শক্ত এভিডেন্স নেই। WHO মিথ্যুক চাইনিজদের এই কথা বিশ্বাস করে নিয়েছিল। ২০০২/০৩ সালের দিকেও যখন সার্স ভাইরাসের আবির্ভাব হয় তখনও চাইনিজরা বলেছিল এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল সার্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। গর্দভ WHO যদি চাইনিজ মিথ্যুকদের একথা বিশ্বাস না করে, সাথে সাথে এদের কথার সত্যতা যাচাই করতো, তাহলে বিশ্বব্যাপী ছড়ানোর হার আরো অনেক কমিয়ে আনা যেত।
জানুয়ারি মাসের দুই তারিখে চাইনিজ বায়োলজিস্টারা এই ভাইরাসটির জেনেটিক কোড ম্যাপিং করে ফেলে কিন্ত সেটা ৯ জানুয়ারির আগে প্রকাশ করেনি। ৭ জানুয়ারি শি ঝিংপিং প্রথম মিডিয়াতে এই বিষয়ে কথা বলে। ১৯ জানুয়ারি এই প্রথম বেইজিং উহানে এপিডমিক বিশেষজ্ঞদের পাঠায়। ২১ জানুয়ারি যখন আমেরিকায় প্রথম করোনা রুগী সনাক্ত হয় তখনই চায়না সংবাদপত্র গুলো রোগটির এপিডমিক হওয়ার কথা জানায়। ২৩ জানুয়ারি উহানসহ আরো তিনটি শহর লোকডাউন করা হয়। ২৪ জানুয়ারি লকডাউন এর সময়কে বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং প্রায় ৪কোটি মানুষকে গৃহবন্ধী করে ফেলা হয়।
এই সময়ক্রমের ফ্রেমে ঘটনা গুলো দেখলে বুঝাই যায় চাইনিজ অথরিটি ব্যাপারটি লুকাতে চেয়েছিল। তারা ভেবেছিল এই ভাইরাসটি হয়তো ২০০২/০৩ এর সার্স ভাইরাসের মত হবে। কিন্তু এতো মারাত্মক হবে সেটা বুঝতে পারেনি। চাইনিজরা এই মারাত্মক ব্যাপারটি লুকানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই ভাইরাসটিকে তাদের নিজেদের জীবাণু অস্ত্র বলে মনে হচ্ছে না। ভাইরাসটি প্রাণীর দেহ থেকে মিউটেশন হয়ে মানব দেহকে উৎকৃষ্ট হোস্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এক পক্ষ যখন আরেকপক্ষকে দোষারোপ করছে তখন পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন একদল বিজ্ঞানী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যেখানে তারা বলেছেন, "জীবজন্তুর শরীর থেকেই এই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভয়,গুজব এবং ঘৃণা ছড়াবে যাতে এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহত হবে।"
তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী এই সমস্যাটি চাইনিজদের জন্য শাপেবর হবে। আগামীর পুঁজিবাদ অর্থনীতির একমাত্র নিয়ন্ত্রক হতে যাচ্ছে চীন। আজ উহান খুলে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের গণপরিবহন ও কলকারখানা সীমিত আকারে চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২৪