somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি থেকে যেসব আজো ভাবায় আমায়(৩)★★

০৮ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের গ্রামটি এমন একটি গ্রাম যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য সকল জায়গা থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি। দুই এক বাড়ি পরপর মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা দেখতে পাওয়া যায়। মানুষও দুই হাতে দান-খয়রাত করে এসব প্রতিষ্ঠানে। আজ থেকে ৪ বছর আগে আমাদের এলাকার অন্যতম দানবীর মানুষ জনাব ওদুদ সাহেবের বাসায় যাই। উনি আমাদের এলাকার এক মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে উনার সাথে দেখা করতে বলেন। মাদ্রাসার সভাপতি, প্রিন্সিপাল ও এলাকার আরো দুই-একজন সহ আমরা উনার সাথে দেখা করতে যাই। বাড়ি যাওয়ার পর দেখি উনি ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের সাথে করমর্দন করে উনার রুমে নিয়ে আসলেন। ঘরে উনি একাই থাকেন। আমরা আসবো হয়তো এই জন্য একজন লোক ডেকে এনে কিছু নাস্তা-পানির ব্যবস্থা করেছেন।
উনার রুমে নিয়ে গিয়েই উনি উনার কথা শুরু করলেন। সব কথাই মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দিকে তাকিয়ে বলছেন। উনি বলতে লাগলেন, দেখুন রহুল আমিন সাহেব(প্রিন্সিপাল) জীবনে অনেক সম্পদ করেছি। ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করেছি, সবাই দেশের বাহিরে থাকে। তাদের যে ইনকাম, আমার টাকা তাদের আর প্রয়োজন নেই। আমিও শেষ সময়ে এসেছি এত টাকা দিয়ে কি করবো। কাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম আমি মারা গেছি কিন্তু আমার টাকা পয়সা কোথায় আছে আমি কাউকে বলে যেতে পারিনি। সবাই এসে আমায় দাফন করে গেলো কিন্তু আমার ছেলেমেয়েদের দেখতে পাইনি। আপনাকে দেখতে পেলাম, আপনি আমার জানাজায় ইমামতি করছেন, আমার জন্য সবার কাছে মাপ চেয়েছেন।”
এসব বলে উনি উনার আলমারি থেকে চারটে চেক বই বের করলেন। চেকে আগে থেকেই লেখা ছিল শুধু আমাদের সামনে সিগেনাচার করলেন। চারটে চেক উনি প্রিন্সিপালের হাতে দিয়ে বললেন এখানে আমার জমানো ১কোটি ৪৩লাখ টাকা আপনাকে দিলাম। আপনার আর সভাপতির নামে একটা ওয়াকফাহ একাউন্ট খুলবেন ইসলামী ব্যাংকে। সব টাকা উঠিয়ে এনে ঐ একাউন্টে জমা রাখবেন। সেখান থেকে যা মুনাফা আসবে দুইটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার নাম বললেন তাদের যেনো সে অর্থ দেওয়া হয়। সবার মুখে আলহামদুলিল্লাহ্ উচ্চারিত হলো।
সবাই বের হয়ে গেলে আমি উনার কাছে এসে বললাম আমাদের স্কুলে ছাত্রীদের জন্য ভালো একটা এটেস্ট বাথরুমসহ কমনরুম নেই। মেয়েরা পাবলিক বাথরুমে যেতে সমস্যা হয়। আপনি যদি এটার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে স্কুলের ছাত্রীদের বেশ উপকার হতো। উনি আমার দিকে বিরক্তি সহকারে তাকিয়ে বললো এগুলো করার জন্য সরকারি টাকা আসে আমার টাকা আমি এসবে খরচ করতে চাইনা। আমি বলতে চাইছিইলাম আপনি যে দুই মাদ্রাসায় টাকা দিলেন সেগুলোও এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা আমাদের স্কুলও তাই কিন্তু উনার চাহনি দেখে বুঝতে পারলাম এটা বলে কাজ হবেনা। উনি যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে চলে গেছেন।

আমি যখন প্রাইমারি শেষ করে আমাদের হাই স্কুলে ভর্তি হই আমার সাথে ভর্তি হয় আমাদের পাশের বাড়ির রবিউল। বয়সে আমাদের থেকে দুই তিন বছর বড় হবে। বুঝাই যাচ্ছে প্রাইমারি শেষ করতে তার সময় লেগেছে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলে কোনো স্কুল ড্রেস ছিলো না, যার যা আছে তাই পড়ে আসতো। কিন্তু হাই স্কুলে ড্রেস ছিল, সাদা শার্ট কালো প্যান্ট। তবে প্যান্টের ব্যাপারে শিথিলতা ছিল, যেকোন কালারের প্যান্ট পড়লেই চলতো। আমাদের ক্লাসে প্রতিদিনই তিন চারজন স্কুল ড্রেস না পড়ে আসতো। স্কুল ড্রেসের জন্য আমাদের আকতার স্যার প্রতিদিনই ধরতো। যারা পড়ে আসতো না তাদের কানে ধরাতেন, বেত মারতেন কিংবা ক্লাস থেকে বের করে দিতেন।
তেমনই একদিন আকতার স্যার ড্রেস না পড়ে আসা সবাইকে দাঁড় করালেন। যথারীতি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন ড্রেস কেনো পড়ে আসেনি। যে যার মত কারন বলতে লাগলো, কারো ড্রেস ভিজে ছিল, কারো নতুন ড্রেস বানাতে দিসে, কেউ ভুলে গেছে পড়তে! শেষে রবিউলকে বললো তুই তো কোনোদিনই ড্রেস পড়ে আসস না, কারণ কি? আজ বল তোর সমস্যা কি? ড্রেস না পড়ে আসার কারণ সে কোনোদিন না বললেও সেদিন রবিউল আকতার স্যারের একেবারে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো “সকালে ভাত খেয়ে আসি কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেন না, আবার ড্রেস!”
আকতার স্যার সেদিন তাকে আর কিছু বলেননি, শুধু সেদিন না আর কোনোদিনই আকতার স্যার আমাদের ক্লাসে স্কুল ড্রেসের জন্য কাউকে শাস্তি দেননি। শুধু মুখে বলতেন যেন স্কুল ড্রেস পড়ে স্কুলে আসি।

কোনো এক দুপুর বেলায় আমি স্কুল থেকে বাড়ি এসে দেখতে পেলাম ঘরে আম্মা,বোন কেউ নেই। ভাত না খেয়েই বই খাতা রেখে আমাদের পুকুর ঘাটে যাই, সেখানেও কাউকে দেখতে পেলাম না। কি মনে করে আমার পুকুরে গোসল করতে ইচ্ছে হলো। আমি তখনো পুরোপুরি সাঁতার জানিনা। আমি জামা খুলে পুকুরে নেমে পড়লাম। ঘাটে একটা বাঁশ ছিল সেটা ধরে ধরে সাঁতার দিচ্ছিলাম। আমাদের পুকুর পাড়ে একটা আম গাছ ছিল, সেই গাছ থেকে একটা কাঁচা আম পড়লো। আমটি আমার থেকে হাত দশেক দূরে ভাসতে ছিল। আমি অনেক চেষ্টা করেও আমটি নিতে পারছিলাম না। একসময় যেতে যেতে আমটির প্রায় কাছেই চলে গেলাম কিন্তু নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললাম। হাত ঝাপটাতে ঝাপটাতে আমি ডুবে যেতে লাগলাম। অনেক পানি পেটে চলে গেলো নাক, মুখ দিয়ে। আমার মনে আছে পানির নিচে যখন, তখনই ভাবলাম আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে কেউ বাঁচাবে না।
কিন্তু কিছুক্ষন পর আমি আমার শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম, কেউ একজন আমাকে টেনে উপরে উঠাচ্ছে। উপরে উঠার পর দেখলাম আমাদের বাড়ির জেসমিন, আমার চাচাতো বোন আমাকে টেনে তুললো। সেও পুকুরে গোসল করতে এসেছিল। আমাকে উপরে উঠিয়ে সে অনেকক্ষন বকাঝকা করে আম্মাকে ডেকে আনলো। আম্মা এসে আমাকে একটা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ঘরে নিয়ে গেল। আমার সে চাচাতো বোনের কাছে আমি আজীবন ঋণী। আজো তাকে দেখলে আমি যত ব্যস্ত থাকি তার সাথে কিছুক্ষন কথা বলি, খোঁজখবর নিই।
স্মৃতি থেকে, যেসব আজো ভাবায় আমায়(২)
স্মৃতি থেকে, যেসব আজো ভাবায় আমায়(১)

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:১১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×