গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শতভাগ থাকবে এটাই হলো নিয়ম। বাংলাদেশ কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র? আমার কাছে অন্তত তা মনে হয় না। আমাদের দেশে যে সরকারব্যবস্থা চালু আছে এটা রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মাঝামাঝি কিছু একটা। ভলতেয়ার মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, “তোমার কথার সাথে আমার দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকারের জন্য আমি আমার জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারি।” এগুলি বইয়ের ভাষা বা নীতি কথা। বাস্তবিক অর্থে এরকম চর্চা পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় মূলনীতি তিনটি- সততা, স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা। এদেশের সাংবাদিকতায় এই তিনটি জিনিস কি আপনি সাংবাদিকদের মাঝে দেখতে পান? যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা এই নীতি মেনে চলে? গলায় সাংবাদিক নামের আইডি কার্ড ঝুলিয়ে দিয়ে সাংবাদিক বনে যায়। সাংবাদিকতার ন্যূনতম ইথিকস তাদের মধ্যে দেখা যায় না।
এছাড়াও অমুক-তমুক ডটকম নাম দিয়ে হাজার হাজার সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে গত কয়েক বছরে। মেইনস্ট্রিমের সাংবাদিকরা এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টো এদের অপপ্রচারকে চুপ থেকে প্রমোট করেছে।
আপনি কি দিগন্ত টেলিভিশনের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী? পিস টিভিকে মত প্রকাশ করতে দিতে চান? কিংবা আমাদের দেশ পত্রিকার মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কিছু বলতে চান? যদি চান তাহলে আপনি ভলতেয়ারের কাছাকাছি কেউ হবেন। আমি অনন্ত এদের মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে চিন্তিত নই।
ফেইসবুকে বাঁশেরকেল্লা, রামু তান্ডব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া করুক্ষেত্র কিংবা সাঈদীকে চাঁদে দেখা নিয়ে মৃত্যুর মিছিল লম্বা যারা করেছে তাদের বাকস্বাধীনতা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। এদের বাকহীন করে রাখাই দেশের জন্য উত্তম।
আপনি আলোর জন্য ঘরের জানালা খুলে দিলেন কিন্তু সে জানালা দিয়ে উৎকট দুর্গন্ধ আসা শুরু করলো তখন সেই জানালা দুর্গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখাই ভালো।
সরকার আইন করে মানুষের কথা বলা একেবারে বন্ধ করতে কখনোই পারবে না তারা দুর্নীতি করলে অন্যায় করলে অবশ্যই তাদের সমালোচনা হবে। আমার এই ব্লগেই সরকারের অনেক সমালোচনা আছে চাঁদগাজীর পোস্ট পড়লে দেখবেন তিনিও সরকারের সমালোচনা করেছেন। এছাড়াও দেশের অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক প্রতিনিয়ত এই সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে, দুর্নীতির কথা বলে যাচ্ছে এবং সব গুলিই যৌক্তিক সমালোচনা। এসব সমালোচনায় সরকার কখনোই বাধা দেয়নি। সরকার তখনই বাধা দেয় যখন আপনি প্রপোগান্ডা বা গুজব ছড়াবেন। এখন আপনি যদি বলেন যে আপনাকে গুজব ছড়ানোর স্বাধীনতা দিতে তাহলে ভিন্ন কথা।
সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছে, আইনটির মধ্যে অনেক লুফল থাকতে পারে। আপনি এই আইনের সংজ্ঞা কিংবা ধারা পরিবর্তন বা পরিমার্জন করার কথা বলতে পারেন কিন্তু এই আইনটি প্রয়োজন নেই এই কথাটি বলতে পারেন না। এসব আইন এড়িয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে পারা অবশ্যই সম্ভব। তবে গুজব ও মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো একটু কঠিন হবে। তাছাড়া এসব আইন টাইন দেশের বড় সমস্যা গুলোর মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা না, সমস্যা হচ্ছে দেশের বেকারত্ব, মনোপলি ব্যবসা, বিদেশি বিনিয়োগ। এগুলো নিয়ে কথা বললে আপনাকে শেখ হাসিনা উঠিয়ে নিয়ে যাবেন না। বরং মনোপলি ব্যবসা নিয়ে কথা বললে সাংবাদিকরাই আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক লেখালেখি শুরু করবে। কেনো করবে সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, না পারলে মন্তব্য করুন আমি বলে দিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৯