আমাদের পাঠ্য পুস্তকে অহরহ ভুল ভাবনা/বিষয়ের দেখা মেলে। অজ্ঞতার কারণে কিংবা ভুলবশত এই ভুলের সৃষ্টি হয়। উন্নত বিশ্বের শিক্ষনীয় বিষয়ে সম্পূর্ণ ভুল ভাবনার উপর প্রতিষ্ঠিত কোন কিছু কি অন্তর্ভুক্ত থাকে? তারা তাদের বাচ্চাদের বছরের পর বছর ভুল বিষয় পড়াবে? আমার কাছে মনে হয় না এটা সম্ভব। ডারউইন বিবর্তন তত্ত্ব দেওয়ার পর আজ পর্যন্ত এটা নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এটা বিজ্ঞানের মানদন্ডে এখনও টিকে আছে। জীব জগতের উৎপত্তি ও বৈচিত্র্যে নিয়ে অনেকেরই অনেক হাইপোথিসিস ছিল কিন্তু ডারউইনের হাইপোথিসিস বিজ্ঞান মহলে এখনো তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃত। এরচেয়ে ভাল কোন হাইপোথিসিস আসলে বিজ্ঞানীরা ডারউইনের তত্ত্বকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেটাকে তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করবে না। বিবর্তন তত্ত্বকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে অনেক সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে, তাই এর জনপ্রিয়তা এখনো সবচেয়ে বেশি। আবার এই তত্ত্ব দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হচ্ছেনা কিন্তু একই সাথে সেই সমস্যা অন্য কোন তত্ত্ব দিয়েও সমাধান করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বিবর্তন তত্ত্বকেও অপ্রয়োজনীয় বলা সম্ভব হচ্ছে না।
আমাদের নতুন পাঠ্যপুস্তকের বিজ্ঞানের বইতে এই বিবর্তন তত্ত্বটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা বাচ্চাদের দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা নিয়েই গত বেশ কয়েকদিন ধরে তুলকালাম অবস্থা। যারা দাবি করছে এই ভুল ভাবনাটি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হয়নি তারা ধর্মীয় চিন্তা ভাবনা থেকে এমনটি বলছে। কিন্তু তারা এটা ভাবছে না যে, বিবর্তন তত্ত্বটি যদি ভুল হয় এবং এই ভুলটি যদি ভুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তাহলেও বাচ্চাদের এই সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। কোন তত্ত্ব যে ভুল, বিজ্ঞানের মানদণ্ডে সঠিক নয় এটা জানতে হলেও তো সেই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। এখন আপনি যদি সেটা নায়ই পড়েন, নায়ই বুঝেন তাহলে এটা যে ভুল সেটা আপনি কিভাবে নিশ্চিত হবেন!
আপনি এখন যে বাচ্চাদেরকে এই তত্ত্বটি ভুল বলে পড়া থেকে বিরত রাখছেন, এমনও হতে পারে বিবর্তন নিয়ে এসব তথ্য পড়ার পর এই বাচ্চারাই কোন একদিন নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করে দেবে বিবর্তন তত্ত্বটি ভুল ছিল। সেদিন তার এই সাফল্য তাকে ডারউইন থেকেও জনপ্রিয় করে দিতে পারে!
যাই হোক সারা পৃথিবীতে জীব বিজ্ঞানের বহুল চর্চিত একটি তত্ত্বকে আপনি বাচ্চাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছেন। পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন, করুন তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে যদি এই তত্ত্বটি আসলেই ভুল ধারণা বা ভাবনার উপর প্রতিষ্ঠিত হতো, আমেরিকা, কানাডা, ফিনল্যান্ড, বৃটেনের মানুষজন এটা সরানোর জন্য অনুরোধ করতো না বরং কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতো। একটা ভুল ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে তারা তাদের শিক্ষা কারিকুলামে বছরের পর বছর চলতে দিত না।
আজ থেকে ১৫০ বছর আগে ডারউইন তার এই বিবর্তন তত্ত্বটি সবার সামনে প্রকাশ করেছে। যেটি এখনো বিজ্ঞানমহলে ভালো ভাবেই টিকে আছে। একটি ভুল ভাবনা, ভুল তথ্য এত দীর্ঘ সময়ে বিজ্ঞান মহলে টিকে থাকার কথা নয়। যখন একটি তত্ত্বকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এই বর্তমান জেনারেশনের কাছে প্রয়োজনীয় টুলস ব্যবহার করে সত্যতা যাচাই করা বেশ সহজ। আজকে আপনি জীবজগতের উদ্ভব ও বৈচিত্র্য নিয়ে একটি হাইপোথেসিস তৈরি করুন এবং সেটি বিশ্ববাসীকে জানান। দেখুন সেইটি কত বছর লাগে বিজ্ঞানীদের ভুল কি সঠিক বের করার জন্য? আমার বিশ্বাস খুব বেশি সময় লাগবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২৭